মলয় রায়চৌধুরী

মলয় রায়চৌধুরী

শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০১১

বিষবাউলের গান

মলয় মলয় মলয় মলয় মলয় মলয়
শুনতে শুনতে দেখতে দেখতে শুনতে শুনতে
এই নাম আর দেয়া যাবে না ছেলেকে নাতিকে
নামের ভেতর কোনো নরম নদীর নারী নেই
জোনাকি মালায় ওর হরিণীরা সঁপেনাকো গলা
শীতের হাওয়ায় নেই আমলোকি-পাতাদের নাচ
কী রেখেছে তাহলে ছাইপাঁশ ?
বানভাসি-ফেলে-যাওয়া ধানখেতে হাঁটু-ডোবা বালি...
আঁস্তাকুড়ে ফেলে-যাওয়া ভ্রুণ...
শুয়োরের পচা মাংস তেবাষ্টে হাঙরের নোনামাছ...


ফ্ল্যাট বিক্রি করে চলে যাচ্ছে এ-শহর ছেড়ে
৩৮৯৭ টি কবিতার বই বিলিয়ে দিতে চেয়েছিল
নেবার জন্য পাওয়া গেল না কাউকে
কবিতার বই রাখবে না কোনো গ্রন্হাগার
পাঠক নেই দেখভালে খরচ কে দেবে
জাতীয় গ্রন্হাগার কপিরাইট আইনে বই পায়
রাজ্য গ্রন্হাগার রাখে পার্টির লোকেদের বই
কারোর বাসায় অত জায়গা নেই তরুণ কবিদের
অতি ভালবাসা-মাখা কবিতার বই রাখবার তাক
মলাট বাদ দিয়ে কিলো দরে কিনতে রাজি
পোরোনো কাগজঅলা...প্রেম হাসি ক্রোধ সংবেদন
শতশত উপহার নেবার জন্য কোনো লোক নেই
পত্র-পত্রিকা জুড়ে হাজার হাজার সমালোচনার ঝাঁক
সবই ফালতু বুঝি ? মগজ ধোঁয়াটে হয়ে ওঠে
এত বই এত এত পত্রিকা কোথায় যাচ্ছে চলে ?
তিরিশের পর থেকে ? দুই বাংলা জুড়ে !
বাংলার টিচার ঠিক বাতলেছিলেন ক্লাসে:
টেকার জন্যে চাই কুখ্যাতি-দুর্নাম-বিষবাউলের গান
এ-সময় সে-সময় নয় : সে-সব বাউল আজ মৃত।


কাহার কুর্মি ডোম দুসাধের ছোটোলোক পাড়া
শৈশব কি গ্রন্হহীন ছিল ? কবির রহিম দাদু
তুকারাম থিরুভাল্লুভার রামচরিতের ছেঁড়া পাতা ?
এতটা আসার পর পিছন ফিরলে দ্যাখে
সেদিকে কিচ্ছু নেই, দিগন্তবিহীন পচা-ছেঁড়া-ছাতাপড়া
দশ-বিশ-হাজার টাকা নোটের দুর্গন্ধে টেকা দায়
কী হবে তাহলে ? সযত্নে আদরে রাখা কাব্যগ্রন্হগুলো ?
বাড়ি তো বিক্রি হবে চারদিন পর নতুন মালিক
বলেছেন: না না ওসব বই ফই গতি করুন
কারা পড়ে মশায় রবিঠাকুরই তো শুধু সাজেগোজে
তো আপনাদের এই বেআফিমি কারেস্তানি নেশা...
ওই তো মিউনিসিপালিটির জঞ্জালের ভ্যাট
কাগজকুড়ানিরা আসে দলবেঁধে সকালবেলায়
ক্যানিঙের ট্রেনে ভাড়া লাগে না কারোর


বাবা বারণ করতে পারতেন মা বারণ করতে পারতেন
শিক্ষক বলেছিলেন ওহে ঠাঁই নেই ছোটতরীর মানে
নরম নদীর নারী সোনাগাছি নিয়নে থাকুন
নদী থাক গলাটেপা বাঁধের বেড়ায় বাঁধা
হরিণ ঝুলতে থাক শিকারীর রঙিন দেয়ালে শিং তুলে
জোনাকিরা চলে যাক ফিনফিনে এনডোসালফিনে
আমলোকি গলে যাক রামদেব-আশ্রমের চিমচিমি-মোড়কে
শহরে আর আঁস্তাকুড়েরও জায়গা নেই
বলেনিকো কেউ ? কবির রহিম দাদু কৃত্তিবাস
কাশিরামদাস ময়মনসিংহী গান লেখকেরা ?
এত কবিতার বই এত কবিদের লেখা শ্বাস-প্রশ্বাস


ওরই নামের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে থাকবে আঁস্তাকুড়
কলেজ স্ট্রিটের পথে ডাস্টবিনে ফেলে-দেয়া ভ্রুণ
থাকবে ধাপার মাঠ শহরের জঞ্জালের বিরাট পাহাড়
নামের ভেতর মৃদু হাওয়া নয় নশ্বর অবিশ্রাম ঝড়...

( শব্দপাঠ পত্রিকার চতুর্দশ সংখ্যা ২০১১-এ প্রকাশিত )

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন