মলয় রায়চৌধুরী

মলয় রায়চৌধুরী

রবিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০২১

মা

 


মা

যতো বুড়ো হচ্ছি ততো বেশি মনে পড়ছে মায়ের মুখ

বিভিন্ন বয়সের মুখ একই সঙ্গে

ক্যাথলিক স্কুলে যাচ্ছি -- মা তো টা-টা করতে জানতেন না

দরোজার কপাট একটু-একটু করে বন্ধ করছেন

ইমলিতলার ঝোপড়ি থেকে তাড়ি খেয়ে ফিরেছি

কিছুক্ষণ পর মা নাকে আঙুল চাপা দিয়ে ইশারা করেছেন

ওপরে ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়তে নয়তো বাবা এসে জানতে পারবেন

মায়ের মুখে ভীতি যা আসলে আমার

ব্রা্হ্ম স্কুল থেকে ভিজে জামা সপসপে জুতোয় ফিরেছি

মা আগে থেকেই তৈরি ছিলেন গামছা আর হাফপ্যান্ট নিয়ে

অ্যালুমিনিয়ামের বাটিতে চিনেবাদাম দেয়া হালুয়া নিয়ে

বাটিটা মায়ের হাসির মতন তোবড়ানো

কুড়ি জনের সংসার সামলাতে হয় মাকে -- উনি দেখান আমি কুড়ি নম্বরে

মৃদু হাসি দেখে টের পাই আমিই এক নম্বরে

বয়সের সঙ্গে তাল দিয়ে আমার আর মায়ের মুখ একইভাবে চুপসে থাকে

চোখ বুজে মায়ের হাজার খানেক মুখ মনে করতে পারি এখন

গ্রেপ্তার হবার সময়ে মায়ের আতঙ্কিত মুখ বেশি করে মনে পড়ে

অবাঙালি পত্রপত্রিকায় আমার ফোটো দেখে আবার হাসি ফিরে আসে

মা বেশ গর্বোদ্ধত নারী ছিলেন বুঝতে পারি চোখ বুজে

যাবার সময়ে ওই গর্ববোধ দিয়ে গিয়েছিলেন, সেই মুখও মনে আছে...




বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২১

ই ন ডি য়া


ই ন ডি য়া

স্যানিটাইজারে হাত ধুয়ে মুখোশ খুলে রেখে এই লেখাটা লিখছি--

মন্দিরে যাবার গলির দুধারে সকাল চারটে থেকে ভিকিরিদের ঝগড়া চলছে

বসার জায়গার জন্য ; পূণ্যার্থীরা যাবার  বা ফিরে আসবার সময়

প্রসাদের টুকরো-টাকরা কিংবা খুচরো পয়সা দিয়ে যাবে

আজকে মকর সংক্রান্তির দিন

কে কোন ধর্মের তা নিয়ে ওদের মাথাব্যথা নেই

মন্দির মসজিদ গির্জা কোথাও পূণ্যার্থীদের আসা-যাওয়া হলেই হলো

থাকার জায়গা নেই খাবার টাকাকড়ি নেই - 

মুখোসের কথা শুনে ঢলাঢলি ঢঙে হাসাহাসি 

কোভিড ভ্যাকসিন শুনে বলির ছাগলের চাওয়া-চাওয়ি 

বার্ড-ফ্লু  কি সত্যিই এসেছে, জানতে চায় কিশোরী রুক্ষচুলদল

ফেলে-দেয়া ডিম আর মুর্গির মাংস খাওয়া যাবে--

ওরাও তো পারে দল বেঁধে চেঁচিয়ে উঠতে :

ই ন ডি য়া ই ন ডি য়া ই ন ডি য়া ই ন ডি য়া ই ন ডি য়া



ফুল


ফুল

শবের জন্য সেই ফুল চাই যা বহুক্ষণ থাকে

মূর্চ্ছা যায় না শবদেহে  শ্মশান ওব্দি বসে

প্রেমিকার পায়ে কেন জবাফুল দেয় না প্রেমিক ?

গোলাপ দেয় তা যে রঙেরই হোক না কেন

কারণটা খুবই সিম্পল ; গোলাপ মূর্চ্ছা যায়

প্রেমের কথা শুনলেই-- ফুলশয্যার রাতে

ফুলগুলো বাজার থেকে আনা - যে ফুল

বাজারে বিকোয় তা শবের ও ফুলশয্যার

দুটি ঘটনার মধ্যে পার্থক্য বিশেষ কিন্তু নেই

ফুলেদের ফুটে ওঠা আর থেঁতলে মারা যাওয়া


 

শনিবার, ২ জানুয়ারী, ২০২১

তোমার অতল চোখ

 

তোমার অতল চোখ


কেবল মনে আছে তোমার অতল দৃষ্টি ; তাছাড়া কিছুই দেখিনি

ক্ষিপ্রচটুল লাস্যে আরো কালো আর গভীর করেছ  চোখদুটি

ভুরুতে পেনসিল চোখেতে কাজলের প্রয়োজন ছিল না তো

তোমার সান্ধ্যতাণ্ডবের দৃষ্টি চোখের মণিকে ঘোরাচ্ছে দুদিকে

চোখের কোণ দিয়ে আট রকমের চাউনি বিঁধে ফেলছে প্রতিক্ষণ

তোমার আলারিপ্পু যতিস্বরম শব্দম বৰ্ণম তিল্লানা কিচ্ছু বুঝি না

কেবল টের পাই ক্ষতবিক্ষত করছ চোখপল্লবের কৃষ্ণ আঘাতে

 সংযমের আবেগবৃত্ত তুমি ভেঙে দিচ্ছ চোখের প্রলয়তাণ্ডবে






তোমার আঙুলগুলি

 

তোমার আঙুলগুলি


ভালো করে দেখিনি তোমার মুখ, আবছা মনে পড়ে,

দেহ ও পোশাকও মনে নেই, কেমন ভাসাভাসা যেন--

অথচ মনে আছে তোমার দশটি আঙুলের খেলা

আমি তো স্তম্ভিত হতবাক থ, তালুতে রক্তসূর্য আঁকা

প্রতিটি আঙুলও আলতায় অর্ধেক রাঙানো

ত্রিশূল তাম্রচূড় মুকুল সামদাম হংসাস্য ভ্রমর কাঙ্গুল

আঙুলে খেলাচ্ছ তুমি আমার হৃদপিণ্ডে নিঃশব্দ দামামা বাজিয়ে

সিংহমুখ মৃগশীর্ষ সর্পশীর্ষ চন্দ্রকলা সূচী কপিথ্থ ময়ূর

বুঝতে পারছিলুম বসে এক ঠায় তোমাকে নয়

ওই দশটি রক্তাভ আঙুলের অপার্থিব ইশারাকে ভালোবাসি