মলয় রায়চৌধুরী

মলয় রায়চৌধুরী

শুক্রবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৮

অবন্তিকাকে নিয়ে যৎসামান্য গুচ্ছ কবিতা


                                              

অবন্তিকা , তোর জন্য, তোকে নিয়ে, তোকে লেখা

অবন্তিকা, তোর ওই মহেঞ্জোদারোর লিপি উদ্ধার
কী গণিত কী গণিত মাথা ঝাঁঝা করে তোকে দেখে
ঝুঁকে আছিস টেবিলের ওপরে আলফা গামা পাই ফাই
কস থিটা জেড মাইনাস এক্স ইনটু আর কিছু নাই
অনন্তে রয়েছে বটে ধূমকেতুর জলে তোর আলোময় মুখ
প্রতিবিম্ব ঠিকরে এসে ঝরে যাচ্ছে রকেটের ফুলঝুরি জ্বেলে
কী জ্যামিতি কী জ্যামিতি ওরে ওরে ইউক্লিডিনি কবি
নিঃশ্বাসের ভাপ দিয়ে লিখছিস মঙ্গল থেকে অমঙ্গল
মোটেই আলাদা নয় কী রে বাবা ত্রিকোণমিতির জটিলতা
মারো গুলি প্রেম-ফেম, নাঃ, ফেমকে গুলি নয়, ওটার জন্যই
ঘামের ফসফরাস ওড়াচ্ছিস ব্রহ্মাণ্ড নিখিলে গুণ ভাগ যোগ
আর নিশ্ছিদ্র বিয়োগে প্রবলেম বলে কিছু নেই সবই সমাধান
জাস্ট তুমি পিক-আপ করে নাও কোন প্রবলেমটাকে
সবচেয়ে কঠিন আর সমস্যাতীত  বলে মনে হয়, ব্যাস
ঝুঁকে পড়ো খোলা চুল লিপ্সটিকহীন হাসি কপালেতে ভাঁজ
গ্যাজেটের গর্ভ চিরে তুলে নিবি হরপ্পা-সিলের সেই বার্তাখানা
হাজার বছর আগে তোর সে-পুরুষ প্রেমপত্র লিখে রেখে গেছে
মহেঞ্জোদারোর লিপি দিয়ে ; এখন উদ্ধার তোকে করতে হবেই
অবন্তিকা, পড় পড়, পড়ে বল ঠিক কী লিখেছিলুম তোকে–
অমরত্ব অমরত্ব ! অবন্তিকা, বাদবাকি সবকিছু ভুলে গিয়ে
আমার চিঠির বার্তা তাড়াতাড়ি উদ্ধার করে তুই আমাকে জানাস

_______________________________________________________________________

ব্লাড লিরিক
অবন্তিকা, তোর খোঁজে মাঝরাতে বাড়ি সার্চ  হল
এর মতো ওর মতো তার মতো কারো মতো নয়
যেন এমন যেন অমন যেন তেমন নয়
.
কী করেছি কবিতার জন্য আগ্নেয়গিরিতে নেমে !
এ কি, একি ? কী বেরোচ্ছে বাড়ি সার্চ করে
কবিতায় ? বাবার কাচের আলমারি ভেঙে ব্রোমাইড সেপিয়া খুকিরা
কবিতায় । হাতুড়ির বাড়ি মেরে মায়ের তোরঙ্গে ছিঁড়ে বিয়ের সুগন্ধী                                                                                                      বেনারসী
কবিতায় । সিজার লিস্টে শ্বাস নথি করা আছে
কবিতায় । কী বেরোলো ? কী বেরোলো ? দেখান দেখান
কবিতায় । ছি ছি ছি ছি, যুবতীর আধচাটা যুবা ! মরো তুমি মরো
কবিতায় । সমুদ্রের নীলগোছা ঢেউ চিরে হাড়মাস চেবাচ্ছে হাঙর
কবিতায় । পাকানো ক্ষুদ্রান্ত্র খুলে এবি নেগেটিভ সূর্য
কবিতায় । অস্হিরতা ধরে-রাখা পদচিহ্ণে দমবন্ধ গতি
কবিতায় । লকআপে পেচ্ছাপে ভাসছে কচি বেশ্যা-দেখা আলো
কবিতায় । বোলতার কাঁটাপায়ে সরিষা ফুলের বীর্যরেণু
কবিতায় । নুনে সাদা ফাটা মাঠে মেটেল ল্যাঙোটে ভুখা চাষি
কবিতায় । লাশভূক শকুনের পচারক্ত কিংখাব গলার পালকে
কবিতায় । কুঁদুলে গুমোট ভিড়ে চটা-ওঠা ভ্যাপসা শতক
কবিতায় । হাড়িকাঠে ধী-সত্তার কালো-কালো মড়া চিৎকার
কবিতায় । মরো তুমি মরো তুমি মরো তুমি মরলে না কেন
কবিতায় । মুখে আগুন মুখে আগুন মুখে আগুন হোক
কবিতায় । মরো তুমি মরো তুমি মরো তুমি মরো তুমি মরো
কবিতায় । এর মতো ওর মতো তার মতো কারো মতো নয়
কবিতায় । যেন এমন যেন অমন যেন তেমন নয়
কবিতায়, অবন্তিকা, তোর খোঁজে সার্চ হল, তোকে নিয়ে কই গেল না                                                                                                           তো !

________________________________________________________________________________________
আলফা ফিমেল বিড়ালিনী
ক্যাটওয়াকে শোস্টপার, শব্দহীন আলতো স্টিলেটো ফেলে দেহের আলোয়
মেলে ধরছিস তুই বাঁকের বদলগুলো হাসির হদিস তুলে, ঠিক যেন
ইমলিতলার তিন তলা থেকে বারবার ভাসাচ্ছিস দু’থাবার
তুলোট ম্যাজিক, অবন্তিকা, আলফা ফিমেল বিড়ালিনী, কোলে নিয়ে
আদর করিস যাকে তারই চরিত্র তোকে চেপে ধরে কালো শাদা বাদামি ধূসর
নক্ষত্র-ক্লোনিং চোখে অর্গলছেঁড়া তোর লিভ-ইন কোনো পৌরাণিক
ঋষির রেশমি ঠোঁটে দরোজাবর্জিত কিছু অ্যাগ্রেসিভ আঁচড়-কামড়–
তুই কি নীলাভ দূরত্বে থাকা অরুন্ধতী ? নাকি তুই
হবির্ভু সন্নতি কলা অনসূয়া ক্ষমা শ্রদ্ধার কোঁকড়া ঘনান্ধকারে
দু’পাশে দর্শক নিয়ে ক্যাটওয়াকে হাঁটছিস দেশ-কালহীন ?
তাই তোকে বর্ণসংকর করা কতই সহজ দ্যাখ, আদুরে অ-নাস্তিক
নিজেই নিজেকে চেটে অহরহ স্পিক অ্যান্ড স্প্যান থাকবার
যৌনতার নরম মডেল তোর আদি-মা বা পূর্বপুরুষ ছিল কিনা
কেউই জানে না দেখতে কীরকম গায়ের আদল কন্ঠস্বর
শ্বাসে তোর পাখির উড়াল-গান ইঁদুরের মৃত্যুমুখী-খেলা মাছেদের ঘাই
অবন্তিকা, অধুনান্তিকা, তোকে সীমা দিয়ে বেঁধে ফেলা অসম্ভব ;
কোন পুরুষ ? কোন পুরুষ ? কোন পুরুষ ? কোন পুরুষ ?
তৈমুর আত্তিলা-হুন ক্যালিগুলা পল-পট রোবেসপিয়ার ? নাহ–
তোর প্রেম অনির্ণেয় তবু তুই ক্যাটওয়াকে গ্রীবা তুলে আমাকে খুঁজিস…
( ইউ টিউবে এই কবিতাটি মলয় রায়চৌধুরীর কন্ঠে শোনা যাবে ।

__________________________________________________________________________________________________________________________________
পপির ফুল
বোঁটায় তোর গোলাপ রঙ অবন্তিকা
শরীরে তোর সবুজ ঢাকা অবন্তিকা
আঁচড় দিই আঠা বেরোয় অবন্তিকা
চাটতে দিস নেশায় পায় অবন্তিকা
টাটিয়ে যাস পেট খসাস অবন্তিকা।

___________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
পরমাপ্রকৃতি
মেঘের রং দিয়ে ছুঁয়ে দিস অবন্তিকা
চামড়া বাঘের ডোরা ধরে
হাওয়ার রেশম দিয়ে চুল আঁচড়ে দিস অবন্তিকা
মাথা বেয়ে ওঠে বুনো মহিষের শিং
ঝড়ের মস্তি দিয়ে পাউডার মাখিয়ে দিস অবন্তিকা
গায়ে ফোটে গোখরোর আঁশ
হরিণের নাচ দিয়ে কাতুকুতু দিস অবন্তিকা
ঈগলপাখির ডানা পাই
রোদের আঁশ দিয়ে নখ কেটে দিস অবন্তিকা
গজায় নেকড়ের থাবা হাতে পায়ে
নদীর ঢেউ দিয়ে চুমু খাস অবন্তিকা
কাঁধে পাই রাবণের জ্ঞানী-গুণী মাথা
বৃষ্টির ঝাপট দিয়ে জড়িয়ে ধরিস তুই অবন্তিকা
হুইস্কির বরফ হয়ে যাই
গানের সুর দিয়ে চান করিয়ে দিস অবন্তিকা
ডুবে যেতে থাকি চোরা ঘূর্ণির রসে ।
( ইউ টিউবে এই কবিতাটি নুর হোসাইন–ছদ্মনাম মনবন্দী–এর কন্ঠে শোনা যাবে )

___________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
অন্তরটনিক
বিড়ি ফুঁকিস অবন্তিকা
চুমুতে শ্রমের স্বাদ পাই
বাংলা টানিস অবন্তিকা
নিঃশ্বাসে ঘুমের গন্ধ পাই
গুটকা খাস অবন্তিকা
জিভেতে রক্তের ছোঁয়া পাই
মিছিলে যাস অবন্তিকা
ঘামে তোর দিবাস্বপ্ন পাই।

___________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
লোকাল ও গ্লোবাল
কে দিয়েছে উরুতে তোর
প্রেমের নীল
অবন্তিকা

কে দিয়েছে
দুগালে তোর
গোলাপ কাঁটা
অবন্তিকা

কে দিয়েছে
কোমরে তোর
বেতের প্রেম
অবন্তিকা

প্রেমিকরা তোর
খুবলে খায়
এখান-সেখান
অবন্তিকা

আমি তো চাই
সমস্তটুক
এপিঠ-ওপিঠ
এক লপ্তে
ওপর-নিচ
অবন্তিকা।

___________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
নয়নিমা
ব্যায়াম করিস তুই অবন্তিকা, নরম গোলাপি ম্যাটে শুয়ে, মিহিমিহি
বাজনায় বডি তোর মৃদঙ্গ তালের ঢঙে ফুল-অন উরুকে ফোলায়
পা-দুটো ওপরে ওঠে, উলঙ্গ সাঁতারু, আয়নার পারা গুঁড়ো-গুঁড়ো
ভাসাস সঙ্গীতে ধোয়া উড়ন্ত বকের ডানা, কাকে দিবি বলে
কাঁচা মাটি মাখছিস আঁটো-সাঁটো লোভনীয় পাছাটি দুলিয়ে ?

____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
শরীর সার্বভৌম
জরায়ুটা বাদ দিয়ে অমন আনন্দ কেন অবন্তিকা
তাও এই গোরস্হানে দাঁড়িয়ে গাইছিস তুই
মৃত যত প্রেমিকের গালমন্দে ঠাসা ডাকনাম
যারা কৈশোরে তোর বিছানার পাশে হাঁটু মুড়ে বসে
ভুতুড়ে কায়দায় ঝুঁকে প্রেম নিবেদন করেছিল ?
তারপর তারা সব একে-একে লাৎ খেয়ে বিদেয় হয়েছে
অন্য যুবতী ফাঁসতে যাদের জরায়ুপথ বীজ শুঁকলেই
কয়েক হপ্তায় ফুলে ওঠে। সেসব মহিলা কিন্তু আনন্দই পেতো
এই মনে করে যে দেহটা তো সার্বভৌম, মন বা মনন নয়–
মন না চাইলেও দেহে খেলে যায় ওগরানো তরল বিদ্যুত
যা কিনা ভালো-খারাপের উর্দ্ধে ; ঠিকই বলেছিস তুই
শরীরই সার্বভৌম….

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
প্রেমিকার ম্যালেরিয়া
দেখলি তো অবন্তিকা মশা-বধুরাও তোর
প্রেমিকগুলোর রক্ত চেনে ! মেঝেয় ছড়ানো তোর
গুঁড়ো গুঁড়ো মুখচ্ছবি উড়িয়ে পড়েছে সটকে
তোর যত পার্টটাইম সুবেশ ডিউডদল ।
জগরদেহ চাইছে রে জড়িয়ে ধরুক তোর
গা-ময় ছড়ানো শীত নিভিয়ে ফেলুক কেউ
তাপের স্হানিক নিম শুকনো ঠোঁটের শ্লেষে
যা তুই চিরটাকাল আমারই জন্য শুধু
রাখলি ঘুমের ভানে ; এরম ব্যবস্হা ভালো
অন্তত তাহলে শুধু আমার কাছেই পাবি
জ্বরের বিকল্প তোর রোগ ।

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
প্রজাপতি প্রজন্মের নারী
রবীন্দ্রনাথ এটা কিন্তু ভালো হচ্ছে না–
অবন্তিকা বলছিল, আপনি প্রতিদিন
ওকে রুকে নিচ্ছেন, আপনাকে সাবান
মাখাবার জন্য, বুড়ো হয়েছেন বলে
আপনি নাকি একা বাথরুমে যেতে
ভয় পান আর হাতও পৌঁছোয় না
দেহের সর্বত্র, চুলে শ্যাম্পু-ট্যাম্পু করা;
পোশাক খুললে আসঙ্গ-উন্মুখ নীল
প্রজাপতি ওড়ে ওরই শরীর থেকে
আর তারা আপনার লেখা গান গায় ।

এটা কি করছেন আপনি ? আপনার
প্রেমিকারা বুড়ি থুথ্থুড়ি বলে কেন
আমার প্রেমিকাটিকে ফাঁসাতে চাইছেন !

______________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
মেরু বিপর্যয়
অবন্তিকা, হিপি বিদেশিনী, স্লিপিং ব্যাগেতে তোর
চুপচাপ ঢুকে যেতে দিয়েছিলি, শুনে আমি কবি,
‘টাইম’ পত্রিকা ফোটো ছাপিয়েছে, বিটনিকরাও
লিখেছে আমার কথা বড়ো করে তাদের কাগজে—
হ্যাশ টেনে ভোম মেরে দু-ঠ্যাং ছড়িয়ে সে-প্রণয়
গিঁথে আছে চেতনায় কবিতা ভাঙিয়ে তোর শ্বাস
না-মাজা দাঁতের ভাপ সোনালি শুকনো চুল ধরে
বুকে ময়লাটে তাপে মুখ গুঁজে কবিত্ব করেছি;
বলেছিলি, কবিতা তো জিভের ডগায় বাস করে,
তোমার ভাষায় লেখো জিভ দিয়ে রহস্যগহ্বরে।
আমার পৃথিবী উল্টে দিয়েছিস সেই রাত থেকে
পা উপরে মাথা নিচে এ-আমার সৃজন-জগত–
হিপি বিদেশিনী তোর গন্ধ ভুলে গেছি; তোর নাম
টিকে আছে অবন্তিকা হয়ে আরো নারীদের সাথে ।
( ইউ টিউবে এই কবিতাটি মলয় রায়চৌধুরীর কন্ঠে শোনা যাবে )

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
কৃত্রিমতা
গাড়ির কাচটা নামা ; গগলস খুলে ওই দ্যাখ
সেই সাব-এডিটর তোর অভিনয়ে কৃত্রিমতা
আছে লিখে তুলোধনা করেছিল তোকে অবন্তিকা
তাকিয়ে রয়েছে তোর পোস্টারের খাঁজে অপলক–
নাহ, অপলক বলা যুৎসই নয়, গিলছে রে
তোর সিলিকন-ঠাসা বুক দুটো । ভুলে গেছে ব্যাটা
ওদুটো কৃত্রিম, কিন্তু যৌনতার শিল্পবোধে ফেঁসে
লটকে পড়েছে তোর বুকের নিজস্ব অভিনয়ে ।

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
নাচ মুখপুড়ি
নাচ তুই নাচতে থাক অবন্তিকা, উইখেকো গোরিলার ঢঙে
নাচতে থাক নাচতে থাক নাচ কী হয় কী যে হয় তালে তালে
আমি আছি তোর ঘামে নুন হয়ে হাওয়ার সঙ্গে ট্যাঙ্গো
আলোর সঙ্গে ফক্সট্রট কিংবা দোলানো পাছায় মাম্বো রুম্বা বুগি
পাসো দোবলে লিকুইড লকিং বোলেরো জাইভ সুইং সকা
মুনওয়াক ফ্ল্যামেংগো নাচে কথা বলা বন্ধ রেখে তুই
নিজেকে নাচাতে থাক ডি জে; আমি আছি তোর নাভি ফুটো করে
হালকা হলুদ পোখরাজে, অন্তর্বাসে আছি আলতো
সন্মোহিনী কটূগন্ধে রাতজাগা পিচুটিতে
মোদোভাপ নিঃশ্বাসে নখের পুরানো ময়লায়
চুমুপ্রিয় গালের ফুসকুড়ি হয়ে তেষ্টা পাওয়া খসখসে ঠোঁটে
শ্লেষাত্মক হাসি হয়ে আছি বুঝতে পারবি না মুখপুড়ি
কেননা তুই ঢঙি চিরকাল কেবলই নেই নেই নেই নেই
নেই নেই নেই নেই করে নেচে গেলি নেচে গেলি নেচে
ভাষার মাস্টার বোদা করিয়োগ্রাফারের ইশারায়
( ইউ টিউবে এই কবিতাটি নুর হোসাইন—ছদ্মনাম মনবন্দী—এর কন্ঠে শোনা যাবে )

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
ডেথ মেটাল
মুখপুড়ি অবন্তিকা চুমু খেয়ে টিশ্যু দিয়ে ঠোঁট পুঁছে নিলি ?
শ্বাসে ভ্যাপসা চোখের  তলায় যুদ্ধচিহ্ণ এঁকে ডেথ মেটাল মাথা দোলাচ্ছিস
চামড়া-জ্যাকেট উপচে লালনীল থঙ গলায় পেতল-বোতাম চোকার
ঝাপটাচ্ছিস সেকুইন গ্ল্যাম রকার খোলা চুল কোমরে বুলেট বেল্ট
বেশ বুঝতে পারছি তোকে গান ভর করেছে যেন লুঠের-খেলা
স্ক্রিমিং আর চেঁচানি-গান তোর কার জন্য কিলিউ কিলিউ কিল
ইউ, লাভিউ লাভিউ লাভ ইউ কাঁসার ব্যাজপিন কব্জিবেল্ট
কুঁচকিতে হাত চাপড়ে আগুনের মধুর কথা বলছিস বারবার
আমি তো বোলতি বন্ধ থ, তুই কি কালচে ত্বকের সেই বাঙালি মেয়েটা ?
কোথায় লুকোলি হ্যাঁরে কৈশোরের ভিজেচুল রবীন্দ্রনাথের স্বরলিপি
কবে থেকে নব্বুই নাকি শূন্য দশকে ঘটল তোর এই পালটিরূপ
পাইরেট বুট-পা দুদিকে রেখে ঝাবড়া চুলে হেড ব্যাং হেড ব্যাং হেড ব্যাং
ঝাঁকাচ্ছিস রঙিন পাথরমালা বুকের খাঁজেতে কাঁকড়া এঁকে
পাগলের অদৃশ্য মুকুট পরে দানব-ব্লেড বেজ গিটারে গাইছিস
বোলাও যেখানে চাই নেশা দাও প্রেম-জন্তুকে মারো অ্যানথ্র্যাক্স বিষে
মেরে ফ্যালো মেরে ফ্যালো মেরে ফ্যালো কিল হিম কিল হিম কিল
কিন্তু কাকে বলছিস তুই বাহুতে করিটি উল্কি : আমাকে ?
নাকি আমাদের সবাইকে যারা তোকে লাই দিয়ে ঝড়েতে তুলেছে ?
যে আলো দুঃস্বপ্নের আনন্দ ভেঙে জলের ফোঁটাকে চেরে
জাপটে ধরছিস তার ধাতব বুকের তাপ মাইকে নিঙড়ে তুলে
ড্রামবিটে লুকোনো আগুনে শীতে পুড়ছিস পোড়াচ্ছিস
দেয়াল পাঁজিতে লিখে গিয়েছিলি ‘ফেরারি জারজ লোক’
ভাঙাচোরা ফাটা বাক্যে লালা-শ্বাস ভাষার ভেতরে দীপ্ত
নিজেরই লেখা গানে মার্টিনা অ্যাসটর নাকি ‘চরমশত্রু’ দলে
অ্যানজেলা গস কিংবা ‘নাইট উইশ’-এর টারজা টুরম্যান
লিটা ফোর্ড, মরগ্যান ল্যানডার, অ্যামি লি’র বাঙালি বিচ্ছু তুই
লাল নীল বেগুনি লেজার-আলো ঘুরে ঘুরে বলেই চলেছে
তোরই প্রেমিককে কিল হিম লাভ হিম কিল হিম লাভ হিম লাভ
হিম আর ঝাঁকাচ্ছিস ঝাবড়া বাদামি চুল দোলাচ্ছিস উন্মাদ দু’হাত….
( ইউ টিউবে এই কবিতাটি রাজীব চৌধুরীর কন্ঠে শোনা যাবে )

