মলয় রায়চৌধুরী

মলয় রায়চৌধুরী

রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৬

আমি কাননদেবীরে বুঝি নাই, সুচিত্রা সেনরে বুঝি নাই

 Alfred Newton : "Poetry is a kind of ingenious nonsense."
বহুকিছু বুঝি নাই আমি, বহু লেখাজোখা, বহু আঁকজোক, নক্ষত্ররাজি
আমার গ্রন্হ যাঁহারা কোনোদিন হস্তে লন নাই, তাহাঁরাও
আমাকে পছন্দ কখনও করেন নাই এমনও দেখিয়াছি--
আমিও চাহি না তাহাঁদের পছন্দের তালিকায় আমার
কুনামখানি ঘাপটি মারিয়া থাকে, তাহাঁদের রোগগ্রস্ত করে--
জিজ্ঞাসা করিবার মতো কেহ নাই ; কেই বা বলিয়া দিবে
সাতাশ নক্ষত্র হতে কী কারণে একটি নক্ষত্রের নাম বাছিলেন
সেইটি চব্বিশতম, নক্ষত্রগণের ক্রীড়া কভূ বুঝি নাই
কাননদেবীরে বুঝি নাই, সুচিত্রা সেনরে বুঝি নাই
অহো, সে কি নক্ষত্রের আলো, তাহাঁদের বায়োস্কোপের
গবাক্ষগুলিতে তাহাঁদের জ্যোতি দেখিবার জন্য জনসমুদায়
কাড়াকাড়ি মারামারি করিতেছে, ক্রমে বৃদ্ধাবৃদ্ধ, তাহাঁদের পক্ককেশে
শেষ আলো কোথায় হারায়ে গেছে, তাহাঁরা কেহ কভূ
জানিতে পারেন নাই ; অহো, কেমনে একটি রকেট চাঁদে যায়
ফিরিয়া চলিয়া আসে পুনরায় ! কেহ কেহ রকেট বিজ্ঞানাশ্রিত কবিতায়
চুপিসাড়ে কোয়ান্টাম বাস্তবের ফাঁদখানি পাতিয়া অপেক্ষা করেন
যেমন বিষ্ণু দে, তাহাঁর পংক্তিগুলি রকেটগণিতে কেন যে আক্রান্ত
বুঝি নাই ; আমি যোগেন চৌধুরী বুঝিয়াছি, গাইতোণ্ডে বুঝি নাই--
কুড়ি কোটি টঙ্কায় তাহাঁর তৈলচিত্র বৈভবশালীগণ ক্রয়ের গৌরবে
নিজ-নিজ নাম টঙ্কাক্ষরে লিপিবদ্ধ করিবার ক্রীড়ায় মাতেন
অহো, অহো, আমি অলোকরঞ্জন বুঝিয়াছি, আলোক সরকার বুঝি নাই--
তিন দিনে এক পংক্তি লিখিবার পর, আরেক পংক্তি আঠাহীন
নিম্নের সিঁড়ির ধাপে স্হান লয় ; প্রথম পংক্তির ন্যায় সেটিও কবিতা--
বুঝি নাই প্রতিটি পংক্তি যদি কবিতার রূপ লয়
তাহারা কি বিচ্ছিন্ন সমাপতনের অষ্টমগর্ভের সন্তান--
মাধুরী দীক্ষিতের যেনবা কটিদেশ, আলিয়া ভাটের বেবি ঠোঁটের ফুলেল--
অমিয় চক্রবর্তীর কুহকবিহীন নিরাসক্ত হাহাকারহীন স্বপ্নহীন ঢঙে
অনুসরণের পথে দেখি আলোক সরকার; ছোটোলোকপাড়ার যুবা আমি
সদ্য দাড়ি গজাইবার আনন্দে হাত বুলাই, অচিন্ত্যনীয় চিন্তা করি--
"উতল নির্জন" হইলা কেমনে ! "নির্জন" তো জীবনানন্দীয়,
যাহাঁর কবিতার বিপুল ঝঞ্ঝা কৃষ্ণচশমায় করিয়াছিলেন রুদ্ধ ?
"আমার তো জানা নেই সহসা এ রঙ্গের প্রণয়" -- বুঝি নাই আমি --
"আমাকে তা দেওয়া কেন যা আমার নয়" -- বুঝি নাই আমি --
খ্রিস্টিয় ইংরাজগণ লইয়া আসিয়াছিল তাই, ফরাসি কবিতা বাংলায়
মধ্যবিত্ত বাঙালির আধুনিকতাবাদী ধুম্রজালে আলোক সরকার
পংক্তি ধরিবার জন্য নিবেশ করিয়াছেন চিত্রের অনৈক্যের খাতে
বয়সের সাথে-সাথে পংক্তিসমূহ পারস্পরিক জুয়া খেলিয়াছে
আধুনিকতাবাদী মহাআধুনিক কবিমহাশয়, গবাক্ষটি মালার্মের ছিল
অথবা সপ্তদশ শতকের ঝঁ লা ফনতা, উনিশ শতকে আলফসেঁ দ্য লামার্তিন
কেন কেহ আপনাকে ডাডাবাদী রাইজোম্যাটিক বলিবে না
পংক্তির পরের পংক্তির মাঝে আঠা নাই ! রজঃ বা বীর্যের আঠা ?
কখনো বা ঠাটা গদ্যে স্বগতসংলাপ কবির নামের ওজনে উঠে যায়
অতিসংহতির কূপে ইহাও কি "নিরাশাকরোজ্জ্বল চেতনার" ঢেউ নহে ?
আলোক-অলোক-দীপংকরের কন্ঠ শুনিয়াছি বালিগঞ্জের ধনীগৃহে--
শুনিয়াছি ঢেউগুলি স্ব স্ব দেহে সাবান মাখিবার পর ফেনাখেলা করে--
বাক্যগুলি অবজেকটিভ প্রতিস্ব লয়ে যাত্রা করে এবং সাবজেকটিভিটি
কাঁধের উপরে লয় "আলোকিত সমন্বয়" ; উহা কি প্রকৃতই সমন্বয় ছিল ? তাহাঁদের বঙ্গীয় চাহনিতে কলিকাতা নাই কেন ? বাস্তব কলিকাতা !
ঘরের বাহিরে চাহিয়া দ্যাখেন নাই আপনি ও আপনারা --
নিজ গৃহকোণকেই ঐতিহ্যপীড়িত "বিশুদ্ধ অরণ্য" রূপে মস্তিষ্কের কোষে
বোদল্যারি "শাণিত বিষাদ" নিপুণ বিন্যাসী বিলাসিতা পায়; অথচ শহর নাই
দেহের ভিতরে "দুই পাশে সবুজ ঘাসের স্বাভাবিক" । রিয়্যালি ? স্বাভাবিক ?
"কোনো পদচিহ্ণ নাই" ; আমরা যাহারা ছোটোলোক, দেখিতেছি
অজস্র মানুষ, হাজার লক্ষ পদচিহ্ণ প্রতিদিন প্রতিটি মুহূর্তে কোথায় হারায়ে যায়
এইসব মানুষের কোনোরূপ "আশ্রয়ের বহির্গৃহ" নাই ; আপনার আছে--
আপনাদিগের, আলোক-অলোক-দীপংকর মহাশয়দের.....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন