মাথা কেটে পাঠাচ্ছি যত্ন করে রেখো
মলয় রায়চৌধুরীর প্রেমের কবিতা
উৎসর্গ : মাহবুবা করিম, মোহনা সেতু, লাবণ্য শাহিদা, সাদিয়া সোবহান সারা, শারমিন সুবহা, সিলভিয়া নাজনীন, মৌ মধুবন্তী প্রমুখ যাঁরা আমার কবিতাকে তাঁদের সুকন্ঠের দ্বারা উদ্ভাসিত করেছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধায়
মাথা কেটে পাঠাচ্ছি, যত্ন করে রেখো
মাথা কেটে পাঠাচ্ছি, যত্ন করে রেখো
মুখ দেখে ভালোবেসে বলেছিলে, ‘চলুন পালাই’
ভিতু বলে সাহস যোগাতে পারিনি সেই দিন, তাই
নিজের মাথা কেটে পাঠালুম, আজকে ভ্যালেনটাইনের দিন
ভালো করে গিফ্টপ্যাক করা আছে, ‘ভালোবাসি’ লেখা কার্ডসহ
সব পাবে যা-যা চেয়েছিলে, ঘাম-লালা-অশ্রুজল, ফাটাফুটো ঠোঁট
তুমি ঝড় তুলেছিলে, বিদ্যুৎ খেলিয়েছিলে, জাহাজ ডুবিয়েছিলে
তার সব চিহ্ণ পাবে কাটা মাথাটায়, চুলে শ্যাম্পু করে পাঠিয়েছি
উলঙ্গ দেখার আতঙ্কে মিছে ভুগতে হবে না
গৌড়ীয় লবণাক্ত লিঙ্গ দেখবার কোনো স্কোপ আর নেই
চোখ খোলা আছে, তোমাকে দেখার জন্য সবসময়, আই ড্রপ দিও
গিফ্টপ্যাক আলতো করে খুলো, মুখ হাঁ করাই আছে
আমার পছন্দের ননভেজ, সন্ধ্যায় সিঙ্গল মল্ট, খাওয়াতে ভুলো না
মাথাকে কোলেতে রেখে কথা বোলো, গিটার বাজিয়ে গান গেও
ছ’মাস অন্তর ফেশিয়াল করিয়ে দিও, চন্দনের পাইডার মাখিও
ভোর বেলা উঠে আর ঘুমোতে যাবার আগে চুমু খেও ঠোঁটে
রাত হলে দু’চোখের পাতা বন্ধ করে দিও, জানো তো আলোতে ঘুমোতে পারি না
কানে-কানে বোলো, “আজও উন্মাদের মতো ভালোবাসি”
মাথা কেটে পাঠালুম, প্রাপ্তি জানিও, ফোন নং কার্ডে লেখা আছে
ইলোপকন্যা
তোর বেডরুমে তোকে পেলুম না, কি ঝঞ্ঝাট, মানে হয়
অবন্তিকা, কোন নদী নিয়ে গেছে, বরফের ডিঙি ভাসালুম
দ্যাখ, কেলেঘাই চূর্ণী গুমনি জলঢাকা ময়ূরাক্ষী কংসাবতীর
স্রোতে, তোর ঘাম নেইকো কোথাও, ভাল্লাগে না, জেলেরাও
পায়নি তোর ফেলে দেয়া অন্ধছোঁয়া, পূর্ণিমাও অন্ধকারে,
কি করে চলবে বল, পেঁয়াজের কান্না নেই, ধ্যাৎতেরি
চুড়ির বাজনাহীন, চুমুগুলো কোন স্বপ্নে রেখে গিয়েছিস
খুঁজে পাচ্ছিনাকো, কাউকে তো বলে যাবি, মুখের প্রতিবিম্ব
আয়নাসুদ্দু ফেলে দিয়েছিলি, ওঃ কি মুশকিল, পাশে-শোয়া শ্বাস
অন্তত রেখে যেতে পারতিস, আলমারি ফাঁকা কেন, বালিশে
খোঁপার তেল নাভির তিল কাকেই বা দিলি, চেনাই গেল না
তোর মনের কথাও, টুথব্রাশে কন্ঠস্বর নেই, চটিতে নাচও
দেখতে পেলুম না, এমন কষ্ট দিস কেন অবন্তিকা, চুলের
নুটিতে থাকত ডাকনাম, ফুলঝাড়ু চালিয়েও সাড়া পাচ্ছি না,
অফিস যাবার রাস্তা এসে তোর জন্যে মাকড়সার জালে
হাতের রেখা সাজিয়ে চলে গেল তোরই মুখের ইলিশস্বাদ
নিয়ে। আরে, ওই তো, যে-ছোকরার সঙ্গে পালিয়েছিলি তুই
তারই জুতোর ছাপের স্বরলিপি মার্বেল মেঝেয় আঁকা…
তুমি, নীলাকাশ, ধরাছোঁয়া থেকে বহুদূর
তোমার শাদা-কালো কায়াচ্ছবি, টের পাবার আগে, মন্দার পাহাড়ে
লুকিয়ে খাচ্ছিলুম, আঃ, আটকে গেল কন্ঠনভোচরে, নীল বিষ হয়ে ;
আমার দুই পা ধরে অসুরেরা আর দুই হাত ধরে দেবতারা,
কালসাপ ভেবে মন্হন করতে লাগলো অমৃতের লোভে ;
জানতো না ওরা, তুমি আছো আমার কন্ঠস্বরে অক্ষরে অভিধা ব্যকরণে
নীলকূট হয়ে প্রিয়তমা, কয়ামত পর্যন্ত তুমি লোভীর আকাশ–
তুমি তো নীলাকাশ তুমি তো ধরাছোঁয়া থেকে বহুদূর কবিতামানুষী
শাশ্বত চাউনিতে, অসহ্য যন্ত্রণায় ক্ষুধার্তের গ্রাসনালিকায়, আঃ,
দেখেছো তো দু’পক্ষই আতঙ্কিত এমনকী মূর্ছিত আমার মারণঘূর্ণনে,
তোমার শাদা-কালো কায়াচ্ছবি, অষ্টাদশী, চুরি করে খেয়েছি যে–
পুরোটা ব্রহ্মাণ্ড, তীর্যক তাকিয়ে আছো, উদ্গীরণ নিতে ঠোঁট খোলো
আমার হাঁ-মুখে জিভ রেখে দ্যাখো সিংহাসনে তুমি বিশ্বরূপা, স্বাদ নাও
বিষরসে ভেজা অক্ষর শব্দশ্বাস ব্যকরণ পিচ্ছিল আলো, আঃ আঃ
কন্ঠনালিতে তুমি শাদা-কালো কায়াচ্ছবি আটক থাকবে চিরকাল
কয়ামত পর্যন্ত, বিদেশিনী…
তোমার আঙুলগুলি
ভালো করে দেখিনি তোমার মুখ, আবছা মনে পড়ে,
দেহ ও পোশাকও মনে নেই, কেমন ভাসাভাসা যেন–
অথচ মনে আছে তোমার দশটি আঙুলের খেলা
আমি তো স্তম্ভিত হতবাক থ, তালুতে রক্তসূর্য আঁকা
প্রতিটি আঙুলও আলতায় অর্ধেক রাঙানো
ত্রিশূল তাম্রচূড় মুকুল সামদাম হংসাস্য ভ্রমর কাঙ্গুল
আঙুলে খেলাচ্ছ তুমি আমার হৃদপিণ্ডে নিঃশব্দ দামামা বাজিয়ে
সিংহমুখ মৃগশীর্ষ সর্পশীর্ষ চন্দ্রকলা সূচী কপিথ্থ ময়ূর
বুঝতে পারছিলুম বসে এক-ঠায় তোমাকে নয়
ওই দশটি রক্তাভ আঙুলের অপার্থিব ইশারাকে ভালোবাসি
বুঝতে পারো না কেন স্বমেহনে উসকে দিচ্ছে তোমার ইশারা
তোমার তামাটে পা
তোমার পায়ের দিকে চেয়ে থাকি, একদৃষ্টে সম্ভব নয় চেয়ে থাকা
কী বলে এই দৃশ্য ও অদৃশ্যের মাঝে দ্রুত ঝরোয়ার তামাটে গোড়ালিকে ?
পুরবীকল্যাণ, কামেশ্বরী, চারুকোষ, জনসন্মোহিনী আঙুলগুলোকে ?
পায়ের অবিস্মরণীয় স্মৃতিশক্তি আর কারোর দেখিনি কখনো
মনে হয় রেক্যুইয়েমের ইঙ্গিতবাহী তামাটে ঘনশ্যামা মন্দ্র সপ্তক
অথচ শব্দ নেই, বাতাসও নিথর, কেবল তোমার দ্রুতিময়ী
দুটি তামাটে পায়ের স্পর্শে পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরেই চলেছে
বুঝতে পারো না কেন স্বমেহনে উসকে দিচ্ছে তোমার ইশারা
তোমার অতল চোখ
কেবল মনে আছে তোমার অতল দৃষ্টি : তাছাড়া কিছুই দেখিনি
ক্ষিপ্রচটুল লাস্যে আরো কালো আর গভীর করেছ চোখ দুটি
ভুরুতে পেনসিল চোখেতে কাজলের প্রয়োজন ছিল না তো
তোমার সান্ধ্যতাণ্ডবের দৃষ্টি চোখের মণিকে ঘোরাচ্ছে দুদিকে
চোখের কোণ দিয়ে আট রকমের চাউনি বিঁধে ফেলছে প্রতিক্ষণ
তোমার আলারিপ্পু যতিস্বরম শব্দম বর্ণম তিল্লানা কিচ্ছু বুঝি না
কেবল টের পাই ক্ষতবিক্ষত করছ চোখপল্লবের কৃষ্ণ আঘাতে
সংযমের আবেগবৃত্ত তুমি ভেঙে দিচ্ছ চোখের প্রলয়তাণ্ডবে
বুঝতে পারো না কেন স্বমেহনে উসকে দিচ্ছে তোমার ইশারা
বুড়ি
এই বুড়ি আমার দিদিমার বয়সী
চুল পেকে গেছে, কয়েকটা দাঁত
নেই, দিদিমার মতন শুয়ে থাকে–
কবে শেষ হয়ে গেছে পুজো-পাঁজি
ক্যালেণ্ডারে ছবি-আঁকা তিথি
দিদিমার মতো এরও প্রতিরাতে
ঘুম পায় কিন্তু আসে না, স্বপ্নে
কাদের সঙ্গে কথা বলে, হাসে
চোখে ছানি তবু ইলিশের কাঁটা
বেছে ঘণ্টাখানেকে মজে খায়
দিদিমার মতো, বলেছে মরবে
যখন, চুড়ি-নাকছাবি খুলে নিয়ে
পাঠাতে ইনসিনেটরে, এই বুড়ি
চল্লিশ বছর হলো সিঁদুর পরে না
পঞ্চাশ বছর হলো শাঁখাও পরেনি
দামি-দামি শাড়ি বিলিয়ে দিয়েছে
দিদিমা যেমন তপ্ত ইশারায়
দাদুকে টেনে নিয়ে যেতো রোজ
এও আমাকে বলে এবার ঘুমোও
আর রাত জাগা স্বাস্হ্যের পক্ষে
খারাপ, এই বুড়ি, যে আমার বউ
বিছানায় শুয়ে বলে, কাউকে নয়
কাউকে দিও না খবর, কারুক্কে নয়–
এ-কথাটা আমারই, কাউকে নয়
কারুক্কে বোলো না মরে গেছি ।‘
পদ্যঠাকরুণ
ঘুমের মধ্যে ঢুকে আসিস রবিবাবুর ভুতুড়ে বউ
সবাই তোকে বেচছে যে গো কালেজ স্ট্রিটে দেশ-বিদেশে
বয়সকালে প্রেমের বউদি ভুত হয়ে কি নেমে আসে
বদ্যিবাড়ির বনলতা নেড়ি সম্পাদিকার বেশে
এস্ছিল সেই ধোপা বউঠান লুঙ্গি কাচতো চণ্ডীদাসের
ওরাই আমার ভগবতী খেরোর-নথির অশ্লীলতা
দুই পা বেয়ে কাৎকুৎ দিস উঠে আসিস নাচনটী ছউ
তুলি-কলম বুরুশ জুড়ে ফস্টিনস্টি তুরুপ তাশে
জানিনে মাঝরাতের গন্ধে শুবি কি তুই আমার পাশে
জাপ্টে-জুপ্টে বুঝলি গাইবো বেম্মোগানের আদর-কথা
‘যাকে পাচ্ছো ভালোবাসো’ এই নীতিরই সর্বনাশের
মজায় মজে কাটিয়ে দিলুম চার-কুড়ি দুই নানা মাংসে
দেহ শালা মানতে চায় না জড়িয়ে ধরলে শরীরলতা
যত্তোরকম আধভুতুড়ে শেমিজ-খোলা প্রাণেশ্বরী
ইমলিতলার কুচ-বিহারি আইরিটোলার কইলকাতা
সাতবাষ্টে মেম-হিপিনী চরসগন্ধ-গাঁজার ধোঁয়ায়
মগজে সব রাখা আছে সুন্দরীদের ভুতের চোথা
সঙ্গে করে নিয়ে যাবো ছাই-গাদাতে আষ্টেপিষ্টে
বাসন মাজা
রবীন্দ্রনাথ, আপনি কখনও বাসন মাজেননি সেটা জানি
কেননা আপনি তো গুরুদেব যাঁরা বল্মীকের ভেতরে থাকেন
বুদ্ধদেব বসু মহাশয়, রান্নাপটু, উনিও মেজেছেন কিনা সন্দেহ
জীবনানন্দ বউকে একই সঙ্গে ভালো ও খারাপ বাসতেন
ডায়েরিতে আইনস্টাইনি ফরমুলায় বলেননি বাসন মাজার কথা
এবং বিষ্ণু দে, অমিয় চক্রবর্তী, সুধীন দত্তেরা জানি না জানতেন কিনা
কাজের মেমরা এসে কোথায় বাসন মাজেন ! অলোকরঞ্জন থাকেন
অর্ধেক বিদেশে আর বাকি হাফ দেশে ; আলোক সরকারও
হয়তো জানতেন না বাজারে এসে গেছে বাসন মাজাকে কবিতার চেয়ে
সহজ করার জন্য ঝুরোসাবান তারের নানান জালিকা ।
মহিলা ও পুরুষ কবিদের এটাই তফাত — অনেকে জানে না ।
আমি আর দাদা শৈশব থেকে শিখেছি বাসন মাজার কারিকুরি
এখন তা কাজে দিচ্ছে ; বুড়ি তো ঝুঁকতে পারে না, আমি পারি
এই বয়সেও রোজই বাসন মাজি, ফুলঝাড়ু দিই, বুঝলেন আলবেয়ার ক্যামু,
গারসিয়া মার্কেজ — প্লেগ নয়, করোনা ভাইরাসের দিনে বুড়ো-বুড়ি প্রেম !
প্রেমিকার দুধ
আমি কখনও কোনো প্রেমিকার স্তনে দাঁত বসাইনি
প্রথম প্রেমিকারও নয়, যার খাঁজ-নিটোল
বুকের দুঃখি পরাগরেণু আজও গালে লেগে আছে
মায়ের তো দুধই হতো না অতিফর্সা বুকে, তাই
ছোড়দি কোলে করে নিয়ে যেতো ইমলিতলায়
পাড়ার বউদের কাছে ; কাহার কুর্মি ডোম দুসাধ চামার
এমনকি দুস্হ মুসলমাননির এঁদো ভাঙাচোরা ঘরে ।
মায়ের স্তনে কিংবা সেইসব বউদের মাইয়েতে দাঁত
বসালে নির্ঘাৎ পাছায় চপেটার আদর পেতুম--
তবে আজ ঘনদুধ খাই, সবুজ রক্তাভ নীল
শাড়িপরা যুবতীর ব্র্যাণ্ডেড মাই থেকে
টিপে টিপে দুই বেলা দুধ বের করি
শেষ ওব্দি শাড়িও খুলে ফেলে যেটুকু দুধ বাঁচে
তাও বের করে নিই ঘুম থেকে উঠে আর ঘুমোতে যাবার আগে
দাঁতকে ঝকঝকে করে তোলে ওনাদের দুধ
সেই বয়ঃসন্ধির পর যখন ভস্ম থেকে ছাড়া পেয়ে
টুথ পেস্ট টিউবের মাই থেকে প্রতিদিন টিপে টিপে দুধ বের করি
সঙ্গিনী
কয়েকগাছা পাকাচুল-টাকমাথায় উষ্ণ তালু বুলিয়ে দিয়েছিলে তুমি
জীবনে প্রথম ও শেষবার ভালোবেসে নিয়েছিলে লোকটাকে
মারা গিয়ে তোমার স্বামী হয়ে-ওঠা লোকটাকে ইনসিনেটরে নিয়ে গেলে।
ছেলে তো বিদেশে – ডেকে পাঠিয়েছো, শ্রাদ্ধাদি আর
উত্তরাধিকারের আইনি কাজের জন্য ।
সঙ্গমের সময়ে চোখ বুজে থাকতে ; জানতে এ ওনার নিছক রুটিন
ঘুমোবার মাংস-ট্যাবলেট । অন্য নারীর গন্ধ পেতে ওঁর দেহে–
যাঁকে উনি সারাটা জীবন ভালোবাসলেন, তোমাকে লুকিয়ে–
উনিও জানতেন তুমি জানো ; ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে তুমি নেই
নমিনিও তুমি নও, বাড়ির দলিলে তুমি নেই
ওনার অস্তিত্বে কোথ্থাও ছিলে না ; সঙ্গী হতে দেয়নি লোকটা–
তুমি একা-একা তোমার কবিতা-খাতাকে স্বামী করে তুলেছিলে।
ভাগ্যিস কবিতায় আক্রান্ত হয়েছিলে ; নয়তো আজীবন
সঙ্গী-বর্জিত থেকে যেতে, একা, একা, একা, এক্কেবারে একা…port this ad
দেশপ্রেম : কে একজন ঝুলছে
মেজদা বলল, “চল চল দেখে আসি, টিনের কারখানায় ঝুলে-ঝুলে
পাক খাচ্ছে কেউ”। দৌড়োলুম, ম্যাজিক দেখবো ভেবে—
ক্যানেস্তারা কেটে টিনগুলো কাঠের হাতুড়ি পিটে সোজা করে।
অতো উঁচুতে কেমন করে চড়েছিল ধুতি-শার্ট পরা রোগাটে লোকটা?
চশমা রয়েছে চোখে ! ভালো করে দেখে বললুম, “মেজদা
ইনি তো আমাদের ক্লাসের অরবিন্দর বাবা ; ওরা দেশভাগে
পালিয়ে এসেছিল ফরিদপুর থেকে, সেখানে ইশকুলে পড়াতেন,
কিন্তু সার্টিফিকেট-টিকেট ফেলে জ্বলন্ত ঘর-দালান ছেড়ে
চলে এসেছেন বলে কোথাও পাননি কাজ, শেষে এই টিনের
শব্দ প্রতিদিন বলেছে ওনাকে, কী লজ্জা, কী লজ্জা, ছিছি…”
কিন্তু অতোটা ওপরে উঠলেন কেমন করে! টিনবাঁধার দড়ি খুলে
গলায় ফাঁস বেঁধে ঝুলছেন এখন, পাকও খাচ্ছেন, একবার বাঁদিকে
হি…ন..দু…স…তা…ন…আরেকবার ডানদিকে…পা…কি…স…তা…ন
হি……ন…..দু…..স…..তা…..ন…..পা…..কি…..স…..তা…..ন
ভস্মাসুরের বংশধর
তিরিশ বছর পর দেখতে এসছি ইমলিতলার বাড়ি
সবাই যাবার পর কেবল জেঠিমা একা থাকতেন
স্টোভে হরি-হে হরি-হে নাম জপে পাম্প করতে বসে
সক্কোলের কথা ওঁর মনে পড়ছিল, যাঁদের ভালোবাসতেন
যারা বাড়িটাকে গমগমে চাঙ্গা করে রেখেছিল বহুকাল
স্টোভের বিদীর্ণ আগুনে লেলিহান জেঠিমা একা
ইমলিতলার বাড়ি অন্ধকারের রঙিন দখলে চলে গেল
অন্ধকারের কতো রঙ হয় ; আলোর তেমন রঙ নেই
তিরিশ বছর পর দেখতে এসেছি ইমলিতলার ফাঁকা বাড়ি
অন্ধকারের রঙে রাঙা আগুনের কালোকৃষ্ণ রঙ
পাড়ার থুথ্থুড়ে বুড়ি চিনতে পারলো দেখে
কৈশোরে দোলের দিন চটকা-মটকি খেলেছিল আমাকে জাপটিয়ে
কতো চুমু কতো লালা কতো সে জিভের আদর
বলল, ওহ তুই ! তোরা তো ভস্মাসুরের বংশ !
যেদিকে তাকাস জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিস ।
সত্যিই ভস্মাসুরের আমি বংশধর ; পুড়ি ও পোড়াই !
যারই দিকে চোখ মেলি দগ্ধ হয়ে ছটফট করে
তাদের স্মৃতিতে বসে অস্তিত্ব পুড়িয়ে দিই
মনে রাখবে না মানে ! প্রেমিকাও পুড়ে মরেছিল !
পুড়বে আর মনে রাখবে ! জ্বলবে আর মনে রাখবে !
আমি তো ভস্মাসুরের বংশধর ; পুড়ি ও পোড়াই—
পুড়ুক পুড়ুক ওরা ঈর্ষায় মরুক জ্বলেপুড়ে ।
গন্ধের প্রণয়
মহাভারতের গন্ধ মেখে আসে, খোঁপায় কণকচাঁপা গুঁজে
আমাকে ফুসলিয়ে পচা মাছগুলো চাপিয়ে দেবে বলে
রবীন্দ্রনাথের কৃষ্ণকলি রামপ্রসাদ-রামকৃষ্ণের শ্যামা
সত্যি মেছুনিটা কালো অথচ সমুদ্রের উত্তাল আদরে
গোড়ালি গোলাপি ; সারা দেহে লইট্যার টাটকা-নরম
বুকের খাঁজ জুড়ে জাল-পলায়নরত মাছের উড়াল
চিংড়িগুলোকে ইশারায় টিপে ও দামের বার্তা দেয়
এ-নাও সুরমাই, রাওয়স, ভারতের তেলালো স্যামন
পাপলেট, ওহ পমফ্রেট, নিলে জোড়া নিতে হবে, ভাবো
এইখানা তুমি আর তার পাশে আমি, নয়তো গেদারে
লিপস্টিক-রঙা এ-হল টিউনা মাছ দ্যাখো দ্যাখো ছুঁয়ে
মেছুনির চোখে নিরক্ষর পৌরাণিক ফাঁদে পড়ে কিনি
ইশারার উপমাগুলো ওর উত্তরাধুনিক প্রেম মনে করে
প্রেম-রোগের স্প্যাজম
এটা কি লিখেছ তুমি ? এ থেকে তো মানে অফুরান বেরিয়ে চলেছে
শব্দের ভেতরে মানে, বাক্যের মধ্যে মানে, চিত্রকল্প মানে দিয়ে ঠাশা
এমনকি ছেদ যতি কোলন সেমিকোলন ড্যাশ
সেগুলোতে কুঁদে কুঁদে মানের ম্যাজিক, সম্পূর্ণ লেখাটা পড়ে বোঝা যাচ্ছে
কিছু একটা বলবার চেষ্টা করে গেছো !
কবিতার কোনো মানে বা অর্থ হয়নাকো ! কবিতা তো রোগের স্প্যাজম
সমুদ্রের তলা থেকে উঠে আসা জলের গভীর কান্না
শকুনের লাশ-খোঁজা উড়ালের উদাস বাতাস
ফুলের ভেতরে ঢোকা দুর্গাটুনটুনির ফিকেনীল জিভ
ফসলের মাঠে অস্তগামী সূর্যকে কাঠবিড়ালির হাঁটুগাড়া চকিত সেলাম—
আর তুমি কিনা কবিতার গর্ভে চুপচাপ ঢেলে দিচ্ছ মানের বিষাক্ত শুক্রবিষ
সে-বিষেতে জন্মাবে যারা তারা কি আস্ত রাখবে বাদবাকিদের
ছেয়ে যাবে চারিদিক বিষাক্ত সন্তানে গ্রামে ও শহরে গঞ্জে গলিতে বাজারে
আর সেটাই তো ঘটে গেছে বাঙালি-জীবনে, মানের ওপরে মানে চেপে বসে গেছে
জগদ্দল কালোয়াতি পাহাড়ের দমবন্ধ প্রেমিকার ঋতুবন্ধ-গন্ধমাদক
প্রেমিক-প্রেমিকার বৃদ্ধাবাস
আমরা দুজনে হাঙরের পেটে রাত কাটাই
জোঁকশীতে কুঁজো অলস আপ্যায়নে
আমরা দুজনে কুপির তলার ছায়াকে খাই
ফুলুট-বাজানো রবিঠাকুরের গানে
আমরা দুজনে খাবারের প্লেটে চাঁদ জোগাই
বউ-বিরক্ত বুড়িরা সে-কথা জানে
আমরা দুজনে ভাঙা ধনুকের ছিলা চেবাই
গেছো-লেখকেরা আজও সে-কথা মানে
আমরা দুজনে ভোটের বোতামে গ্যাস ঢোকাই
গণধড়িবাজ পড়ে থাকে নির্জ্ঞানে
আমরা দুজনে স্মৃতির মাথায় ঝড় চাপাই
আত্মজনেরা তাই পিঠে ছোরা হানে
আমরা দুজনে জোকারি করে হাসাই
পরস্পরের গোপন রোমন্হনে
এ-নাও হৃৎপিণ্ডখানা
‘নচ্ছার হৃদয়হীন বিশ্বাসঘাতক’ বলে চিৎকার করেছিলে সকলকে শুনিয়ে
প্রতিদানে আজ পাঠাচ্ছি হৃৎপিণ্ডখানা কাচের স্বচ্ছ জারে,চুবিয়ে ফরম্যালিনে,
ধুয়েপুঁছে একেবারে পরিষ্কার করা, রক্ত লেগে নেই, কেবল স্পন্দন আছে আর
জীবন্ত কাঁপন, প্রতিবার তোমার নাম নিয়ে আলোকিত হবে হৃৎপিণ্ড আমার ;
প্রতিটি স্পন্দন তোমার মুখশ্রীকে প্রতিমার জ্যোতি দেবে, হাতে নিয়ে দেখো,
বিছানার পাশে টেবিলে রেখে দেখো, বেডল্যাম্প দরকার হবে না, এমনকী
তোমার পাশে যে পুরুষ শুয়ে সেও শুনতে পাবে না আমার হৃৎপিণ্ডের ডাক
অবিরাম অবিরাম তোমাকে না-পাবার কষ্ট জারের লেবেলে লেখা আছে
যে-নাম আমার দেয়া সেই দীর্ঘশ্বাসে স্পন্দিত হবে ক্ষণে-ক্ষণে বহুবার
ওই কাটা রক্তহীন নচ্ছার বিশ্বাসঘাতক হৃৎপিণ্ডকে পারলে ভালোবেসো
এ নাও সর্বস্ব দিচ্ছি
এ নাও সর্বস্ব দিচ্ছি, তোমার তালিকায় টিক দিয়ে নাও এক-এক করে
পাটিপত্র পানখিল দধিমঙ্গল গায়ের হলুদে পাঠিয়েছিলুম মাথা কেটে
পাণিগ্রহণ ধৃতিহোম অরুন্ধতী নক্ষত্র দর্শন সম্প্রদানে দিয়েছি হৃৎপিণ্ডখানা
এবার সাজের বাক্সে নাও হাতের রেখা থেকে সব নদী ও সমুদ্রের ঢেউ
সাতপাক শুভদৃষ্টিতে নাও শিরায় বয়ে-চলা মোৎসার্ট সিমফনি
মালা বদলেতে নাও আমার ঘামের গন্ধ সাভানার পুরুষ সিংহের
অঞ্জলি ও সিঁদুরদানে দিয়ে দিচ্ছি অণ্ডকোষ-ভরা শুক্রকীটের সামগান
সর্বস্ব চাইছ বলে দিয়ে দিলুম উদ্যত লিঙ্গখানা উপড়ে তোমাকেই
নোংরাপাড়ার প্রেমিকা
ওভাবে লিখেছিস কেন ? কার নাম ? খাতা নোংরা করিস রোজ-রোজ ?
আমি তো নিজেই জানি না কার নাম শুকনো খোলায় জিরে ভাজলে ওঠে !
এসব তোমারই কাণ্ড, বাবা-মা শেখায়নি কী করে ডিগবাজি খাবে
নদীর ভেতরে ডুবে ? মাছেদের সঙ্গে কী-কী কথা হয় ? ইলিশ না কালবোস?
ধরে এনে থার্ড ডিগ্রি দিলেই পেট থেকে গলগল করে বেরোবে জাহাজ !
