মলয় রায়চৌধুরী

মলয় রায়চৌধুরী

রবিবার, ৩১ মে, ২০২০

নরম


হে নরম তুমি চরম কঠিন কঠিনতম
হে নরম জীব-জগতের কী এক বিস্ময়
বিচলিত ঠোঁট খুলতে  উৎসাহ কেন দাও
মুঠোর আঙুলও মেলে ধরো হে নরম তুমি 
দেহ থেকে আচমকাই মেঝেতে ফেলে দাও
নরম মেলে ধরবে বলে হে নরম তুমি
চরম কঠিন কঠিনতম তুমি তবুও নরম

শুক্রবার, ২৯ মে, ২০২০

যোনি

যোনি
হে অলুক বহুব্রীহি জিভ, তুমি হৃদয় পর্যন্ত যাও
প্রতিটি স্বাদকণা গোলাপি মাংসে নিয়ে তাকে বলো
এই তিক্ত, এই কষায় এই মিষ্টি এই নুন এই মন্ত্রবীজ
রেখে যাচ্ছি মহাসরোবরে প্রোষিত-বার্তাবাহকের
নির্বাক সংলাপে, এই জিভ উৎসর্গ করলুম গহ্বরে
তুমি স্পন্দ তুমি নীড় তুমি কর্মলক্ষ্মী-অবতার
এই নাও এই নাও এই নাও সর্বস্ব এই নাও নাও এই

বৃহস্পতিবার, ২১ মে, ২০২০

হে স্ফূর্তিনাথ


মগজে-হৃৎপিণ্ডে যতি কমা কোলোন সেমিকোলোন
জন্মসূত্রে পাওয়া, ঙ চন্দ্রবিন্দু অনুস্বার বিসর্গ
জড়ো করে রাখা আছে । কে জানে কখন কার নির্দেশে
রক্তের স্রোতে মিশে গিয়ে ওদের কোনো একজন
বাটারফ্লাই সাঁতার কাটতে থাকে স্ফূর্তির মজায়--
খেয়ালই করে না আমি চিৎ বা উপুড় হয়ে নাক বা
পেচ্ছাপের সঙ্গে রক্ত বের করে উলটে পড়ে আছি
জ্ঞানহীন হয়ে । হে স্ফূর্তিনাথ, তুমি শ্বাসের মারপ্যাঁচ
রক্তের স্রোতে রঙিন মাছের মতো কেন ছেড়ে দাও?

আমার অন্তর্জলী যাত্রায় কুমারী অবন্তিকা


( র ), যিনি ছিলেন স্বৈরাচারী একনায়ক
       সোভিয়েত দেশের ( স ) ডিকটেটরের চেয়েও কড়া ডোজের
চিনের ( ম ) ডিকটেটরের চেয়েও মনমৌজি বউদিপাগল
পলপটের চেয়েও পল পল দিলকে পাস
              তাঁর আগের কতোগুলো ( ক ) দের হাপিশ করে দিলেন
তার হিসেব পাওয়া গেল
( ব-১ ),  ( ব-২ ), ( স-১ ), ( অ ) দের তেলংদেহি থোড়া থোড়া
      কিন্তু এনারা কেউই যোনি কেমন জানতেন কি না তা লিখে যাননি
তা লেখার জন্য এলেন আরেক স্বৈরাচারী একনায়ক ( জ )
       ইনি মাঝাসাজে লাবণ্যময়ী যোনি দেখেছিলেন
আর ডিকটেটরশিপ ভরিয়ে দিলেন যোনিতে
              তাঁকে সিংহাসন থেকে ঠেলে ফেলতে ( র ) গান গাইতে গাইতে
উদয় হন
ওরে, তোরা   নেই বা কথা বললি,
     দাঁড়িয়ে হাটের মধ্যিখানে নেই জাগালি পল্লী
মরিস মিথ্যে ব'কে ঝ'কে,   দেখে কেবল হাসে লোকে
     নাহয়   নিয়ে আপন মনের আগুন মনে মনেই জ্বললি
অন্তরে তোর আছে কী যে   নেই রটালি নিজে নিজে
     নাহয়   বাদ্যগুলো বন্ধ রেখে চুপেচাপেই চললি
কাজ থাকে তো কর্‌ গে না কাজ,   লাজ থাকে তো ঘুচা গে লাজ,
     ওরে,   কে যে তোরে কী বলেছে নেই বা তাতে টললি

ডিকটেটর ( জ ) কখনও গান গাইতেন না
               কেননা অন্যের দুঃস্বপ্ন কেড়ে নিজেই দেখতেন
              হুঁ হুঁ বাওয়া আমি কিন্তু কাড়তে দিইনি
নিজের দুঃস্বপ্ন নিজের স্টকেই রেখেছি
কখনও সখনও বের করে দেখে নিই
             আমার আগে কেউ শেকড়ের খিদে আবিষ্কার করতে পারেনি
কেড়ে নেয়া দুঃস্বপ্নের পেছনে দৌড়োতে দেখা গেল ( স-২ ), ( শ-১ ), ( শ-২ )
           ( উ ), ( স-৩ ), ( শ-৩) আরও অনেকে
জন্মের সময়ে তাঁদের দুর্গা টুনটুনি মধু খাবার জিভ বের করেনি
ডিকটেটর ( জ ) কে যতো নামাতে চেষ্টা করেন
            ততো বাড়ে বিষাদবায়ু, অবক্ষয়বায়ু, শোষণবায়ু
কিন্তু যোনির আর দেখা মিলল বটে তবে তা
যেতে যেতে চুপি চুপি
তাহাদের শ্রেণী যোনি ঋণ রক্ত রিরংসা ও ফাঁকি
উঁচু-নিচু নরনারী নিক্তিনিরপেক্ষ হ’য়ে আজ
মানবের সমাজের মতন একাকী
তাই অক্ষতযোনি নিয়ে আমার অন্তর্জলীযাত্রায় নাচছে অবন্তিকা
           ক্রিমেটোরিয়ামে শুয়েও টের পাচ্ছি ঘাড় থেকে ডিকটেটর ( জ )কে
নামাতে পারলেও ডিকটেটর ( র ) নিজের লাশের ভেতর থেকে
                      বেরিয়ে আসছেন দেখার জন্য
                 এই ব্যাটা মামুলি নগরভোটার আমি
                              আধারকার্ডিওলজিস্ট আমি
আমি সত্যিই মরে গেছি কিনা
             আসলে অবন্তিকা যতোদিন শ্মশানে নাচবে ততোদিন
অন্তর্জলীযাত্রায় থাকবো
                  কেননা অবন্তিকা বলেছে
এখানে গঙ্গাজল পাওয়া যায় না
                কেবল ডিলডো পাওয়া যায়
যা ডিকটেটর ( র ) আর ডিকটেটর ( জ ) দু্জনের কেউই জানতেন না

বৃত্ত-নৃত্য


করোনা ভাইরাস পুং তুমি তো নিজেই
মৃত্যু-নিরপেক্ষ ছিলে
এবার সঙ্গে করে নিয়ে এলে
একচক্ষু উলঙ্গ প্রেমিকাকে
যে তার এলোচুল উড়িয়ে বৃত্ত-নৃত্যে
গোড়ালি ঘুরিয়ে তুলল
সমুদ্র-মেশানো নোনা ছুটন্ত উচ্ছ্বাস
বজ্র-ডমরুর আতঙ্কধ্বনি : ওঁ স্বাহা--
তোমাদের সন্ত্রাসে সবকিছু নিরপেক্ষ
এমনকী ধর্ম, জাতি, দেশ, গাঁ ও শহর,
সাধু আর চোর, জানোয়ার, সুন্দরী গাছেরা ।
.
মানুষের বিরুদ্ধে বদলা নিতে
প্রকৃতি তোমাদের পাঠিয়েছে উচিত শিক্ষা দিতে--
কিন্তু মানবসমাজ কোনোদিন কি বদলাবে ?

মঙ্গলবার, ১৯ মে, ২০২০

লকডাউনে দেবী-দেবতারা

“লকডাউনে দেবী-দেবতারা”

