মলয় রায়চৌধুরী

মলয় রায়চৌধুরী

বৃহস্পতিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২১

খুরে খুরে গড়-এর পোস্টমডার্ন পদাবলী

খুরে-খুরে গড়’-এর পোস্টমডার্ন পদাবলী
মলয় রায়চৌধুরী
 
হিংমাখা হাতে থ্যাংকিউ লেখা সবুজ গান,
নাটুকে ইশারা ট্যারাচোখ ভাসে রূপটানে,
রেললাইনের তলপেটে বাঁধা ঘুমের ঝিম,
হ্যালোজেন-মাখা টকে-যাওয়া হাসি বীররসে,
পাইবেক পাইবেক, 
 
কাকের কাঁদুনি বোমার বারুদে অলস ডিম,
কুমিরের নাকে সন্দেশ খাওয়া স্বপ্নঘোর,
সুদিন আনবে দাড়ি কামাবার পুং-রোবোট,
সেফটিবেল্টে ধাতবকুমারী বলেছিলেন,
হইবেক হইবেক, 
 
ক্রেজি মাস্তুলে করোটির গোঁফে পাকানো তা,
মঞ্চফকির সাপকে গেলায় স্বরহরফ,
কষামাংসের দলজ ভোটার বুড়োশকুন,
ভেঙে বরফের মোদো-উল্লাসে পথপবন,
উড়িবেক উড়িবেক, 
 
অমোঘবাণীর ম্যাজিক পায়রা শিকড় খায়,
ফড়িং-নাচের ভিকিরি যদি বা চিরন্তন,
ধুতি খুলে ঘুঘু আকাশে দিয়েছে ট্রায়াল রান,
কী ভাবে ইমেজ ঝুরো-ঝুরো রঙে মিথ ভেঙে,
পুড়িবেক পুড়িবেক, 
 
ম্যাসাজতরুণী আঙুলনাচের সুখছোঁয়ায়,
তেলমাখা পিঠে কাতুকুতু দিলে ব্যাংককে,
দেশে ফিরে শিরা সুধাসংকেতে মদমুকুল,
তরল কুসুম অজানায় মেতে ঝরতে চায়,
ঝরিবেক ঝরিবেক, 
 
ছাগমাথা কাঁধে দক্ষবাবারা মসনদে,
ফাটা সঙ্গীতে বোবা মগজের ভবিষ্যত,
গড়ছেন মেঘে চতুরচিত্ত লাশভবন,
কালের ইতর আবিরে নোংরা শালি-শ্যালক,
হাসিবেক হাসিবেক, 
 
আর্সেনিকের বিষে নির্মল জল খেয়ে,
চুঁইয়ে ভিজবে আগুন ফোঁটার উচ্চারণ,
সাজানো শব্দ যুদ্ধের মাঠে শরে শুয়ে,
অবৈতনিক কাগুজে পোকার গুড়ছোলা,
খাইবেক খাইবেক

 

বুধবার, ৭ এপ্রিল, ২০২১

টু-পাইস ফাদার-মাদার প্রকল্প -- একটি পোস্টমডার্ন কবিতা

 