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
তোর বহির্মুখ, মুখপুড়ি
তোর বহির্মুখী দেহ, আদর-ক্লান্ত ঘামে, মুখপুড়ি মেছোমেয়ে
আলুথালু মরশুমে বেড়ে ও ফিকিরহীন, আপপ্রচারে ,বুঝলি
জাহাজ ভাসাতে চাইছে পিম্পদের ঘোড়েল জোয়ারে ।
হাউ সিলি ! নো ? কী বলিস, ডারলিং, সুইটি পাই ?
তোর নাব্য নগ্নতা গ্লসি কাগজের চারু মলাটে হেলান দিয়ে
পুজো সংখ্যার মোটা বেহেডদের পাশে শুয়ে করছেটা কী ?
বল তুই ? তোর কোনো সে নেই ? বোবা না বধির তুই !
অলংকার-টলংকার বেচে খেয়েছিস জানি । বাড়ির কাঠামি
দেখছি ঝুলে গেছে দশ বছর বাদে-বাদে কিস্তি দিতে দিতে;
হাউ স্যাড । চ্যাংড়া যারা জোটে তারা টেকে না কেন রে ?
বছর না যেতেই কাট মারে ! অথচ বডি তো সরেস আজও
অক্ষরের ধাঁচে জমে একেবারে টানটান আগাপাছতলা
কন্ঠের টিউনিঙও শ্বাসকে ফুরিয়ে ফ্যালে রাত বাসি হলে ।
বেশ্যার আলতা-মাখা গোড়ালি দেখবো ভাবিনি— তাও
ব্যালেরিনা জুতোর আবডালে, অবন্তিকা, ঘামে ভেজা
প্রণামীর খাতিরে তুই কত রকমের ফাঁদ পেতে রেখেছিস।

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
স্কুলের কবিতা
কী পচে তোর বুকের পাঁকে অবন্তিকা
উইপোকাতে চেবায় কি বদ চিহ্ণগুলো
ছন্দ মেনে যাদের মাথায় গেঁথেছিলি
পরীক্ষায় প্রথম হবার পোক্ত সিঁড়ি
রাস্তা মেনে এখন তারা আঙুলজুড়ে
উইঢিপিতে শ্লেষ্মা হয়ে যক্ষ্মাপোকা
নাকি শ্বাসের পচন থেকে কৃষ্ণপক্ষে
অমাবস্যার শীতের রাতে লক্ষ্মীপ্যাঁচা !
ভাগ্য ভালো স্কুলের পদ্যে আমার লেখা
না যায় যাতে এমনভাবে সাজাচ্ছি রে
বাদাড় খুঁজে পাওয়া বুনো শব্দ-বাক্য ।

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
কপিরাইট
অবন্তিকা, অতি-নারী, অধুনান্তিকা
পঞ্চান্ন বছর আগে চৈত্রের কোনারকে
লোডশেডিঙের রাতে হোটেলের ছাদে
ঠোঁটের ওপরে ঠোঁট রেখে বলেছিলি
চুমু প্রিন্ট করে দিচ্ছি সারা নোনা গায়ে
ম্যাজেন্টা গোলাপি ভিজে লিপ্সটিকে
গুনে গুনে একশোটা, লিমিটেড এডিশান
কপিরাইট উল্লঙ্ঘন করলে চলবে না ।

অবন্তিকা, সাংবাদিকা, অধুনান্তিকা
এ-চুক্তি উভয়েরই ক্ষেত্রে লাগু ছিল;
কিন্তু দুজনেই এর-তার কাছ থেকে
শুনেছি কখন কবে কার সাথে শুয়ে
ভেঙেছি ভঙ্গুর চুক্তি কেননা মজাটা
ঠোঁটের ফাইনপ্রিন্টে লিখেছিলি তুই।
না যায় যাতে এমনভাবে সাজাচ্ছি রে
বাদাড় খুঁজে পাওয়া বুনো শব্দ বাক্য ।
( ইউ টিউবে এই কবিতাটি মলয় রায়চৌধুরীর কন্ঠে শোনা যাবে )

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
দ্রুতির দেবী তুই ডারলিং
উত্তর বিশ্বায়নে তুই অবন্তিকা একেবারে
পালটে গিয়েছিস রেড ওয়াইন সফ্ট ড্রাগস
ক্যাজুয়াল সেক্স দ্রুতির দেবী হতে গিয়ে
পুড়ে খাক হয়ে গেলি কিনা চাকরি বদল
শহর বদল করলি কতবার এই নিয়ে
মন তোর ভরে না কিছুতে টানা কাজ
স্মার্ট ফোন প্রজেক্ট রিপোর্ট কাঁধে
ল্যাপটপ কোক বারগার পিৎসা সিগারেট
রাত জেগে সপ্তাহান্তে বিঞ্জ-পার্টি
নতুন মডেল গাড়ি পালতু বয়ফ্রেন্ড
হাইহিলে দৌড়ে ধরতে চলেছিস দ্রুতি…

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
নুন ও নিমকহারামি
তুই তো আমার ঘাম জিভ দিয়ে ছুঁয়ে
বলেছিলি অবন্তিকা, ‘আহ কি নোনতা
অন্তরতমের প্রাণ— পুরুষালি ঘ্রাণ’ ;
সেই দিন, লক-আপ থেকে আদালতে
হাতে হাতকড়া আর কোমরে দড়ির
ফাঁসে বাঁধা, হেঁটেছি ডাকাত-খুনিদের
সাথে, রাজপথে সার্কাসপ্রেমীদের ভিড় ।

বিশ্বাসঘাতক যারা, আমার বিরুদ্ধে
আদালতে রাজসাক্ষী হয়েছিল, তারা
কাঠগড়া থেকে নেমে বলেছিল, নুন
তো পায়নি, মিষ্টি ছিল আমার ঘামেতে :
তাই বিশ্বাসভঙ্গের প্রশ্ন নেই কোনো—
নিমকহারামি বলা চলবে না তাকে ।
( ইউ টিউবে এই কবিতাটি মলয় রায়চৌধুরীর কন্ঠে শোনা যাবে )

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
আলফা পুরুষের কবিতা
কী দিয়ে তৈরি তুই ? নারীকে কবিতায়
আনা যাবেনাকো বলে তোর হুমকি
অবন্তিকা ! কোন ঋতু দিয়ে গড়া ? স্কচ
না সোংগল মল্ট ? নাকি তুই হোমিওপ্যাথির
শিশি থেকে উবে যাওয়া ৩৫ হাজার ফিট
ওপরে আকাশে, প্লেনের হোল্ডে রাখা শীতে
নদীর মোচড়ানো বাঁকে ইলিশের ঝাঁক ?
আলোকে দেশলাই বলে ভাবলি কী ভাবে
কেন? কেন? কেন? কেন? অ্যাঁ ? অবু,
অবন্তিকা ? ভুলে গেলি তোরই ছোঁয়া পেয়ে
আড়মোড়া ভেঙেছিল চকমকি পুরুষ-পাথর !
বল তুই, বলে ফ্যাল , মিটিয়ে নে যত ঝাল
জমা করে রেখেছিস স্কচ-খাওয়া জিভে ;
তোই বাড়িকে ঘিরে তুষারের তীব্র আলো
সূর্য ওঠেনি আজ পনেরো দিনের বেশি
তবু তোর মুখশ্রী শীতে আলোকিত কেন ?
আসলে অন্যের ওপরে রাগ, উপলক্ষ আমি,
হ্যাঁ, হ্যাঁ, খুলে বল, দাঁতে দাঁত দিয়ে বল
যে ভাবে ইচ্ছে তুই উগরে দে স্টক তোর…

তোকে নিয়ে লিখতে পারব না, এ নিষেধ
অমান্য করেই তবে পাতছি চোরা শব্দফাঁদ
অবন্তিকা বুনোগন্ধা খুকিবাদী হে প্রেমিকা
এই নে মাটির পোড়ানো আংটি হাঁটু গেড়ে
দিচ্ছি তোর ক্রুদ্ধ আঙুলে, নিবি বা ফেলে দিবি
তা তোর অ্যাড্রেনালিন বুঝবে অবন্তিকা
আমি তো নাচার যতক্ষণ না যাচ্ছিস
মগজের ছাইগাদা-বিস্মৃতির উড়ো আবডালে ।
( ইউ টিউবে এই কবিতাটি মলয় রায়চৌধুরীর কন্ঠে শোনা যাবে )

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
প্রিয়াংকা বড়ুয়া
প্রিয়াংকা বড়ুয়া তোর
ঠোঁটের মিহিন আলো
আমাকে দে না একটু

ইলেকট্রিসিটি নেই
বছর কয়েক হল
আমার আঙুলে-হাতে

তোর ওই হাসি থেকে
একটু কি নিভা দিবি
আমার শুকনো ঠোঁটে

যখনি বলবি তুই
কবিতার খাতা থেকে
তুলে দিয়ে দেবো তোকে

আগুনও আছে নাকি
তোর দেহে কোনো খাঁজে
চাইতে বিব্রত লাগে

জোনাকির সবুজাভ
আলো থাকলেও চলে
দে না রে একটুখানি

ঠোঁট যে শুকিয়ে গেছে
প্রিয়াংকা বড়ুয়া দ্যাখ
কবিতা লেখাও বন্ধ

তোর দেয়া কবেকার
অন্ধকারে এখনও
হাতের আঙুল ডুবে

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________নখ
অমরত্ব
সালিশি-সভার শেষে তাড়া করে পিটিয়ে মেরেছে যারা, তারা
তোকেও রেয়াত করল না অবন্তিকা ; আমরা দুজনে পচে
চলেছি হুগলি ঘোলা জলে ভেসে : কী দোষ বলতো আমাদের ?
বউ তুই বৈভবশালীর, আমি গোপন প্রেমিক ছোটোলোক;
সাম্যবাদ নিয়ে কত কথা চালাচালি হল তিরিশ বছরে,
প্রেমিকের জন্য নয়, কে জানে কাদের জ্ঞানে লেগেছে কেতাব–
প্রেমে পচে গলে হারিয়ে যাওয়া ছাড়া যা থাকে তা অর্থহীন
সংসারের ঘানি টেনে কলুর বলদে মেটামরফোজড প্রাণী,
পার্টির ফেকলু কর্মী । ভাল এই লাশ হয়ে সমুদ্র ফেনায়
বিশাল ঢেউয়ে চেপে সকালি আলোর পথে মৃত জড়াজড়ি…

____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
নখ কাটা ও প্রেম
রবীন্দ্রনাথ, দেড়শো বছর পর একটা প্রশ্ন আপনাকে :
কে আপনার নখ কেটে দিত যখন বিদেশ-বিভুঁয়ে থাকতেন ?
সেই বিদেশিনী ? নাকি চৌখশ সুন্দরী ভক্তিমতীরা ?
যুবতীরা আপনার হাতখানা কোলের ওপরে নিয়ে নখ
কেটে দিচ্ছেন, এরকম ফোটো কেউ তোলেনি যে !
ওকামপোর হাঁটুর ওপরে রাখা আপনার দর্শনীয় পা ?

মহাত্মা গান্ধির দুই দানা রাখবার সাথীনেরা
বোধহয় কেটে দিন নখ ; কেননা বার্ধক্যে পৌঁছে
নিজের পায়ের কাছে নেইলকাটার নিয়ে যাওয়া, ওফ, কী
কষ্টকর,আমার মতন বুড়ো যুবতীসঙ্গীহীন পদ্যলিখিয়েরা
জানে ; প্রেম যে কখন বয়সের দাবী নিয়ে আসে !

ফিসফিসে লোকে বলে সুনীলদার প্রতিটি নখের জন্য
উঠতি-কবিনী থাকে এক-এক জন। জয় গোস্বামীরও
ছিল; তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে সমুদ্রের পাঁকে, জাহাজকে ছেড়ে ।
চাইবাসার ছোটোঘরে শক্তিদার নখ কেটে দিচ্ছেন প্রেমিকাটি
দেখেছি যৌবনে । বিজয়াদিদির নখ কেটে দেন কি শরৎ ?

যশোধরা তোর নখ কেটে দিয়েছে তৃণাঞ্জন কখনও ?
সুবোধ আপনি নখ কেটে দিয়েছেন মল্লিকার পা দুখানি
কোলের ওপরে তুলে ? কবি কত একা টের পেতে, তার পা-এ
তাকালেই বোঝা যায় । যেমন জীবনানন্দ, হাজার বছর
খুঁজে চলেছেন কবে কোন বনলতা নখ কেটে দিয়ে যাবে তাঁর ।
( ইউ টিউবে এই কবিতাটি দুজন রেকর্ড করেছেন । ড. ইন্দিরা দাশ এবং নুর হোসাইন যাঁর চদ্মনাম ‘মনবন্দী’ )

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
জ্যামিতির উৎস
অবন্তিকা বললি তুই :
নৌকো মাতাল হতে যাবে কেন ? এ-যুগে সমুদ্রটা নিজেই মাতাল !
আমি বললুম :
যত জ্যামিতি কি শুধু তোরই দখলে ? কার কাছ থেকে পেলি ?
অবন্তিকা বললি তুই:
আর্কিমিডিস দিলেন দেহের ঘনত্ব !
রেনে দেকার্তে দিলেন শরীরের বাঁকগুলো !
ইউক্লিড দিলেন গোপন ত্রিভূজ !
লোবাচোভস্কি দিলেন সমন্বিত আদল !
ব্রহ্মগুপ্ত দিলেন মাংসময় বুকের নিখুঁত বর্তুলতা!
শ্রীধর দিলেন আয়তন !
নারায়ণ পণ্ডিত দিলেন দৃষ্টি আকর্ষণের ক্ষমতা !
আর তুই কী দিলি ? অক্ষরে সাজানো যত ফাঁকা মন্তর ?
আমি বললুম :
আমি দিয়েছি প্রেম !
অবন্তিকা তুই বললি :
প্রেম তো আলো হয়ে বেগে আসে আর তত বেগে চলে যায় !

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
কুইকি
যখন তোকে নাঙ্গা দেখি ঘামের টানে মাংস ডোবে
ভুল নৌকোর নকল পালে বাতাস-খেকো আধভিজে চুল
বাঁধিস ঢঙে অবন্তিকা ভোদকা টানিস অফিস ঘরে
ইসিপি খাস ফুঁকিস ধোঁয়া পদ্য লিখিস না-অ্যালাউড
এফডি আর ডিম্যাট ছাড়া কিচ্ছুটি নয় ভালোবাসা
প্রেমের মানে ডু ইট নাউ ফাক-অফ চোখে বিদায় ড্যুড

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
ড্রাই হামপিং
শ্বদাঁত বিষাক্ত হল কবে থেকে পেঁচি, অবন্তিকা ? রাতভর
জেগে আছি ডটপেন দাঁতে, এ-আশায় তোর নাভি উরু যোনি
মাই কোমরের বেড় পাছার নিটোল ঢেউ আলোছায়া খুলে
টেবিলে আসবে ঝেঁপে যেমন ঘুমন্ত পায়ে চোরাগলি বেয়ে
নামতিস মাঝরাতে মুঠোর আদর খেতে ? বদলে ফেললি
ভিনপুরুষের বিষে । তর্ক তোর, ‘সাইজ ম্যাটার্স ইন লাভ’—
বাঃ বেশ, ড্রাই হামপিং দিস তবু কেন শর্ত রাখিস মুখপুড়ি ?

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
উৎসব
তুই কি শ্মশানে গিয়েছিস কখনও অবন্তিকা ? কী বলব তোকে !
ওহ সে কী উৎসব কী আনন্দ, না দেখলে বুঝতে পারবি না—
পাঁজিতে পাবি না খুঁজে এমনই উৎসব এটা । কফিতে চুমুক দিই ।
আগুনকে ঘিরে জিন্স-ধুতি-প্যান্ট-গেঞ্জি মেতে আছে ননস্টপ
মিচকে আগুন তেড়ে নাচছে আনন্দ খেয়ে ; ধোঁয়ার বাজনা
শুনে কাঁদো-চোখে যারা সব অংশ নিতে এসেছে তারাও মজা
শেষে শেয়ার বাজারে কী উঠল কী নামল আবার ট্যাক্সি
ধরে ছোটো নিরামিষ কেনাকাটা পুরুতের দেয়া লিস্টি মেনে
.
চলিস শ্মশানে কাঁধে চিপেস্ট পালঙ্কে শুয়ে লিপ্সটিক মেখে…
নিয়ে যাব একদিন সবাই প্রেমিক মিলে নাচতে-গাইতে ডারলিং

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
যমসূত্র
ওভাবে কেন যে খুন করে মজা পাস অবন্তিকা ! গদ্দাফিকে ঘিরে
তোরই লোকেরা মিলে আঁচড়ে-কামড়ে গুলি মেরে মজা পেল বলে দ্যাখ
মিডিয়ায় কত গোঁসা অথচ যখন তুই ওসামা লাদেন বুড়োটাকে
মেরে চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে গেলি কাগজগুলোতে আনন্দ ধরে না
মিলোসেভিচের বিচার-নাটক কেন থালে কেনই বা রাজীব গান্ধিকে
কোমরে বারুদ-বোমা বেঁধে ছিন্ন-ভিন্ন কোরে লুকিয়ে বেড়ালি ? আমি
দেখি রণতুঙ্গে প্রেমদাসা আর আওলাকি খুন হল তোর ইশারায়
ইরাকের ফালুজায় সিরিয়ার বিধ্বস্ত শহরে তালিবানি পাগড়িতে
বোমা বেঁধে একে-তাকে উড়িয়ে হাপিস কোরে খুলির ওপরে বসে তোর
অট্টহাসি শুনি আর ভাবি তুই কি আমার প্রণয়িনী রক্তে এলোচুল
যার জবজবে ঠোঁটের দু’পাশে ঝুলছে মাংসের পচা ক্বাথ, গোড়ালিতে
পিষে দলছিস আকাশি বোরখা-ঢাকা পোয়াতি কাবুলি-বউ ; বাঙালির
চাষি পরিবারদের মাটি খুঁড়ে জলজ্যান্ত পুঁতে দিলি যাদের কঙ্কাল দ্যাখ
চুন হয়ে পানের মশলা সেজে তোর ঠোঁটে নারকীয় যৌনতা এনেছে…