ওনারা দেয়ালে, রান্নাঘরের তাকে, ওপরে চৌকাঠে
যেমনটি আমার স্ত্রী, ছেলে ও ছেলের বউ নিজেদের
পছন্দের চাকরি পাবার, পাশ করবার, বিদেশে যাবার
আরাধ্য ও আরাধ্যাকে রেখেছিল কয়েক দশক আগে
তেমনই আছেন কিন্তু লকডাউনের জেরে ধুলোয় এমন
ঢাকা যে বোঝার উপায় নেই তিনি কোন দেবী বা দেবতা--
বুড়ি স্ত্রী তো খাটতে পারছে না রান্নাবান্নার পর । আমি
ফুলঝাড়ু দিয়ে ওনাদের ধুলোর মাস্ক খোলর প্রয়াস
করেছি একদিন, তবে পাইনি অনুমতি নাস্তিক বলে ;
ছেলে ও ছেলের বউ জেনে গেলে কেলেঙ্কারি হবে । যদিও
খুদে মাকড়সাগুলো ওদের থুতু দিয়ে তৈরি করে দিয়েছে
অক্সিজেনের নল যাতে করোনায় ফুসফুস নষ্ট না হয়।
তবুও তেলচিটে পড়ে বোঝার উপায় নেই কোনজন
বুড়ির, কেই বা ছেলের আর ছেলের বউয়ের শুকনো
মালা পরে লকডাউন কাটাচ্ছেন একা-একা । কাজের
মেয়েটি কবে ফিরবেন আর মুক্ত করবেন ওনাদের
তা হায় মাস্ক-পরা দেবী-দেবতারা বলতে অপারগ ।

সোমবার, ১৮ মে, ২০২০

কামাবশায়িতা



উৎসর্গ : কৌশিক সরকার
তুমি তো ভার্জিন ! তাহলে কেমন করে যোনি আঁকো ?
দেখেছ কি কখনও কারো যোনি কিংবা অনেকের যোনি
যেমন ভেরলেন দেখতো প্রতিদিন বিভিন্ন নারীর, প্যারিসের
লাতিন কোয়ার্টারে ? ভারতীয় শিল্পীরা এক খেপ ফ্রান্সে যাবেই
যোনি দেখবার লোভে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নারীদের যোনি
কৃষ্ণাঙ্গীর দ্যুতিময় যোনি, শ্বেতাঙ্গিনীর আলোকসম্পাতি যোনি
খুঁজবে মমার্ত বা শঁজেলিজের গভীর রাতের গ্যাঞ্জামে, আর
লুভরেতে যোনির রকমফের দেখে ফিরবে স্বদেশে, সেই সব
যোনি এঁকে ঝুনঝুনওয়ালাদের বিক্রি করবে বলে, যারা যোনি
দেখবার সুযোগই পায় না এতো ব্যস্ত তিজোরির বাণ্ডিল নিয়ে--
প্রেম তুমি করেছিলে বটে কিন্তু যোনিটি পাবার প্রলোভনে
সেই যে প্রত্যাখাত হলে রোজ রাতে আঁকছো বসে জগতের
সমস্তরকম , চেষ্টা করে যাচ্ছো নারীবাদী যোনি আঁকবার !

শুক্রবার, ১৫ মে, ২০২০

আমি কে ?

আমি কে ?
উৎসর্গ : অমর্ত্য মুখোপাধ্যায়


কী করে জানবো আমি কে ? সংস্কৃত মন্ত্রের গুপ্ত সন্ত্রাসে
ওঁ হ্রীং শ্রীং ক্লীং দুং ঐং হ্রীং শ্রীং দুং দুর্বোধ্য ইশারায়
দেরিদা-শোষিত যুগে ঘাপটি মেরে নিজেকে প্রশ্ন করি
অর্থ তো বিমূর্ত ও মানসিক ; আমিই আমার মানে !!
উক্তি, বাক্য ও বচনের মধ্যে আমি দিন আনি দিন খাই
যা কিনা মৌলিক বা স্বয়ংসিদ্ধ এবং সাধিত গোপনতা--
বলার ভঙ্গি, স্বরাঘাত ও কণ্ঠস্বর দিয়ে কি আমি গড়া ?
অস্পষ্ট, বিমূর্ত, ধরা-ছোঁয়ার বাইরে বৈশ্বিক নিমকোষে
হয়তো বা সংজ্ঞা লুকিয়ে আছে দেহ ও দেহের বাইরে
একযোগে ওঁ হ্রীং শ্রীং ক্লীং দুং ঐং হ্রীং শ্রীং দুং হয়ে !!

বৃহস্পতিবার, ১৪ মে, ২০২০

আমি তো কেউ নই

আমি তো কেউ নই
উৎসর্গ : সোনালী চক্রবর্তী


আমি তো কেউ নই, তুমি তো বিখ্যাত
কেউ না হওয়াও কি খ্যাতির প্রতিচ্ছায়া নয় ?
তুমি তো জ্যোতির্ময়ী, তুমি তো অবিনশ্বরী
আমি তো কেউ নই, তুমি তো পরমাপ্রকৃতি
আমি প্রকৃতির অংশ, যৎসামান্য, বলা যায়
উষ্ণতম মলয়বাতাস, আমি কার্তিকেয় যোদ্ধা
অথচ কেউ নই । কেউ না হওয়ায় যে আনন্দ
তা তুমি বুঝবে না আমি তো আমিও নই
কেউ নই কিছু নই অস্তিত্ববিহীন তুমি ছাড়া
তোমার হাত ধরে অন্ধ আমি ইতিহাসে
তোমার সঙ্গে থেকে যেতে চাই

বুধবার, ১৩ মে, ২০২০

ত্রিকোণ প্রেম

ত্রিকোণ প্রেম
উৎসর্গ : সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল


সামনের দুই ফ্ল্যাটে দুজন পোয়াতি বউ, দরোজা খুললেই বলছেন
বাইরে বেরোবেন না একদম । বাইরে La Corona আছে
ভয়ংকর রূপসী, জাপটে ধরবে আপনাকে আর আপনি তাকে
সঙ্গে করে নিয়ে আসবেন, বিপদে ফেলবেন আমাদেরও
এই লকডাউনেই আমাদের সন্তান জন্মাবে । যাবেন না বাইরে
আমরা আপনাদের জন্য ভাত-রুটি-তরকারি রেঁধে দেবো
যতই কষ্ট হোক । আপনার বয়স হয়েছে, তায় নানা রোগ
ও রূপসী আপনাদের মতো বুড়ো-বুড়িকে ধরবে বলে ওৎ পেতে আছে ।
.
সাড়ে সাত মাসের বপু নিয়ে ওরা রাঁধবে আমাদের জন্য ভাত-রুটি
মানে হয় ? দুজন পোয়াতি বউ বুড়োকে আটকে রাখতে চায়--
কী যে করি বুঝতে পারি না ! আধপেটা খেয়ে থাকি ?
পরিযায়ী শ্রমিকেরা না খেয়েই চালিয়ে দিচ্ছে দিনরাত রাতদিন
বউ দুটি সুন্দরী, La Corona রূপসীকে আটকাতে চায়
এই মেট্রপলিসের থাবা যে ভাবে এগোচ্ছে চারিদিকে
জানি না বউ দুটি আমার পাহারায় থাকবে কতোদিন !

শনিবার, ৯ মে, ২০২০

আমি যে লুচ্চরিত্র

আমি যে লুচ্চরিত্র
উৎসর্গ : অনীক রুদ্র


দেশের এখন এই অবস্হা, শয়ে-শয়ে মারা যাচ্ছে লোক
আর আমি কিনা ঠ্যাঙের ওপর ঠ্যাংটি তুলে খাচ্ছি বসে
মুড়ি-পেঁয়াজ-কাঁচা লঙ্কা টাকনা দিয়ে সিঙ্গলমল্ট মদ
কেননা আমি লুজচরিত্র, পড়ি ভেরলেন এবং বোদলেয়ার
জানলা খুলে টাকলামাথা তালগাছকে বলি চুদির ভাই
মাতাল হয়ে টনক তো আর নেই, বলি বাঞ্চোৎদল
জানতিস না মদের জন্যে বউ-ঝিরাও গিয়ে লাইন দেবে
এই যে কাঁচা লঙ্কা খাচ্ছি এটা তোদের গোয়ায় দিতে চাই
কারণ আমি লুজচরিত্র, খিচুড়ি খেয়ে কাটাচ্ছি দুইবেলা
আটকে যাচ্ছে বলে রাতের বেলা হাগার ওষুধ খাই
তোদের তো মুখেতেই পায়খানা ফলে কোনো চিন্তা নাই
আমি যে লুচ্চরিত্র, এককালে যারা আমায় বলতো মরবিড
তারা এখন কোমরবিডিটির বিছানাটা রেখে দিচ্ছে পেতে
দেশের এখন এই অবস্হা, মাও জে দঙের পোলাটাই তো দায়ি
এখনও মরবে লোকে শয়ে-শয়ে, আমার নামও যোগ হবে তাতে
কেননা আমি লুজচরিত্র, বুকনি ছাড়া কিছুই দেবার নাই

