মলয় রায়চৌধুরী

মলয় রায়চৌধুরী

শনিবার, ২৬ মে, ২০১৮

রাস্তার কবিতা

রাস্তার কবিতা
ডাক্তার বলেছে রোজ সকালে একঘণ্টা হাঁটুন
ডায়াবেটিস আর হৃদরোগ নিরাময়ের সবচেয়ে ভালো ওষুধ--
বেরোলুম সকালে ফাঁকা রাস্তায় হাঁটতে
এরকম উদ্দেশ্যহীন হাঁটার কোনো মানে হয়!
আমি তাই রাস্তায় পড়ে থাকা কাগজগুলো কুড়োবার কাজ
আরম্ভ করার কথা ভাবলুম
কী লেখা থাকে তাতে? কেনই বা তাদের গতি শেষ পর্যন্ত বেওয়ারিশ
পথশিশুদের মতন হয়!
কত মানুষের পরিশ্রম! কাগজের কলে মণ্ড তৈরি থেকে মেশিনে
তাদের পাতলা করে শুকোনো, কেটে সাইজ করা
তারপর বাজারে ছাড়া
সেই কাগজ কিনে বই খাতা সংবাদপত্র কত কী হয়!
তবু শেষ পর্যন্ত তাদের গতি রাস্তায় কেন?
কাগজ কুড়োনোর কাজ আরম্ভ করে প্রথম ছেঁড়া-নোংরা কাগজের টুকরো
তুলেই কাজটা ছেড়ে দিতে হলো
কাগজটা দিয়ে দিলুম কুড়ানিকে
যে আঁস্তাকুড় থেকে কাগজ বাছাই করছিল
আসলে যে কাগজটা তুলেছিলুম সেটায় দেখলুম
আমারই একটা কবিতা, ‘কালিমাটি’ পত্রিকায় বহুদিন আগে
প্রকাশিত হয়েছিল

শাকাহার
"বাঁচাও বাঁচাও"
শুনে মনে হলো কোনো কিশোরের আর্তচিৎকার
ওই বিশাল বাড়িটা থেকে শোনা যাচ্ছে
"বাঁচাও বাঁচাও"
রাতের অন্ধকারে ঢাকা প্রাসাদের মতো
প্রাচীন বাড়িটা
ভাবলুম, কী করব, কিডন্যাপারদের সামলাতে পারবো না
যা হবার হোক, ঢুকে যাই, দেখা যাবে
জীবনে তো সবকিছু পাওয়া হয়ে গেছে
এখন কিডন্যাপারের ছুরি বা গুলিতে মরলেও ক্ষতি নেই
ঢুকে গেলুম চুপচাপ হাট-করে খোলা বাড়িটাতে
"বাঁচাও বাঁচাও" যে-ঘর থেকে আসছিল
সরাসরি সেই ঘরে ঢুকে দেখি, বাচ্চা ছেলেকে
ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে খাওয়াচ্ছেন তার মা
আমায় দেখে উনি বললেন, কী, আপনিও নিশ্চই ভাবলেন
এটা ছেলেধরাদের বাড়ি? কীই বা করব বলুন
আমার ছেলেটা মাছ-মাংস খেতে চায় না একদম
আজকে চিকেন হয়েছে, চিংড়ির মালাইকারি, মুখে দিচ্ছে না
খাওয়াতে গেলেই লোকজড়ো করবার জন্য ওই বিটকেল
চেঁচানি, "বাঁচাও বাঁচাও"; ছেলেটি আমাকে বলল, দাদু
তুমিই বরং মাংস আর চিংড়ি খেয়ে যাও--
আমি পালংশাক ভাজা আর মোচার ঘণ্ট শুধু খাবো ভাত দিয়ে

