মলয় রায়চৌধুরী

মলয় রায়চৌধুরী

মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০১১

পোস্টমডার্ন আহ্লাদের কবিতা কাব্যগ্রন্হ থেকে

 দুটি বিশ্ব
আমরা তো জানি রে আমরা সেরে ওঠার অযোগ্য
তাই বলে বৃষ্টির প্রতিধ্বনিতে ভেজা তোদের কুচুটে ফুসফুসে
গোলাপি বর্ষাতি গায়ে কুঁজো ভেটকির ঝাঁক সাঁতরাবে কেন


তোদের নাকি ধমনীতে ছিল ছাইমাখা পায়রাদের একভাষী উড়াল
শুনেছি অন্ধের দিব্যদৃষ্টি মেলে গাবদাগতর মেঘ পুষতিস
বগলে গুঁজে রাখতিস গাধার চিল্লানিতে ঠাসা রোজনামচা
আর এখন বলছিস ভোটদান তো দানবীর কর্ণও করেননি


কে না জানে শববাহকরাই চিরকাল অমর হয়েছে
ঔরসের অন্ধকারে কথা বলার লোক পেলি না বলে
ঘড়িঘরহীন শহরে ওয়ান-শট প্রেমিকা খুঁজলি
কী রে তোদের কি ঠিক-ঠিকানা নেই না রক্তের দোষ
যে বলিপড়া আয়নায় চোপরদিন লোলচর্ম প্রতিবিম্ব পড়ে


ছি ছি ছি নিঃশ্বাস ফেলে সেটাই আবার প্রশ্বাস হিসেবে ফেরত চাস
আমি তো ভেবেছিলুম তোরা সন্দেহ করার অধিকার প্রয়োগ করবি
তা নয় সারা গায়ে প্রাগৈতিহাসিক চুল নিয়ে ঢুং ঢুং তুলো ধুনছিস


শুভেচ্ছা রইল তোরা যেন দুঃশাসনের হাত দুটো পাস
যা দিয়ে ধোঁয়ার দুর্গে বসে ফুলঝুরির ফিনকি গুনবি
২৭ এপ্রিল ২০০০


সম্প্রসারণ
আমার ডাক-নাম তো ফনকু, তাই নাজিমের আব্বু
আমায় ফনকার সাহেব বলে ডাকেন। স্কুলে যেতে দেখলেই
বলেন, 'আসসলাম ওয়ালেকুম ফনকার সাহেব।'
আমি বলি, 'ওয়েলকাম আসসলাম।'
উনি বলেন, 'অর্জ হ্যায়...।'
আমি বলি, 'ইরশাদ হো।'
উনি বলেন, 'মুলহাজা ফরমায়া যায় ।'
আমি বলি, 'ইরশাদ ইরশাদ ।'
উনি বলেন, 'মেরি তামির মেঁ মুজমার হ্যায় ইক সুরত
খরাব কি, হায়ুলা বর্ক ই খিরমান কা হ্যায় খুন ই গর্ম
দেহকান কা ।'
আমি বলি, 'বহুত খুব বহুত খুব, মরহাবা ।'
তারপর জিগ্যেস করি, 'এর মানে কী ?'
নাজিমের আব্বু বলেন, 'আরে মিয়াঁ, এ হল গালিব,
অত্যন্ত অপলকা, এর মানে করতে যেও না,
নষ্ট করে ফেলবে ।'
আমি বললুম, 'তাহলে আরেকটা শোনান।'
৩ জানুয়ারি ২০০১

রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০১১

প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার


( এই কবিতাটির জন্য ১৯৬৪ সালে মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে মকদ্দমা করেছিল তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার। মলয়ের হাতে হাতকড়া পরিয়ে ও কোমরে দড়িবেঁধে প্রথমে থানায় এবং থানা থেকে ছয়-সাতজন অপরাধীর সঙ্গে রাস্তা দিয়ে হাঁটিয়ে কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। মলয়ের বিরুদ্ধে ৩৫ মাস মামলাটি চলে প্রথমে নিম্ন আদালতে, যেখানে মলয়ের একমাস জেলের সাজা ঘোষিত হয় ও তারপর কলকাতা উচ্চ আদালতে, যেখানে তিনি বেকসুর ছাড়া পান। মলয়ের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন তরুণ সান্যাল, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, জ্যোতির্ময় দত্ত, সত্রাজিৎ দত্ত ও অজয় হালদার। পাঠকের হয়ত আশ্চর্য লাগবে, মলয়ের বিরুদ্ধে পুলিসের পক্ষের সাক্ষী ছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় ও উৎপলকুমার বসু। দুজন পুলিস ইনফর্মার, পবিত্র বল্লভ ও সমীর বসু, ছিলেন পুলিসের ভুয়ো সাক্ষী, যাঁরা মলয়ের পরিচিত না হওয়া সত্ত্বেও কোর্টে জানান যে মলয়ের সঙ্গে তাঁদের বহুবার কফিহাউসে দেখা হয়েছে। সবচেয়ে লজ্জার যে দুজন হাংরি আন্দোলনকারী রাজসাক্ষী , অর্থাৎ অ্যাপ্রুভার, হয়ে মলয়ের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন; তাঁরা দুজন হলেন শৈলেশ্বর ঘোষ ও সুভাষ ঘোষ।এঁদের সাক্ষ্যের কারণেই নিম্ন আদালত মলয়কে সাজা দিয়েছিল ।)


ওঃ মরে যাব মরে যাব মরে যাব
আমার চামড়ার লহমা জ্বলে যাচ্ছে অকাট্য তুরুপে
আমি কী কোর্বো কোথায় যাব ওঃ কিছুই ভাল্লাগছে না
সাহিত্য-ফাহিত্য লাথি মেরে চলে যাব শুভা
শুভা আমাকে তোমার তর্মুজ আঙরাখার ভেতর চলে যেতে দাও
চুর্মার অন্ধকারে জাফ্রান মশারির আলুলায়িত ছায়ায়
সমস্ত নোঙর তুলে নেবার পর শেষ নোঙর আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে
আর আমি পার্ছি না, অজস্র কাঁচ ভেঙে যাচ্ছে কর্টেক্সে
আমি জানি শুভা, যোনি মেলে ধরো, শান্তি দাও
প্রতিটি শিরা অশ্রুস্রোত বয়ে নিয়ে যাচ্ছে হৃদয়াভিগর্ভে
শাশ্বত অসুস্হতায় পচে যাচ্ছে মগজের সংক্রামক স্ফুলিঙ্গ
মা, তুমি আমায় কঙ্কালরূপে ভূমিষ্ঠ করলে না কেন ?
তাহলে আমি দুকোটি আলোকবষহ ঈশ্বরের পোঁদে চুমো খেতুম
কিন্তু কিছুই ভলো লাগছে না আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না
একাধিক চুমো খেলে আমার গা গুলোয়
ধর্ষণকালে নারীকে ভুলে গিয়ে শিল্পে ফিরে এসেছি কতদিন
কবিতার আদিত্যবর্ণা মূত্রাশয়ে
এসব কী হচ্ছে জানি না তবু বুকের মধ্যে ঘটে যাচ্ছে অহরহ
সব ভেঙে চুরমার করে দেব শালা
ছিন্নভিন্ন করে দেব তোমাদের পাঁজরাবদ্ধ উৎসব
শুভাকে হিঁচড়ে উঠিয়ে নিয়ে যাব আমার ক্ষুধায়
দিতেই হবে শুভাকে
ওঃ মলয়
কোল্কাতাকে আর্দ্র ও পিচ্ছিল বরাঙ্গের মিছিল মনে হচ্ছে আজ
কিন্তু আমাকে নিয়ে আমি কী কোর্বো বুঝতে পার্ছি না
আমার স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে
আমাকে মৃত্যুর দিকে যেতে দাও একা
আমাকে ধর্ষণ ও মরে যাওয়া শিখে নিতে হয়নি
প্রস্রাবের পর শেষ ফোঁটা ঝাড়ার দায়িত্ব আমায় শিখতে হয়নি
অন্ধকারে শুভার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়া শিখতে হয়নি
শিখতে হয়নি নন্দিতার বুকের ওপর শুয়ে ফরাসি চামড়ার ব্যবহার
অথচ আমি চেয়েছিলুম আলেয়ার নতুন জবার মতো যোনির সুস্হতা
যোনোকেশরে কাঁচের টুকরোর মতন ঘামের সুস্হতা
আজ আমি মগজের শরণাপন্ন বিপর্যয়ের দিকে চলে এলুম
আমি বুঝতে পার্ছি না কী জন্যে আমি বেঁচে থাকতে চাইছি
আমার পূর্বপুরুষ লম্পট সাবর্ণচৌধুরীদের কথা আমি ভাবছি
আমাকে নতুন ও ভিন্নতর কিছু কোর্তে হবে
শুভার স্তনের ত্বকের মতো বিছানায় শেষবার ঘুমোতে দাও আমায়
জন্মমুহূর্তের তীব্রচ্ছটা সূর্যজখম মনে পড়ছে
আমি আমার নিজের মৃত্যু দেখে যেতে চাই
মলয় রায়চৌধুরীর প্রয়োজন পৃথিবীর ছিল না
তোমার তীব্র রূপালি য়ূটেরাসে ঘুমোতে দাও কিছুকাল শুভা
শান্তি দাও, শুভা শান্তি দাও
তোমার ঋতুস্রাবে ধুয়ে যেতে দাও আমার পাপতাড়িত কঙ্কাল
আমাকে তোমার গর্ভে আমারই শুক্র থেকে জন্ম নিতে দাও
আমার বাবা-মা আন্য হলেও কি আমি এরকম হতুম ?
সম্পূর্ণ ভিন্ন এক শুক্র থেকে মলয় ওর্ফে আমি হতে পার্তুম ?
আমার বাবার অন্য নারীর গর্ভে ঢুকেও কি মলয় হতুম ?
শুভা না থাকলে আমিও কি পেশাদার ভদ্রলোক হতুম মৃত ভায়ের মতন ?
ওঃ বলুক কেউ এসবের জবাবদিহি করুক
শুভা, ওঃ শুভা
তোমার সেলোফেন সতীচ্ছদের মধ্যে দিয়ে পৃথিবীটা দেখতে দাও আমায়
পুনরায় সবুজ তোশকের ওপর চলে এসো শুভা
যেমন ক্যাথোড রশ্মিকে তীক্ষ্ণধী চুম্বকের আঁচ মেরে তুলতে হয়
১৯৫৬ সালের সেই হেস্তনেস্তকারী চিঠি মনে পড়ছে
তখন ভাল্লুকের ছাল দিয়ে সাজানো হচ্ছিল তোমার ক্লিটোরিসের আশপাশ
পাঁজর নিকুচি করা ঝুরি তখন তোমার স্তনে নামছে
হুঁশাহুঁশহীন গাফিলতির বর্ত্মে স্ফীত হয়ে উঠছে নির্বোধ আত্মীয়তা
আ আ আ আ আ আ আ আ আ আঃ
মরে যাব কিনা বুঝতে পার্ছি না
তুল্কালাম হয়ে যাচ্ছে বুকের ভেতরকার সমগ্র অসহায়তায়
সব কিছু ভেঙে তছনছ করে দিয়ে যাব
শিল্পের জন্যে সক্কোলকে ভেঙে খান-খান করে দোব
কবিতার জন্যে আত্মহত্যা ছাড়া স্বাভাবিকতা নেই
শুভা
 আমাকে তোমার লাবিয়া ম্যাজোরার স্মরণাতীত অসংযমে প্রবেশ কোর্তে দাও
দুঃখহীন আয়াসের অসম্ভাব্যতায় যেতে দাও
বেসামাল হৃদয়বত্তার স্বর্ণসবুজে
কেন আমি হারিয়ে যাইনি আমার মায়ের যোনিবর্ত্মে ?
কেন আমি পিতার আত্মমৈথুনের পর তাঁর পেচ্ছাপে বয়ে যাইনি ?
কেন আমি রজোস্রাবে মিশে যাইনি শ্লেষ্মায় ?
অথচ আমার নীচে চিত আধবোজা অবস্হায়
আরামগ্রহণকারিণী শুভাকে দেখে ভীষণ কষ্ট হয়েছে আমার
এরকম অসহায় চেহারা ফুটিয়েও নারী বিশ্বাসঘাতিনী হয়
আজ মনে হয় নারী ও শিল্পের মতো বিশ্বাসঘাতিনী কিছু নেই
এখন আমার হি২স্র হৃৎপিণ্ড অসম্ভব মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে
মাটি ফুঁড়ে জলের ঘূর্ণি আমার গলা ওব্দি উঠে আসছে
আমি মরে যাব
ওঃ এসমস্ত কী ঘটছে আমার মধ্যে
আমি আমার হাত হাতের চেটো খুঁজে পাচ্ছি না
পায়জামায় শুকিয়ে-যাওয়া বীর্য থেকে ডানা মেলছে
৩০০০০০ শিশু উড়ে যাচ্ছে শুভার স্তনমণ্ডলীর দিকে
ঝাঁকে-ঝাঁকে ছুঁচ ছুটে যাচ্ছে রক্ত থেকে কবিতায়
এখন আমার জেদি ঠ্যাঙের চোরাচালান সেঁদোতে চাইছে
হিপ্নোটিক শব্দরাজ্য থেকে ফাঁসানো মৃত্যুভেদী যৌনপর্চুলায়
ঘরের প্রত্যেকটা দেয়ালে মার্মুখি আয়না লাগিয়ে আমি দেখছি
কয়েকটা ন্যাংটো মলয়কে ছেড়ে দিয়ে তার আপ্রতিষ্ঠিত খেয়োখেয়ি
( হাংরি বুলেটিন, ১৯৬৪ )

