মলয় রায়চৌধুরী

মলয় রায়চৌধুরী

বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০২০

আনন্দ

দেখতেই পাচ্ছেন, আমরা দুই অশীতিপর হাসিমুখে বসে আছি
আমরাও সেটাই দেখছি ।আপনারা দেখতে পাচ্ছেন না
আমাদের কাঁধ, হাঁটু, কোমরের ব্যথা
কাজের বউ আসছে না, যদিও মাইনে দিতে হয়েছে যাতে না ছেড়ে যায়
যদিবা বাসন মাজি, এমনকী গান গেয়ে, মেরে পিয়া গয়ে রংগুন
ওঁহাসে কিয়া হ্যায় টেলিফুন, তুমহারি ইয়াদ সতাতি হ্যায়
কিংবা কভি আর কভি পার লাগা তিরে নজর
সঁইয়া ঘায়ল কিয়া হ্যায় তুনে মেরা জিগর, কিংবা
জাদুগর সঁইয়া ছোড়ো মোরি বাঁইয়া আবি ঘরি জানে দো
বুড়ি বলে, ভাগ্নে জামায়ের হাতে হাজা হয়ে গেছে
স্যানিটাইজার আর বাসন মাজায় যাও টিভি দ্যাখো
আমি বলি শশীর সুন্দরী বউ অতো বড়ো ফ্ল্যাটের কাজ তো
একাই সামলায়, ওদের দশহাজারি কামওয়ালি চলে গেছে
অগত্যা ফুলঝাড়ু দেবার কাজটা নিয়েছি আর কী আশ্চর্য
এতো পাকাচুল মেঝেতে পড়ে থাকে তা তো বলত না ঝি
ন্যাতাটা গোড়ালি দিয়ে মেঝের ওপর ঘষি, মাটিতে বসতে পারি না যে
বুড়ি রিলাকসিল বা ব্যথার তেল মাখিয়ে দ্যায়, আমি ততোক্ষণ
গান গাই এ গুলবদন এ গুলবদন, ফুলোঁ কি মহক, কাঁটো কি চুভন
তুঝে দেখ কে কহতা হ্যায় মেরা মন, কহিঁ আজ কিসিসে পেয়ার
না হো জায়ে । দেখতে পাচ্ছেন তো আমরা দুই অশীতিপর কীরকম
মজাসসে আছি

রবিবার, ২৬ জুলাই, ২০২০

দাম্পত্য

তখন আমরাও নোংরা এমনকী অশ্লীল কথাবার্তা
করেছি বলাবলি, হেসেছি রাস্তার মাঝে কেননা আমাদের
ভাষা কেউই তো বুঝতো না । তখন বুড়ির ঢেউ-চুল
কোমর পর্যন্ত সুগন্ধ মাখানো, মুখ গুঁজে ঘুমোতুম তাতে--
চোখ দুটো, বুকও বড়ো-বড়ো, যা দেখে বড়দি বলেছিল
আমরা এরকম কনে তোর জন্যে খুঁজেই পেতুম না
তার আগে পীরিতের কতো খেল দেখিয়েছিলিস বাবা
তুই ঠিক ঈগলের মতো তুলে আনলি সাবর্ণ চৌধুরীর বাড়ি
তখন বুড়ির জামদানি আঁচল উড়তো ময়ূরপঙ্খী হয়ে
মোজেক মেঝেয় ব্যালেরিনা হিল তুলতো সাম্বা নাচের ছন্দ।
একান্ন বছরে বুড়ির স্মৃতি থেকে হারিয়ে গিয়েছে সেসব ;
মাঝে-মাঝে বলে তোমার গোঁফও ছিল রাজকাপুরের।
বুড়ির পছন্দ মর্ত্যের হানি বাফনা আর ইন্দ্রজিৎ বোস
আমি সুচিত্রা সেন নার্গিস মধুবালাকে আজও ভালোবাসি--
বুড়ো বয়সে পৌঁছে বুড়ি বলে এটাই দাম্পত্য-জীবন
যৌবনে সংসারের খাইখরচ-ঝক্কি-ঝামেলায় টেরই পাইনি
দাম্পত্যের শেষ পর্বে শোক-দুঃখ-অপচয়ও আনন্দ আনে।