এ-শালা সহজে মুখ খুলবে না, এককালে সরকারি খোচর ছিল ব্যাটা
এখন সুপারি কিলার হয়ে বিদ্যুতের নলি কেটে গাঁ-গঞ্জ ভাসায়
ঠ্যাঙ বেঁধে টাঙিয়ে দে, পোঁদে হুড়কো কর, হয়তো হীরেগুলো
ঝরে পড়বে ঈগলের ডানা মেলে, বখরা পাবি দোআঁশলা বাপ
একাধিক, টেরি-কেটে বানভাসি শহরে গোঁত্তা মারবে, জেরা কর জেরা
নির্ঘাৎ পাতলা হয়ে এসেছে শুক্ররসের সাঁতারুরা, হায় মৌলা কী করলা
এ রে কয় জেরা ? হাত-পা-মুখ বেঁধে ওকে নদীতে ভাসাস যদি কোনো
শালা কুমির-শুশুক-হাঙর মাস্তান ন্যাপালা বের করবে না, দেখে নিস
লেখা ডান দিকে নাকি বাঁদিকপানে হেলে যায় ? জেরা করে বের কর
কবে মরতে চায় ? পূণ্য তিথি আছে একটা এই থমথমে চৈত্রের সেলে…..
লম্পটের জন্ম
ইমলিতলায় দোল খেলছে ডোম চামার দুসাধ কাহার কুর্মি ব্উয়েরা
নাচছে পাড়ার কলতলায়, আধখোলা বুক, ওথলাচ্ছে তামাটে আবীর
মনুস্মৃতি থেকে কোরক উঠছে জেগে তাই, ও ছুট্টে গিয়ে খাঁজে মুখ গোঁজে
মাংস কোনো জাতধর্ম তোয়াক্কা করে না, মনুস্মৃতি থেকে ঝরঝর আঠা
প্রথম উদ্গীরণ আরও বেশি করে জড়িয়ে ধরতে বলে, জন্ম হয় সেই বিষে
লম্পট কিশোরের, তৃপ্তির এ-গূঢ় আবিষ্কার তাকে আহ্লাদে কুঁদছে আজীবন।
দাম্পত্য
তখন আমরাও নোংরা এমনকী অশ্লীল কথাবার্তা
করেছি বলাবলি, হেসেছি রাস্তার মাঝে কেননা আমাদের
ভাষা কেউই তো বুঝতো না । তখন বুড়ির ঢেউ-চুল
কোমর পর্যন্ত সুগন্ধ মাখানো, মুখ গুঁজে ঘুমোতুম তাতে–
চোখ দুটো, বুকও বড়ো-বড়ো, যা দেখে বড়দি বলেছিল
“আমরা এরকম কনে তোর জন্যে খুঁজেই পেতুম না
তার আগে পীরিতের কতো খেল দেখিয়েছিলিস বাবা
তুই ঠিক ঈগলের মতো তুলে আনলি সাবর্ণ চৌধুরীর বাড়ি”
তখন বুড়ির জামদানি আঁচল উড়তো ময়ূরপঙ্খী হয়ে
মোজেক মেঝেয় ব্যালেরিনা হিল তুলতো সাম্বা নাচের ছন্দ।
একান্ন বছরে বুড়ির স্মৃতি থেকে হারিয়ে গিয়েছে সেইসব ;
মাঝে-মাঝে বলে তোমার গোঁফও ছিল রাজকাপুরের।
বুড়ির পছন্দ মর্ত্যের হানি বাফনা আর ইন্দ্রজিৎ বোস
আমি সুচিত্রা সেন নার্গিস মধুবালাকে আজও ভালোবাসি–
বুড়ো বয়সে পৌঁছে বুড়ি বলে এটাই দাম্পত্য-জীবন
যৌবনে সংসারের খাইখরচ-ঝক্কি-ঝামেলায় টেরই পাইনি
দাম্পত্যের শেষ পর্বে শোক-দুঃখ-অপচয়ও আনন্দ আনে।
অবন্তিকাবানুর জন্য প্রেমের কবিতা
অবন্তিকা বানু, রাষ্ট্রের দিকে তোলা তর্জনী থেকে
যে স্ফূলিঙ্গ ছড়িয়ে দিলি তুই
দেখেছিস, বোরখা থেকে বেরিয়ে এসেছেন বুড়ি আর তরুণীরা
মাথায় হিজাবঘোমটা অবন্তিকাবানু
প্রান্তকে টেনে এনে মেইনস্ট্রিমে মিলিয়ে-মিশিয়ে দিলি
এই বদল একদিনের নয়
এমনকি শুধুই বদল নয় তোর ওই তর্জনী তোলা
ভেতরে-ভেতরে ভয়ংকর ওলোটপালোট করে দিলি
তোর দেখাদেখি হিজাবঘোমটা ফেলে হাজার তরুণী
রাষ্ট্রের দিকে ওঠাচ্ছে তর্জনী
হয়তো তুই শুধু ছবি হয়ে থেকে যাবি কৌম-আয়নায়
কিন্তু ওই তর্জনী তোলা ভুলবে না কেউ
সশস্ত্র পুরুষদের তোর ধমকানি এবং হুঁশিয়ারি
আমার আশিতম জন্মদিনে সবচেয়ে দামি উপহার
অবন্তিকার শতনাম
আমি অবন্তিকার দুটো মাইয়ের নাম দিয়েছি কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়া...বাঁদিকেরটা আদর করলেই গোলাপি হয়ে যায়...ডানদিকেরটা আদর করলেই হলদেটে রঙ ধরে...বাঁদিকের বোঁটার নাম করেছি কুন্দনন্দিনী...বঙ্কিমের বিষবৃক্ষ তখন ও পড়ছিল চিৎ শুয়ে...ডানদিকের বোঁটার নাম ও নিজেই রেখেছে কর্নেল নীলাদ্রি সরকার যে লোকটা সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের ডিটেকটিভ...ডিটেকটিভ বই পড়তে ওর জুড়ি নেই...ছুঁলেই কাঁটা দিয়ে ওঠে তাই...যোগেন চৌধুরীর আঁকা ঝোলা মাই ওর পছন্দ নয়...প্রকাশ কর্মকারের আঁকা কালো কুচকুচে মাই ওর পছন্দ নয়...পেইনটিঙের নাম রাখা গেল না...যোনির কি নাম রাখবো চিন্তা করছিলুম...অবন্তিকা চেঁচিয়ে উঠলো পিকাসো পিকাসো পিকাসো...পিকাসোর যোনির কোনো আদল-আদরা নেই...কখনও বাদামি চুল কখনও কালো কখনও কিউবিক রহস্য...তাহলে ভগাঙ্কুরের...ও বলল সেটা আবার কি জিনিস...ওর হাত দিয়ে ছুঁইয়ে দিতে বলল অমঅমঅমঅম কি দেয়া যায় বলতো...পান্তুয়া চলবে...ধ্যুৎ...রস পানেই পান্তুয়া নাকি আরও কতো রকম মিষ্টি হয়...ছানার পায়েস...নারকেল নাড়ু...রসমালাই...নকশি পিঠা… রাজভোগ… লবঙ্গলতিকা...হলদিরামে ভালো লবঙ্গলতিকা পাওয়া যায়...আমি বললুম স্বাদ কিছুটা নোনতা...ও বলল দুর ছাই আমি নিজে টেস্ট করেছি নাকি যাকগে বাদ দে… হ্যাঁ… এগোই...পাছার কি দুটো নাম হবে...ডিসাইড কর...ডিসাইড কর...তুই কর আমি তো দেখতে পাচ্ছি না...না না ফের ফের...লাবিয়া নোনতা হলেও ওটার নাম দিলুম গোলাপসুন্দরী...পারফেক্ট হয়েছে...তাহলে পাছার একটাই নাম দিই...নরম নরম কোনো নাম...পাসওয়র্ড...ঠিক...এর নাম দেয়া যাক পাসওয়র্ড...ধ্যাৎ...পুরো রোমান্টিক আবহাওয়া ফর্দাফাঁই করে দিচ্ছিস......গ্যাস পাস হয় বলে পাসইয়র্ড হতে যাবে কেন...ছিঃ...তাহলে এর নাম হোক গরমের ছুটি...গরমে বেশ ভাল্লাগে পাউডার মাখিয়ে পাছায় হাত বোলাতে...ওক্কে...তারপর...ঘুমোবো কখন...বাঁ উরুর নাম দিই ককেশিয়া...ডান উরুর নাম দিই লিথুয়ানিয়া...রাশিয়ানদের উরু দারুণ হয় বিশেষ করে শীতকালে যখন ওরা চান করে না...ভোদকা খেয়ে ভরভরিয়ে প্রতিটি রোমকুপ দিয়ে গন্ধ ছাড়ে...শুয়েছিস নাকি কখনও রাশিয়ান মেয়ের সঙ্গে...না কল্পনার যুবতীদের ইচ্ছেমতন হ্যাণ্ডল করা যায়...ছাড় ছাড়...এগো...মানে নামতে থাক...তাড়াতাড়ি কর নইলে গাধার দুলাত্তি দেবো...তা্হলে পায়ের নাম রাখছি জিরাফ...বামপন্হী জিরাফ আর দক্ষিণপন্হী জিরাফ...এবার ওপরে আয়,,,মুখে...ঠোঁট...ঠোঁটের নাম দিই আফ্রিকান সাফারি...আচ্ছা...ঠোঁটের নাম আফীকান সাফারি...ব্লোজবে খণ্ড খণ্ড মাংস ছিঁড়ে খাবো...খাস...থুতনিতে সেকেন্ড চিন...পিৎজা কোক খাওয়া থামা...থুতনির নাম দিই গোলাপজাম...কেন কেন কেন...পরে বলব...এখন দুচোখের নামদিই...শতনাম হলো না তো...চোখ বোজ চোখ বোজ...তুই তো একশোসমগ্র আবার শতনামের কী দরকার...তাহলে আয়...আজ তুই ওপরে না নিচে ?
কেউ তো জানতে চায়নি
কেউ কেন জানতে চায়নি কখনও কবিতার শিরোনামে
‘ছুতার’ শব্দটি কার কথা বলে ! অনুবাদে যিশু হয়ে গেল !
মেরি ম্যাগডালেন তুমি তো লুকিয়ে আছো শুভাদেবী হয়ে
কাঁধে ক্রুশকাঠ নিয়ে যিশু যতক্ষণ হেঁটেছেন, তুমি ছিলে
তাঁর সঙ্গে ; অপরিসীম প্যাশন আমাকে বাল্যের স্কুলে
বলেছিলেন ফাদার হিলম্যান, সংলগ্ন গির্জায় বাইবেল ক্লাসে--
শুনে, আমার অদম্য বিচলন রয়ে গেছে রক্তের বুদ্বুদে
কবিতায় দুইটি প্যাশন নিয়ে যে জাল বুনেছিলুম তা কেউ
ধরতে পারেনি, এক মাস ঠায় নব্বুই লাইনের কবিতায়
যিশু হয়ে ক্রুসবিদ্ধ হবার জন্য চলেছি সারাটা জীবন
হে মেরি ম্যাগডালেন-শুভা যৌবনের উদ্বেল প্রেমিকা
তোমার জাগতিক মৃত্যুর খবর এলো আজই ভোরবেলা
ক্রুসকাঠের মতো তুমিও অমর ওই একটি কবিতায়
ছদ্মমুখের প্রেমিকা
আসো দেখি রোজ রাতে কোনো এক ছদ্মমুখ নিয়ে
সন্দেহ থেকেই যায় তুমিই তো সেই নারী, নদীর ওপার থেকো আসো
নৌকোর ছইয়ে লুকিয়ে, মাঝির মেয়ের ঢঙে জলস্রোত মেখে
বুঝতে পারি না তুমি সত্যিই তুমি কিনা ! তুমিই কি তুমি ?
দেহ তো একই যুবতীর, তবে মুখশ্রী বদলে যায় কেন ?
আমাকে উন্মাদ করে দিতে চাও তো দেরি করছ কেন !
কিন্তু এভাবে ? আমি তো আগেই উন্মাদ তোমাকে পাবার জন্য
আর কতো ছদ্মমুখ নিয়ে নদী পারাপার করে
মাঝরাতে স্বপ্নে নৌকোয় দাঁড় বেয়ে ঘুর্ণি তুলে আসো
একদিন প্রকৃত এলে কীই বা ক্ষতি হবে আমাদের
হয়তো কানাকানি হবে । হয়তো লোকেরা বলবে, এই নারী
মোটেই সে-মেয়ে নয়, নদীও নয় যে আপনার কাছে পৌঁছোবে
চিরকাল থেকে যাবে ছদ্মমুখে, চিরকাল ভুলিয়ে রাখবে আপনাকে
একই যুবতী-শরীর প্রতিদিন পালটাতে থাকে ছদ্মমুখ নিয়ে
এ কেমন বৈরী
ভাবা যায় ? কোনো প্রতিপক্ষ নেই !
সবকটা আধমরা হয়ে আজ শুয়ে আছে জুতোর তলায় ?