                                              শুভা
 



                                                                                                        




শনিবার, ১২ মার্চ, ২০১১

যা লাগবে বলবেন কাব্যগ্রন্হ থেকে

যা লাগবে বলবেন
কে চেল্লায় শালা
কে চেল্লায় এত ভোরবেলা ?

গু-পরিষ্কার করেনি কাকেরা
মাছের বাজার থেকে ফেরেনি সবুজ মাছরাঙা
বকজোড়া আপিস যায়নি এখুনও !

কে চেল্লায়
কে চেল্লায়, অ্যাঁ, কিসেরি-বা রেলা ?

আমি, আমি, হাহ
আমিই আওয়াজ দিচ্ছি
চ্যাঁচাচ্ছি আমি
কোনোই বক্তব্য নেই
কোনোই কারণ নেই স্রেফ
চিৎকারের জন্যে চিৎকার
চিৎকারের ভেতরে চিৎকার

দ্রোহ
এ-নৌকো ময়ূরপঙ্খী
তীর্থযাত্রী
ব্যাঁটরা থেকে যাবে হরিদ্বার

এই গাধা যে-দিকে দুচোখ যায় যায়
যাযাবর
ঘাট বা আঘাটা যেখানে যেমন বোঝে
ঘুরতে চাই গর্দভের পিঠে
মাথায় কাগুজে টুপি মুখে চুনকালি
পেছনে ভিড়ের হল্লা।

সোমবার, ৭ মার্চ, ২০১১

আত্মধ্বংসের সহস্রাব্দ কাব্যগ্রন্থ থেকে

কী বিষয় কী বিষয়
      আররে রবীন্দ্রনাথ
তোমার সঙ্গেই তো নেচেছিলুম সেদিন
আঙুলের ইতিহাসে একতারার হাফবাউল ড়িং ড়াং তুলে
ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের জমঘট থেকে সদর স্ট্রিটের লবঙ্গবাজারে
যেতে-যেতে তুমি বললে আমাগো শিলাইদহ থিকা আসতাসি
আলুমুদ্দিন দপতর যামু

          আগুন আর জলের তৈরি তোমার ঠোঁটে
তখনও একচিলতে ব্রহ্মসঙ্গীত লেগেছিল কী গরম কী গরম
গ্যাবার্ডিনের আলখাল্লা ফেলে দিলে ছুঁড়ে
দেখলুম তোমার ফর্সা গায়ে জোঁক ধরেছে
বড়ো জোঁক বর্ষার জোড়াসাঁকোয়

        সেলিমের দোকানে শিককাবাবের গন্ধে
নেড়েগুলা কী রান্ধতাসে ? জানতে চাইলে
ও বললে, না বুঝলুঁ ? সাঁড়কে ছালন ছে !
আহাঁ দেখুঁ না চখকে

        চায়ের ঠেকে টাকমাথা চুটকি দাড়ি 
ভ্লাদিমির ইলিচ আর সোনালিচুল ভেরা ইভানোভা জাসুলিচ
আর তোমার মতন রুপোলি দাড়িতে অ্যাক্সেলরদ আর মারতভ যার গাল আপনা-আপনি কাঁপছিল দেখে 
তুমি বললে, উয়াদের ধড়গুলা কুথায় ?

        আমি আমার নাচ থামাতে পারছিলুম না বলে তুমি নিজের একতারাটা দিতে চাইলে কেননা তোমার পা থেকে নাচ যে পেরেছে খুলে নিয়ে গেছে
আর এখন তো দিনের বেলাও হ্যালোজেন জ্বলে
কী আনন্দ কী আনন্দ

        সদর স্ট্রিটের বারান্দায় 
তোমার তিনঠেঙে চেয়ারখানা পড়ে আছে
হুড়োহুড়ি প্রেম করতে গিয়ে পায়া ভেঙে ফেলেছিলে
তারিখ-সন লেখা আছে জীবনস্মৃতিতে
কী ভালোবাসা কী ভালোবাসা

        তোমার ফিটনগাড়ির ঘোড়া তো
কোকিলের মতন ডাকছে দাদু রবীন্দ্রনাথ
আর তোমার বীর্যের রেলিক্স থেকে কতজন যে পয়দা হয়েছিল মাটি থেকে ছোলাভাজা তুলে খাচ্ছে

        ওগুলা কী ? আমি বললুম কাক;
ওগুলারে কী কয় ? আমি বললুম সেলিমকেই জিগেস করো
ও এই অঞ্চলে তোলা আদায় করে ।
কী ঐশ্বর্য কী ঐশ্বর্য
২৪ আগস্ট ১৯৯৯

আমি ভঙ্গুর হে
    আমি যে-নাকি গাইডের কাছে ইতিহাস-শেখা ফোস্কাপড়া পর্যটক
ছায়ায় হেলান-দেয়া বাতিস্তম্ভের আদলে গিসলুম পিতৃত্ব ফলাবার ইসকুলে
জানতুম যতই যাই হোক ল্যাজটাই কুকুরকে নাড়ায় রে

    আমি যে-নাকি প্ল্যাটফর্মে ভবিষ্যভীতু কনের টাকলামাথা দোজবর
বস্তাপ্রতিম বানিয়ার বংশে এনেছিলুম হাইতোলা চিকেন চাউনি
কাদাকাঙাল ঠ্যাঙ থেকে ঝরাচ্ছিলুম ঘেসো ঝিঁঝির সাম্ভানাচ

    আমি যে-নাকি ফানুসনাভি ব্যাঙ থপথপে শুশুকমাথা আমলা
মাটিমাখা নতুন আলুর চোখে-দেখা দু'টাকা ডজন রামপ্রসাদী জবা
চাষির ঢঙে বলদ অনুসরণ করে পৌঁছেছিলুম বিধানসভার কুয়োতলায়

    আমি যে-নাকি পোলকাফোঁটা পুঁইফুলে দু'ভাঁজ করা হেঁইয়োরত বাতাস
ঢেউ-চাবকানো ঝড়ে যখন বঁড়শি-খেলা পুঁটির পাশে ভাসছি
তখন বুঝলি লম্বালম্বি করে কাটা কথাবাত্রার লাটিমছেঁড়া ঘুড়ি

আমি যে-নাকি ভূতলবাহী আওয়াজ-মিস্ত্রি হলদে-ল্যাঙোট বাবুই
চোখে-চোখে শেকল আঁকা ভিড়ের মধ্যে এঁদো বিভাগের কেঁদো
চি২ড়ি-দাড়া আঙুল দিয়ে খুলছি বসে জটপাকানো মুচকি ঠোঁটের হাসি 
৯ জুন ১৯৯৮ 

হার্টঅ্যাটাক
     বঁড়শিঝোলানো রোদকিলবিলে নদীর টুকরো থেকে
এক হ্যাঁচকায় তরল অভিকর্ষ বাতাসে খেলিয়ে ফ্যাকাশে আগুনের পুরুষ
এই মালগাড়ি-ঘ্যানঘ্যানে গ্রামের গল্ফ-সবুজ দুপুরে বসে রইল কচুপাতায়
ভ্রাম্যমাণ জলফোসকার দিকে তাকিয়ে

     তখন ওর কন্ঠার ঘামফোঁটা বুকের লোমে
ব্রেইল লিখনে আঙুল বুলিয়ে হাওয়া মাড়াবার নিঃশব্দ আওয়াজ তুলে নামছে
আর ঝাঁকড়ামাথা কুয়াশায় নাচতে লাগল রোদ্দুরের গন্ধে কাহিল ঝুলশিল্পী
মাকড়সার ইঁদুর-কালচে দলবল বন্ধ করতে ভুলে-যাওয়া দরোজার
তাড়া-খাওয়া সুড়ঙ্গে হাওয়ার সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগল মোমশিখার উদোম হাতছানি
ক্রমশ আঁটি শক্ত করতে শাঁস আলগা করে দিচ্ছিল গোলাপখাস
১৬মার্চ ১৯৯৮