চিক্কুর

চিক্কুর
উৎসর্গ : এডওয়ার্ড মঞ্চ
মরবার ভয় ? উহুঁ, তা নয় ।
শবের গতি করবে যারা তাদের জন্য ভয় ।
সেরেও যদি যাও, সিফিলিস আর গনোরিয়ার চেয়ে
অস্পৃশ্য  থাকতে হবে কুষ্ঠরোগির মতো, হয়তো জীবনভর ।
এখনই তো মাস্কে ঢেকে পাশের লোককে করছে সন্দেহ
সুন্দরীদের পাশ কাটিয়ে কেটে পড়ছে সৌম্যকান্তি যুবা।
মদের দোকান ছাড়া দূরত্ব কেউ বজায় রাখছে না তো !
মাতাল হয়ে ভুলে থাকতে চাইছে যারা রোগের জয়ধ্বনি
শুনতে পাচ্ছে সে-লোকগুলো যাদের কিচ্ছু জোটেনি-জুটছে না
না খাবার, না রোজগার, না থাকার জায়গা, না গাছতলা
খালি পেটে হাজার মাইল দূরে গাঁয়ের বাড়ি পৌঁছোতে হবেই।
মরবার ভয় ? উঁহু তা নয় । বেঁচে থাকার অনেক হ্যাঙ্গাম !





শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০

আমি তো লো কালচার

আমি তো লো কালচার
উৎসর্গ : লুই ফার্দিনান্দ সিলিন
আমি তো লো কালচার, একটা বরফকাঠি ছ’জন মিলে
চুষে খেতুম ; রিকশ-টায়ার কঞ্চি মেরে  নিয়ে যেতুম
গলির শেষে ; নালির গুয়ে লাট্টু পড়লে কাঠির খোঁচায় তুলে
ধুয়ে নিতুম রাস্তার টিউকলে ; আমি তো লো কালচার
সরস্বতীর বুকদুটো লক্ষ্মীর চেয়ে ছোট্ট কেন হলো 
জানতে চাইলে পুরুতমশায় চরণামৃত ঢেলে দিতেন মাথায়
বৃষ্টি হলে চুলের ওপর বই আর খাতা চাপা দিয়ে যেতুম ইশকুলে
আমি তো লো কালচার,  ঢিল লাথিয়ে  রফা করতুম জুতো--
এখনও সেই একইরকম চলছে ফোকলা দাঁতে, একটা পিৎজা কিনে
বুড়ির সঙ্গে তিনচার দিন খাই, আমি তো লো কালচার
লোকের সামনে পাদি আর ঢেঁকুর তুলি ইউরোপেতে গিয়ে
বুড়ি বলে ‘ভাগ্যিস তুমি ভদ্দরলোক নও, নয়তো জীবন 
কি আর যাপন হতো, এই বয়সে নোংরা কাজ তো নেই
নোংরা নোংরা লো কালচার কথাবার্তায় দিনগুলো বেশ কাটে’
Louis-Ferdinand Céline - Simple English Wikipedia, the free ...

প্রেমের অবিনশ্বর কীট

প্রেমের অবিনশ্বর কীট
উৎসর্গ : আর্নেস্ট হেমিংওয়ে
দুর্গন্ধের নালিশ পেয়ে পুলিশে দরোজা ভেঙে দেখলো দুজনে 
দুই ঘরে মরে পড়ে আছে ; কেউই উঁকি দিতে চাইল না--
আদালত ওদের বলেছিল ছয় মাস একইসঙ্গে থাকো, যদি না
মনের মিলে মিটমাট হয় তখন পাকা ডিভোর্সে সই কোরো ;
করোনাভাইরাসের লকডাউন এসে ঝগড়া চরমে নিয়ে গেল
প্রতিবেশীরাও বেশ সুমধুর ইংরেজি-হিন্দি খিস্তির আনন্দ নিচ্ছিল
ডিনারের প্লেট বা আসবাব ভাঙার শব্দ  এমনকী চড়চাপড়
সেসব বন্ধ হবার পর ভাবল তাহলে বিছানায় মিটমাট হল
ঝগড়াটা  দুজনের মধ্যে কে করোনাভাইরাস ফ্ল্যাটে নিয়ে এলো
রোগটা হলই যদি জেদ ধরে গেল না কেন হাসপাতালে ওরা
অথচ প্রেম করে বিয়ে করেছিল দু-পক্ষের বাড়ির অমতে
এ-এক বিস্ময়কর ভালোবাসা একে আরেকের বিরুদ্ধে গিয়ে
মরে প্রতিশোধ নেয়া, সহজে কেউই ঘেঁষবে না কাছে । লাশ
তোলবার জন্য সরকারি ডাক্তার ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাবে
প্রেমিক-প্রেমিকার শবে তার মানে কিলবিলে ম্যাগট হতে পারে 
The Death of Ernest Hemingway - Steve Newman Writer - Medium

বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০২০

কী বিষয় কী বিষয়

'কী বিষয় কী বিষয়'
আররে রবীন্দ্রনাথ
তোমার সঙ্গেই তো নেচেছিলুম সেদিন
হাঙুলের ইতিহাসে একতারার হাফ-বাউল ড়িং-ড়াং তুলে
ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের জমঘট থেকে সদর স্ট্রিটের লবঙ্গবাজারে
যেতে-যেতে তুমি বললে, "আমাগো শিলাইদহ থিকা আসতাসি
আলুমুদ্দিন দপতর যামু"
.

আগুন আর জলের তৈরি তোমার ঠোঁটে
তখনও একচিলতে ব্রহ্মসঙ্গীত লেগেছিল কী গরম কী গরম
গ্যাবার্ডিনের আলখাল্লা ফেলে দিলে ছুঁড়ে
দেখলুম তোমার ফর্সা গায়ে জোঁক ধরেছে
বড়ো জোঁক বর্ষার জোড়াসাঁকোয়
.

সেলিমের দোকানে শিককাবাবের গন্ধে
"নেড়েগুলা কী রান্ধতাসে ?" জানতে চাইলে
ও বললে, "না বুঝলুঁ ? সাঁড়কে ছালন ছে!
আহাঁ দেখুঁ না চখকে""
.
চায়ের ঠেকে টাকমাথা চুটকি-দাড়ি
ভ্লাদিমির ইলিচ আর সোনালি-চুল ভেরা ইভানোভা জাসুলিচ
আর তোমার মতন রুপোলি দাড়িতে অ্যাক্সেলরদ আর মারতভ
যার গাল আপনা-আপনি কাঁপছে দেখে তুমি বললে
"উয়াদের ধড়গুলা কুথায়?"
.

আমি আমার নাচ
থামাতে পারছিলুম না বলে তুমি নিজের একতারাটা দিতে চাইলে
কেননা তোমার পা থেকে নাচ যে পেরেছে খুলে নিয়ে গেছে
আর এখন তো দিনের বেলাও লাইটপোস্টে হ্যালোজেন জ্বলে
কী আনন্দ কী আনন্দ
.

সদর স্ট্রিটের বারান্দায়
তোমার তিনঠেঙে চেয়ারখানা পড়ে আছে
হুড়োহুড়ি প্রেম করতে গিয়ে পায়া ভেঙে ফেলেছিলে
তারিখ সন লেখা আছে জীবনস্মৃতিতে
কী ভালোবাসা কী ভালোবাসা
.

তোমার ফিটনগাড়ির ঘোড়া তো
কোকিলের মতন ডাকছে দাদু রবীন্দ্রনাথ
আর তোমার বীর্যের রেলিক্স থেকে কতজন যে পয়দা হয়েছিল
মাটি থেকে ছোলাভজা তুলে খাচ্ছে
.

"ওগুলা কী ?" আমি বললুম "কাক।"
"এগুলারে কী কয় ?" আমি বললুম "সেলিমকেই জিগেস করো,
ও এই অঞ্চলে তোলা আদায় করে"
কী ঐশ্বর্য কী ঐশ্বর্য
(২৪ আগস্ট ১৯৯৯)
'আত্মধ্বংসের সহস্রাব্দ' বই থেকে