কিছুই করিনি আমি
কেবল মুখেতে হাত চাপা দিয়ে চিৎকার করেছি থেকে থেকে
হাহাহা হাহাহা হাহা হাহা
পিস্তল কোমরে বাঁধা তেমনই ছিল সঙ্গোপনে
ক্ষুর বা ভোজালি বের করিনিকো
বোমাগুলো শান্তিনিকেতনি ব্যাগে চুপচাপ যেমন-কে-তেমন পড়ে আছে
আমি তো আটঘাট বেঁধে ভেবেছি বদলা নেবো নিকেশ করব একে-একে
সকলেই এত ভিতু জানতে পারিনি
একা কেউ যুঝতে পারে না বলে দল বেঁধে ঘিরে ধরেছিল
এখন ময়দান ফাঁকা
তাবৎ মাস্তান আজ গাধার চামড়ায় তৈরি জুতোর তলায়
কিংবা পালিয়েছে পাড়া ছেড়ে কোনো জ্ঞাতির খামারে
আমি তো বিধর্মী যুবা এদের পাড়ার কেউ নই
জানালার খড়খড়ি তুলে তবু যুবতীরা আমার ভুরুর দিকে তাকিয়ে রয়েছে
ছ্যাঃ এরকম জয় চাইনি কখনো
এর চেয়ে সামনে শিখণ্ডী রেখে জেতা ছিল ভালো
ভেবেছি চেংঘিজ খান যে-লাগাম ছেড়েছে মৃত্যুর কিছু পরে
তার রাশ টেনে নিয়ে চুরমার করে দেবো এইসব জাল-জুয়াচুরি
আগুন লাগিয়ে দেবো মাটিতে মিশিয়ে দেবো ধুরন্ধর গঞ্জ-শহর
কিন্তু আজ সমগ্র এলাকা দেখি পড়ে আছে পায়ের তলায় ।
প্রেমিকার বিষ
মাথার দিক থেকে গেলা আরম্ভ করো তুমি
চেবাও না, চেবাবার দাঁত নেই, শুধু একটু-একটু করে
পুরোটা অস্তিত্ব গিলে নাও, জীবন্ত গিলে নিতে থাকো
একেই প্রেম বলে মনে করো তুমি, পাকিয়ে জাপ্টেজুপ্টে
প্রেমিককে আগাপাশতলা চুবিয়ে নির্দয়রসে
প্রেমের শর্করা-বিষে ধ্বংস করে নিশ্চিহ্ণ করো
ঘুণপোকার সিংহাসন
ওগো স্তন্যপায়ী ভাষা পিপীলিকাভূক মুখচোরা
ভূচর খেচর জলচর দাম্পত্যজীবনে তুষ্ট একশিঙা
নীলগাই বারাশিঙা চোরাকিশোরীর হাতে মূল্যবান প্রাণী
স্হলে বিচরণকারী উদবিড়াল গন্ধগোকোল বিনোদিনী
শব্দগহ্বর খেয়ে নোকরশাহির রাজ্য এনেছো এদেশে।
প্রেমিকের ক্রন্দন
গর্ভের গোলাপি অন্ধকারে ছিলে হাসিমুখে
বেরিয়েই কাঁদতে আরম্ভ করলেন
না কাঁদলে থাবড়ে কাঁদানো হলো আপনাকে
প্রথম আলোয় আপনাকে কাঁদতে হবেই
কেননা আপনি একজন প্রেমিক
ঘোড়া-গণ্ডার-হাতিও বেরোবার সময়
অতো উঁচু থেকে পড়ে, কিন্তু কাঁদে না
ওদের মা গা-চেটে পরিষ্কার করে দিলে
পড়েই আনন্দে লাফাতে আরম্ভ করে
আলোর গুরুত্ব বুঝেছেন আলোকিত হয়েছেন
তাই আপনি কাঁদুন আর অন্যদের কাঁদান
রত্নদীপা ম্যাম-এর জ্বর
জোড়াসাঁকোয় গিয়ে রত্নদীপা ম্যাম-এর
জ্বরের খবরটা গুরদেওকে দিতে, উনি জানতে চাইলেন :
‘মনের জ্বর না হরমোনের জ্বর’ ?
তারপর বললেন, ‘আমি আর কী করব বাপু
আমার বাপ মনের জ্বর পুড়িয়ে হাপিশ করেছিলেন
আর আমি দাদুর হরমোনের জ্বর পুড়িয়ে হাপিশ করেছি,
রত্নদীপাকে বল, মনের জ্বর আর হরমোনের জ্বর
দুটোই যেন ওর বর সারিয়ে দিয়ে কলকাতায় পাঠায়
কলকাতা শহরটার বদনাম আছে জ্বরের ব্যাপারে
সবাই কোনো-না-কোনো জ্বরজারিতে ভোগে ।’
আমি বললুম, “জী গুরদেও” । এটা কিন্তু কবিতা নয় ।
জাস্ট এ পোয়েম অ্যাবাউট লাভিং সামবডিজ ওয়াইফ’
মেশোমশায় পর্ব
যুধিষ্ঠির
আববে পাণ্ডবের বাচ্চা যুধিষ্ঠির
দশতলা বাড়ি থেকে নেবে আয় গলির মোড়েতে
নিয়ায় ল্যাংবোট কৃষ্ণ ভীম বা নকুল কে-কে আছে
পেটো হকিস্টিক ক্ষুর সোডার বোতল ছুরি সাইকেল চেন
বলেদে দ্রৌপদীকে আলসে থেকে ঝুঁকে দেখে নিক
আমার সঙ্গে আজ কিছু নেই কেউ নেই
দুঃশাসন দুর্যোধন নেই
তোদেরই অঙ্গুলিহেলনে কেটে তর্জনীও দিয়েছি শৈশবে
দাঁড়াচ্ছি পা-ফাঁক করে দন্তস্ফুট হয়ে যাবে জয়ধ্বনি তোর
সিঁড়িতে শেকলবাঁধা মহাপ্রস্হানের কুত্তা লেলিয়েও দ্যাখ
ন্যাটা হাতে যুঝে যাব জমিন ছাড়ব না
লুমপেন বলে তোরা ঘিরে ধরবি
আরেকবার ছিটকে পড়ব ফুটপাথে মুখে গ্যাঁজলা নিয়ে
ছুটন্ত খচ্চরবাচ্চা পিঠের ওপরে খুর দেগে যাবে
নাভিতে ব্লেডের কুচি দিয়ে তোরা খোঁচা দিবি
পোঁদে দিবি জ্বলন্ত সিগারেট
পাঁজরে আছড়ে পড়বে কম্বলে মোড়া সোঁটা
দেখে নিস তোরা
মাটিতে গোড়ালি ঠুকে পৃথিবীর চারিধারে জ্যোতির্বলয় গড়ে যাব ।
আজল
কেমন পুরুষ তুমি ? আজল জানো না !
কী বিশাল যৌবন পড়ে আছে ! আজল জানো না ?
এরকম দীর্ঘদেহ সৌম্যকান্তি উজ্বল শ্যামবর্ণ সুপুরুষ তুমি
অথচ জানো না প্রেমের গূঢ় উন্মোচন ! জানো না আজল !
অনেক প্রেমিকা পাবে - কুচ্ছিত কিংবা সুন্দরী
কাজলনয়না বা কুতকুতে মোঙ্গোল চোখ
পীনোন্নত ময়ূরের মতো গলা কিংবা বেঢপ থপথপে
চকচকে কৃষ্ণাঙ্গিনী অথবা চাঁদের আলোর ত্বক মেয়ে
কী করবে অমন প্রেমিকা পেলে ? ছেড়ে দেবে ?
এই তো তরুণ হয়েছ সবে ! শিখে নাও শিখে নাও--
আজল কাহাকে বলে । আজলের কোনো পাপ নেই ।
মেরু বিপর্যয়
অবন্তিকা, হিপি বিদেশিনী, স্লিপিং ব্যাগেতে তোর
চুপচাপ ঢুকে যেতে দিয়েছিলি, শুনে আমি কবি
টাইম পত্রিকা ফোটো ছাপিয়েছে, বিটনিকরাও
লিখেছে আমার কথা বড়ো করে তাদের কাগজে–
হ্যাশ টেনে ভোম মেরে দু-ঠ্যাং ছড়িয়ে সে-প্রণয়
গিঁথে আছে চেতনায় কবিতা ভাঙিয়ে তোর শ্বাস
না-মাজা দাঁতের ভাপ সোনালি শুকনো চুল ধরে
বুকে ময়লাটে তাপে মুখ গুঁজে কবিত্ব করেছি ;
বলেছিলি, ‘কবিতা তো জিভের ডগায় বাস করে
তোমার ভাষায় লেখো জিভ দিয়ে রহস্য-গহ্বরে’।
আমার পৃথিবী উল্টে দিয়েছিস সেই রাত থেকে :
পা ওপরে মাথা নিচে, এ আমার সৃজন-জগত–
হিপি বিদেশিনী তোর গন্ধ ভুলে গেছি : তোর নাম
টিকে আছে অবন্তিকা হয়ে আরো নারীদের সাথে।
মায়ের ভালোবাসা
যতো বুড়ো হচ্ছি ততো বেশি মনে পড়ছে মায়ের মুখ
বিভিন্ন বয়সের মুখ একই সঙ্গে
ক্যাথলিক স্কুলে যাচ্ছি -- মা তো টা-টা করতে জানতেন না
দরোজার কপাট একটু-একটু করে বন্ধ করছেন
ইমলিতলার ঝোপড়ি থেকে তাড়ি খেয়ে ফিরেছি
কিছুক্ষণ পর মা নাকে আঙুল চাপা দিয়ে ইশারা করেছেন
ওপরে ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়তে নয়তো বাবা এসে জানতে পারবেন
মায়ের মুখে ভীতি যা আসলে আমার
ব্রা্হ্ম স্কুল থেকে ভিজে জামা সপসপে জুতোয় ফিরেছি
মা আগে থেকেই তৈরি ছিলেন গামছা আর হাফপ্যান্ট নিয়ে
অ্যালুমিনিয়ামের বাটিতে চিনেবাদাম দেয়া হালুয়া নিয়ে
বাটিটা মায়ের হাসির মতন তোবড়ানো
কুড়ি জনের সংসার সামলাতে হয় মাকে -- উনি দেখান আমি কুড়ি নম্বরে
মৃদু হাসি দেখে টের পাই আমিই এক নম্বরে
বয়সের সঙ্গে তাল দিয়ে আমার আর মায়ের মুখ একইভাবে চুপসে গিয়েছে
চোখ বুজে মায়ের হাজার খানেক মুখ মনে করতে পারি এখন
গ্রেপ্তার হবার সময়ে মায়ের আতঙ্কিত মুখ বেশি করে মনে পড়ে
অবাঙালি পত্রপত্রিকায় আমার ফোটো দেখে আবার হাসি ফিরে আসে
মা বেশ গর্বোদ্ধত নারী ছিলেন বুঝতে পারি চোখ বুজে
যাবার সময়ে ওই গর্ববোধ দিয়ে গিয়েছিলেন, সেই মুখও মনে আছে…
প্রস্তুতি
কে বললে বিধ্বস্ত হয়েছি? দাঁত নখ নেই বলে? ওগুলো কি খুবই
জরুরি? আবাঁট চাকুর মেধা তলপেট লক্ষ করে বিদ্ধ করে দিয়েছি সেসব
এরই মধ্যে ভুলে গেলেন কেন ! পাঁঠার মুখের কাছে
পাতাসুদ্ধ কচি এলাচের গোছা, সেই যে সেই সব কান্ড? ঘৃণাশিল্প, ক্রোধশিল্প
যুদ্ধশিল্প ! পিছমোড়া মুখবাঁধা যুবতী সানথাল; গোলাপি ফুসফুস ছিঁড়ে
কুখরির ধারালো আনচান — সেই সব?
হৃৎমাংসে রক্তমেখে উঠে আসা চাকুর গরিমা? আমার তো গান বা
সংগীত নেই; কেবল চিৎকার, যতটা হাঁ করতে পারি
নির্বাক জঙ্গলের ভেষজ সুগন্ধ ; ঘুঁজি-পরিসর কিংবা হারাম-সন্ন্যাস
বলিনি ‘জিভ দিন জিভ গোঙানি ফেরত নাও
দাঁতে দাঁত দিয়ে সহ্য করার ক্ষমতা’ । নির্ভীক বারুদ বলবে:
মূর্খতাই একমাত্র শিক্ষনীয়’। উদারহস্ত নুলো
দাঁতে ছুরি নিয়ে আমি লাফিয়েছি জুয়ার টেবিলে, তোমরা ঘিরে ফ্যালো
ছেঁকে ধরো রাবার বাগিচা কফি চায়ের বাগান থেকে
গামবুটে স্বচ্ছন্দ চাকুরিসুদ্ধ এসো কে কোথায় আছো
জরাসন্ধের পুং যেভাবে বিভক্ত হয় হীরকের দ্যুতি ছলকে ওঠে
হাত-পা চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর জ্ঞানগম্যি বলে কিছু নেই
বাঁশির মতন ধরে সিঁধকাঠি বাজিয়ে দেখেছি আমি অসুখে অভাবে
আপেল-ত্বকের মোমরেণু মাখা ভঙ্গুর স্নেহ
সঙ্গমের আগে মাদি পিপীলিকা ডানা খুলে রেখে দেবে পাশে
আমিও উরুত চাপড়ে বিকল্প চিৎকার দিচ্ছি: পৃথিবীকে খালি করো
বেরোও বের হও সর্বশক্তিমান
বান্দরের চুলকানিপ্রবণ চার হাতে শঙ্খ
চক্র পদ্ম গদা নিয়ে নিজের ঘামের নুনে লবণ বিদ্রোহ হোক
বারুদ সুতলি ধরে বিস্ফোরণের দিকে তুমাকার স্ফুলিঙ্গ ছুটুক
সারা গায়ে অন্ধকার লেপড়ে এসো বাকফসলের কারবারি
কুকুরযুবার মনোমালিন্যে ভরা মাঝরাতে
কীটনাশকের ঝাঁঝে মজে থাকা ফড়িঙের রুগ্ন দুপুরে
ভূজ্ঞানসম্পন্ন কেঁচো উঠে আয়
চাকুর লাবণ্য আমি আরেকবার এ-তল্লাটে দেখাতে এসেছি।
মুরগির রোস্ট
পালক ফুলিয়ে ক্রোধে লড়ো মুর্গা, চাকু-মালিককে খুশ করো
হুলেতে পরাগ মেখে ঝাপটাও ডানা
বলেওছি : দুহাত মুচড়ে নতজানু করে রাখো
মাঝরাতে ঘুমভেঙে মাদুর গুটিয়ে নেমে এসো ছাদ থেকে
বুটজুতো --- রাইফেল --- ঘুরন্ত বুলেট --- চিৎকার
বাড়ি নিয়ে চলো বলে কেঁদে ওঠে পাশের হাজতে বন্ধ বৃদ্ধ কয়েদি
ছেড়ে দাও ছেড়ে দাও যেতে দাও বাড়ি যেতে দাও
ডিমের ওপরে বসে সিংহাসনে ঝিমোয় ডাহুক
অন্ধকারে গলা টিপে ধরো
লড়ো মুর্গা , মরো লড়ে , গর্জাও গুঙ্গার দলে ঢুকে
জিভেতে কাঁচের ফুলকি --- নাচাচ্ছি বুকের পেশী
মাছের কানকো খুলে জলেতে কুয়াশা মিশিয়েছি
কড়ে আঙুলের টুকরো মোড়া ছিল গোলাপি কাগজে
দুহাতে দুচোখ ঢেকে কে কাঁদে হাউ-হাউ করে জেলখানায়
নারী না পুরুষ আমি বুঝতে পারি না
এ নাও চোখের পাতা --- ফুঁ দাও বাঁহাতে রেখে
শিশিরে ফণার পাঞ্জা খোলো
মেয়েলি হিসির শব্দে তলপেট কাঁপে জাত-গোখরোর
রক্ত গড়ালে নাকে তুলো গুঁজে শ্মশানে পাঠাও
রাস্তায় পড়ে থাকবে চটিজুতো ভাঙা-ইঁট ঠ্যাঙ টেনে ছেঁড়া পাতলুন
ঝড়ের সমুদ্র থেকে যে-ঢেউ খাবলে তুলে মেখেছি দু'পায়ে
সে নব বর্ণমালা থেকে আজ হরফ এনেছি
অন্নবিচার ও প্রেম
মহিলাদের পোশাক পালটাবার মাংসল গন্ধে বুঁদ
যে-ঘরটায় এক ডিভোরসি বোলতাবধু ডিম পার্ক করেছেন
শহুরে পাখিদের ছ্যাঁচড়া জঞ্জালের ভজকট ভাষা ডানায় বয়ে
ভেতরে ঢুকে ঝোড়ো ঝড় নিজে হাতে দরোজা বন্ধ করে দিয়ে দ্যাখে
জোরকদমে চর্চা চলছে দিলদরিয়া ভালোবাসার ঘিজতাঘিজাং
যদিও ফাটলপ্রিয় ছারপোকারা নিজেদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল
যে-যার মতন ভালো বা খারাপ হবার স্বাধীনতার দরুন
ছাদ-উঁচু ওই ঘরের অ্যান্টিক পালঙ্কই শেষমেশ পেডিগ্রির খুঁত ধরে
কেননা ডক্টরেট-করিয়ে ছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ ধর্ষণের পারিতোষিক
ওই ঘরেই খেপে-খেপে বিলোনো হয় বুদবুদময় কন্ঠস্বরে
অথচ অধ্যাপকবাবুর ঘিলু থেকে জোয়ারের বয়স তো কবেই খাল্লাস ---
বলো দিকিন ওরা কী-বা দু'ছত্তর মলয় রায়চৌধুরী সম্পর্কে লিখবে
খাউগলির ভাষা
'যৌনক্ষুধা' ! ম্যানুফ্যাকচারি কেডা ?
