মলয় রায়চৌধুরী

মলয় রায়চৌধুরী

বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০১৭

বুড়ি

এই বুড়ি আমার দিদিমার বয়সী
চুল পেকে গেছে, কয়েকটা দাঁত
নেই, দিদিমার মতন শুয়ে থাকে--
কবে শেষ হয়ে গেছে পুজো-পাঁজি
ক্যালেণ্ডারে ছবি-আঁকা তিথি
দিদিমার মতো এরও প্রতিরাতে
ঘুম পায় কিন্তু আসে না, স্বপ্নে
কাদের সঙ্গে কথা বলে, হাসে
চোখে ছানি তবু ইলিশের কাঁটা
বেছে ঘণ্টাখানেকে মজে খায়
দিদিমার মতো, বলেছে মরবে
যখন, চুড়ি-নাকছাবি খুলে নিয়ে
পাঠাতে ইনসিনেটরে, এই বুড়ি
চল্লিশ বছর হলো সিঁদুর পরে না
পঞ্চাশ বছর হলো শাঁখাও পরেনি
দামি-দামি শাড়ি বিলিয়ে দিয়েছে
দিদিমা যেমন তপ্ত ইশারায়
দাদুকে টেনে নিয়ে যেতো রোজ
এও আমাকে বলে এবার ঘুমোও
আর রাত জাগা স্বাস্হ্যের পক্ষে
খারাপ, এই বুড়ি যে আমার বউ
বিছানায় শুয়ে বলে, কাউকে নয়
কাউকে দিও না খবর, কারুক্কে নয়--
এ-কথাটা আমারই, কাউকে নয়
কারুক্কে বোলো না মরে গেছি ।
 

বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

কলকাতার স্ট্যাচু

ওরে, তোরা কি জানিস
মোড়ের মূর্তির বদলে ওর মাথায়-বসা গোলা-পায়রাটার খ্যাতি কেন বেশি ?
স্ট্যাচুটাতো ছিল মরার আগের দিন ব্যাপটাইজ করা কলকেতিয়া কাঙাল
উপমা দিতে হলে বলতে হয় উনি ছিলেন অতুলনীয় একজন ফক্কা
ওড়ার অভ্যাস ভুলে আলো-নাচুনি মাদি ঝিঁঝির ফুররি

ওরে, তোরা কি জানিস
বিলিতি সায়েবের নাম-মোছা কবরফলক ফিরে এসচে শিল-নোড়া হয়ে
দাদু-দিদা প্রজন্মের সেসব ভুতুড়ে ব্যথা-বেদনা যখন মশলা বাটায় মেশে
মৌজমস্তির দিলদার ছকেতে সেসব শিহরণ মাইরি বলবার নয়
যখন কিনা মৌমাছির পাখনার হাওয়া ছাড়া ফুলের বুকের জ্বালা কমে না

ওরে, তোরা কি জানিস
বিশৃঙ্খলায় ঘাপটি মেরে যেসব নিহিতার্থ হরবখত ভোল পালটায়
তাদের মৃত্যু তো একরকম কৌমার্য যা ছিল আমার ছেলেবেলায়
যখন জনগণের জিভে জমানো তিতিবিরক্ত ফিসফিসানিগুলো
পেঁকো পথের দু'ধারে অশথগাছে কচিমেরুন পাতার ঢঙে বেরিয়ে পড়েছিল

ওরে, তোরা কি জানিস
প্র্রভূ সেজে মানুষের হাঁটার কায়দা কেন নাগরিকের থেকে আলাদা হয় ?
আসলে মেঘের কানায়-কানায় কালচে-কালো ভাষা নিয়ে মারকাটারি আলো
ফোঁপরা ছায়ার টুপি পরিয়ে ওকে হিরোগিরিতে এমন বুঁদ করে
যিন নিষ্কলুষ নোংরামির জোয়ার বেচবার একচেটে মালিকানা পেয়েছে

সোমবার, ২ জানুয়ারী, ২০১৭

ঘাস

ঘাস হয়ে জন্মেছি আমি, একজন কচি
যুবতীর দু'পায়ের মাঝে, ঘিরে আছি তার
গোপন গন্ধমাদনের ঝর্ণা, বিগত অস্তিত্বে
ঘাসই ছিলুম, আমার সবুজ রক্ত পান করে
জেব্রা মহিষ ভেড়া ছাগলেরা রক্তকে লাল
করে নিতে পেরেছিল, আমিষলোভী
এই যুবতীর রক্তে এখন মিশেছি, তাই
তার দু'পায়ের মাঝে কোঁকড়া কৃষ্ণ ঘাস
হয়ে ক্রমে জন্মালুম, আমি তোতলাবো
প্রজাপতি-ডানার গরম উড়ালে
তখন শীতল আগুনে দাউ-দাউ পুড়ে 
ঠাণ্ডা হবো, মহাগ্রন্হের মলাট দুই পাশে
যার জন্য ট্রয়ের লঙ্কার যুদ্ধ, কতো গল্প
রয়েছে ঘাসের পৃথিবীতে, অতল গহ্বরে
তৃষ্ণার্ত খেলার সঙ্গী হই আমি, দুপুরে
সন্ধ্যায় রাতে তাতাই একাকীত্ব দিয়ে
প্রতি মাসে একবার ডিমের পোচ খাই
কখনও বা আঙুলের বদলে অন্যকিছু
আমাকে লুকিয়ে করা অসম্ভব, জানে
তাই মাঝে-মাঝে সেফটি-রেজর কাঁচি
ঘাসনাশক দিয়ে আমাকে লোপাট করে
আমিও নাছোড় প্রেমিক, মাথাচাড়া দিই
ঘাসের সঙ্গে কারো পেরে ওঠা অসম্ভব
সারা বিশ্ব জুড়ে আমাদের ভূরাজত্ব
মরি না কখনও আমরা, কৃষ্ণ বা
সবুজ ঘাসেরা, আমরা মহীরুহ নই
মনে হয় শুকিয়ে গিয়েছি, আসলে জিরোই
খেলতে সাহায্য করি বাঁচতে খোরাকি
ঢেউ তুলব ঘর্মাক্ত শরীরে, একদা
সবুজ ঘাস আমি, নবজন্মে আজ
প্রহেলিকা ইশারার ফাঁদ পেতে আছি
জানি কোনো সৎ-কাপুরুষ আসবে
তার বাড়তি বীজ ফেলার জন্য রাতে