মলয় রায়চৌধুরী

মলয় রায়চৌধুরী

শুক্রবার, ১৭ জুলাই, ২০১৫

কলকাতা

খেলছে নরমুণ্ড নিয়ে দুটো দল, ফুটবল
মারছে ফ্রিকিক করনার কিক বাইসিকেল কিক
নৃমুণ্ড হাসছে চেঁচিয়ে নেচে ওপরে হাওয়ায় ভেসে
কামড়ে ধরছে টুঁটি, ছিঁড়ে ফেলছে কন্ঠনালী
মাঝমাঠে দুই দল ল্যাংটো খেলোয়াড়দের --

যতক্ষণ খেলা চলল এক-এক করে
সবকটা খেলোয়াড় ঘাসেতে লুটিয়ে পড়ল আর
মাঝমাঠে গিয়ে বাউন্স খেয়ে-খেয়ে
অট্টহাসি হাসতে লাগল মানুষের কাটা মুণ্ডুখানা

চে গ্বেভারা

বলুন তো চে গ্বেভারা
চাষির সুপক্ক ধান
তাও এক প্রান্তিক চাষির
মাঝরাতে কেটে নিলে কারা 
কপালে ব্যাণ্ডেনা-বাঁধা কোন বিপ্লবীরা
টি-শার্টে আপনার সেই বিখ্যাত ছবি !

স্যানিটারি ন্যাপকিন

ভালোবাসা ওই মেয়েটির মতো যার
স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল ; মাসে 
সাড়ে তিন দিন কাপড়ে শুকনো ঘাস
বেঁধে, পরে থাকতে হবে ; বর্ষায়
ঘাস তো সবুজ, তখন কাপড়ে ছাই
মুড়ে, রক্ত শুষে রাখবার তরকিবে
চুপচাপ বইহীন একা বসে থাকা ।

পিঠচুলকানি

মহিলা আলোচক বলেছেন, 'পিঠচুলকানি' --
পড়ে, কী বলব, ওনার পিঠটা দেখতে পেলুম,
ওনাকে তো দেখিনি কখনও । উনি কি আমার মায়ের মতন ফর্সা ?
মেজজ্যাঠাইমার মতো যাকে বলে উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ ? হলেই বা কালো !
ওনার পিঠে ডান দিকে লাল রঙের আঁচিল আছে ? মায়ের ছিল ।
বড্ডো দেখতে ইচ্ছে করছে আলোচকদিদির পিঠ ; শিরদাঁড়ার দুদিকে
মাংসের ঢেউ নেমে চলে গেছে সামনের দিকে যেদিকটায়
হাত এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্যে চুরি করতেই অবন্তিকা বলেছিল
'ওখানটায় তো চুলকোতে বলিনি, মাঝখানে, যেখানে হাত পৌঁছোচ্ছে না
সেখানে' । কিন্তু চুলকোনো ছাড়াও তো হাতের কাজ আছে !
পিঠের ওপরই যদি একটা প্রেমের কবিতা লিখতে শুরু করি
তা কি এগিয়ে যাবে না অন্তমিলের দিকে ? তুই তো আমার মা নোস--
কবিতার আলোচকও নোস যে তাঁর খোলা পিঠে হাত দিয়ে বলব
'ওগো, দাও না, একটু চুলকে দিই তোমার পিঠটা,
মায়ের জন্যে আজকাল বড্ডো মনকেমন করে।'

মধ্যবিত্ত কবি

আধুনিকতাবাদী কবিটি
বিষাদে ভুগতে হবে বলে ধুঁকছেন
মহানগরের ঘেয়ো কুকুরের মাছি
পুঁজ চেটে উড়ছেন
বিস্বাদ বিস্বাদ
অতিশয়োক্তি নোংরা বোবাও পারে
খণ্ডবাদের ক্লিন্ন স্মারক জীবটি

বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৫

আমার ঠাকুমাকে যেন বলবেন না

উনি আমাকে পছন্দ করতে বারন করেছিলেন
আপনি কেন পছন্দ করছেন, নীরা ?
আমি আজো শুঁয়োপোকা-ঠাশা ঈশান মেঘে চিৎসাঁতার দিই
উনি পঞ্চাশ বছর আগে আমার কবিতা চাননি
আপনি কেন চাইছেন, নীরা ?
আমি আজো জলের দশপা গভীরে বরফের লাঠি চালাই
উনি আমার সাবজুডিস মামলায় সম্পাদকীয় লিখেছিলেন
আপনি সম্পাদক হয়ে কেন লেখা চাইছেন, নীরা ?
আমি আজো স্মোকড পেংগুইনের চর্বির পরোটা খেতে ভালোবাসি
উনি আমার কবিতার বইয়ের প্রকাশক হয়েও স্বীকার করেননি
আপনি কেন স্বীকৃতি দিচ্ছেন, নীরা ?
আমি আজো দুপুর-গেরস্হের হাঁমুখে সেঁদিয়ে ফ্যামিলিপ্যাক হাই তুলি
উনি আমার নাম উচ্চারণ করতে চাইতেন না
আপনি কেন তরুণদের কাছে করছেন, নীরা ?
আমি আজো রক্তঘোলা জলে টাইগার শার্কদের সঙ্গে বলিউডি নাচে গান গাই
উনি বলেছিলেন ওর মধ্যে সত্যিকারের লেখকের কোনো ব্যাপার নেই
আপনি কেন মনে করছেন আছে, নীরা ?
আমি ইমলিতলায় জানতুম কাঠকয়লা ছাড়া ইঁদুরপোড়ার স্বাদ হয় না
উনি বলেছিলেন ওর কোনো ক্রিয়েটিভ দিক নেই
আপনি কেন মনে করছেন আছে, নীরা ?
আমি অন্তত পাঁচ হাজার কোটি টাকার ব্যাঙ্কনোট পুড়িয়ে মড়ার গন্ধ পেতুম
উনি বলেছিলেন ওর দ্বারা কোনোদিন কবিতা লেখা হবে না
আপনি কেন মনে করছেন হয়েছে, নীরা ?
আমি অ্যামস্টারডামের খালপাড়ে হাঁ-করা বুড়োদের লিরিক শুনেছি
উনি সেসময়ে দুঃখ থেকে রাগ আর রাগ থেকে বিতৃষ্ণায় উঠেছেন
আপনি এতো উদার কেন, নীরা ?
আমার ঠাকুমাকে যেন প্লিজ বলবেন না ।
( 'কৃত্তিবাস' পত্রিকা ২০১৪ সালে একটি কবিতা চেয়েছিল । এই কবিতাটি পাবার পর পত্রিকা কর্তৃপক্ষের হৃৎকম্প আরম্ভ হয় এবং তাঁরা কবিতাটি ছাপতে রাজি হননি । )