শ্রীরামপুরের সায়েবরা নাকি কলকেতার
বাইজি-নাচিয়েরা ? লিঙ্গ কি খায় কেউ
বা লিঙ্গ খায় কি কাউকে ! ড্রিবলেটে
বরঞ্চ দ্যায় । যুবকেরা আই ভি এফ সেন্টারে
ফি-খেপ হাজার কড়িতে বেচে । যোনিও
কি খায় কেউ ! এরকম ভাবা যেতে পারে
সঙ্গমের শেষে যোনি তিন কোটি শুক্র
খেয়ে একটা রেখে বাদবাকি সবাইকে
বমি করে । আই ভি এফ সেন্টারে মেয়েরা
প্রতিটি ডিম দুটি স্বর্ণমুদ্রায় বিক্রি করে ।
কোন অতিদিগ্গজের ভাঁড় থেকে এলো
ওই বিজ্ঞানবর্জিত মূর্খ-শাসিত শব্দটি ?
চুম্বন কি করেই বা চুমু খাওয়া হল ?
মনে হয় দুর্ভিক্ষের কালে শব্দ খেয়ে
চার্চিলের পেট ভরেছিল বাঙালিরা ।
আলো
আবলুশ অন্ধকারে তলপেটে লাথি খেয়ে ছিটকে পড়ি
পিছমোড়া করে বাঁধা হাতকড়া স্যাঁতসেঁতে ধুলো-পড়া মেঝে
আচমকা কড়া-আলো জ্বলে উঠে চোখ ধাঁধায়
তক্ষুনি নিভে গেলে মুখে বুট জুতো পড়ে দুতিন বার
কষ বেয়ে রক্ত গড়াতে থাকে টের পাই–
আবার তীব্র আলো মুহূর্তে জ্বলে উঠে নিভে যায়
গরম লোহার রড খালি-পিঠে মাংস ছেঁচে তোলে
আমাকে লক্ষ্য করে চারিদিক থেকে আলো ঝলসে ওঠে ফের
আপনা থেকেই চোখ কুঁচকে যায় দেখতে পাই না কাউকে
একসঙ্গে সব আলো আরেকবার নিভে গেলে
পরবর্তী আক্রমণ সহ্য করার জন্য নিজেকে তৈরি করে নিই।
মনুষ্যতন্ত্র
আক্রান্ত হবার জন্যে তৈরি হয়েই আছি এসো মারমুখি চামচিকে
জামাগেঞ্জি ছিঁড়ে দাও বাড়ির দেয়ালে বোমা মারো
রগে রিভলভার চেপে ভয় দেখাও হাজতে ঠেঙিয়ে জেরা করো
ধাবমান ট্রেন থেকে ঠেলে দাও আমাকে আটকাও মেরে ফ্যালো
আমি ভূকম্পনযন্ত্র আণবিক যুদ্ধ দেখব বলে বেঁচে আছি
নীল গর্দভের লিঙ্গ মানবের শুক্রজাত কাফ্রি খচ্চর ।
নেকড়ে বংশ
রগেতে পিস্তল চেপে বলছে: দোগলা ফের এসেছো এখানে
থাবা মেরে ছিঁড়ে ফেলব ধর্ষক্ষুধাতুর শালা নেকড়েবংশ তোর
খসখসে জিভে চেটে নেব নখের রোদ্দুরকণা
জটায়ুর কবজালাগানো লোহাডানা ঝাপটানোর বাজনা বন্ধ করে দেব
শরীরে এখন ঝুলকালিমাখা পেশী বুঝলি বাঞ্চোৎ
বাকল আড়াল করে সেগুনের এঁকে-রাখা আঁশ
একদিন আমারও হসন্ত গোলাপি ছিল রেফও সবুজ ছিল
য-ফলাতে মনে হত নারীর রেশমি তলপেট
কড়া পেচ্ছাপের গন্ধে কুচুটে হাজত ছিল স্বাধীন শহরে
শব্দনালিকা আজ ফোঁসে ক্ষোভে : তর্জনীর পোড়া মাংস খেতে দাও
দাঁতে কেটে ছিঁড়ে ফেলছি নাভিসূত্র
নেকড়ে নারীর কাছে দীক্ষা নিয়ে দুর্গন্ধ মেখেছি টাকরায়
দুচোখে লঙ্কার গুঁড়ো ছুঁড়ে মারো
মুখাগ্নি করার কালে দেখব না কার থ্যাঁতা মড়া
গরম সাঁড়াশি দিয়ে ছিঁড়ে নাও ধাতুকোষ বংশলোপ হোক
লালসেলাম, হায়
মুখের গহ্বরে এক জান্তব গোঙানিডাক চলাফেরা করে
জেলহাজতের ভিড়ে ত্রিকালজ্ঞ ভিড় দেখে চমকে উঠি
এরা কারা হাতকড়া পরে ঠাঠা হাসে সারাদিন
বাইরে যারা রয়ে গেল ঝুঁকিয়ে দাঁতাল-মাথা
তারাই বা কারা
জল্লাদের ছেড়ে দেয়া প্রশ্বাস বুক ভরে টানে
চাই না এসব ধন্ধ
মশারি খাটিয়ে বিছানায় সাপ নারীর বদলে
নৌকোর গলুই থেকে ছুরি হাতে জ্যোৎস্নায়
বুকের ওপরে বসবে লুঙিপরা রোমশ সারেঙ
নাসারন্ধ্র থেকে বন্দুকের ধোঁয়া
“বল শালা শকুন্তলার আঙটি কোন মাছে আছে”
জানি তবু বলতে পারি না
মুখের ভেতর আঙটি জিভের তলায় আমি লুকিয়ে রেখেছি।
আবার আসবো ফিরে
আবার আসবো ফিরে জানি, কিন্তু কোন বাংলায়?
দু-বাংলাতেই আসবো ফিরে আমি, বুঝলেন জীবনানন্দ
কাক বা কোকিল হয়ে নয়, ঘাস বা কমলালেবু হয়ে নয়
মানুষের হাল-আমল রূপে ফেরবার কোনো আশা নেই
কেননা এখন মানুষের সংজ্ঞা বেশ পালটে গিয়েছে
চাকুরির দৌলতে পশ্চিমবাংলার গ্রাম গঞ্জ শহরতলি
ঘুরে ঘুরে, চাষি তাঁতি জেলে মাঝি ছুতোর কামার
শবর সাঁওতাল মাহাতের দাওয়ায় বসে যেসব দুর্দশার কথা
শুনেছি পঞ্চাশ বছর ধরে, কাটাকাটি, খুনোখুনি
খামার বসতবাড়ি সুখের সংসার পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া
বিরোধ করেছে যারা তাদের গ্রামছাড়া করা
মাটির তলায় সপরিবার জ্যান্ত পুঁতে দেয়া
বুঝলেন জীবনানন্দ, সবই ঘটেছে দেশভাগের বহু পরে
বহু পরে বহু পরে বহু পরে বিশ-ত্রিশ বছর তো হবেই
ফেলানি ঝুলেছে কাঁটাতারে, ইলিশ এসেছে লুকিয়ে-চুরিয়ে
এপার ওপার দুই দেশ থেকে কচি কিশোরীদের মুখচাপা দিয়ে
তুলে এনে বিক্রি হয়েছে প্রতিদিন কুমারীত্ব কেনার বাজারে
পরে তারা গোপন জাহাজে পাচার হয়েছে আরবের বন্ধ হারেমে
তাই আর মানুষের রূপে ফিরতে চাই না আমি
তবু ফিরতে চাই, বুঝলেন জীবনানন্দ, ফিরবোই আমি
বাঙালির মুখের ভাষা হয়ে বেঁচে থাকব চিরকাল এপার-ওপারে
হাঁচি আর ভালোবাসা
মেয়েদের সিট-ঘেঁষে দাঁড়িও না, বলছিল বুড়ি
মেয়েদের সিটের কাছে দাঁড়িও না, বকছিল বুড়ি
হুঁশিয়ারি দেয়ার পরও এমনই টেসটোসটেরনের ডাক
ভিড়ের গোঁতা খেতে-খেতে সেখানেই দাঁড়িয়েছিলুম
সামনের তরুণী হাঁচলেন, হাত বা কনুই চাপা না দিয়েই
বেশ ভালো লেগেছিল নাকটুকু স্ফীত হয়ে বুককে কাঁপানো
বাসের ব্রেক মারায় ঠেলা খেয়ে তরুণীর কপালে হাত ঠেকে গেল
বুঝলুম জ্বর ; হয়তো যাচ্ছে ডাক্তারের কাছে কিংবা অফিসে--
যুবতীর প্রতি টেসটোসটেরনের টানে ভালোবাসা ছিল, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই ছিল--
পরের সকাল থেকে টানা চার দিন জ্বরে ভুগলুম, আহা গো যৌনতা
নিজেকে ভুগতে দিলুম ; হাঁচির মাধ্যমে পাওয়া তরুণীর ভালোবাসা
অন্তত চারদিন পেরেছি রাখতে ধরে, বিছানায় আয়েস করে শুয়ে–
আরেকবার উহুরু
কালো কাপড়ের খোল মুখেতে পরানো, দুই হাত
পিছমোড়া করে বাঁধা , দাঁড়িয়ে রয়েছি পাটাতনে,
জল্লাদের ঘামের তিতকুটে গন্ধে ভোরের বাতাস থম –
সময় গুনছে কারা ? ডাক্তার পুলিস জজ ওয়ার্ডেন ? নাকি কেউই গোনে না !
আচমকা নেমে যাবো ঝুপ শব্দে যেখানে ঘোলাটে অন্ধকারে
পোষা হয় ঘামলোনা নোংরা ইতিহাস ;
কাঁপতে থাকবে দড়ি , প্রথমে খুবই ঘনঘন,
দুর্বল ঝাঁকুনি , তারপর স্হির , বোবা চিৎকারে
ওভাবে যেখানে কবি-খুনি নেমে গেছে বহুবার
আমি তো উঠেছি আজ সেইখান থেকে জ্যান্ত হয়ে
এ-ই একমাত্র ওঠা । এছাড়া উপায় নেই শব্দদানবের
যাদের পায়ের কাছে পড়ে থাকে বিধ্বস্ত ভূগোল
মরার জন্য যারা জন্মায় আমি সেই ধর্মবংশ
বাঁচিয়ে রাখার জন্য বারবার ঝুলি না ফাঁসিতে ।
অসহ্য নারী : অদ্রীশ বিশ্বাসের আত্মহত্যা
হৃৎপিণ্ডে ওঠেনি কি দ্রিদিম দ্রিদিম দ্রিম দ্রিম
যখন আকাশের ইস্পাতে গিঁট বাঁধছিলে
দেখে নিচ্ছিলে গিঁট শক্ত হলো কিনা
পায়ের শিরাগুলো তাদের কুয়োর দড়ি দিয়ে রক্ত তো পাঠাচ্ছিল
তোমার হৃৎপিণ্ডের দিকে, ভালভ খুলে এবং বন্ধ করে
ওই দ্রিদিম দ্রিদিম দ্রিম দ্রিম শুনে তাড়া পড়ে গিয়েছিল
তোমার শরীর জুড়ে, অথচ তুমি বরফের তৈরি মাথায়
জানি না কবে কোন দিন কখন নির্ণয় নিয়ে ফেলেছিলে
আকাশের হুক থেকে ঝুলে পড়ে, ঝুলে পড়ে আত্মহত্যা করে নেবে
শেষ প্রশ্বাসের সঙ্গে শেষ বীর্য ফোঁটা ঝরেও ঝরবে না
কিছুটা হদিশ কি পাইনিকো ? পেয়ে তো ছিলুম–
বলেও ছিলুম, এ কী করছো অদ্রীশ তুমি, উত্তর দিলে না
নারীও পুরুষের মতো জড়িয়ে ধরতে পারে, ধরে, জানাই ছিল না
আমি তো জানোই, নারীদেরই জড়িয়ে ধরেছি চিরকাল
পুরুষকে জড়িয়ে ধরার কথা ভাবলেই বিরক্তি ধরে, বমি পায়
মনে হয় রাস্তাছাপ রাজনীতি শরীরে আশ্রয় নিতে এলো
এও বলেছিলে তুমি, চিরকাল মুক্তযৌনতার পক্ষে
রজনীশ-আশ্রমের যৌনতার খেলা সমর্থন করো, সম্পর্কের ব্যাগাটেলি
তোমার যৌনজীবনের কথা জানতে চাইলে তবে লজ্জা পেয়েছিলে কেন
ইউরোপে গিয়ে বিদেশিনী প্রেম করেছিলে কিনা, রোমান হলিডে,
জুলিয়েট, জাঁ দুভাল, তার কোনো উত্তর দাওনি তো
তোমাকে বুঝতে পারা ক্রমশ জটিলতর করে দিয়ে তুমি
ফেলে গেলে বুদ্ধদেব বসুর উপহার দেয়া মিমিকে ১৯৬৫ সালে
লরেন্স ফেরলিংঘেট্টি সম্পাদিত সিটি লাইটস জার্নালের দ্বিতীয় খণ্ডটি
যাতে হাংরিদের লেখা প্রকাশিত হয়েছিল, হাওয়ার্ড ম্যাককর্ডের
বিদ্যায়তনিক ভূমিকাটিসহ, ফুটপাথ থেকে কেনার সময়ে
হৃৎপিণ্ডে ওঠেনি কি দ্রিদিম দ্রিদিম দ্রিম দ্রিম
তোমার কাছেই জানলুম, জীবনানন্দের মেয়ে মঞ্জুশ্রীর চাকরি গিয়েছিল
সাউথ পয়েন্ট থেকে, মধুসূদন সান্যালের সাথে প্রেমের কারণে
বলেছিলে তুমি, যে বিদ্রোহী সে তো সমাজবিহীন, তার কেউ নেই
তার অদ্রীশ আছে, মলয়ের প্রথম সাক্ষাৎকার তুমি নিয়েছিলে
যখন কেউই পাত্তা দিতে চায়নি আমাকে, আমার প্রবন্ধগ্রন্হের
ভূমিকাও লিখে দিয়েছিলে, জানি না কখন কবে প্রৌঢ় হয়ে গেলে
সংবাদপত্রে পড়লুম, যখন আকাশের খুঁটি থেকে ঝুলছিলে, ঘরে ছিল
আলো, নাকি অন্ধকার ঘরে তুমি শ্লেষ হাসি ঠোঁটে নিয়ে
এনজয় করেছো প্রিয় একাকীত্ব ; তখনও কি নিজেকে নিজে নিঃশব্দে
বলছিলে : এই বাংলায় দুইটি জিনিস আর ফিরবে না কোনোদিন :
সুভাষচন্দ্র বসু আর সিপিএম । মার্কস বা লানিন নয়, স্তালিনও নয়
মাও বা ফিদেল কাস্ত্রো নয়, কেবল সিপিএম ক্যাডারিত হাড়গিলে লোকেদের
ঘেন্না করে গেছো, তুমি তো প্যারিস রোম ফ্লোরেন্স ভেনিস ব্রিটেনে গিয়েছিলে
তবু তারা রাস্তায় তোমাকে ফেলে রায়গঞ্জে থেঁতো করেছিল
যাদবপুরের চারতলা বাড়ি থেকে হিঁচড়ে টেনে নিয়ে গিয়ে পাগলাগারদে
ইলেকট্রিক শক দিয়েছিল, অথচ তুমি তো নিজেই বিনয় মজুমদারকে
হাসপাতালে দেখাশোনার ভার নিয়েছিলে, বিনয় মজুমদারের বউ রাধা
আর ছেলে কেলোকে সোনাগাছি গিয়ে খুঁজে-খুঁজে ছবি তুলে এনেছিলে
অর্ঘ্য দত্তবক্সির বইয়ের মলাটেতে দেখেছি তাদের, সত্যি বলতে কি
কয় দিন কয় রাত ঝুলেছো নিজের ঘরে, তারপর পিস হেভেনের শীতাতপে নয়
কাটাপুকুর মর্গে তিন দিন পড়েছিলে, বুক চিরে ব্যবচ্ছেদ হয়েছিল ?
