মলয় রায়চৌধুরী

মলয় রায়চৌধুরী

শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৪

নেই কিন্তু ছিল

সেই লাল ল্যাঙোট দুদিক থেকে ফিতে দিয়ে কোমরে বাঁধা
আর সামনে দিকে লম্বা পাড় লাল নীল হলুদ সবুজ যে রঙ চাই
লিঙ্গকে বেকাবু হওয়া থেকে বাঁচাবার জন্য
লম্বাআআআআ খোলের ভেতর ভাঁজ-ভাঁজ টাকা
টাকাগুলো ঠেশে কুঁচকির মাঝে
যাতে অন্য লোকেরা মনে করে
উরিব্বাপ কোন পাড়ার চাঁদু
কী সাইজ রে
আসলে নেই -- লিঙ্গই নেই লোকটার কিন্তু সিনেমার লাইনে
মারামারি করতে হবে আলিয়া ভাটকে পর্দায় পেতে
গায়ে সর্ষের তেলে মেখে ভিড়ে সেঁদিয়ে যাবার পেছল--
দাদা এটা আলিয়া ভাটের ফিল্ম নয় -- কারিনা কাপুরের --
তো কী হয়েছে, যাঁহা আলিয়া তাঁহা কারিনা, তারা তো পর্দায়--
আসলে তো ল্যাঙোটে রয়েছে ডোডোপাখি
ভয় পেতে হলে ডায়নোসর, লম্বাআআআআ গলা
ঠেকাবেন কি করে ? কী আর করা যাবে বলুন !
ফসিল তো আছে । লাল ল্যাঙোটের জীবাশ্ম !
 

রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৪

অবন্তিকা, তোর ওই মহেঞ্জোদারোর লিপি উদ্ধার

কী গণিত কী গণিত মাথা ঝাঁঝা করে তোকে দেখে
ঝুঁকে আছিস টেবিলের ওপরে আলফা গামা পাই ফাই
কস থিটা জেড মাইনাস এক্স ইনটু আর কিছু নাই
অনন্তে রয়েছে বটে ধূমকেতুর জলে তোর আলোময় মুখ
প্রতিবিম্ব ঠিকরে এসে ঝরে যাচ্ছে রকেটের ফুলঝুরি জ্বেলে
কী জ্যামিতি কী জ্যামিতি ওরে ওরে ইউক্লিডিনি কবি
নিঃশ্বাসের ভাপ দিয়ে লিখছিস মঙ্গল থেকে অমঙ্গল
মোটেই আলাদা নয় কী রে বাবা ত্রিকোণমিতির জটিলতা
মারো গুলি প্রেম-ফেম, নাঃ, ফেমকে গুলি নয়, ওটার জন্যই
ঘামের ফসফরাস ওড়াচ্ছিস ব্রহ্মাণ্ড নিখিলে গুণ ভাগ যোগ
আর নিশ্ছিদ্র বিয়োগে প্রবলেম বলে কিছু নেই সবই সমাধান
জাস্ট তুমি পিক আপ করে নাও কোন প্রবলেমটাকে
সবচেয়ে কঠিন আর সমস্যাতীত বলে মনে হয়, ব্যাস
ঝুঁকে পড়ো খোলা চুল লিপ্সটিকহীন হাসি কপালেতে ভাঁজ
গ্যাজেটের গর্ভ চিরে তুলে নিবি হরপ্পা-সিলের সেই বার্তাখানা
হাজার বছর আগে তোর সে-পুরুষ প্রেমপত্র লিখে রেখে গেছে
মহেঞ্জোদারোর লিপি দিয়ে; এখন উদ্ধার তোকে করতে হবেই
অবন্তিকা, পড় পড়, পড়ে বল ঠিক কী লিখেছিলুম তোকে--
অমরত্ব অমরত্ব ! অবন্তিকা, বাদবাকি সবকিছু ভুলে গিয়ে
আমার চিঠির বার্তা তাড়াতাড়ি উদ্ধার করে তুই আমাকে জানাস

মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৪

আমার স্বদেশ

আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে আদিবাড়ি উত্তরপাড়া আমার দেশ নয়
জানি গঙ্গায় অপরিচিতদের চোখ খুবলানো লাশ ভেসে আসে
আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে পিসিমার আহিরিটোলা আমার দেশ নয়
জানি পাশেই সোনাগাছি পাড়ায় প্রতিদিন তুলে আনা কিশোরিদের বেঁধে রাখা হয়
আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে মামার বাড়ি পাণিহাটি আমার দেশ নয়
জানি কোন পাড়ায় দিনদুপুরে কাদের খুন করা হয়েছে
আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে শৈশবের কোন্নগর আমার দেশ নয়
জানি কারা কাদের দিয়ে কাকে গলা কেটে মারতে পাঠায়
আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে যৌবনের কলকাতা আমার দেশ নয়
জানি কারা কাদের বোমা মারে বাসে-ট্রামে আগুন লাগায়
আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে পশ্চিমবঙ্গ আমার দেশ নয়
এদেশের লকআপে পিটুনি খেয়ে থেঁতলে মরার অধিকার আমার আছে
এদেশের চা-বাগানে না খেতে পেয়ে দড়িদঙ্কা হবার অধিকার আমার আছে
এদেশের চটকলে গলায় দড়ি দিয়ে ঝোলার অধিকার আমার আছে
এদেশের দলগুণ্ডাদের পোঁতা মাটির তলায় হাড় হবার অধিকার আমার আছে
এদেশের ধনীদের ফাঁদে ফেঁসে সর্বস্বান্ত হবার অধিকার আমার আছে
এদেশের শাসকদের বাঁধা লিউকোপ্লাস্ট মুখে বোবা থাকার অধিকার আমার আছে
এদেশের নেতাদের ফোঁপরা বক্তৃতা আর গালমন্দ শোনার অধিকার আমার আছে
এদেশের অবরোধকারীদের আটকানো পথে হার্টফেল করার অধিকার আমার আছে
আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে বাংলাভাষা আমার স্বদেশ নয়

মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০১৪

অন্তরটনিক

                আমার এক পাঠিকা এটি তৈরি করে দিয়েছেন ।

 

শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৪

সাবর্ণভিলার আত্মহত্যা

আমাদের সাবর্ণভিলার, নোনাঝুরো খণ্ডহর
আত্মহত্যা করে নিল আজ
কাছারিবাড়ির তিনশ বছরের নীল অন্ধকারে
ঝুলছে নিঃসঙ্গ একা নতুনকাকার মেয়ে পুটি
বেঁধে গিঁট জামদানি শাড়ি

ফাক ইউ

আছড়ে কেলিয়ে পড়ে গেল আজ আশি বছরের মহীরুহ
প্রতিষ্ঠানের রেডউড ; অপগণ্ড শোকক্যালা পরগাছা নিয়ে
খোকাখুকু উইপোকাদের কাঁধে চলল ক্যাওড়ায়

শুরু হল সবুজ শতক জুড়ে শিশিরের রোদেলা হুল্লোড়
ঘাসফুলে বুনোবীজে দুর্দম হাত-পা ছড়ানো উদ্দাম
অবশ্যি এরাও জানে শিগ্গিরি আলো-হাওয়া চাপা দিয়ে যম
উঠে যাবে আরেকটা রক্তচোষা গদাইলস্কর ভুঁড়ো ডেডউড ভাম
চুষে খাবে ওদেরই মাটির গন্ধ কচিতাজা সুখের স্বাধীন

যদ্দিন তা না হচ্ছে তদ্দিন কাশফুলে মুথাঘাসে দুর্বাদলের শীষে
মৌমাছি প্রজাপতি ফড়িঙেরা গেয়ে নিক  ফাকিউ ফাকিউ সুরে
ফাকিউ ফাকিউ ফাক ইউ ফাকিউ ফাকিউ ফাক ইউ..

সোনাগাছিতে বৃষ্টি

পাকানো সিঁড়ির শেষে, তিন তলার বাঁকে, বলল পিসতুতো দাদা
"এই হল সোনাগাছি, শহরের রানি, ফি-রাত্তিরে পাঁচ লিটার
খোকাখুকু জমা হয় এ-পাড়ায়, ভেবে দ্যাখ, মৌজমস্তিতে নষ্ট
কত-শত মহান পুরুষ-নারী, জন্মাবার আগেই খাল্লাস ;
ওই যে গুটকাঠোঁট মাসি, ওকে বললেই, যাকে চাই নিস--
এখন তো চুলখোলা মেয়েদের নধর দুপুর, সকলেই ফাঁকা,
হাফরেটে সুন্দরীতমাকে পেয়ে যাবি ; কাজ আছে, আমি চললুম ।"

'ঘরে নয়, বিছানায় নয়, চলো না কালবৈশাখিতে ভিজে
প্রেমিকার অভাব মেটাই', বলি কালো মেয়েটিকে ।

চুড়িদার শ্যামলিমা আর আমি কোমর জড়িয়ে
আহিরিটোলার ঘাটে ঝোড়োজল গঙ্গায় নামি--
ও হয় ফোলানো পালের নৌকো, চিৎসাঁতার দোল খায়
আমি হই লগিঠেলা ভাটিয়াল মাঝি ।

"আবার এসো কিন্তু, অ্যাঁ, প্রেমিকা ভেবেই চলে এসো
যেদিন পড়বে বৃষ্টি, ভেতরে তো ভিজছি না
বাইরের ভেজবার রোগটুকু দিয়ে চলে যেও ।"

সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি

 
 'সি এম জিন্দাবাদ' নিশিডাক ; পিছনে ফিরতেই, চিৎকারকারী
সাবর্ণভিলার ছায়াছ্যাঁদা সিংদরোজার চৌকাঠে
ছোরাটা ঢুকিয়ে দিল খুড়তুতো ভাইয়ের পেটে !
"সি এম ? সি এম ?" গলিটা দৌড়োয় দুদ্দাড়
'না, না, মুখ্যমন্ত্রীর জয় চায়নি গো, পালাও পালাও'

ছলকানো আতঙ্কের ঘড়া ফেলে ন্যাতাদঙ্কা খাওয়া-পরা মাসি
লেংচে ছুটতে গিয়ে খালি পেটে বমি করে তলপেট চেপে
যাবতীয় তত্ত্বের কস্তাপেড়ে থুতু : অস্ত্র কি মিসানথ্রপিস্ট
গামছামুখো ছুরি ছোরা ন্যাপালা ভোজালি বোমা বন্দুক ?

আজকে পেলুম টের ঊর্ধ্বশ্বাস বুক থেকে নয় । চিতাবাঘ গতি
ঘিলুতে জীবাশ্ম সেজে আলোর গণিত নিয়ে টুঁটি টিপে নামে :
'সি এম তো চারু মজুমদার'