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
ইলোপকন্যা
তোর বেডরুমে তোকে পেলুম না, কী ঝঞ্ঝাট, মানে হয়,
অবন্তিকা, কোন নদী নিয়ে গেছে, বরফের ডিঙি ভাসালুম
দ্যাখ, কেলেঘাই চূর্ণী গুমনি ময়ূরাক্ষী কংসাবতীর
স্রোতে, তোর ঘাম নেইকো কোথাও, ভাল্লাগে না, জেলেরাও
পায়নি তোর ফেলে-দেয়া অন্ধ-ছোঁয়া, পূর্ণিমাও অন্ধকারে,
কী করে চলবে বল, পেঁয়াজের কান্না নেই, ধ্যাৎতেরি,
চুড়ির বাজনাহীন, চুমুগুলো কোন স্বপ্নে রেখে গিয়েছিস
খুঁঝে পাচ্ছিনাকো, কাউকে তো বলে যাবি, মুখের প্রতিবিম্ব
আয়নাসুদ্ধ ফেলে দিয়েছিলি, ওঃ কী মুশকিল, পাশে-শোয়া শ্বাস
অন্তত রেখে যেতে পারতিস, আলমারি ফাঁকা কেন, বালিশে
খোঁপার তেল নাভির তিল কাকেই বা দিলি, চেনাই গেল না
তোর মনের কথাও, টুথব্রাশে কন্ঢস্বর নেই, চটিতে নাচও
দেখতে পেলুম না তো, এমন কষ্ট দিস কেন অবন্তিকা, চুলের
নুটিতে থাকত ডাকনাম, ফুলঝাড়ু চালিয়েও সাড়া পাচ্ছি না,
অফিস যাবার রাস্তা এসে তোর জন্য মাকড়সার জালে
হাতের রেখা সাজিয়ে চলে গেল তোরই মুখের ইলিশ-স্বাদ
নিয়ে, আরে, ওইতো ওই, যে ছোকরার সঙ্গে পালালি তুই
তারই জুতোর ছাপের স্বরলিপি মার্বেল মেঝেয় আঁকা…..
( ইউ টিউবে এই কবিতাটি মলয় রায়চৌধুরীর কন্ঠে শোনা যাবে )

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
পাথরতা
মাঝরাত বলতে এক ধরণের রং বোঝায় যা কুকুররা পছন্দ করে না
পাথরও পছন্দ করে না  নিজেরই বুকের মধ্যে সারাজীবন আটকে থাকতে
মাঝরাতে কেউ কুড়িয়ে নিলে নিরেট অপরাধবোধ জেগে ওঠে
কিঁউ কিঁউ শুনতে পায়
মরা শামুকের সঙ্গে এত তফাত কেন তাকে তো মরার পরও
বুকের ভেতর প্রেমিকের ইসারা ধরে রাখার অধিকার দেয়া হয়েছে
প্রেমিক-প্রেমিকার দীর্ঘশ্বাসের আশীর্বাদে বোধহয়
শামুক তুলে কুকুরের দিকে অমাবস্যার মাতালও ছোঁড়ে না
পায়ে ফত।এ গালমন্দ করে
সে তো সব প্রেমিক-প্রেমিকাকেই করে থাকে ব্যস্ত মানুষের দল
শামুকের মাংসে তার প্রেমিকের প্রণয়-ফিসফিস
মরার পরও বেজে চলেছে তার যৌনসমুদ্রের ঢেউ-ডাকে সাড়া দিতে
বেচারা যোনিহীন পাথর

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
প্রেম ফেরে, ফেরে না
ভরপুর সন্ধ্যায় তোকে দেখলুম অবন্তিকা প্রেমের মৌতাতে ঝিমিয়ে
চুয়াল্লিশ বছর আগের ধুলো আর শুকো ঘাস আজও তোর বুকে-পিঠে
সারা গায়ে দাগড়া-দাগড়া চাঁদের দোষ, আহা, পূণ্যের ফল
ঢেউ তুলে কাঁপছিস পেটে হয়তো কৃমির জটিল ঘূর্ণির পাক
স্বর্ণলতার চুল তোর দু-কাঁধ বেয়ে কোমরে নেমেছে
রাস্তার মাইল-পাথরের ওপর বসেছিলিস উদোম উলঙ্গ মাঘতৃতীয়ায়
মৃত্যুর পথপ্রদর্শকরা মশা হয়ে তোর মাথার ওপর ডেথ মেটাল গাইছিল
কোন প্রেমিক তোকে শেষ বার ফেলে পালিয়েছে তোর মনে নেই
বললুম, ‘অবন্তিকা তোর সেই ৯-এমএম পিস্তলটা আছে ?
যেটা দিয়ে আমায় খুন করেছিলিস ?’
তোর জাদুময়ী হাতে বাতাস থেকে পিস্তলটা নামিয়ে আনলি
পরপর সবকটা গুলি আমার ফুসফুসে খালি করে বললি, ‘এই তো !’
বুকের ভেতর গেঁথে থাকা চুয়াল্লিশ বছর আগের
গুলিটা বের করে তোর অদৃশ্য হাতে দিলুম–
বললি, ‘ভালো, আরেকবার তাহলে দেখা হবে’

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
ভালোবাসার কবিরা
আর কবিতার বই বেরোবে না অবন্তিকা, বের করব না,
তাই তোকে ফিরে পেতে স্মৃতি কুরে ওগরানো ঘুণপোকা
পদ্যের ভেতরে পুরে পাঠাচ্ছি  তোর যত প্রেমিকের ভিড়ে,
হ্যাঁ, তোকে, ঠিক শুনেছিস তুই, মস্তিখোর বেটিং জমঘটে
গিয়ে খুলে দেখা তোর হেলেনিক ছাব্বিশি লালিমা
ছেঁড়া নোংরা ছাতাপড়া তাকার গাদায় তো শুস শুনি
নিজেকে ভাবিস বুঝি সুগন্ধী বাউন্সারে ঘেরা গাগা লেডি
লালটুশ প্রেমিকগুলোকে কেটে ফালি-মাংসে ঢেকেছিস
বডিখানা, ওফ কী তোল্লাই, সেই তুই, অ্যাঁ, ভেতোপান্তা !
এখন স্প্যাঘেটিস্ট্র্যাপে মলের এসকালেটরে উঠে খুঁজছিস
নতুন শিকার ; পেয়ে যাবি, তুই যা চিজ একখানি—
কেন বলতো ? না না চুমু খেয়ে ‘পারভার্ট’ বলে গাল
দিয়েছিলি বলে নয় ।  যেসব খুশবুদার মানেহীন নিঃশ্বাস
ঠোঁটে ঠোঁট রেখে তুই দিয়ে কেটে পড়েছিলি, তার খেসারত
দিবি তুই, হ্যাঁ, তুই তুই তুই তুই দিবি । পড়েছি দুচোখে তোর
কোন কোন পুরুষের কোন অংশে ঠেকিয়েছিলিস জিভ
জড়াবার আগে-পরে, ঘুমন্ত ঘামের স্বাদ, স্কচে-ডোবা তাপ
বারান্দা থেকে ছুঁড়ে মেঘেতে ওড়ানো বাসি ট্যামপুনের সাথে
কোনো পদ্য-প্রেমিকের লক্ষাধিক ধাতুবীজে রচিত অক্ষর !

_________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
সবুজ দেবকন্যা
ওঃ, তুই-ই তাহলে সেই সুন্দরী দেবকন্যা
তুলুজ লত্রেক, র‌্যাঁবো, ভেরলেন, বদলভের
ভ্যান গঘ, মদিগলিয়ানি আরো কে কে
পড়েছি কৈশোরে, কোমর আঁকড়ে তোর
চলে যেত আলো নেশা স্বপ্ন আরো মিঠে
ঝলমলে বিভ্রমের মাংস মেজাজি রঙে
বড় বেশি সাজুগুজু-করা মেয়েদের নাচে
স্পন্দনের ছাঁদ ভেঙে আলতো তুলে নিত
মোচড়ানো সংবেদন কাগজে ক্যানভাসে
.
অ্যামস্টারডম শহরের ভিড়ে-ঠাসা খালপাড়ে
হাঁ করে দেখছি সারা বিশ্ব থেকে এনে তোলা
বিশাল শোকেসে বসে বিলোচ্ছেন হাসিমুখ
প্রায় ল্যাংটো ফরসা বাদামি কালো যুবতীরা
অন্ধকার ঘরে জ্বলছে ফিকে লাল হ্যালো
এক কিস্তি কুড়ি মিনিট মিশনারি ফুর্তির ঢঙে
.
পকেটে রেস্ত গুনে পুরানো বিতর্কে ফিরি
কনটেন্ট নাকি ফর্ম কোনটা বেশি সুখদায়ী
তাছাড়া কী ভাবে আলাদা এই আবসাঁথ ?
.
যুবতী উত্তর দ্যান, শুয়েই দ্যাখো না নিজে
এ-ই একমাত্র মদ যা বীর্যকে সবুজ করে তোলে ।
( ইউ টিউবে এই কবিতাটি মলয় রায়চৌধুরীর কন্ঠে শোনা যাবে )

___________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
স্প্যাম প্রেমিকা
বাঃ বেশ, আচমকা ঢুকে এলি ডেস্কটপে, ই-মেলের সঙ্গে তোর ফোটো
বহুরূপী আদুলগা, কুচকুচে হাসিমুখে ডাকছিস কালো সঙ্গমে
দেখছি গোগ্রাসে তোকে বদল্যারের জান্তব ভেনাস
ভুলভাল ইংরেজি তলপেটে ‘আই লাভ ইউ’ লিখে
কৃষ্ণকলি হুকার ললনা তোর ফাঁদপাতা প্রেম নিবেদন
নরম উপাস্য উরু জাদুটোনা-করা নখে রঙ না রক্ত রে
কোন দেশ থেকে এলি মুখপুড়ি ? কেনিয়া উগান্ডা জাম্বিয়া
বুরকিনা ফাসো কংগো ক্যামেরুন সুদান নিঝের ?
মুম্বাই এসে ঘাঁটি গেড়েছিস নাইজারওয়াডিতে দল বেঁধে !
কী করে জানলি হ্যাঁরে, আফ্রিকার নারীসঙ্গ পাইনি কখনও ?
বেশ তোর হাইপাররিয়াল যৌন আবেদন ল্যাপটপ-আলো
বিশদ জানিস তা ; আসতে চাস আলিঙ্গনে তাই । কতটাকা
নাকি ডলারের বিনিময়ে পাওয়া যাবে ওই অভিজ্ঞতা
লিখিসনি তো ? কেবল দেখা করতে বলেছিস মীরা রোডে
জংশনের মোড়ে ; ডিজিটাল রূপ ছেড়ে নামবি শহরে ।

