মলয় রায়চৌধুরী

মলয় রায়চৌধুরী

সোমবার, ২৩ জুলাই, ২০১২

আলফা ফিমেল বিড়ালিনী

ক্যাটওয়াকে শোস্টপার, শব্দহীন আলতো স্টিলেটো ফেলে দেহের আলোয়
মেলে ধরছিস তুই বাঁকের বদলগুলো হাসির হদিস তুলে, ঠিক যেন
ইমলিতলার তিন তলা থেকে বারবার ভাসাচ্ছিস দু'থাবার
তুলোট ম্যাজিক, অবন্তিকা, আলফা ফিমেল বিড়ালিনী, কোলে নিয়ে
আদর করিস যাকে তারই চরিত্র তোকে চেপে ধরে কালো শাদা বাদামি ধূসর
নক্ষত্র ক্লোনিং চোখে অর্গলছেঁড়া তোর লিভ-ইন কোনো পৌরাণিক
ঋষির রেশমি ঠোঁটে দরোজাবর্জিত কিছু অ্যাগ্রেসিভ আঁচড়-কামড়
তুই কি নীলাভ দূরত্বে থাকা অরুন্ধতী ? নাকি তুই
হবির্ভূ সন্নতি কলা অনসূয়া ক্ষমা শ্রদ্ধার কোঁকড়া ঘনান্ধকারে
দু'পাশে দর্শক নিয়ে ক্যাটওয়াকে হাঁটছিস দেশ-কালহীন ?
তাই তোকে বর্ণসংকর করা কতই সহজ দ্যাখ, আদুরে অ-নাস্তিক
নিজেই নিজেকে চেটে অহরহ স্পিক অ্যান্ড স্প্যান থাকবার
যৌনতার নরম মডেল তোর আদি-মা বা পূর্বপুরুষ ছিল কিনা
কেউই জানে না দেখতে কীরকম গায়ের আদল কন্ঠস্বর
শ্বাসে তোর পাখির উড়াল-গান ইঁদুরের মৃত্যুমুখী খেলা মাছেদের ঘাই
অবন্তিকা, অধুনান্তিকা, তোকে সীমা দিয়ে বেঁধে ফেলা অসম্ভব !
কোন পুরুষ ? কোন পুরুষ ? কোন পুরুষ ? কোন পুরুষ ?
তৈমুর আত্তিলা-হুন ক্যালিগুলা পল-পট রোবেসপিয়ার ? নাহ--
তোর প্রেম অনির্ণেয় তবু তুই ক্যাটওয়াকে গ্রীবা তুলে আমাকে খুঁজিস...

শনিবার, ১২ মে, ২০১২

চলো গুলফিঘাট

কেউ মরলেই তার শব ঘিরে মৃত্যু উৎসব ছিল ইমলিতলায়
বয়ঃসন্ধির পর দেহের ভেতরে অহরহ উৎসব চলে তাই
তারা মারা গেলে কান্নাকাটি চাপড়ানি নয় বিলাপ কেবল
শিশুদের জন্য করো বাচ্চা-বুতরুর জন্য কাঁদো যত পারো

শবখাটে চারকোণে মাটির ধুনুচি বেঁধে গুলফি ঘাটের শমসানে
ঢোলচি ঢোলকসহ সানাই বাজিয়ে নেচে আর গেয়ে পাড়ার ছোঁড়ারা
কুড়োতুম ছুঁড়ে-ফেলা তামার পয়সা প্যাঁড়া আম লিচু আকন্দের মালা
ফিরে এসে বিকালে রোয়াকে বসে বুড়ো বুড়ি কিশোর যুবক
তাড়ি বা ঠররা আর তার সাথে শুয়োরের পোড়া পিঠ-পেট
খেতে-খেতে ঠহাকা-মাখানো হাসি মাথায় গামছা বেঁধে গান

আমি মরবার পর ছেরাদ্দ বা শোকসভা নয় ; ইমলিতলার ঢঙে
উৎসব করবার কথা ছেলেকে মেয়েকে বলা আছে : মদ-মাংস খাও
স্বজন বান্ধব জ্ঞাতি সবাইকে বলো অংশ নিতে শমসানের পথে
বেহেড হুল্লোড় করে নাচতে গাইতে যেও ফিরো নেচে গেয়ে
মেটালিকা পাঙ্ক-রক হিপ-হপ সুমন শাকিরা ক্যাকটাস
বিটলস এলভিস কিশোর কুমার ও ইয়ুডলিঙে আর ডি বর্মণ...


 

শুক্রবার, ১১ মে, ২০১২

নুন ও নিমকহারামি

তুই তো আমার ঘাম জিভ দিয়ে ছুঁয়ে
বলেছিলি অবন্তিকা, 'আহ কি নোনতা
অন্তরতমের প্রাণ পুরুষালি ঘ্রাণ--'
সেইদিন, লক-আপ থেকে আদালতে
হাতে হাতকড়া আর কোমরে দড়ির
ফাঁসে বাঁধা, হেঁটেছি ডাকাত খুনিদের
সাথে, রাজপথে সার্কাসপ্রেমীর ভিড়...

বিশ্বাসঘাতক যারা, আমার  বিরুদ্ধে
আদালতে রাজসাক্ষী হয়েছিল,  তারা
কাঠগড়া থেকে নেমে বলেছিল, নুন
তো পায়নি, মিষ্টি ছিল আমার ঘামেতে;
তাই বিশ্বাসভঙ্গের প্রশ্ন নেই  কোনো
নিমকহারামি বলা চলবে না তাকে !
                                         

                                                       


শনিবার, ৫ মে, ২০১২

কপিরাইট

অবন্তিকা, অতি-নারী, অধুনান্তিকা
পঞ্চান্ন বছর আগে চৈত্রের কোনারকে
লোডশেডিঙের রাতে হোটেলের ছাদে
ঠোঁটের ওপরে ঠোঁট রেখে বলেছিলি
চুমু প্রিন্ট করে দিচ্ছি সারা নোনা গায়ে
ম্যাজেন্টা গোলাপি ভিজে লিপ্সটিকে
গুনে গুনে একশোটা, লিমিটেড এডিশান
কপিরাইট উল্লঙ্ঘন করলে চলবে না ।

অবন্তিকা, সাংবাদিকা, অধুনান্তিকা
এ-চুক্তি উভয়েরই ক্ষেত্রে লাগু ছিল
কিন্তু দু'জনেই এর-তার কাছ থেকে
শুনেছি কখন কবে কার সাথে শুয়ে
ভেঙেছি ভঙ্গুর চুক্তি কেননা মজাটা
ঠোঁটের ফাইনপ্রিন্টে লিখেছিলি তুই । 

আলফা পুরুষের কবিতা

কী দিয়ে তৈরি তুই ? নারীকে কবিতায়
আনা যাবেনাকো বলে তোর হুমকি,
অবন্তিকা ! কোন ঋতু দিয়ে গড়া ? স্কচ
না সিংগল মল্ট ? নাকি তুই হোমিওপ্যাথির
শিশি থেকে উবে যাওয়া ৩৫ হাজার ফিট
ওপরে আকাশে, প্লেনের হোল্ডে রাখা শীতে
নদীর মোচড়ানো বাঁকে ইলিশের ঝাঁক ?
আলোকে দেশলাই বলে ভাবলি কীভাবে ?
কেন ? কেন ? কেন ? কেন ?  অ্যাঁ, অবু , 
অবন্তিকা ? ভুলে গেলি তোরই ছোঁয়া পেয়ে
আড়মোড়া ভেঙেছিল চকমকি পুরুষ-পাথর !
বল তুই, বলে ফ্যাল, মিটিয়ে নে মিঠে ঝাল
জমা করে রেখেছিস স্কচ-খাওয়া জিভে ;
তোরই বাড়িকে ঘিরে তুষারের তীব্র আলো
সূর্য ওঠেনি আজ পনেরো দিনের বেশি
তবু তোর মুখশ্রী শীতে আলোকিত কেন ?
আসলে অন্যের ওপরে রাগ, উপলক্ষ আমি
হ্যাঁ, হ্যাঁ, খুলে বল, দাঁতে দাঁত দিয়ে বল
যে ভাবে ইচ্ছে তোর উগরে দে স্টক তোর...