মলয় রায়চৌধুরী
টু-পাইস ফাদার-মাদার প্রকল্প -- একটি পোস্টমডার্ন কবিতা
উৎসর্গ : বিদিশা সরকার
১.
অ্যানোফিলিসের জাফরিকাটা আলোয় যখন আপনি জানেনই যে
যাদের সঙ্গে পর্যটনে বেরিয়েছিলুম
তাদের সবাই দিনকতক পর এমন অসহ্য
ওফ বলে বোঝাতে পারব না
অন্ধকারের খাঁজে-খাঁজে উই -- আন্টি-আঙ্কেলের গলাগলি ;
ভাগ্য ভালো যা অতীতের শীতবর্ষা ভুলে গেছি, নইলে পিঠে যত কুঁজ
তত বুদ্ধি তত বেনাপোল তত গুদামজাত ষোড়শী
২.
আমার তো কীবলেগিয়ে বাতাসের উপরিতলটা বাধো-বাধো ঠেকছিল
তবু আপনি যখন বললেন অল্পবয়স্কা এনজিও তায় শিশুকন্ঠ
জলের ভেতর মৃগেলটাকে দুহাতে দুহাতে ধরে রাখতে পারছেন না
ভাবলেন মূল্যও আবার ন্যায্য হয়, অ্যাঁ ? ন্যায় বড়ো দয়ালু --
তা উপরি পাওনা যে কাউকে চিনি না, তাই ঘাড় কাৎ করলেই হ্যাপা চোকে
আমাদের তো বিক্রিযোগ্য সংসার
শুকনো বরফের ধোঁয়ায় দম বন্ধ হবার যোগাড়
৩.
তলব পেলেই যাদের কাছে যেতে হয়
এমন গোঁফ বেরোনো জামরুল সায়েব
আরকী বলব বলুন, সবই তো পুরোনো মনে হয় আর অননুকরণীয়।
কালকের ফ্যাক্সে ৩০০ বছর আগের বাংলায় প্রেমপত্র এলো
সেটা কিন্তু চিঠি নয় -- প্রেমপত্র কখনও চিঠি হয় না --
দুর্দিনের আঁচড়-কামড়সহ অতিপ্রাকৃত ফর্সা মহিলা
মহিলা ছাড়া আর কী ?
যাঁহা বাহান্ন তাঁহা তিপ্পান্নর টিভি-বিদুষীর
প্রাগাধুনিক বুকের ফর্ম আর কনটেন্ট, যত্রতত্র ব্যবহারের ইয়াংকি সাবান !
৪.
যারা খবরের কাগজ পড়ে
সাতসকালে ফুসফুসে দুঃখ বা উল্লাসের জেলি বানায়
কোনো মানে হয় না, যা ফালতু তা অবিনশ্বর
রাস্তার মোড়ে আখেরে পছতাচ্ছে ব্রোনজের আলোকপাতি স্ট্যাচু
মানে মূর্তি, যান দেখুনগে যান খাটের তলায়
হলদেটে বঙ্কিমোত্তর পত্রিকায় স্মৃতিমাতাল সিংদরোজার সামনে
হাঁ-করা ভিড় কেতাথ্থ করছে
৫.
সন্ত্রাসে হাউম-হুম আদর্শে জলপাই ছেলেছুকরি
আজকাল তো সারা বছরই পৌষমাস
চোখের পাতায় অতিবেগুনি মায়া
তৎসহ ঠোঁটের দুকোণে তথ্যের ফেনা
আপনাকে ভাবতে হবেনা তো অত
জানেন তো প্রথম স্পর্শই হল ইররররটিক !
৬.
এই মাত্তর আলকাৎরায় স্নান সেরে উঠলেন বোকাবোকা চাউনির সাংসদ
জানতে চাইছেন আমরা কিসের বিরুদ্ধে ? কার বিরুদ্ধে ?
আমাদের খাঁচায় নার্ভাস ফড়ফড়ানি চলছে ।
গুছিয়ে বলব কিন্তু স্পষ্ট বলব না ।
মিছিল করব কিন্তু নিরক্ষর পথশিশুদের পড়াব না ।
যা প্রাসঙ্গিক তা বুজরুকি, যেই না বলিচি
ওমনি সেই পুনঃপাঠ বিশেষজ্ঞ : রুবলহীন মালেবাদ --
ডুকরে ওঠার অধিকার ফিরিয়ে দাও ! ভেবে দেখুন অ্যাগবারটি
ডলারে বদলযোগ্য জোনাকিগুলো
মশারির ওপর ঝরে পড়ছিল ছাদপাখার ঝাপটায়,
আর হাতের তালু বলতে হিমঘর । তাছাড়া
অন্নাদ ভবন্তি ভূতানি পর্জ্জন্যাদ অন্নসম্ভবঃ । পরের লাইনটা কী যেন ?
যজ্ঞাদ ভবতি পর্জ্জন্যো যজ্ঞঃ কর্ম্মসমুদ্ভবঃ ।ঠিক তো ?
৭.
ঘর্ষণের অপেক্ষায় দেশলাইকাঠির কাছে আগুন চাইতে শরীর দিয়েছে জল
আপনিই তো বলেছিলেন
“যারা যে রেটে বিয়োচ্ছে তারা সেই রেটে গরিব হবে”
জিভ কাঁপাবে সদর-হাটকরা নেকড়ের মধ্যাহ্ণ
ইতিমধ্যে ব্যাটন রেখে হিসি করতে গেছেন পুলিশ কনোসটেবুল
কিন্তু পাবলিকের মগজের মধ্যে সজারু…
দ্রুত শ্বাস ফেললে যদি অবস্হান টের পায় ?
অপব্যবহারযোগ্য অন্ধকারে ভয়ে ধোঁয়াটে
আপনার আগাছা-ঢাকা মুখশ্রী
ভবি না ভুললে যাবে কোথায় !
ফলে ধমনীর তিতকুটে রক্ত পালটাবার আমাদের দায় নেই
৮.
জাল নিজেই মাছেদের সামলাবে---
আমরা কোথাকার কে ? পুবদিকটা জানলেই কোনদিকেউত্তরমেরু
কাবার হয় । হয়ও না । আমার বাবার অপরপক্ষের মেয়েরা
যারা বাগদত্তের বোবা ফিঁয়াসি
মোমেজোড়া কাঁধের পাখনা মেলে গিয়েছেন তাম্রলিপ্ত
পড়বি তো পড় একেবারে নৈশবিভাগের ঠুমরিবিজ্ঞানের
শিক্ষকের বচসাকে কেন্দ্র করে চালু ঝগড়ার মাঝে
৯.
ওহে, কোলাকুলিরও ধর্মমোতাবেক পাঁজি হয় দিনক্ষণ হয় পোশাক হয়
মোলেও যাবে না খিনখিনে স্বভাব, এই না হলে কর্তাবাবা ? অ্যাঁ ?
উৎপাদনের পুঁজি উবে এয়েচে ভুতুড়ে পুঁজি
নকশার জায়গায় আকস্মিকতা
একটিমাত্র করণীয়ের বদলে একসঙ্গে অনেকরকম কাজ
কী আর বলব বলুন, আমার তো দাড়ি পেকে যাচ্ছে ।
১০.
এই ফাঁকে বলি : শহিদ হওয়া নাকি ভালো
তাই পাবলিক পিটুনির শহিদ, পুলিশে ঠ্যাঙানো শহিদ
অন্তত দেড় বাই দেড় বাই আড়াই গাঁথুনি দেখতে
বৃষ্টি এয়েচে তিন দিনের সফরে ।
এক গ্যালন তেলে ভালোই আত্মহত্যা হয়, কী বলেন স্যার ?
শ্বশুরটাতো ফৌজদারির অ-কূল পাথরে
পড়তায় পোষালো না বলে আইন করে আইনের সজ্ঞা বদলাতে হল
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে জলাশয়ের সে কি কান্না
একেবারে আছাড়িনাছাড়ি
তারকাখচিত আকাশ বলতে মশারি-চালের জোনাকি
জীবনটা ওতেই চলে যাবে….