ডাক্তারেরা পেয়েছিল কিছু ? জমাট বেঁধে যাওয়া দ্রিদিম দ্রিদিম দ্রিম দ্রিম
জানি না । শুনিনিকো । দেহেতে পোশাক ছিল ? কোন পোশাক ?
লাশকাটা ঘরে ? চোখ আর বন্ধ করোনিকো, সম্ভবই ছিল না
সবুজ প্লাস্টিকে মোড়া, ফুল নেই, রজনীগন্ধার রিদ নেই
সাজুগুজু সুন্দরীরা এসে রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়নিকো তোমার মরদেহ ঘিরে
কেওড়াতলায় উল্টো বন্দুক করে প্রতিষ্ঠানের সেলামি পাওনি তা জানি
নন্দন চত্বরে প্রতিষ্ঠানের মোসাহেবদের মতো শোয়ানো হয়নি দেহ
তোমার প্রিয় সন্দীপন ঘুরতো তো বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পিছনে পিছনে
জিগ্যেস করোনি তাঁকে সিপিএম কেন তোমাকে টার্গেট করেছিল !
আশে পাশে আরও কয়েকজনের শব ছিল, ওঠেনি কি দ্রিদিম দ্রিদিম দ্রিম দ্রিম
দাদা নকশাল বলে শ্রীরামপুরের বাড়িতে হামলা করেছিল, তোমার কথায়
সেই লোকগুলো যারা বাংলার রেনেসাঁকে ধ্বংস করে গড়িয়ার মোড়ে নেচেছিল
বটতলা ফিরিয়ে আনলে তুমি গবেষণা করে, ভিক্টোরিয় বিদেশিরা যাকে
অশ্লীল ছাপ দিয়ে আদিগঙ্গার পাঁকে ছুঁড়ে ফেলেছিল
আর কমলকুমারের রেডবুক, ১৮৬৮ সালে প্রকাশিত প্রথম বাঙালি মহিলার
লেখা উপন্যাস ‘মনোত্তমা’ খুঁজে পেয়েছিল ব্রিটিশ লাইব্রেরির তাকে অযত্নে রাখা
তখন হৃৎপিণ্ডে ওঠেনি কি দ্রিদিম দ্রিদিম দ্রিম দ্রিম
যেমন প্রথমবার প্রেসিডেন্সির প্রথম বছরে ঝালমুড়ি খেতে খেতে
প্রিন্সেপ ঘাটে, ভিক্টোরিয়ায়, ক্যানিঙের ট্রেনে, গঙ্গার খেয়া নিয়ে এপার-ওপার
মা ‘লীলাবতী’কে নিয়ে বই লিখে হয়তো ভেবেছিলে পৃথিবীতে কাজ সাঙ্গ হলো
জানবো কেমন করে বলো, এই তো সেদিন ১৯৬৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর
জন্মেছিলে তুমি, মৃত্যুর দিনটাকে আকাশের খুূঁটিকে বলে চলে গেলে
কেবল এটুকু জানি ২০১৭ সালে ১৬ই জুন কেওড়াতলার শ্মশানে প্রাঙ্গনে
ডেডবডি ক্যারিয়ার সার্ভিস গাড়িতে গোপনে শুয়ে গন্তব্যে চলে গেলে
পাখিরা কোথায় গিয়ে মারা যায় জানতে চেয়েছেন অরুন্ধতী রায়
তিমিমাছ বুড়ো হয় মারা যায়, রুই ও কাৎলা বুড়ো হয়ে মারা যায়
মারা গেলে তাদের গল্পগুলো জলের তলায় চাপা পড়ে থাকে–
কতো কাজ বাকি রয়ে গেল, সেসব প্রজেক্টের কেউই কিচ্ছু জানে না
যাকিছু বহুদিন সযত্নে সংগ্রহ করেছিলে সবই ফালতু মনে হলো
যা জরুরি মনে হলো তা ওই এক ঝটকায় দ্রিদিম দ্রিদিম দ্রিম দ্রিম
বন্ধ করে, নিঃশব্দে অট্টহাসি হেসে, আত্মনিধন করে ফেলা…
নতুন বউ
আমরা দুজনে বাথরুমে বৃষ্টির তলায় নাচি
আমাকে সাবান মাখাচ্ছে ও, আমি ওর চুলে
শ্যাম্পু লাগিয়ে তুলছি বঙ্গোপসাগরের ফেনা
মুখে ঢেউ বুকে বানভাসি হাসছি দুজনে
দেড় ঘণ্টায় আমি ওর ও আমার মাংসে মিশেছে
বন্ধ দরোজার ভেতরে আয়না লাগিয়ে
দিয়ে গেছে দাদা, নতুন বউ যে এসেছে সংসারে–
দেখাচ্ছি দুজনের বেপরোয়া পেছলা তাণ্ডব
প্রথম দিনের স্নানে জীবন্ত পেইনটিঙ
বাথরুমে বনাঞ্চল ঝর্ণা নতুন নারীকে নিয়ে
সাবান মাটিতে পড়লে চেঁচিয়ে উঠছে ও
“এই এই ভালো হবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি
বাথরুমে নয়, কালই তো ফুলশয্যা করেছিলে”
হঠাৎ বাইরে থেকে বাবার কন্ঠস্বর শুনি :-
“আর কতোক্ষণ লাগবে তোদের, দুঘণ্টা তো হলো
কখন করব চান, কখন বসব খেতে, আজকে পূর্ণিমা”
মায়ের ফিসফিসানিও শুনতে পাই, বাবাকে বলছেন :-
“আহ, দাও না দুজনকে একটু ভালোভাবে
পরিচয় করে নিতে, কাল থেকে তো সেই একঘেয়ে
চাড্ডি মুখে গুঁজে নিয়ে দশটা পাঁচটার সংসার”’
যোনি
হে অলুক বহুব্রীহি জিভ, তুমি হৃদয় পর্যন্ত যাও
প্রতিটি স্বাদকণা গোলাপি মাংসে নিয়ে তাকে বলো
এই তিক্ত, এই কষায়, এই মিষ্টি, এই নুন, এই মন্ত্রবীজ
রেখে যাচ্ছি মহাসরোবরে প্রোষিত-বার্তাবাহকের
নির্বাক সংলাপে, এই জিভ উৎসর্গ করলুম গহ্বরে
তুমি স্পন্দ তুমি নীড় তুমি কর্মলক্ষ্মী-অবতার
হে লাবিয়া ম্যাহোরা এই নাও সর্বস্ব এই নাও নাও
অগ্নিমণ্ড
মাংসপিণ্ড ভেবে খেলা করেছিলে কখনও দশটা আঙুলে
অথচ সে কেমন সাড়া দিয়ে ফণা তুলতো নিঃশব্দ বাঁশিতে
হাড়ের অগ্নিমণ্ড তোমার আঙুলের বা ঠোঁটের আলতো ম্যাজিকে
এখন দিচ্ছি তোমাকে উপহার, কেটে বা উপড়ে নয়–
উৎপাটিত করে, বিষে-ভরা দুইটি বহ্মাণ্ডসহ–
সাদা-কালো রঙিন নরম ও কঠিনাবস্হার ফোটো
স্ট্যাম্প-পেপারে নোটারির ছাপ আর সইকরা উইলে
দিয়েছি তোমার নামে লিখে । যতো ইচ্ছে খেলো বা
টবে পুঁতে সটান গ্ল্যাডিওলি ফোটাও দুপুরে শীতে
যদি তুমি সাড়া-দেয়া ফণাকে আদেশ দাও, দেখবে
সেলাম ঠুকছে বিনয়ে বিগলিত তোমার সেবায়
কিংবা একে যেমন ভাবতে আগে তেমন ললিপপ
প্রেমে দেবতার মান্যতায় পুজো করতে পারো —
হ্রিং ক্রিং চিং মিং বা যথেচ্ছ মন্তরে একে যখন
যেমন চাও শুকনো বা রসে টইটুম্বুর থই থই
মনস্কামনার জন্য ফুঁদিয়ে ফুলিয়ে নিও কেননা তুমিই
বলেছিলে, “এটা আমার এটা কেবল আমার সম্পত্তি”
মেলাপুরুষ
মাগগি গণ্ডার দিনে পাইকারি হারে খুন হল কি হল না
গুদামঘরের ছাদ ভেঙে কে রে গদি টানাটানি করে
সে ফেরারি গৃহবধু যোনিতে কুলুপ এঁটে
ঋণমেলা থেকে নোনা বালির লিঙ্গ পেয়েছিল
সুদ জরিমানা মিলে স্পর্শকাতর আদালতে
মুদ্দোফরাস এসে লাশটাকে চুমু খেয়ে স্বাগত জানালে
জিপ খুলে বললেন : “উঁহুহু চলবে না
বিগ্রহ ধুলোয় তৈরি নামাব কোথায়
আপনি তো জানেনই ভালো, গুখোর কাকেরা বড়ো বস্তুনিষ্ঠ
খাদির বাকলে বুড়ো বটবৃক্ষের ডাল খোঁজে, কেননা আসলে
পার্টি না বললে পরে এত্তেলা লেখা চলবে না
বরঞ্চ আমাদের দেখভালে থাকো
আমাদের এদিকটায় শিরদাঁড়া ঘিরে মোম সবায়ের ঝরে
নারীর গন্ধটুকু রেখে নিয়ে ধোপারা ফেরত দ্যায় শাড়ি
লাঙলে নিজের ছায়া ফেড়ে ফ্যালে চাষি
এমন মরদ গেঁড়ে চোখে লোলুপতা নেই হৃদয়ে রিরংসা নেই
লিঙ্গ বহুচারী নয়, তার মানে যে কলঙ্ক থাকলে মেধা বীর্যবান
তেমন পুরুষ নেই এ তল্লাটে”
ফুঃ
ক্যানসার
আত্মরতির স্নেহে ক্ষয়ে গেলি মুখপুড়ি, নিজেরই অন্তরতাপে পুড়ে
বুকের অর্ধেক মোহে, চেয়ে দ্যাখ, দ্রবণে চোবানো ভাসমান
যদিও সে রাতে তুই বলেছিলি, আমার ছোঁয়ার দোষে ধরেছে কর্কট
ছেয়ে গেছে প্রিয় মাংসে প্রেমিকের অমৃত ভাঁড়ার
বিষণ্ণ সুখের হিম ভাগ করে দিতে চাস তাই ; কে নেবে তা ?
ভেবে দ্যাখ , মনে কর , আগের প্রেমিকগুলো চুমুতে বিষাদ ভরে
শেয়ালকাঁটার রেণু তোর ফুসফুসে ফেলে সটকে পড়েছে
যাদের সঙ্গে তুই বাঁ হাতে শ্যামপেন ধরে নাচতিস ডিসকো-মাতাল
কিংবা হয়তো-বা তিমির চর্বিতে তৈরি লিপ্সটিক মেখেছিলি ঠোঁটে
তিমির পোয়াতি কান্না কাঁকড়ার বুদবুদে লিখেছে সবুজ প্রতিশোধ
কাকে কাকে কতোবার বলেছিলি অবন্তিকা, অর্ধনশ্বরী সুরে
ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি লাভিউ লাভিউ ফাক মি….
বৃত্তনৃত্য
করোনা ভাইরাস পুং তুমি তো মৃত্যু-নিরপেক্ষ ছিলে
এবার সঙ্গে করে নিয়ে এলে একচোখো উলঙ্গ প্রেমিকাকে
যে তার এলোচুল উড়িয়ে বৃত্ত-নৃত্যে গোড়ালি ঘুরিয়ে তুলল
সমুদ্র-মেশানো নোনা ছুটন্ত উচ্ছ্বাস
বজ্র-ডমরুর আতঙ্কধ্বনি : ওঁ স্বাহা–
তোমাদের সন্ত্রাসে সবকিছু নিরপেক্ষ
এমনকী ধর্ম, জাতি, দেশ, গাঁ ও শহর,
সাধু আর চোর, জানোয়ার, সুন্দরী গাছেরা ।.