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
পাঁকের মৃণ্ময়ী
তুই কি সত্যিই কুচ্ছিত ? সবাই তো তাই বলে : পাঁকের মৃণ্ময়ী !
কোলে কালি চোখ তোর এত ছোট কী করে দেখিস চেয়ে ? ঠোঁটও
বড্ড পুরু, বুক-পেট-কোমর তো একাকার, থলথলে মাংস-ঢলা বডি
পেছন থেকেও তোর ঢিবি বুক দেখতে পেয়ে হাসাহাসি করে লোকে
তাছাড়া শরীর জুড়ে নিমপাতা-মাখা গন্ধে মাছিরা বাসর পাতে
চামড়ায়, এমনই পচন তোর ঘামে ; চুলও উকুনে রুক্ষ, অহরহ
তোকেই আঁকছি রোজ যতটা আসল করে তুলে ধরা যায় তোর
পূতিগন্ধময় জিভ মেঘের আড়ালে ঢাকা থুতু বৃষ্টি-ঝরা অনর্গল
.
কিন্তু যখনই তোর নাভিতে হাঁ-মুখ চাপি তরল বিদ্যুৎ বয়ে চলে
আগাপাশতলা জুড়ে আমাদের দুজনারই । কুচ্ছিত সুন্দর তুই
যাবতীয় ‘ইজমের’ ঊর্ধে উঠে প্রমাণ করিস সব ফালতু বাঁটোয়ারা ।

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
পাপ ও পূণ্যের যুগ্মবৈপরীত্য
অদ্ভুত নারী তুই অবন্তিকা : বুঝতেই পারি না তোকে,
বলিস যে বোঝার দরকার নেই, কেউ তো বুঝতে চায়নি আজও
হবেই বা কী বুঝে-টুজে ! জাগতিক মজা ছাড়া আর কিছু
কীই বা হবে জেনে, বলেছিলি । কী করবি এত টাকা ? কয়েকটা ফ্ল্যাট ?
ব্যাংকের গোপন লকার ? টয়-বয় পালটাস যখন যেমন ইচ্ছে ।
.
লুকিয়ে আসিস তুই মাঝরাতে মার্সিডিস চেপে ; দরোজা খুলে ধরে ড্রাইভার !
ওঃ কি রোয়াব । ব্র্যান্ডেড সবকিছু । লুই ভিতঁ, জিমি চু, ক্রিস্টিয়ান
ডিয়র, বারবেরি — লেবেল দেখে-দেখে টের পাই ; নাক আর বুক উঁচু
ক্ষমতা-বৈভব এই ভারতবর্ষের আর তোরও । আমি তোর বহুভাষী
প্রেমিকের অন্যতম । জানি না প্রেমিক বলা ঠিক হল কি না । বলেছিলি
প্রেমিক নামে কোনো জীব নেই, ছিল না কখনও এ-জগতে;
দেয়া-নেয়া বৃত্তের মাঝে আমরা পাক খাই, তাই, যতদিন
পারা যায় লুটে নাও জীবনের অফুরন্ত গ্লানি । উজবুকের ঢঙে দেখি
আর ভাবি কী করেই বা ঘুষ নিস অমন সুন্দরী হয়ে ! বরকে লাথিয়ে
বের করে দিয়েছিলি চৌকাঠের ওপারে যৌবনে । এখনও চোখ তোর
সত্যিই যাকে বলে প্রতিমার ঢঙে বিস্ফারিত, ৩০-২৪-৩২ তোর
ওই বডিখানা । প্রশ্ন করেছি তোকে অবন্তিকা, পাপবোধ হয়নাকো তোর ?
বলেছিলি, পাপবোধ নেই বলেই অফুরন্ত ঘুষ নিস ; লেখাপড়া
শিখেছিলি এজন্যেই , হাড়-মাস এক করে, আই এ এস হওয়াটাও সেজন্যেই ।

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
ক্যানসার
আত্মরতির স্নেহে ক্ষয়ে গেলি মুখপুড়ি, নিজেরই অন্তরতাপে পুড়ে
বুকের অর্ধেক মোহে, চেয়ে দ্যাখ, দ্রবণে চোবানো ভাসমান
যদিও সেরাতে তুই বলেছিলি, আমার ছোঁয়ার দোষে ধরেছে কর্কট
ছেয়ে গেছে প্রিয় মাংসে প্রেমিকের অমৃত ভাঁড়ার
বিষন্ন সুখের হিম ভাগ করে নিতে চাস তাই : কে নেবে তা ?
ভেবে দ্যাখ, মনে কর, আগের প্রেমিকগুলো চুমুতে বিষাদ ভরে
শেয়ালকাঁটার রেণু তোর ফুসফুসে ফেলে সটকে পড়েছে
যাদের সঙ্গে তুই বাঁ হাতে শ্যাম্পেন ধরে নাচতিস ডিসকো মাতাল
কিংবা হয়তো তুই তিমির চর্বিতে তৈরি লিপ্সটিক মেখেছিলি ঠোঁটে ;
তিমির পোয়াতি কান্না কাঁকড়ার বুদবুদে লিখেছে সবুজ প্রতিশোধ
কাকে কাকে কতোবার বলেছিলি অবন্তিকা অর্ধনশ্বরী স্বরে
ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি লাভিউ লাভিউ লাভ ইউ…

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
মর মুখপুড়ি
এই বেশ ভালো হল অ্যামি, বিন্দাস জীবন ফেঁদে তাকে
গানে নাচে মাদকের জুয়ার পূণ্যে অ্যামি, কী বলব বল,
অ্যামি ওয়াইনহাউস, অ্যামি, আমি তো ছিলুম তোর
জানালার কাচ ভেঙে ‘ল্যাম্ব অফ গড’ এর দামামায়
বাজ-পড়া গিটারের ছেনাল আলোয় চকাচৌঁধ ভাম,
অ্যামি, আমি তো ছিলুম, তুই দেখলি না, হের্শেল টমাসের
শিয়রে বিষের শিশি মাধুকরী লেপের নিঃশ্বাসে, অ্যামি
স্তনের গোলাপি উলকি প্রজাপতি হয়ে কাঁপছি, দেখছিস,
লাল রঙে, অ্যামি, অ্যামি ওয়াইনহাউস, মুখপুড়ি
হ্যাশের ঝাপসা নদী কোকেনে দোলানো কোমর, চোখ
ধ্যাবড়া কাজলে ঘোলা ঠিক যেন বাবার রিটাচ-করা
খুকিদের নকল গোলাপি ঠোঁট বয়ামে ভাসাচ্ছে হাসি
সাদা-কালো, হ্যাঁ, সাদা-কালো, ‘ব্যাক টু ব্ল্যাক’ গাইছিস
বিবিসির ভিড়েল মাচানে কিংবা রকবাজ ঘেমো হুল্লোড়ে
আরো সব কে কী যেন, ভুলে যাচ্ছি ভুলে যাচ্ছি ভুলে…
ওঃ হ্যাঁ, মনে পড়ল, ক্রিস্টেন পাফ…জনি ম্যাককুলোজ…
রাজকমল চৌধুরী…ফালগুনী রায়…অ্যান্ড্রু উড…
শামশের আনোয়ার…সমীর বসু…কে সি কালভার…
সেক্স পিস্টলের সিড ভিশাস…ডার্বি গ্রেস…অ্যান্টন মেইডেন…
হেরোইন ওভারডোজ, ছ্যাঃ, ওভারডোজ কাকে বলে, অ্যামি
ওয়াইনহাউস, বল তুই, কী ভাবে জানবে কেউ নিজেকে
পাবার জন্য, নিজের সঙ্গে নিজে প্রেমে পড়বার জন্য…
য়ুকিকো ওকাকার গাইতে গাইতে ছাদ থেকে শীতেল হাওয়ায়
দু’আত মেলে ঝাঁপ দেয়া, কিংবা বেহালা হাতে সিলিঙের হুক থেকে
ঝুলে-পড়া আয়ান কার্টিস, কত নাম কত স্মৃতি কিন্তু কারোর
মুখ মনে করা বেশ মুশকিল, তোর মুখও ভেলে যাব…
দিনকতক পর, ভুলে গেছি প্রথম প্রেমিকার কচি নাভির সুগন্ধ,
শেষ নারীটির চিঠি, আত্মহত্যার হুমকি-ঠাসা, হ্যাঁ, রিয়্যালি,
কী জানিস, তাও তো টয়লেটের অ্যাসিডে ঝলসানো হার্ট
নরম-গরম লাশ, হাঃ, স্বর্গ-নরক নয়, ঘাসেতে মিনিট পনেরো
যিশুর হোলি গ্রেইল তুলে ধরে থ্রি চিয়ার্স বন্ধুরা-শত্রুরা,
ডারলিং, দেখা হবে অন্ধকার ক্ষণে, উদাসীন খোলা মাই,
দু’ঠ্যাং ছড়িয়ে, এ কোন অজানা মাংস ! অজানারা ছাড়া
আর কিছু জানবার জানাবার বাকি নেই অ্যামি…সি ইউ…
সি ইউ…সি ইউ…সি ইউ…মিস ইউ অল…….
( ইউ টিউবে এই কবিতাটি মলয় রায়চৌধুরীর কন্ঠে শোনা যাবে )

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
চলো গুলফিঘাট
কেউ মরলেই তার শব গিরে মৃত্যু উৎসব ছিল ইমলিতলায়
বয়ঃসন্ধির পর দেহের ভেতরে অহরহ উৎসব চলে তাই
তারা মারা গেলে কান্নাকাটি চাপড়ানি নয় বিলাপ কেবল
শিশুদের জন্য করো বাচ্চা-বুতরুর জন্য কাঁদো যতো পারো
.
শবখাটে চারকোণে মাটির ধুনুচি বেঁধে গুলফি-ঘাটের শমসানে
ঢোলচি ঢোলকসহ সানাই বাজিয়ে নেচে আর গেয়ে পাড়ার ছোঁড়ারা
কুড়োতুম ছুঁড়ে-ফেলা তামার পয়সা প্যাঁড়া আম লিচু আকন্দের মালা
ফিরে এসে বিকেলে রোয়াকে বসে বুড়োবুড়ি কিশোর যুবক
তাড়ি বা ঠররা আর তার সাথে শুয়োরের পোড়া পিঠ-পেট
খেতে-খেতে ঠহাকা-মাখানো হাসি মাথায় গামছা বেঁধে গান
.
আমি মরবার পর ছেরাদ্দ বা শোকসভা নয় ; ইমলিতলার ঢঙে
উৎসব করবার কথা ছেলেকে মেয়েকে বলা আছে : মদ-মাংস খাও
স্বজন বান্ধব জ্ঞাতি সবাইকে বলো অংশ নিতে শমসানের পথে
বেহেড হোল্লোড় করে নাচতে গাইতে যেও ফিরো নেচে গেয়ে
মেটালিকা পাঙ্ক-রক হিপ হপ সুমন শাকিরা ক্যাকটাস
বিটলস এলভিস কিশোর কুমার ও ইয়ুডলিঙে আর ডি বর্মণ…
( ইউ টিউবে এই কবিতাটি মলয় রায়চৌধুরীর কন্ঠে শোনা যাবে )

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
রাবণের চোখ
শৈশবের কথা । সদ্যপ্রসূত কালো ছাগলের গা থেকে
রক্তক্বাথ পুঁছে দিতে-দিতে বলেছিল কুলসুম আপা
‘এ ভাবেই প্রাণ আসে পৃথিবীতে ; আমরাও এসেছি
একইভাবে ।’ হাঁস-মুর্গির ঘরে নিয়ে গিয়ে আপা
আমার বাঁ-হাতখানা নিজের তপ্ত তুরুপে চেপে
বলেছিল, ‘মানুষ জন্মায় এই অসীম দরোজা খুলে।’
.
রাবণের দশজোড়া চোখে আমো ও-দরোজা
আতঙ্কিত রুদ্ধশ্বাসে দ্রুত খুলে বন্ধ করে দিই ।

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
নর্দমার ফুল
তোমার পেছনে কেন লেগেছিল সেকালের বাবু-ফরাসিরা
কোনো তার কারণ পাই না ভেবে, ধর্মাধর্ম ছাড়া । কেন জানো ?
আমার প্রপিতামহ আর তাঁর বাবা ঠিক ওই সময়েই
কলকাতা শহরের কোনো এক বাড়িতে রাত্তিরে মদে-ভরা
চৌবাচ্চায় পদ্মফুল ফেলে রুপোর পাইপ দিয়ে নিজেদের
দিকে প্রশ্বাসের টান মেরে প্রতিযোগীতায় মেতে ; যে জিতবে
সে-ই পাবে সেদিনের জন্য আনা মুজরোর লখনবি খুকি।
বাপ জিতে ফেললেও, অপত্য স্নেহের দোষে, ছেলেকে দিয়েছে
উপহার সে-রাতের নারীটিকে । তার ফলে পরের প্রজন্মে
আমার বাবা ও আমি নেমে গেছি ছোটোলোকি ইমলিতলায়
যেখানে কোনও ঘরে ধর্ম ও অধর্মের দেখিনি ছ্যাঁচড়ামি
কোনোদিন। কেননা সবাই নর্দমার ফুল ছিল ও-পাড়ায়
ঝরে যেত যখন যেমন ইচ্ছে, মিশে যেত পাঁকে বেমালুম ;
আমারও হাতে খড়ি সে-পাড়ার পাপবোধহীনতার স্কুলে ।

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
কবিতা বা পলিগ্যামি
কাকে যা ভালোবাসা বলে ! তাতে কি নারীর দরকার ?
শুধুতো জুলপি নয়, চুলও প্রায় তিন-চতুর পেকে গেল
ভালো বাসতে চাই এমন কাউকে আজও পেলুম না খুঁজে
বলতে হয় ‘শেষ পর্যন্ত’ কেননা এখন তো মাঝরাত ;
ভালোবেসেছিল যারা তাদের কাউকে কি আস্ত একজন বলা চলে !
কারোর কানের লতি রেখেছি তুলোটে বেঁধে
কারোর ঠোঁটের আলো লুকিয়ে রেখেছি ফ্রিজে
কোঁকড়া কারোর চুল ঢেউ খেলছে শাওয়ারের বাজনা-বাদলায়
কারোর আয়ত চোখ আয়নার পারায় রাখা আছে
ফোলা-ফোলা আঙুল কারো বা রেখেছি সেপিয়া রঙে
রেখেছি কারোর গান উড়ে-যাওয়া বুলবুল-পালকের তুষে
কারোর ভরাট বুক ধরা আছে টি-শার্টের ভাঁজে
অন্ধকার রাত কারো রয়ে গেছে নীলাভ কন্ডোমে
কারোর পাছার স্মৃতি হাতের চেটোয় থেকে গেছে
সুগন্ধী আঁচল কারো পোশাকের মেঘে তোলা আছে
কারোর নাচের ছন্দ ওই তো কমপিউটারে
কারোর ফিসফিসে স্বর আনসারিং মেশিনে গান গায়
.
সবাই কেমন যেন টুকরো টাকরায় গড়া কর্মোপদেশে পাওয়া
মজনু কোথায় পেয়েছিল লায়লাকে তার ইশারা নেই লোককাহিনিতে
রোমিও কী ভাবে পেয়েছিল জুলিয়েট তার নির্দেশ দেননি নাট্যকার
বনপথে সিনেমাহলে ঝিলের ধারে প্রেমিক-প্রেমিকা জুটি দেখি
মনে হয় গিয়ে বলি আপনার মানুষীকে আমায় দিন না হেপুরুষ
তারপর খটকা লেগেছে, তাহলে ও-পুরুষের অবস্হা আমারই মতন হবে
তার চেয়ে থেকে যাক পাঁচ বা দশ-মাথার মোড়….

__________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________
লিপিড প্রোফাইলের লিব্রেটো
কোলেসটেররলে তুই কবে থেকে লুকিয়ে রয়েছিস অবন্তিকা
রাত দু’টোয় জেগে উঠে কড়া নাড়িস বুকে
ট্রাইগ্লিসারাইডে তুই কবে থেকে ওড়নায় মুখ ঢেকেছিস অবন্তিকা
ছ’তলায় উঠতে দিস না সিঁড়ি বেয়ে
প্রস্টেট গ্ল্যান্ডে তুই কবে থেকে চেপে বসে গেলি অবন্তিকা
বার-বার ঘুম ভাঙিয়ে ডাক দিয়ে চলে যাস রাতে
ইউসেনোফিলিসে তুই কবে থেকে চলে এলি অবন্তিকা
কাশির দমকে যখন-তখন টোকা দিস
ইউরিক অ্যাসিডে তুই কবে থেকে নিজেকে চোবালি অবন্তিকা
হাঁটলে হাড়ের ভাঁজে কাঁথাস্টিচ করতে থাকিস
পায়ের ভ্যারিকোজ শিরাগুলো আঁকড়ে থাকিস কেন অবন্তিকা
শুলে হৃদয়ের দিকে রক্তকে রুকে দিয়ে মিচকে হাসিস
রক্তকে মিষ্টি করে তুলেছিস কেন অবন্তিকা
এবেলা-ওবেলা ছুঁচ উরুতে ফোটাই

__________________________________________________________________________________________________________________________________
খবর
কেউ ভোরে মারা গেছে নাকি অবন্তিকা ?
এত হন্তদন্ত সেই থেকে সারাক্ষণ
একে-তাকে ফোন করে চলেছিস
ফিসফিসে শোকে যেন কতই হারালি
কোনো এক নিজস্ব আত্মীয়। প্রতিবার
দেখি, মৃত্যুর খবর পেয়ে কত দ্রুত
অন্যকে জানাবি তার প্রতিযোগীতায়
নিজেকে মাতাস । শুধু তুই একা নয় ।
মৃত্যু যাতে শ্রোতাকেই আক্রমণ করে
এরকম খেলা চলে সমাজকে জুড়ে—
চোদ্দপুরুষের গুষ্টি খুঁজে-পেতে যত
তাড়াতাড়ি পারা যায় চারিয়ে দেবার
চেষ্টা এই ‘খবররের রোগ’, । মৃত্যু-কোপ
থেকে, আপাতত রেহাই মিলেছে তোর
আর তোর মতো ভিতু ফোন-প্রাপকের !

__________________________________________________________________________________________________________________________________
ডারলিং ইউ জাস্ট রক
যার সঙ্গে ডেটিং করলি অবন্তিকা
তার সঙ্গে প্রেম করলিনাকো
যার সঙ্গে প্রেম করলি অবন্তিকা
তার সঙ্গে তুই শুলিনাকো
যার সঙ্গে তুই শুলি অবন্তিকা
তার সঙ্গে বিয়ে করলিনাকো
যার সঙ্গে বিয়ে করলি অবন্তিকা
তার বাচ্চা পেটে ধরলিনাকো
যার বাচ্চা পেটে ধরলি অবন্তিকা
তার বীজের সাকিন জানলিনাকো

__________________________________________________________________________________________________________________________________
উড়ন্ত মাদুর
উড়ন্ত মাদুর তোর চাই অবন্তিকা !
কেন ? সেই যে শুনিয়েছিলি পেয়েছিস
এ-পুরুষ সে-যুবক ইরানি কার্পেটে
শুয়ে উড়েছিলি উজ্বল নগ্নিকা হয়ে
ঘুমন্ত বাতাসে রিনিঝিনি মাঝরাতে
স্বপ্নের দুপুরে নক্ষত্রেরা কনডোম
ভরে ভরে আলোর জুমকো দিয়েছিল !
উড়ে যাচ্ছে আজ এই তলতা মাদুর
যেদিকে ভাসাতে চাই সেই দিকে । দ্যাখ
আমারই বাক্যে বোনা উড়াল প্রেমের
খেলা কিরকম তোকেও আনল টেনে ।
এটাতো তোরই জন্যে বানিয়েছিলুম
দুজনে উড়ব বলে অগাধ অনন্তে ।