সত্তরের পরের কবিতা

বেলিফুলের পাণ্ডিত্য
দূর থেকে দেখে, মোড়ের সব্জিঅলার কাছে
আপনাকে চিনতে পারলুম, পটল বাছছিলেন
পুরনো পরিচয় ঝালাই করার জন্য এগিয়েছিলুম
নিজেকে সামলাতে হলো, আপনি এখনও তেমনই সুন্দরী
আপনার খোঁপায় টাটকা বেলিফুল
কী আশ্চর্য বলুন, যৌবনে আমি আপনার খোঁপায়
বেলিফুলের মালা পরিয়ে দিয়েছিলুম
আমার প্রিয় ফুল প্রিয় সুগন্ধ
আপনি যাতে দেখে না ফ্যালেন তাই আর এগোলুম না
বুড়ো হয়ে গেছি, ফুলের গন্ধে হাঁপানির অ্যাটাক হয়
বেলিফুলের কর্তৃত্বের কাছে হার মেনে
নর্দমা থেকে সদ্য তোলা পাঁকে-ভরা
ওই ফুটে যেতে বাধ্য হলুম

বেতাল সত্তরোর্ধ
আপনাকে দেখলুম, শিয়ামক ডাবরের
নাচস্কুলের স্টুডিও থেকে বেরিয়ে আসছেন
এখনও আপনি সেই রকমই আছেন
যেমন যৌবনে ছিলেন, পাতলা কোমর, ডাগর চোখ
দুজনে ট্যাঙ্গো নেচেছিলুম, শবনমের জন্মদিনের পার্টিতে--
আপনিই আমাকে দেখে হাত তুললেন, এগিয়ে এলেন
বললেন, নাচ শেখান, বললেন, চলুন না একবার
শিয়ামক ডাবরকে দেখাই দুজনে কেমন ট্যাঙ্গো
নাচতে পারিবললুম সময় নেই গো, ব্যাঙ্কে যাচ্ছি
বলতে পারলুম না যে বুড়ো হয়ে গেছি
হাঁটুতে কোমরে আরথ্রাইটিসের ব্যথায় কাহিল
আসলে যাচ্ছি হাড়ের ডাক্তারের কাছে

জিয়রা ধক ধক করে
আপনাকে দেখলুম, পাঁচতারা হোটেল থেকে বেরোচ্ছেন
এতো রাতে, এতো সেজেগুজে
নিজেই বললেন, এখানে ক্লায়েন্টদের সার্ভিস দিই
তাহলে আপনার সম্পর্কে শোনা কানাঘুষা ঠিকই
এইরকম ধান্দা করেও কেমন করে নিজেকে
সুন্দরী রেখেছেন; আপনি নিজেই বললেন
প্লাস্টিক সার্জারি করে; বললেন, চল না তুই
সেই আগেকার কালের মতন দুজনে
ভালোবাসাবাসি করে, কাউকে ফ্রি ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে
সেই কবে, কতকাল হয়ে গেল, বৃষ্টির রাতে--
বললুম, আমি ফ্রি নেই গো, অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে ;
বলা হলো না, দুবার হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেছে
পরিশ্রম করলে অ্যানজাইনা পেইন হয়

এই বয়সে তৃতীয়বারের রিস্ক আর নিতে চাই না
চিহ্ণের ধাপা
--------------------
ডটপেনে চিটে আঁস্তাকুড়ে
মরা-পচা চিহ্ণদের লাশ
হৃদয় নিঠুর প্রিয়তমা
বিধাতা নির্বাণ অবক্ষয়
কত যে ফসিল ছেঁদো ছাই
ফেলে-দেয়া বাতিল বাতেলা
কীট খুঁটে ভিআরেফ কবি
জমা করে নিচ্ছে কবিতায়

আজও কুঝিকঝিকে ফেঁসে
রিসাইক্লিঙ বোঝে না দাদু
রকেটের ইনোভেটিভতা
মানুষ কী করে গেল চাঁদে

হ্ণদের খোলস ছাড়িয়ে...