মানুষের বিরুদ্ধে বদলা নিতে
প্রকৃতি তোমাদের পাঠিয়েছে উচিত শিক্ষা দিতে–
কিন্তু মানবসমাজ কোনোদিন কি সত্যি বদলাবে ?
হে স্ফূর্তিনাথ
মগজে-হৃৎপিণ্ডে যতি কমা কোলোন সেমিকোলোন
জন্মসূত্রে পাওয়া, ঙ চন্দ্রবিন্দু অনুস্বার বিসর্গ
জড়ো করে রাখা আছে । কে জানে কখন কার নির্দেশে
রক্তের স্রোতে মিশে গিয়ে ওদের কোনো একজন
বাটারফ্লাই সাঁতার কাটতে থাকে স্ফূর্তির মজায়–
খেয়ালই করে না আমি চিৎ বা উপুড় হয়ে নাক বা
পেচ্ছাপের সঙ্গে রক্ত বের করে উলটে পড়ে আছি
জ্ঞানহীন হয়ে । হে স্ফূর্তিনাথ, তুমি শ্বাসের মারপ্যাঁচ
রক্তের স্রোতে রঙিন মাছের মতো কেন ছেড়ে দাও?
আমি তো লো কালচার
আমি তো লো কালচার, একটা বরফকাঠি ছ’জন মিলে
চুষে খেতুম ; রিকশ-টায়ার কঞ্চি মেরে নিয়ে যেতুম
গলির শেষে ; নালির গুয়ে লাট্টু পড়লে কাঠির খোঁচায় তুলে
ধুয়ে নিতুম রাস্তার টিউকলে ; আমি তো লো কালচার
সরস্বতীর বুকদুটো হায় লক্ষ্মীর চেয়ে ছোট্ট কেন হলো
জানতে চাইলে পুরুতমশায় চরণামৃত ঢেলে দিতেন মাথায়
বৃষ্টি হলে চুলের ওপর বই আর খাতা চাপা দিয়ে যেতুম ইশকুলে
আমি তো লো কালচার, ঢিল লাথিয়ে রফা করতুম জুতো–
এখনও সেই একইরকম চলছে ফোকলা দাঁতে, একটা পিৎজা কিনে
বুড়ির সঙ্গে তিনচার দিন খাই, আমি তো লো কালচার
লোকের সামনে পাদি আর ঢেঁকুর তুলি ইউরোপেতে গিয়ে
বুড়ি বলে ‘ভাগ্যিস তুমি ভদ্দরলোক নও, নয়তো জীবন
কি আর যাপন হতো, এই বয়সে নোংরা কাজ তো নেই
নোংরা নোংরা লো কালচার কথাবার্তায় দিনগুলো বেশ কাটে’
যুবতীদের লেখালিখি
আমি যুবতীদের লেখালিখি আলোচনা করতে ভয় পাই
স্মৃতিতে ভেসে ওঠে হাতে ঝোলানো রক্তাক্ত মুণ্ড
পায়ের কাছে সোনার ঝাঁপিতে রাখা মোহর
এক হাতে কবিতার বই আরেক হাতে বীণা
দুই হাত দিয়ে বুকে গেঁথা বর্শা আর অন্য হাতে
ত্রিশূল গদা চক্র খড়্গ কালদণ্ড বজ্র আরও কতো কী
হাসিমুখে সিংহের ওপরে বসে আমার দিকে তাকিয়ে
এমনকী গাধার ওপরে বসতেও ভয়ডর নেই
সারা গায়ে ফণা-তোলা অজস্র সাপ লেলিয়ে দিতে পারেন
গলায় মুণ্ডের মালা ঝুলিয়ে পুরুষের বুকের ওপরে পা
আমি নিরীশ্বরবাদী বলে আরও বেশী আতঙ্কিত
ঈশ্বরীরা বলবেন তাঁদের অবজেকটিফাই করে তুলছি
তীব্র প্রতিবাদ
জরুরি অবস্হা চলছে, ১৯৭৬, প্রচণ্ড শীত
বাঁদুরে টুপি, মাফলার, ডবল সোয়েটারে ঢেকে
রিকশায় বসে, মুঙ্গের শহরের রাস্তায়, কাজে যাচ্ছি
দেখি, কোতোয়ালির সামনের কালো কাঠের বরগায়
উল্টো টাঙানো ঝুলছে পায়ে দড়ি বাঁধা
এগারোটা উলঙ্গ পুরুষ, বুড়ো প্রৌঢ় তামাটে যুবক
রিকশাঅলার মতে ‘এরা এই জেলার গুণ্ডা-বজ্জাত’
সবাই ঝিমিয়ে সিঁটিয়ে আছে হাড্ডিকাঁপানো ঠাণ্ডায়
এক প্রৌঢ়ের লিঙ্গ কিন্তু খাড়া, ঠিক যেন বেয়নেট–
রিকশাঅলার মতে, ‘ওরটা জরুরি অবস্হার বিরুদ্ধে
তীব্র প্রতিবাদ’
আমি বাবার মতন শ্রমিক হতে পারলুম না
রাজা, নবাব, জমিদারদের পরিবারের সুন্দরীদের
পেইনটিঙ আঁকতেন দাদু আর মোটা টাকা পেতেন ;
বাবা তরুণীদের বিয়ের জন্য ফোটো তুলে দিতেন
রিটাচ করে সুন্দরী করে তুলতেন যাতে পাত্ররা ফোটোর প্রেমে পড়ে
যাতে মেয়েগুলোর হিল্লে হয় আর যৌতুক কম লাগে
বাবার মগজে এই তরুণীরা তেমন হেলডোল তুলতে পারতো না
অথচ আমি তরুণীদের দেখলেই চনমনে হয়ে উঠতুম
বারবার প্রেমে পড়ার রোগ ধরে গেল আমার
এক ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আরেক ফাঁদে গিয়ে আটকে পড়তুম
বেরোবার জন্য ছটফট করতে-করতে বেরিয়ে যেতুম
আমি বাবার মতন শ্রমিক হতে পারলুম না
ভালো মেয়ে খারাপ মেয়ে
আমি বেঁচে থাকতেই
ভালো মেয়ে আর খারাপ মেয়ের ধারণা পালটে গেল
তখন কোনো মেয়ে মদ খেলেই সে খারাপ
এখন মেয়েরা ককটেল তৈরির ফরমুলা বাতলায়
তখন মেয়েরা লুকিয়ে চুমু খেতো
এখন মেয়েরা ডিসকোয় মলে মালটিপ্লেক্সে জাপ্টেজুপ্টে চুমু খায়
লাইটপোস্টের তলায় দাঁড়িয়ে শীতকালে চুমু খায়
টেপাটিপি করে ; তখন টেপাটিপি ছিল একদম নো-নো
তখন শুধু প্রেমিক বা বরকে চুমু খেতে দিত
এখন যাকে পছন্দ তাকে চুমু খায় যেখানে পছন্দ হাত দিতে দেয়
তখন মেয়েরা গোড়ালি পর্যন্ত শাড়ি পরত
এখন ইচ্ছে করলে হাঁটুর ওপর উরু পর্যন্ত স্কার্ট পরে
তখন মেয়েরা গরু শুয়োর খেতো না
এখন আফ্রিকার আর অসট্রেলিয়ার বুশ মিট খায়
তখন মেয়েরা হাজব্যাণ্ড সোয়াপিং করত না এখন অনেক জুটি করে
তখন আমার উচিত ছিল বুড়ো হওয়া আর এখন যুবক
কৌমকান্না
এই শালা বিদ্ধস্ত পুরুষ, সটাসট গিলছে ককটেল
কাউন্টারের কুর্সিতে বসে কাঁদছে নিজস্ব কান্না
সামনের প্লেটে পেস্তা আখরোট হ্যাজেলনাটগুলো
মদের সঙ্গেই পায় অথচ খাচ্ছে না । এখানে তো জুটি ছাড়া
ঢুকতে দেয় না, নিশ্চয়ই কোনো পথবেশ্যা তুলে এনে
ডিসকোর শীতাতপ সুগন্ধী ঘেমো ভিড়ে নাচতে পাঠিয়েছে
সঙ্গীতের কানফাটা প্যাঁদানির চোটে উদ্দাম নাচছে যৌবন
আমি নিশ্চিত, সারা দেশ জুড়ে, এই সময়ে, হাজার হাজার
হাফ-প্রৌঢ়রা, কাঁদছে কোনো না কোনো শুঁড়িখানার আধোঅন্ধকার
গ্যাঞ্জামে । কালকে সকালে ফিরে যাবে লাৎখোর দিনানুদৈনিকে ।
খদ্দেরদের আনন্দের কবিতার বই
আজকাল সবাই বেশি-বেশি কবিতা লিখে ফেলছে
আমি বুড়ো হয়ে গেলুম কিন্তু বেশি-বেশি কবিতা লেখা হল না
আজকাল সবাই বেশি-বেশি কবিতার বই প্রকাশ করছে
আমি বুড়ো হয়ে গেলুম কিন্তু বেশি-বেশি বই বের করা হল না
বন্ধুরা যৌবনে সোনাগাছিতে কবিতার বই বিলোতো
তখন বুকে আর পাছায় সিলিকন জেল দরকার হতো না
ঠোঁটকে মৌমাছি-কামড়ানো করার ইনজেকশান নিতে হতো না
মুখকে যৌবনে ফেরাবার প্লাসটিক সার্জারি করবার দরকার হতো না
সব মেয়েই সুন্দরী ছিল বলে বন্ধুরা তাদের কবিতার বই বিলোতো
তাদের মালখোর মাসকাবারি খদ্দেররাও বেজায় তাকধিনাধিন খুশি
অচেনা কবিদের কবিতা-পাঠিকা-বিদুষীর বিছানায় রাত কাটিয়ে
ভার্জিন বিরিয়ানি
ছয় ফিট উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা খুঁটি বাঁধা ষাঁড়টা দাপাচ্ছে মাটি
অনেক সন্তান সন্ততি আছে ওর সারা দেশ জুড়ে
কিন্তু বেচারা ভার্জিন, সঙ্গম বা ধর্ষণের সুযোগ পায়নি
ধাতুরস দান করে পয়দা করে চলেছে সংকরগাই
ইউরোপ আমেরিকা জুড়ে সারবাঁধা ভার্জিন গরু
গড়ে উঠছে চর্বিদার মাংস দেবে বলে
চিনে আর চিনে-টাইপের দেশে একইভাবে মাংস দেবার জন্য
ভার্জিন গোলাপি শুয়োর তৈরি হচ্ছে খাওয়া হবে বলে
ভার্জিন মুর্গির মাংস, ভার্জিন মুর্গির ডিম
বিরিয়ানি হবে ভালো কলকাতায়, হায়দ্রাবাদে
আমরা সেক্সের আমোদ নেবো বিলিতি মদ্য টেনে
শীতলতমা
কয়েকজন স্কুলছাত্র হাসাহাসি করছিল খিক-খিক
এতো হাসাহাসি কেন ? যেদিকে তাকিয়ে হাসছিল
চেয়ে দেখি সরেস যুবতী এক আইসক্রিম চুষছে আয়েসে
মুখে পুরছে আর বের করছে টেনে : ব্লোজব ব্লোজব
একটি ছাত্র জানতে চাইল হেসে , কী কবি, কী দেখছেন ?
আছোলা
পতাকা উত্তোলনের জন্য উনি দড়ি টানলেন
পতাকা খুললো না
ফুলসুদ্ধ পুঁটলি ওনার পায়ের কাছে এসে
আছড়ে পড়ল
উনি পতাকাহীন আছোলা দণ্ডের দিকে তাকিয়ে
স্যালুট দিলেন
যথারীতি কিছুক্ষণ দেশপ্রেমের বাজনা বাজলো
ততোক্ষণ উনি গম্ভীর মুখে স্যালুট অবস্হায়
ষাঁড়ের জেদ
কেউ বলে কবিতাটা কবিতা হয়নি আবার কেউ বলে
সেরকম জৌলুশ নেই এখনকার কবিতাগুলোয়
আসলে যা লেখার সেটাই লিখে যেতে হবে
যাকে তুমি ভালোবাসো তার পাছার নাচন দেখে
ছুট্টল ষাঁড়ের মতো মাঠের পর মাঠ পথের পর পথ
অনুসরণ করে যাওয়া ছাড়া অন্য উপায় নেই
আমার কবিতা আমার মতনই , হ্যাঁ, ছুট্টল ষাঁড়ের মতো
পেছনে পেছনে শুঁড়ির আড্ডায় জুয়ার গোপন জমঘটে
অক্ষরের জঞ্জালে শিং তুলে দেদোল দুলিয়ে উঠে পড়বে
হয় হবে না হয় না-হবে বেপরোয়া খোল-নলচে খুলে
যৌতুক
যেরকম কথাবার্তা হল
সোনাদানা আসবাব যা দিচ্ছেন দিন
কিন্তু মনে রাখবেন, আমরা পাত্রপক্ষ
পাত্রের মগজে একটা নরক রয়েছে
তার জন্য মেয়েটিকে অবশ্যই
ভার্জিন হতে হবে
অনুপ্রেরণা
একজন কবির বাড়ির বাইরে নেমপ্লেট দেখে
মনে পড়ে গেল স্নাতকোত্তর সহপাঠীদের মাঝরাতের পড়াশুনা
চকচকে কবির গ্র্যানিট পাথরে লেখা নাম
মনে পড়ে গেল খ্রিস্টানদের ফেলে-যাওয়া কবরের
চকচকে নামখোদাই গ্র্যানিট পাথরে শুইয়ে
গঙ্গার ওপার থেকে রোজগারের ধান্দায় আসা ফুলকো গৃহবধু
সস্তার বেশ্যাদের থেকে অনুপ্রেরণা পাওয়া
স্নাতকোত্তরে মাঝরাতের রেশারেশি পড়াশুনা
বেশ কয়েকজন আইএস আইপিএস হয়ে অবসর নিয়েছে
কবরের ওপরের চকচকে নামখোদাই গ্র্যানিট পাথরগুলো
থেকে গেছে এখনকার স্নাতকোত্তর ছাত্রদের
অনুপ্রেরণা যোগাতে
শরশয্যায় শেষ দুশ্চিন্তা
আমি তোমাদের পিতামহ ভীষ্ম
তোমরা নিজেরা লড়বে থামাতে পারব না
আমি আমার জন্মদিন জানি না, বাবা-মার জন্মদিন জানি না
যাদের দলে আছি তারা একশোজন একই সঙ্গে একই তারিখে জন্মেছিল নাকি
ওরাও নিজেদের জন্মের তারিখ জানে না কেননা কয়েকজন
পরের সূর্যোদয়ে জন্মেছিল, হয়তো প্রথম পঞ্চাশ আফগানিস্তানে
যাদের সঙ্গে লড়ছে তারাও পাঁচ ভাই জানে না কে কবে জন্মেছিল
তাদের আসল বাবার জন্মদিন কেউই জানে না
নকল বাবা কি নথিপত্রে মান্যতা পাবে ?