মায়া

মায়া
উৎসর্গ : যোগেন চৌধুরী


স্তনে এতো মায়া তুমি কোথা থেকে আনো হে কৌশিক সরকার ?
কুচ জাগার আগে-পরে বা যখন তা মিষ্টির ফোয়ারা দুধের
আফ্রিকার কুচকুচে কালো বা জার্মানির ঢাউস গোলাপি
চিনা-ভিয়েতনামি-বার্মিজ-ক্যামবোডিয়া-থাইল্যাণ্ড পীতাভ
মার্কিনি রোদে পোড়া রক্তিমভ বা তামাটে ব্রাজিলি কিংবা
ভারতের নানান মাপের আর নানান ত্বকের স্তনে মায়া ভরো
রুবেন রসেটি বত্তিচেলি ইনগ্রেস রাফায়েল রবি ভর্মার আঁকা
মোলায়েম স্তনে যেরকম বেহেশতের জ্যোতিচ্ছটার প্রতিভাস
নারীর স্তনের চেয়ে মায়াময় আশ্রয় আর কোথাও নেই, তা সে
তুষারাচ্ছন্ন বা মরুবালুকার দেশ হোক, এতো মায়া এতো ?
স্তনে এতো মায়া তোমরা কোথা থেকে আনো হে কৌশিক সরকার !

বুধবার, ৬ মে, ২০২০

নাঙজোড় - একটি পোস্টমডার্ন কবিতা

নাঙজোড় - একটি পোস্টমডার্ন কবিতা
উৎসর্গ : বাসুদেব দাশগুপ্ত


‘বে’, যার নাঙ ছিল ‘শ’ আর ‘ব’, সে ওদের বললে
“না হয় খেও না চুমু, না হয় ধোরো না জড়িয়ে
মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে তো করতে পারো
ভেবে নাও তুমি করোনা রোগের ডাক্তার, পরীক্ষা
করছ মাই দুটো, দস্তানা পরা হাতে, মুখও পুরোটা ঢেকে
রাখতে পারো গুদস্হলে।” ‘শ’ বললে “আমরা আসামী বটে
তাই বলে করোনায় ভুগে-হেগে মরবার ভয়ডর নেই নাকি?”
‘বে’, যার নাঙ ছিল ‘শ’ আর ‘ব’, বললে “দেখছো তো
সবচেয়ে বেশি মার খেয়ে গেছে সোনাগাছি ;
যৌনকর্মীরাও তো পরিযায়ী দিনমজুর । তবে ?
কিছু টঙ্কা জমা দিয়ে যাও যাতে দুবেলা খাবার জোটে
মহামারী নিজেই পকাৎপাত হলে তোমরা দুজনে এসে
দুই বেলা সোজা-উল্টো যথেচ্ছ যেভাবে ইচ্ছে কোরো।”