তোকে নিয়ে লিখতে পারব না এ-নিষেধ
অমান্য করেই তবে পাতছি চোরা শব্দফাঁদ
অবন্তিকা মুখপুড়ি খুকিবাদী হে প্রেমিকা
এই নে মাটির পোড়ানো আংটি হাঁটু গেড়ে
দিচ্ছি তোর ক্রুদ্ধ আঙুলে, নিবি বা ফেলে দিবি
তা তোর অ্যাড্রেনালিন বুঝবে অবন্তিকা
আমি তো নাচার যতক্ষণ না যাচ্ছিস
মগজের ছাইগাদা-বিস্মৃতির উড়ো আবডালে...

স্প্যাম প্রেমিকা

বাঃ বেশ, আচমকা ঢুকে এলি ডেস্কটপে সঙ্গে তোর ফোটো
বহুরূপী আদুলগা, কুচকুচে হাসিমুখে ডাকছিস কালো সঙ্গমে
দেখছি গোগ্রাসে তোকে বদলভারের জানজতব ভেনাস
ভুলভাল ইংরেজি তলপেটে 'আই লাভ ইউ' লিখে
কৃষ্ণকলি হুকার ললনা তোর ফাঁদপাতা প্রেম নিবেদন
নরম উপাস্য উরু জাদুটোনা-করা নখে রঙ না রক্ত রে
কোন দেশ থেকে এলি মুখপুড়ি ? কেনিয়া উগান্ডা জাম্বিয়া
বুরকিনা ফাসো কংগো ক্যামেরুন সুদান নিঝের ?
মুম্বাই এসে ঘাঁটি গেড়েছিস নাইজারওয়াডিতে দলবেঁধে !
কী করে জানলি হ্যাঁ রে আফ্রিকার নারীসঙ্গ পাইনি কখনও ?
বেশ তোর হাইপার রিয়্যাল যৌন আবেদন ল্যাপটপ আলো
বিশদ জানিস তা । আসতে চাস আলিঙ্গনে তাই। কত টাকা
নাকি ডলারের বিনিময়ে পাওয়া যাবে ওই অভিজ্ঞতা
লিখিসনি তো ? কেবল দেখা করতে বলেছিস মীরা রোডে
জংশনের মোড়ে, ডিজিটাল রূপ ছেড়ে নামবি শহরে ।
৭ আগস্ট ২০১১

পাঁকের মৃন্ময়ী

তুই কি সত্যিই কুচ্ছিত ? সবাই তো তাই বলে। পাঁকের মৃণ্ময়ী!
কোলে কালি চোখ তোর এত ছোটো কী করে দেখিস চেয়ে? ঠোঁটও
ভিষণ পুরু; বুক-পেট-কোমর তো একাকার ; থলথলে মাংসঢলা বডি
পেছন থেকেও তোর দুই বুক দেখতে পেয়ে হাসাহাসি করে লোকে
তাছাড়া শরীর জুড়ে নিমপাতা-মাখা গন্ধে মাছিরা বাসর পাতে
চামড়ায়, এমনই পচন তোর ঘামে; চুলও উকুনে রুক্ষ : অহরহ
তোকেই আঁকছি রোজ যতটা আসল করে তুলে ধরা যায় তোর
পুতিগন্ধময় জিভ মেগের আড়ালে ঢাকা থুতু-বৃষ্টি কথা অনর্গল।

কিন্তু যখনই তোর নাভিতে হাঁ-মুখ চাপি তরল বিদ্যুত বয়ে চলে
পুরোটা শরীর জুড়ে আমাদের দুজনারই। কুচ্ছিত-সুন্দরী তুই
যাবতীয় 'ইজম'এর ঊর্ধে উঠে প্রমাণ করিস সব ফালতু বাঁটোয়ারা।
১২ আগস্ট ২০১১

পাপ ও পূণ্যের যুগ্মবৈপরীত্য

অদ্ভুত নারী তুই অবন্তিকা; বুঝতেই পারি না তোকে
বলিস যে, বোঝার দরকার নেই, কেউ তো বুঝতে চায়নি আজও
হবেই বা কি বুঝে-টুজে ! জাগতিক মজা ছাড়া আর-কিছু
কীই বা হবে জেনে, বলেছিলি ! কী করবি এত টাকা ? কয়েকটা ফ্ল্যাট ?
ব্যাংকের গোপন লকার ? টয়-বয় পালটাস যখন যেমন ইচ্ছা। 
লুকিয়ে আসিস তুই মাঝরাতে মার্সিডিসে চেপে; দরোজা খুলে ধরে ড্রাইভার।
ওঃ কী রোয়াব। ব্র্যান্ডেড সবকিছু: লুই ভিতঁ, জিমি চু, ক্রিস্টিয়ান
ডিয়র, বারবেরি --- লেবেল দেখে-দেখে টের পাই নাক আর বুক উঁচু
ক্ষমতা-বৈভব এই ভারতবর্ষের আর তোরও। আমি তোর বহুভাষী
প্রেমিকের অন্যতম। জানি না প্রেমিক বলা ঠিক হল কি না । বলেছিলি
প্রেমিক নামে কোনো জীব নেই, ছিল না কখনও এ-জগতে
দেয়া-নেয়া বৃত্তের মাঝে আমরা পাক খাই, তাই, যত দিন
পারা যায় লুটে নাও জীবনের অফুরন্ত গ্লানি। উজবুকের ঢঙে দেখি
আর ভাবি কি করেই বা ঘুষ নিস অমন সুন্দরী হয়ে ! বরকে লাথিয়ে
বের করে দিয়েছিলি চৌকাঠের ওপারে যৌবনে। এখনও চোখ তোর
রিয়্যালি যাকে বলে প্রতিমার ঢঙে বিস্ফারিত; ৩০-২৪-৩২ তোর
ওই বডিখানা । প্রশ্ন করেছি তোকে, অবন্তিকা, পাপবোধ হয়নাকো তোর ? বলেছিলি, পাপবোধ নেই বলেই অফুরন্ত ঘুষ নিস; লেখাপড়া
শিখেছিলি এ-জন্যেই, হাড়-মাস এক করে, আই এ এস হওয়াটাও সে জন্যেই
২১ জুলাই ২০১১

সবুজ দেবকন্যা

ওঃ তুইই তাহলে সেই সুন্দরী দেবকন্যা
তুলুজ লত্রেক, র‌্যাঁবো, ভেরলেন, বদল্যার
ভ্যান গঘ, মদিগলিয়ানি আরো কে কে
পড়েছি কৈশোরে, কোমর আঁকড়ে তোর
চলে যেত আলো নেশা আলো আরো মিঠে
ঝলমলে বিভ্রমের মাংসল মেজাজি রঙে
বড় বেশি সাজুগুজু-করা মেয়েদের নাচে
স্পন্দনের ছাঁদ ভেঙে আলতো তুলে নিত
মোচড়ানো সংবেদন কাগজে-ক্যানভাসে

অ্যামস্টারডম শহরের ভিড়ে ঠাসা খালপাড়ে
হাঁ করে দেখছি সারা বিশ্ব থেকে এনে তোলা
বিশাল শোকেশে বসে বিলোচ্ছেন হাসি-মুখ
প্রায় ল্যাংটি ফরসা বাদামি কালো যুবতীরা
অন্ধকার ঘরে জ্বলছে ফিকে লাল হ্যালো
এক কিস্তি কুড়ি মিনিট মিশনারি ফুর্তির ঢঙে
পকেটে রেস্ত গুনে পুরানো বিতর্কে ফিরি:
কনটেন্ট নাকি ফর্ম কোনটা বেশি সুখদায়ী 
তাছাড়া কীভাবে আলাদা এই ঝোড়ো আবসাঁথ ?