__________________________________________________________________________________________________________________________________
দুর্গন্ধ
ঠিকই বলেছিলি মুখপুড়ি, থাকুন না সঙ্গে সবসময়, কোঁকড়া দুর্গন্ধ হয়ে
দেহের নৌকো জুড়ে, আগাপাশতলা, নোনাবাঁকে মাছেদের অপলকা ঝাঁকে
কোথাও অ্যাড্রেনালিনে নীল তাঁতে-বোনা গোড়ালি গন্ধকে মাখা ভিজে নাচ
চামড়ায় মরে-যাওয়া জং-ধরা হাঙরের মিষ্টি হাঁ-মুখ ভরা খিলখিল আলো
খুঁজুন না যা চাইছেন, ভিনিগারি ঘামের রোদ্দুর, গ্রন্হিল জ্বরের নিঃশ্বাস
ছানাকাটা দুধেল উত্তাল, তাও হরমোনের তরল বারুদে তিতকুটে
বলেছিলি তুই, প্রেম ? ছ্যাঃ, সুগন্ধ তো বানানো নকল, তার সাথে, ডারলিং
মাংসে মেদের মজ্জার আত্মীয়তা নেই । পেতে হলে শুধুই দুর্গন্ধ নিতে হবে
যা তোর একান্ত আপন, অবন্তিকা । চারিপাশে বাতাসের নিভাঁজ জারকে
তোর ওই ঘোষণা উড়ছে : সি ইউ…সি ইউ…সি ইউ…সি ইউ…
.
ফেলে গিয়েছিস তোর লনজারি টপ জিনস বক্ষবন্ধনী হাই হিল। কই তোর
দুর্গন্ধ কোথাও তো নেই মুখপুড়ি ; ফেলে-যাওয়া কিছুতেই নেই। সবই
ভিনিভিনি কুশবু মাখানো । যতক্ষণ ছিলি, তোর গা থেকেও ওই একই
পারফিউম উড়েছে, বানানো, নকল ; তোরই মতন মুখপুড়ি, কথার
ফেনানো জালে টোপ বেঁধে যা তুই ফেলেই চলেছিস প্রতিরাত প্রতিদিন ।
তাহলে ফালতু তোর সি ইউ…সি ইউ…ডাক, হাতছানি, উদোম ইশারা
( ইউ টিউবে এই কবিতাটি মলয় রায়চৌধুরীর কন্ঠে শোনা যাবে )

____________________________________________________________________________________________________________________________________
গানের নদী
হ্যাঁ ! ঠিক দেখছি কি ? হ্যাঁ, ওইখান থেকে
নদী বাঁক নিয়েছিল তোর গান শুনে
অবন্তিকা ; তোর কন্ঠস্বরে বনাঞ্চল
রুপোলি লেজার আলো মেখে পাগলের
নিঃশ্বাসে ওগরানো সমুদ্রের ঢেউ
ডেকে নিয়ে গিয়েছিল অজস্র মানুষ
যারা তোর গান শুনে বেঁচে থাকবার
পাচ্ছিল উদ্দেশ্য খুঁজে ! কী করলি তুই ?
পট-হ্যাশ-কোক-অ্যামফিটেমাইনের
ব্ল্যাক হোলে নদীটাকে নিয়ে চলে গেলি–
কেন গেয়েছিলি তবে ‘ভালোবেসে যাবো
তোমাদের চির কাআআআআআআল…
চিরকাল এত ছোটো ? এতটুকুখানি !

_____________________________________________________________________________________________________________________________________
কেন লিখি, অবন্তিকা
কেন আমায় ভালোবাসিস জানিস তুই অবন্তিকা
নিজের সঙ্গে নিজে প্রেমে পড়ার জন্য
কেন খোঁপায় গোলাপ গুঁজিস জানিস তুই অবন্তিকা
নিজের সঙ্গে নিজে প্রেমে পড়ার জন্য
কেন হঠাৎ গান গাইতে ভালো লাগে জানিস তুই অবন্তিকা
নিজের সঙ্গে নিজে প্রেমে পড়ার জন্য
কেন কেউ আত্মহত্যা করতে চায় জানিস তুই অবন্তিকা
নিজের সঙ্গে নিজে প্রেমে পড়ার জন্য
কেন ইলিশ মাছের ভাপা খেতে ইচ্ছে করে জানিস তুই অবন্তিকা
নিজের সঙ্গে নিজে প্রেমে পড়ার জন্য
কেন পুজোয় নতুন শাড়ি পরিস তা জানিস তুই অবন্তিকা
নিজের সঙ্গে নিজে প্রেমে পড়ার জন্য
কেন গায়ে সুগন্ধ মাখিস তা জানিস তুই অবন্তিকা
নিজের সঙ্গে নিজে প্রেমে পড়ার জন্য
কেন নাচের ধাঁচে তোর শরীর দোলে জানিস তুই অবন্তিকা
নিজের সঙ্গে নিজে প্রেমে পড়ার জন্য
কেন হাঁটিস হাই হিলে জানিস তুই অবন্তিকা
নিজের সঙ্গে নিজে প্রেমে পড়ার জন্য
কেন লিখি জানিস তুই অবন্তিকা
তোর প্রেমে ওর প্রেমে তার প্রেমে বারবার পড়ার জন্য…
( এই কবিতাটির পাঠ ইউ টিউবে রেকর্ড করেছেন কবি শ্রীমন্তী সেনগুপ্ত )

_____________________________________________________________________________________________________________________________________
যৌতুক
সব মেয়েই
বাপের বাড়ি থেকে
শব্দের ভাঁড়ার আনে—
কেমন মেয়ে তুই অবন্তিকা !
দুচারটে খিস্তিও
আনতে পারলি না ?
                                        

রবিবার, ১ এপ্রিল, ২০১৮

মাসাই অবন্তিকা

দুশো বছর আগে আমার শব সেরেংগেটির শুকনো ঘাসে
নিয়ম মেনে ফেলে দিয়ে গিয়েছিল বুড়ো মাসাই কর্তারা
যাতে শকুন শেয়াল হায়নারা ছিঁড়ে খেয়ে আমার সুনাম অক্ষুন্ন রাখে
কোনো পশু খেতে চায়নি আমার মরদেহ ওই ভাবেই দুদিন পড়েছিলুম
তুই তখন একমাত্র মাসাই দেবতা এনগাদির সদাশয় কালো রূপের
থানে গিয়ে প্রার্থনা করেছিলিস যাতে এনগাদির লাল রাগি রূপ
আমাকে ছেড়ে চলে যায়, রাতে আমার শবে ভেড়ার চর্বি আর রক্ত মাখিয়ে
অন্ধকারে দেখেছিলিস চোখের আলো জ্বেলে সিংহরা আমাকে শুঁকে চলে গেল
তারপর এলো হায়নার দল, তারা আমায় ছিঁড়ে-ছিঁড়ে তোর মুখে হাসি ফোটালো
মাদি আলফা হায়নার গর্ভে ঢুকে প্রতিটি হায়নার রক্তে তারপর থেকে
আমাকে পাচ্ছে মাসাই যুবতীরা তাদের মাংস খাইয়ে রেখেছে অমর করে

দুশো বছর আগে সেরেংগেটির বুনোঘাস  রোদে ন্যাড়া মাথায়
গোরুর রক্ত খেয়ে কালো ঘেমো বুক খুলে যুবতীদের সঙ্গে নাচছিলিস
তোর বুক তোর সঙ্গে আমার চাউনির মতো নাচছিল
সঙ্গিনীদের ঝুলে পড়া বুক তাদের বুকের থেকে আলাদা নাচে কাহিল
তোর ভগাঙ্কুর আর যোনির ঠোঁট তিন বছর বয়সেই
বুড়িমা কেটে দিয়েছিল তুই কেঁদে ছিলিস অনেক দিন
এমুরাতারে কাটনির ফলে পেচ্ছাপ করতে কষ্ট হতো দাঁড়িয়ে করতিস
লাল কিটেঙ্গে শায়ার ওপর নকশাকাটা লাল খাঙ্গা ব্লাউজ
তার ওপর লাল চাককাটা শুকা চাদর দুই হাতে রঙিন এনকিসোমা
রাবতা আর ব্রেসলেট কচি ভেড়ার হাড়ের ব্রেসলেট
সিংহিনীর দুপাটি দাঁত জুড়ে কন্ঠহার

আমি নতুন যোদ্ধা জটপড়া চুলে ড্রেডলকস হাতে বর্শা
চুলে নিয়মিত গোরুর চর্বি লাগিয়ে সূর্যকে ধরে রাখি
মাসাই নিয়মে পুরুষরা কখনও হাত দুলিয়ে হাঁটে না
পাঁচ বছর আগে আমার নুনুর চামড়া যখন মাসাই জানগুরু ছাড়িয়েছিল
মুখে কোনো কষ্ট-যন্ত্রণার ভাব ফুটিয়ে তুলিনি 
তাহলে আমাকে কাপুরুষ বদনাম দিয়ে একঘরে করে দেয়া ্তো
তোকে পাবার জন্য একা জঙ্গলে গিয়ে সিংহ শিকার করে এনেছিলুম
সিংহের চামড়া পরে হাতে বর্শা নিয়ে নেচেছিলুম আগুনের ফিনকি ঘিরে
মাথায় পরে নিয়েছিলুম সিংহে মাথা দুলছিল কালো কেশর
আমরা সবাই সিংহের মাংস আগুনে পুড়িয়ে খেয়েছিলুম
রোজই ভেড়া ছাগল গোরুর মাংস খেয়ে মুখ বিস্বাদ হয়ে গিয়েছিল

জঙ্গল পেরিয়ে অনেক দূরের ইকোবাদের গ্রাম থেকে দশটা গুরু লুটে এনেছিলুম
তোর বাবা বলেছিলেন কুড়িটা গোরুর মালিক হলে তবে তোকে পাবো
তোকে পাবার পরও মাসাই নিয়মে প্রায়ই তোকে অতিথিদের সঙ্গে শুতে হতো 
জানি না আমার কুড়িটা বাচ্চার মধ্যে ক'টা আমার
তুই বলেছিলিস সবক'টা আমার সকলে তোর যোনির হদিশ পেতো না
কালো এনদাগি বলেছেন জবজগতে গোরু বলদ ষাঁড় কেবল মাসাইদের
লাল এনদাগি বলেছেন তোর যোনি শুধু আমার

তোর জন্য গোরুর হাড়ের কানে পরার গয়না বানিয়ে দিয়েছি
ভেড়ার হার দিয়ে পুঁতি তৈরি করে দিয়েছি
খোলা বুকে নাচের সঙ্গে ওগুলোও নাচে
দুশো বছর হয়ে গেছে এখনও পুঁতির ঝমঝমানি শুনতে পাই
আমার পাশেই তোর বুড়ি শব ফেলে গিয়েছিল
শেয়াল শকুন হায়নারা তোকে খায়নি বলে মরে গিয়ে ভাবি
আমার চেয়ে বেশি অতিথিরাই আদর করেছে তোকে
তুই মাসাই সুন্দরী ছিলিস অবন্তিকা, তাই...

( সোনালী মিত্র সম্পাদিত "মায়াজম" পত্রিকার ২০১৬ কলকাতা বইমেলা সংখ্যা থেকে পুনর্মুদ্রিত )