অবন্তিকার শতনাম


অবন্তিকার শতনাম

আমি অবন্তিকার দুটো মাইয়ের নাম দিয়েছি কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়া…বাঁদিকেরটা আদর করলেই গোলাপি হয়ে যায়…ডানদিকেরটা আদর করলেই হলদেটে রঙ ধরে…বাঁদিকের বোঁটার নাম করেছি কুন্দনন্দিনী…বঙ্কিমের বিষবৃক্ষ তখন ও পড়ছিল চিৎ শুয়ে…ডানদিকের বোঁটার নাম ও নিজেই রেখেছে কর্নেল নীলাদ্রি সরকার যে লোকটা সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের ডিটেকটিভ…ডিটেকটিভ বই পড়তে ওর জুড়ি নেই…ছুঁলেই কাঁটা দিয়ে ওঠে তাই…যোগেন চৌধুরীর আঁকা ঝোলা মাই ওর পছন্দ নয়…প্রকাশ কর্মকারের আঁকা কালো কুচকুচে মাই ওর পছন্দ নয়…পেইনটিঙের নাম রাখা গেল না…যোনির কি নাম রাখবো চিন্তা করছিলুম…অবন্তিকা চেঁচিয়ে উঠলো পিকাসো পিকাসো পিকাসো…পিকাসোর যোনির কোনো আদল-আদরা নেই…কখনও বাদামি চুল কখনও কালো কখনও কিউবিক রহস্য…তাহলে ভগাঙ্কুরের…ও বলল সেটা আবার কি জিনিস…ওর হাত দিয়ে ছুঁইয়ে দিতে বলল অমঅমঅমঅম কি দেয়া যায় বলতো…পান্তুয়া চলবে…ধ্যুৎ…রস পানেই পান্তুয়া নাকি আরও কতো রকম মিষ্টি হয়…ছানার পায়েস…নারকেল নাড়ু…রসমালাই…নকশি পিঠা…রাজভোগ…লবঙ্গলতিকা…হলদিরামে ভালো লবঙ্গলতিকা পাওয়া যায়…আমি বললুম স্বাদ কিছুটা নোনতা…ও বলল দুর ছাই আমি নিজে টেস্ট করেছি নাকি যাকগে বাদ দে…হ্যাঁ…এগোই…পাছার কি দুটো নাম হবে…ডিসাইড কর…ডিসাইড কর…তুই কর আমি তো দেখতে পাচ্ছি না…না না ফের ফের…লাবিয়া নোনতা হলেও ওটার নাম দিলুম গোলাপসুন্দরী…পারফেক্ট হয়েছে…তাহলে পাছার একটাই নাম দিই…নরম নরম কোনো নাম…পাসওয়র্ড…ঠিক…এর নাম দেয়া যাক পাসওয়র্ড…ধ্যাৎ…পুরো রোমান্টিক আবহাওয়া ফর্দাফাঁই করে দিচ্ছিস……গ্যাস পাস হয় বলে পাসইয়র্ড হতে যাবে কেন…ছিঃ…তাহলে এর নাম হোক গরমের ছুটি…গরমে বেশ ভাল্লাগে পাউডার মাখিয়ে পাছায় হাত বোলাতে…ওক্কে…তারপর…ঘুমোবো কখন…বাঁ উরুর নাম দিই ককেশিয়া…ডান উরুর নাম দিই লিথুয়ানিয়া…রাশিয়ানদের উরু দারুণ হয় বিশেষ করে শীতকালে যখন ওরা চান করে না…ভোদকা খেয়ে ভরভরিয়ে প্রতিটি রোমকুপ দিয়ে গন্ধ ছাড়ে…শুয়েছিস নাকি কখনও রাশিয়ান মেয়ের সঙ্গে…না কল্পনার যুবতীদের ইচ্ছেমতন হ্যাণ্ডল করা যায়…ছাড় ছাড়…এগো…মানে নামতে থাক…তাড়াতাড়ি কর নইলে গাধার দুলাত্তি দেবো…তা্হলে পায়ের নাম রাখছি জিরাফ…বামপন্হী জিরাফ আর দক্ষিণপন্হী জিরাফ…এবার ওপরে আয়,,,মুখে…ঠোঁট…ঠোঁটের নাম দিই আফ্রিকান সাফারি…আচ্ছা…ঠোঁটের নাম আফীকান সাফারি…ব্লোজবে খণ্ড খণ্ড মাংস ছিঁড়ে খাবো…খাস…থুতনিতে সেকেন্ড চিন…পিৎজা কোক খাওয়া থামা…থুতনির নাম দিই গোলাপজাম…কেন কেন কেন…পরে বলব…এখন দুচোখের নামদিই…শতনাম হলো না তো…চোখ বোজ চোখ বোজ…তুই তো একশোসমগ্র আবার শতনামের কী দরকার…তাহলে আয়…আজ তুই ওপরে না নিচে ?

মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০২০

রাজনৈতিক ভাইরাস

রাজনৈতিক ভাইরাস
উৎসর্গ : বীরেন চট্টোপাধ্যায়


হাঁটছে, হেঁটেই চলেছে, দিন-রাত, রাত-দিন, কোথায় ছিল এতোদিন
এইসব লোকগুলো, শিশুকোলে কাঁধে-খোকা বা খুকু, মানুষ-মানুষীরা
কোশের পর কোশ হাঁটছে বাড়ির দিকে ভারতবর্ষের গাঁ-শহর চষে
এদের জন্য কই কখনও গেটসভা মোড়সভা মিটিঙ-মিছিল-রেলি
হতে তো দেখিনি মাঠ-ময়দানে গর্জে ওঠা লাউডস্পিকার-সমাবেশে
এদের নেতা হয় না দলবাজি করেনা ছোকরা বা বুড়ো ঝাণ্ডাধারিরা
তাই এরা হাঁটছে তো হাঁটছেই খালি পেটে হয়তো বা হাজার মাইল
মাস্ক পরা দরকার মনে হয়নি ; কীই বা হবে পরে যদি না জীবন্ত ফেরে
হেঁটে-হেঁটে নিজেদের বাড়ি ? পরিযায়ী বলতে কে জানে কী বোঝায় !
খালিপেটে নিষ্কপর্দক হয়ে গেলে সপরিবারে এমন বেপরোয়া হওয়া যায় ?
করোনাভাইরাস এসে দেখালো কীরকম মানুষজন্ম কাটাতে হচ্ছে ও হয়।