যুবতী উত্তর দ্যান, শুয়েই দ্যাখো না নিজে,
এই একমাত্র মদ বীর্যকে সবুজ করে তোলে ।

প্রেমিকার জ্বর

দেখলি তো অবন্তিকা
মশা-বধুরাও তোর
প্রেমিকগুলোর রক্ত চেনে!
মেঝেয় ছড়ানো তোর
গুঁড়ো-গুঁড়ো মুখচ্ছবি
উড়িয়ে পড়েছে সটকে
তোর যত পার্টটাইম
সুবেশ ডিউড দল।
জ্বরদেহ চাইছে রে
জড়িয়ে ধরুক তোর
গা-ময় ছড়ানো শীত
নিভিয়ে ফেলুক কেউ
তাপের স্হানিক নিম
শুকনো ঠোঁটের শ্লেষে
যা তুই চিরটাকাল
আমারই জন্যে শুধু 
রাখলি ঘুমের ভানে--
এরম ব্যবস্হা ভালো
অন্তত তাহলে প্রিয়ে
আমার কাছেই পাবি
জ্বরের বিকল্প রোগ।
২ আগস্ট ২০১১

শরীর সার্বভৌম

জরায়ুটা বাদ দিয়ে অমন আনন্দ কেন অবন্তিকা
তাও এই গোরস্হানে দাঁড়িয়ে গাইছিস তুই
মৃত যত প্রেমিকের গালমন্দে ঠাসা ডাকনাম
যারা কৈশোরে তোর বিছানার পাশে হাঁট মুড়ে বসে
ভুতুড়ে কায়দায় ঝুঁকে প্রেম নিবেদন করেছিল ?
তারপর তারা সব একে-একে লাৎ খেয়ে বিদেয় হয়েছে
অন্য যুবতী ফাঁসতে যাদের জরায়ুপথ বীজ শুঁকলেই
কয়েক হপ্তায় ফুলে ওঠে। সেসব মহিলা কিন্তু আনন্দি পেতো
এই মনে করে যে দেহটা তো সার্বভৌম, মন বা মনন নয়,
মন না চাইলেও দেহে খেলে যায় ওগরানো তরল বিদ্যুত
যা কিনা ভালো-খারাপের ঊর্ধে । তুইও ঠিক বলেছিস:
'শরীরই সার্বভৌম'।
৬ জুলাই ২০১১

পরমাপ্রকৃতি

মেঘের রঙ দিয়ে ছুঁয়ে দিস অবন্তিকা
চামড়া বাঘের ডোরা ধরে
হাওয়ার রেশম দিয়ে চুল আঁচড়ে দিস অবন্তিকা
মাথা বেয়ে ওঠে বুনোমহিষের শিং
ঝড়ের মস্তি দিয়ে পাউডার মাখিয়ে দিস অবন্তিকা
গায়ে ফোটে গোখরোর আঁশ
হরিণের নাচ দিয়ে কাতুকুতু দিস অবন্তিকা
ঈগলপাখির ডানা পাই
রোদের আঁশ দিয়ে নখ কেটে দিস অবন্তিকা
গজায় নেকড়ের থাবা হাতে-পায়ে
নদীর ঢেউ দিয়ে ঠোঁটে চুমু খাস অবন্তিকা
কাঁধে পাই রাবণের জ্ঞানীগুণী মাথা
বৃষ্টির ঝাপট দিয়ে জড়িয়ে ধরিস অবন্তিকা
হুইস্কির বরফ হয়ে যাই
গানের সুর দিয়ে চান করিয়ে দিস অবন্তিকা
ডুবে যেতে থাকি চোরা ঘূর্ণীর রসে