সোমবার, ১৩ জুলাই, ২০২০

শেষতম প্রণয়িনী


এই বালিকাটি হীরের কণা দিয়ে গড়া, একে ছুঁলে
বালুকা-প্রতিমার মতো ঝরে যাবে আমারই ওপরে
হাজার বছর চাপা পড়ে থাকবো উট-চলা পথহীন পথে
শেষতম প্রণয়ের দুরারোগ্য অসুখের অজস্র ক্ষত হয়ে
বিদ্যুৎ-আগুনের বজ্র-স্ফুলিঙ্গ দিয়ে মোহনার সেতু
গড়তে পারলেও হীরের কণার প্রতিমাকে পাওয়া অসেতুসম্ভব
ছোঁবো না কখনও, বলব না ভার্জিন ইলিশখুকিদের সাথে
পদ্মার নৌকা হয়ে এসো স্বপ্নে, আলুলায়নের ডাক দাও।

হীরেকাটা ছুরি দিয়ে বুকের ওপরে রক্তে লিখেছি কাবিন --
দেনমোহর আমার অস্তিত্ব, যখন যেদিন ইচ্ছা, কলজে বা
হৃৎপিণ্ড কেটে নিয়ে যেও, তবুও স্পন্দন  থামবে না
তোমাকে দূরত্বে রেখে বাঁচার ক্ষুধার, দেখেছ তো 
কোরবানির পরও কতক্ষণ হৃৎপিণ্ডে অস্তিত্ব জেগে থাকে
যেন নাছোড় অশীতিপর মলয় বাতাসের রেশ রয়ে গেছে--
বালি আর বাতাসের প্রণয়সম্পর্ক বুঝতে পারে না কেউ ;
না যৌনতা নয়, যৌনতা তো রাঙঝাল-করা মাংসের
অপ্রণয় ; তাছাড়া, তুমি তো রক্তমাংসের দেবী নও
হীরের কণায় গড়া কালহীন অসেতুসম্ভব মোহনার সেতু

শেষতম প্রণয়িনী


এই বালিকাটি হীরের কণা দিয়ে গড়া, একে ছুঁলে
বালুকা-প্রতিমার মতো ঝরে যাবে আমারই ওপরে
হাজার বছর চাপা পড়ে থাকবো উট-চলা পথহীন পথে
শেষতম প্রণয়ের দুরারোগ্য অসুখের অজস্র ক্ষত হয়ে
বিদ্যুৎ-আগুনের বজ্র-স্ফুলিঙ্গ দিয়ে মোহনার সেতু
গড়তে পারলেও হীরের কণার প্রতিমাকে পাওয়া অসেতুসম্ভব
ছোঁবো না কখনও, বলব না ভার্জিন ইলিশখুকিদের সাথে
পদ্মার নৌকা হয়ে এসো স্বপ্নে, আলুলায়নের ডাক দাও।

হীরেকাটা ছুরি দিয়ে বুকের ওপরে রক্তে লিখেছি কাবিন --
দেনমোহর আমার অস্তিত্ব, যখন যেদিন ইচ্ছা, কলজে বা
হৃৎপিণ্ড কেটে নিয়ে যেও, তবুও স্পন্দন  থামবে না
তোমাকে দূরত্বে রেখে বাঁচার ক্ষুধার, দেখেছ তো 
কোরবানির পরও কতক্ষণ হৃৎপিণ্ডে অস্তিত্ব জেগে থাকে
যেন নাছোড় অশীতিপর মলয় বাতাসের রেশ রয়ে গেছে--
বালি আর বাতাসের প্রণয়সম্পর্ক বুঝতে পারে না কেউ ;
না যৌনতা নয়, যৌনতা তো রাঙঝাল-করা মাংসের
অপ্রণয় ; তাছাড়া, তুমি তো রক্তমাংসের দেবী নও
হীরের কণায় গড়া কালহীন অসেতুসম্ভব মোহনার সেতু