প্রেমের কবিতা


দেবারতিদি বিয়ে করলেন মণীন্দ্রদাকে
উত্তররৈবিক বাংলা কবিতায়
সেই প্রথম ভাইবোনের বিয়ে

টেকো বিদ্বানরা বললেন, এসব হবে
জানতুম জানতুম জানতুম;
খোঁপা বিদুষীরা বললেন
এ মা, এবার কী হবে!

হা-হা, কেউই জানত না, একটা সরলরেখা
এক বিন্দু থেকে আরেক বিন্দুতে নয়
৩৬০ রকমের বিন্দুতে যায়।

কাটা আঙুলের মালা গলায় আমি
আঙুলপ্রমাণ বলে যে-সুবিধায় রাক্ষসরা ভোগে
কনের আর বরের কবিতার হলুদ মেখে
চোখ মেরে ঘুচিয়ে দিলুম দিন-রাতের ফারাক।

ওহ হো, বলা হয়নি, সে-আপ্যায়ন দ্যাখে কে!
 

দুইটি যৌনতার কবিতা

সুইস ব্যাঙ্কের ভল্ট
আমি ফুলকলির ঘরে পোশাক খুলে
ফ্যানের তলায় ল্যাঙটো হয়েই বসেছিলুম
ফুলকলি তৈরি হচ্ছিল 
আমার সঙ্গে প্রেম করবে বলে
বডিস ব্লাউজ শাড়ি খুলে ফেলেছিল
ওর ঘরের বন্ধ দরোজায়
তিনটে টোকা পড়ল
সঙ্গে গলাখাঁকারি
বুঝতে পারলুম যে ইশারাটা ফুলকলি চেনে
ও দরোজা খুলতেই কদমছাঁট পেটমোটা কালো
বছর পঞ্চাশেকের লোকটা বলল
নে তোর সুইজারল্যাণ্ডের ব্যাঙ্কের ভল্ট খোল
এই হপ্তার টাকাটা আগাম দিয়ে যাই
ফুলকলি ওর শায়া ওপরে তুলে ধরতেই
লোকটা চারটে করকরে একহাজার টাকার নোট
চার ভাঁজ করে গুঁজে দিল
ফুলকলির যোনিতে
দরোজা বন্ধ করার সময়ে ফুলকলি জিগ্যেস করল
শুক্কুরবার আসছেন তো
মদ কিনে রাখবো
লোকটা বলল দেখি
আমিও ফুলকলিকে বললুম 
ওইভাবেই এদিকে ফের তো 
দেখি


পাকিস্তানি ব্যাঙ্ক

আমি খুবই খারাপ কাজ করি
মগজকে ফাঁকা থাকতে দিই না
তাই জন্যে আমি ভালো বাঙালি নই
এই যে ল্যাঙটো হয়ে শুয়ে আছি
চম্পাকলির তোয়ালে-পাতা বিছানায়
নীল টুনি জ্বালিয়ে প্রেম করবো বলে
বন্ধ দরোজায় চারটে টোকা পড়তে
চম্পাকলি বলল ধারের খদ্দের টাকা দিতে এয়েচে
বিনা পোশাকেই চলে গেল সোজা
দরোজা খুলে বলল 
কী টাকা এনেছ
আর বাকিতে কাজ হবে না 
মাসের পর মাস বাকি রাখো
আমার দাঁড়ানো লিঙ্গের দিকে তাকিয়ে লোকটা বলল
উরি বাবা বোফোর্স কামান রেডি
তাই আমাকে কথা শোনাচ্ছিস
এনেছি টাকা পুরোটাই এনেছি
তোর পাকিস্তানের ব্যাঙ্কের দরোজা দেখা
চম্পাকলি পেছন ফিরল আর
লোকটা চারটে করকরে হাজার টাকার নোট
চার ভাঁজ করে গুঁজে দিল চম্পাকলির পেছনে 
আমি বললুম চেক করে নে নকল নয়তো

চিনে ছাপানো টাকা পাকিস্তানিরা আকছার আনছে