নখ কাটা ও প্রেম

রবীন্দ্রনাথ, দেড়শ বছর পর একটা প্রশ্ন আপনাকে:
কে আপনার নখ কেটে দিত যখন বিদেশ-বিভুঁয়ে থাকতেন,
সেই বিদেশিনী ? নাকি চৌখশ সুন্দরী ভক্তিমতীরা ?
যুবতীরা আপনার হাতখানা কোলের ওপরে নিয়ে নখ
কেটে দিচ্ছেন, এরকম ফোটো কেউ তোলেনি যে
ওকামপোর হাঁটুর ওপরে রাখা আপনার দর্শনীয় পা ? 



মহাত্মা গান্ধির দুই ডানা রাখবার সাথিনেরা
বোধহয় কেটে দিত নখ; কেননা বার্ধক্যে পৌঁছে
নিজের পায়ের কাছে নেইল-কাটার নিয়ে যাওয়া, ওফ, কি
কষ্টের, আমার মতন বুড়ো যুবতীসঙ্গীহীন পদ্য-লিখিয়েরা
জানে, প্রেম যে কখন বয়সের দাবি নিয়ে আসে ।

ফিসফিসে লোকে বলে সুনীলদার প্রতিটি নখের জন্যে 
উঠতি-কবিনী থাকে এক-একজন। জয় গোস্বামীরও 
ছিল, তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে সাগরের পাঁকে, জাহাজকে ছেড়ে। 
চাইবাসার ছোটোঘরে শক্তিদার নখ কেটে দিচ্ছেন প্রেমিকাটি
দেখেছি যৌবনে। বিজয়াদিদির নখ কেটে দ্যান কি শরৎ ?


যশোধরা তোর নখ কেটে কি দিয়েছে তৃণাঞ্জন কখনও ?
সুবোধ আপনি নখ কেটে দিয়েছেন মল্লিকার পা-দুখানি
কোলের ওপরে তুলে ? কবি কত একা টের পেতে, তার পা-এ
তাকালেই বোঝা যায়। যেমন জীবনানন্দ, হাজার বছর
খুঁজে চলেছেন কবে কোন বনলতা নখ কেটে দিয়ে যাবে তাঁর ।
৩ ডিসেম্বর ২০১১

রাবণের চোখ

শৈশবের কথা। সদ্যপ্রসূত কালো ছাগলির গা থেকে
রক্ত-ক্বাথ পুঁছে দিতে-দিতে বলেছিল কুলসুম আপা
'এভাবেই প্রাণ আসে পৃথিবীতে ; আমরাও এসেছি
একইভাবে'। হাঁস-মুর্গির ঘরে নিয়ে গিয়ে আপা
আমার বাঁ-হাতখানা নিজের তপ্ত তুরুপে চেপে
বলেছিল, 'মানুষ জন্মায় এই সিন্দুকের ডালা খুলে'।

রাবণের দশ জোড়া চোখে আমি ও-সিন্দুক
আতঙ্কিত রুদ্ধশ্বাসে দ্রুত খুলে বন্ধ করে দিই।

বুধবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

প্রজাপতি প্রজন্মের নারী চিত্রাঙ্গদা দেব

রবীন্দ্রনাথ, এটা কিন্তু ভালো হচ্ছে না
চিত্রাঙ্গদা বলছিল আপনি প্রতিদিন
ওকে রুকে নিচ্ছেন আপনাকে সাবান
মাখাবার জন্য বুড়ো হয়েছেন বলে
আপনি নাকি একা বাথরুমে যেতে
ভয় পান আর হাতও পোঁছোয় না
দেহের সর্বত্র চুলে শ্যাম্পু-ট্যাম্পু করা
পোশাক খুললে আসঙ্গ-উন্মুখ নীল
প্রজাপতি ওড়ে ওরই শরীর থেকে
আর তারা আপনার লেখা গান গায়

এটা আপনি কী করছেন ? আপনার
প্রেমিকারা বুড়ি থুতথুড়ি বলে কেন
আমার প্রেমিকাটিকে ফাঁসাতে চাইছেন !

রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

অমরত্ব

সালিশি-সভার শেষে তাড়া করে পিটিয়ে মেরেছে যারা, তারা
তোকেও রেয়াত করল না অবন্তিকা । আমরা দুজনে পচে
চলেছি হুগলি ঘোলা জলে ভেসে ; কী দোষ বলতো আমাদের ?
বউ তুই বৈভবশালীর : আমি গোপন প্রেমিক ছোটোলোক ।
সাম্যবাদ নিয়ে কত কথা চালাচালি হল তিরিশ বছরে ;
প্রেমিকের জন্যে নয় । কে জানে কাদের জ্ঞানে লেগেছে কেতাব...
প্রেমে পচে গলে হারিয়া যাওয়া ছাড়া যা থাকে তা অর্থহীন
সংসারের ঘানি টেনে কলুর বলদে মেটামরফোজড প্রাণী,
পার্টির ফেকলু কর্মী । ভালো এই লাশ হয়ে সমুদ্র ফেনার
বিশাল ঢেউয়ে ছেপে আঁশটে-আলোর পথে মৃত জড়াজড়ি...

বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

কৃত্রিমতা

গাড়ির কাচটা নামা; গগলস খুলে ওই দ্যাখ
সেই সাব-এডিটর তোর অভিনয়ে কৃত্রিমতা
আছে লিখে তুলোধনা করেছিল তোকে অবন্তিকা
তাকিয়ে রয়েছে তোর পোস্টারের খাঁজে অপলক--
নাহ, অপলক বলা যুৎসই নয়, গিলছে রে
তোর সিলিকন-ঠাসা বুক দুটো। ভুলে গেছে ব্যাটা
ওদুটো কৃত্রিম, কিন্তু যৌনতার শিল্পবোধে ফেঁসে
লটকে পড়েছে তোর বুকের নিজস্ব অভিনয়ে।

মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

তোর বহির্মুখ, অবন্তিকা

তোর বহির্মুখী দেহ, আদর-ক্লান্ত ঘামে, মুখপুড়ি মেছোমেয়ে
আলুথালু মরশুমে বেড়ে ও ফিকিরহীন, অপপ্রচারে, বুঝলি
জাহাজ ভাসাতে চাইছে পিম্পদের ঘোড়েল জোয়ারে ।
হাউ সিলি ! নো ? কী বলিস, ডারলিং, সুইটি পাই ?
তোর নাব্য নগ্নতা গ্লসি কাগজের চারু মলাটে হেলান দিয়ে
পুজো সংখ্যার মোটা বেহেডদের পাশে শুয়ে করছেটা কি ?
বল তুই ? তোর কোনো সে নেই ? বোবা না বধির তুই !
অলংকার-টলংকার বেচে খেয়েছিস জানি। বডির কাঠামো
দেখছি ঝুলে গেছে দশ বছর বাদে-বাদে কিস্তি দিতে-দিতে ;
হাউ স্যাড ! চ্যাংড়া যারা জোটে তারা টেকে না কেন রে ?
বছর না যেতেই কাট মারে ! অথচ বডিতো সরেস আজও
অক্ষরের ধাঁচে জমে একেবারে টানটান আগাপাছতলা
কন্ঠের টিউনিঙও শ্বাসকে ফুরিয়ে ফ্যালে রাত বাসি হলে ।
বেশ্যার আলতামাখা গোড়ালি দেখব বলে ভাবিনি কখনো-- তাও
ব্যালেরিনা জোতোর আবডালে, ডারলিং, ঘামে ভেজা অবন্তিকা
প্রণামীর খাতিরে তুই কতরকমের ফাঁদ পেতে রেখেছিস

বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১২

ডেথ মেটাল

মুখপুড়ি অবন্তিকা, চুমু খেয়ে টিশু দিয়ে ঠোঁট পুঁছে নিলি !
শ্বাসে ভ্যাপসা চোখের তলায় যুদ্ধচিহ্ণ এঁকে ডেথ মেটাল মাথা দোলাচ্ছিস
চামড়া-জ্যাকেট উপচে লাল নীল থঙ গলায় পেতল-বোতাম চোকার
ঝাপটাচ্ছিস সেকুইন গ্ল্যাম রকার খোলা বাদামি চুল কোমরে বুলেট বেল্ট
বেশ বুঝতে পারছি তোকে গানে ভর করেছে যেন লুঠের খেলা
স্ক্রিমিং আর চেঁচানি-গান তোর কার জন্য কিলিউ কিলিউ কিল
ইউ, লাভিউ লাভিউ লাভ ইউ কাঁসার ব্যাজ-পিন কব্জিবেল্ট
কুঁচকিতে হাত চাপড়ে আগুনের মধু'র কথা বলছিস বারবার 
আমি তো বোলতি বন্ধ থ, তুই কি কালচে ত্বকের সেই বাঙালি মেয়েটা ?
কোথায় লুকোলি হ্যাঁরে কৈশোরের ভিজেচুল রবীন্দ্রনাথের স্বরলিপি
কবে থেকে নব্বুই নাকি শূন্য দশকে ঘটল তোর এই পালটিরূপ
পাইরেট বুট-পা দুদিকে রেখে ঝাবড়া চুলে হেড ব্যাং হেড ব্যাং হেড ব্যাং
ঝাঁকাচ্ছিস রঙিন পাথরমালা বুকের খাঁজেতে কাঁকড়া এঁকে
পাগলের অদৃশ্য মুকুট পরে দানব-ব্লেড বেজ গিটারে গাইছিস
বোলাও যেখানে চাই নেশা দাও প্রেমজন্তুকে মারো অ্যানথ্র্যাক্স বিষে
মেরে ফ্যালো মেরে ফ্যালো মেরে ফ্যালো কিল হিম কিল হিম কিল
কিন্তু কাকে বলছিস তুই বাহুতে করোটি উলকি : আমাকে ?
নাকি আমাদের সবাইকে যারা তোকে লাই দিয়ে ঝড়েতে তুলেছে ?
যে আলো দুঃস্বপ্নের আনন্দ ভেঙে জলের ফোঁটাকে চেরে
জাপটে ধরছিস তার ধাতব বুকের তাপ মাইকে নিংড়ে তুলে
ড্রামবিটে লুকোনো আগুনে শীতে পুড়ছিস পোড়াচ্ছিস
দেয়াল-পাঁজিতে লিখে গিয়েছিলি 'ফেরারি জারজ লোক'
ভাঙাচোরা ফাটা বাক্যে লালা-শ্বাস ভাষার ভেতরে দীপ্ত
নিজেরই লেখা গানে মার্টিনা অ্যসটর নাকি 'চরম শত্রু দল'-এ
অ্যানজেলা গস কিংবা নাইটউইশ-এর টারজা টুরম্যান
লিটা ফোর্ড, মরগ্যান ল্যানডার, অ্যামি লি'র বাঙালি বিচ্ছু তুই
লাল নীল বেগুনি লেজার-আলো ঘুরে ঘুরে বলেই চলেছে
তোরই প্রেমিককে কিল হিম লাভ হিম কিল হিম লাভ হিম লাভ
হিম আর ঝাঁকাচ্ছিস ঝাঁকড়া বাদামি চুল দোলাচ্ছিস উন্মত্ত দুহাত...
২৯ আগস্ট ২০১১