আরেকটা ভাই আছে কানের ভেতরে আইভিএফ করে পয়দা হয়েছিল
সেও জানে না তার জন্মদিন কবে ! কী তার বাবার সাকিন, জন্মদিন ? বিগ ব্যাং ?
আমার মা গঙ্গা জন্মেছিলেন কবে জুরাসিক, ক্রিটেশিয়াস, প্যালিওজিন যুগে
আমার বাবার চেয়ে কতো কোটি বছরের বড়ো সুন্দরী যুবতী ছিলেন ?
যাই হোক আমার পূর্বপুরুষদের ও উত্তরপুরুষের পরিবারের লোকেদের
জন্মের তারিখ আর আঁতুড়ের ভূমি নথিতে লেখেননি গণেশ ।
আমি ঠিক কোন রাজ্যে জন্মেছিলুম ? উত্তরাখণ্ডে, উত্তরপ্রদেশে, বিহারে, বাংলায় ?
তীরের বিছানায় শুয়ে ভাবছি এই ফালতু পাঁচসাত
তৃষ্ণা মেটাবার জন্য মাটিতে একের পর এক তির চালিয়েও
জলের ফোয়ারা তুলতে পারেনি অর্জুন ; মাটির তলার জল শুকিয়ে গিয়েছে !
প্রতিটি তিরে শুধু উঠে আসছে টাটকা রক্তের ঝর্ণা, বিভিন্ন ধর্মের, জাতির
বর্ণের, ত্বকের, জঙ্গলের, পাহাড়ের মানুষের দানবের রাক্ষসের
আমার হাঁ-মুখে আছড়ায় অনন্তকাল জুড়ে উষ্ণ প্রস্রবণ
এই রক্তস্রোত থামবে না কোনোদিন ; লড়াই চলতে থাকবে অবিরাম
আমিও তৃষ্ণার্ত থেকে যাবো আণবিক যুদ্ধ না-হওয়া পর্যন্ত
প্রথমবার ইউরোপ
এতো আনন্দ হয়েছিল মিউজিয়ামের পেইনটিঙগুলো দেখে
ভাবা যায় না আসল ভ্যান গঘ, মাতিসে, পিকাসো
চিরিকো, জিয়াকোমেত্তি, রেমব্রাঁ, মনদ্রিয়ান
তারপর কাফেতে দুপরের যৎসামান্য পকেটমারি ভোজ খেয়ে
গেলুম টয়লেটে হাগতে ঝকঝকে পরিষ্কার
কাজ সারা হয়ে গেলে, উড়িসশালা, ইতি-উতি তন্ন তন্ন খুঁজে
ছোঁচাবার মগ পেলুম না কোথ্থাও এতো বড়ো ওয়াশরুমে
অগত্যা কাগজে পোঁদ পুঁছে বেরিয়ে আসতে হলো
দুই পা দুদিকে করে যতোক্ষণ শুকোতে পেরেছি বলে ভাবলুম
দেশে ফিরে প্রথমেই পায়খানায় টয়লেট রোল ঝোলাবার ব্যবস্হা করেছি
বিদেশে যাবার আগে কাগজেতে পোঁদ পোঁছার অভ্যাস করে নিই
দিল্লিওয়ালি গার্লফ্রেণ্ড
পুরাণের সংস্কৃত পাতা থেকে নেমে এসে তুইই শিখিয়েছিলিস
কবির লেখকের গণ্ডারের চামড়া খুলে রাস্তার ভিড়েতে মিশে যেতে
তার আগে নিজেকে বড়ো উন্নাসিক ভেবে কাদার সুপারম্যান
হাতঘড়ির কলকব্জায় ঝড়েতে মেটাফরগুলো চালুনিতে চেলে
ভেবেছি পিস্তল পাশে নেই বলে আত্মহত্যা করিনি এখনও
দিল্লির নিম্নচাপে চোখ এঁকে ফিরিয়েছিলিস শব্দ-ভিজুয়াল
তরোয়ালে আইনি ঝলকে লিপ্সটিক-ছাপা অটোগ্রাফ
প্রতিটি বিপ্লবের দাম হয় বদলের বাজারও তো বসে
জুলিয়াস সিজারের গম্ভীর শেক্ষপিয়ারি সাহিত্যের গমগমা ছেড়ে
সাধারণ মানুষের মতো প্রেমিক চাউনি মেলি তোর কথা মেনে
বুড়ো বলে সক্রেটিস সাজবার সত্যিই দরকার ছিল নাকি
গ্রিসের গাধার ওপরে বসে আথেন্স বা কলকাতার পচাগ্যাঞ্জামে
ধুতি পরে ? কাঁধে উত্তরীয় ! সাহিত্য সভায় ? নাকের বক্তিমে ঝেড়ে ?
ভুলে যায় লোকে । মজার এ মরে যাওয়া । গন ফট । খাল্লাস ।
দিল্লিওয়ালি ! তুইই বুঝিয়েছিলিস : হুদোহুদো বই লিখে
বিদ্বানের নাকফোলা সাজপোশাক খুলে দেখাও তো দিকি
কালো জিভ কালো শ্লেষ্মা কালো বীর্য কালো হাততালি
উলঙ্গ নাচো তো দেখি তাণ্ডবের আঙ্গিকবর্জিত তালে তালে
চুমুর পুনঃচুমু পুনঃপুনঃচুমু দিল্লির নিম্নচাপ মেঘে
এ দ্যাখ গণ্ডারের শিব-সত্য-সুন্দরের চামড়া খুলে ফেলে
আজকে পেয়েছি নখে প্রেমিকার চুলের জীবাশ্ম
সমাজ
সমাজ বলে কি কিছু আছে ! যেমন ষোড়শ শতকে ছিল বঙ্গদেশে !
আমরা গ্রামেতে থাকি, শহরে ছড়িয়ে থাকি
চল্লিশতলা বিলডিঙে থাকি মেট্রোপলিসে
চল্লিশতলায় যারা থাকে তারা পড়শিদের বিশেষ চেনে না
এরকম বহু অট্টালিকা আছে মেট্রোপলিসে, তারা ভোট দ্যায়
তারা ট্যাক্স দ্যায়, দূরের বন্ধুদের নিয়ে ফুর্তি করতে যায়
এরা কি সত্যই কোনো সমাজের সদস্য বলে মনে হয় !
শহরে যেসব লোক থাকে তারাও পাড়ার সবাইকে যে চেনে
তাও যাবে না বলা ; তাদের আত্মীয়স্বজন কদাচিৎ আসে
পথে দেখা হলে পরে হাই-হ্যালো কেমন আছেন বলে কেটে পড়ে—
রইলো গ্রামের কথা । সেখানে একে আরেকের দুর্ভোগের আত্মীয়–
চণ্ডীমণ্ডপ নেই, কেউ যে মঙ্গলকাব্য লিখবে সেরকম দেবতাও নেই ;
ছোকরা কয়েকজন মিলেমিশে পদ্য লেখে, চাকরি করে, চাষ করে
রাজনীতি ঘিরে ঝগড়াঝাঁটি করে, কিন্তু তাকে কি সমাজ বলব ?
আসলে সমাজের আঠা আর নেই, একজন যে আরেকের সুখদুঃখে
ভাগিদার হবে, তেমন আবহ আর নেই, তাই সত্যই সমাজ
রয়েছে কিনা সেই প্রশ্নের সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না
বস্তুত সমাজের সংজ্ঞাই পালটে গিয়েছে, তা যেন বাষ্প বা ধোঁয়া
উড়ে যায়, ধরতে পারা ভীষণ মুশকিল…প্রথম প্রেমিকার মতো
ইমলিতলায়
কী যে করি ! পেচ্ছাপ করা ছাড়া মতবাদে দেবার মতন
আর কিছু নেই ; যা-যা ফাঁকা, তাকে নির্মাণ করা জোক
নহে । যদিও শয়নে আছি গাছের তলায়, উলঙ্গ সটান–
মৌমাছির চাক থেকে মধু পড়ছে টুঙুর টুঙ-টাঙ টুপ
লিঙ্গের ওপর । কারা যে ফেলছে তা লক্ষ করে বুঝলুম
উরিব্বাস, স্তানিসল লেম, স্তুগাৎস্কি ভাই, প্রিমো লেভি,
স্লাভোজ জিজেক, আঁদ্রে গুন্দার ফ্রাঁ, কস্তা গাভ্রাস–
তা আমাকেই বা কেন ? খোট্টা-চু বিহারি কাঙাল বলে ?
এক্সক্লুসিভ জার্নির অপেক্ষায় শুয়ে আছি গাছের তলায়
পাখিদের গু থেকে যৎসামান্য নাথিংনেস পাবো এই ভেবে–
লিঙ্গকে মাখিয়ে মধু মেহন শিখিয়েছিল ইমলিতলা-পাড়া
চিৎকারের মজা
একদিন না এক দিন চেঁচাবোই
লোকাল ট্রেন থেকে নেমে যারা ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়োচ্ছে
তারা জানে কে কোথায় যাবে বলে বেরিয়েছে বাড়ি থেকে
আমি তো জানি না তাই, তাদের ওই ভিড়ের ভেতরে ওপরে দুহাত তুলে
একদিন না একদিন চেঁচাবো, চাঁচাবোই
কিংবা ইলিশঅলার সামনে ভিড় করে থলে হাতে যারা
অধৈর্য অপেক্ষায় ঘেঁষাঘেঁষি করে যে যার মতন চিলতে স্হান
করে নেবে বলে সবচেয়ে বড়োটা কিনে নিয়ে যাবে বলে
তাদের ভেতরে ঢুকে দুহাত ওপরে তুলে চেঁচাবোই
কলেজের ছেলেদের অ্যাডমিশানের মারপিটে
ঢুকে যাবো বেমালুম ঢুকে দুহাত ওপরে তুলে চিৎকার
করে উঠব বক্তৃতার সমাবেশে ঢুকে যখন নেতাটি
রগুড়ে কথায় ক্লান্ত শ্রোতাদের ঝিমিয়ে রেখেছে
মঞ্চের কাছে গিয়ে ওপরে দুহাত তুলে যতো জোরে পারি
চিৎকার করে উঠব, মানে-হয়-না এরকম কোনো শব্দের আওয়াজ
গলা ছেড়ে হেঁকে দেবো লাউডস্পিকারের চেয়ে জোরে
কবিতাপাঠের জন্য দলবাঁধা কবিদের ঘুমো-জমায়েতে
হঠাৎ দাঁড়িয়ে উঠে ওপরে দুহাত তুলে করব চিৎকার
তার আগে গলার স্বরকে কষ্ট দেবো না
গলাটাকে চিৎকারের উপযুক্ত করে চেল্লাবো
কারোর নাম নয়
অভিধানে নেই এরকম কোনো শব্দ বেরোবে মুখ থেকে
আমার চিৎকার শুনে দেখতে চাই লোকে
কী ভাবে ব্যাখ্যা করে, উন্মাদ মনে করে কিনা
বিরোধী মনে করে কিনা, ঘিরে ধরে মারধর করে কিনা
পুলিশে ধরিয়ে দেয় কিনা
অথচ আমি তো জানি ভিড়ের মানুষগুলো সকলে পাগল
আত্মঅবস্হান ভুলে গিয়ে ভিড়ের অংশ হয়ে আছে
আফ্রিকার জংলি কুকুরের দল ছিটছিটে ঢঙে
জালের ফাঁদেতে আটকে ছটফটে সার্ডিনের চকচকে ঢঙে
কাতারে কাতারে বুনো মহিষের ছুটন্ত শিং-তোলা ঢঙে
নয়তো ভিড় করে তারা নিজেদের সময়কে নষ্ট করে চলবে বা কেন
একদিন না একদিন চিৎকার করবই
ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে দেখব পাগলেরা কিরকম
নিজেদের উন্মাদ জীবন থেকে ক্ষণিকের জন্য হলেও
উৎপাটিত হলো….
আমার বাবা ও কার্ল মার্কস
পেপারব্যাকের মলাটের ছবিটা দেখে বাবা জিগ্যেস করলেন
“এর বুড়োটা আবার কে রে ? তোদের কোর্সের বই ?”
বললুম, “না, উনি একটা ফরমুলা তৈরি করেছেন ;
অনেক নামকরা লোক, তুমি চেনো না ?”
বাবা বললে, ” তুই তো জানিস আমি ইসকুলে যাইনি
লেখাপড়া ওই বাড়িতে যেটুকু হয় ।
তা এই বুড়োটা কি ফরমুলা বানিয়েছে ? অ্যালজেব্রার ?
অ্যালজেব্রার ফরমুলা ছেলেরা মনে রাখে শুনিচি
কিন্তু শেষে গিয়ে অঙ্ক ভুল করে বসে আর নম্বর পায় না ।”
বাবাকে কীই বা বলি !
সত্যিই, এনার অ্যালজেব্রার ফরমুলার লোভে পড়ে
দেশে-দেশে নেতারা কতো অঙ্ক কষলো
কিন্তু শেষে গিয়ে সকলেই ফেল মেরেছে ।
কেন যা সবাই ফেল মারে তা ওই ইসকুলের মতনই ।
সমাধানের আগেই পরীক্ষাশেষের ঘণ্টা বেজে যায় ।
বাবা বললে, “তা বুড়োটাকে দেখতে মন্দ নয়
অনেকটা তোর দাদুর মতন ।”
রূপকথার একশো বছর
কেউ কি ভেবেছিল কখনও ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিয়ে বাংলাভাষী একজন
নেমে আসবে রূপকথা থেকে ? অখ্যাত কবির রোমকূপে হর্ষের ঝড় তুলে
আত্মাভিমানকে তার অনন্তকালের আলো দেবে ! হ্যাঁ, মুজিব বঙ্গবন্ধু
অখ্যাত বাংলাভাষী আমি ও আমার পিতা, আমার বংশধরেরা, চিরকাল
বেঁচে থাকবে আপনার ধ্বনি-দেয়া মর্ত্যলোকের অভূতপূর্ব বিস্ময়ে ।
কেবল আমার বাংশধরেরা নয়, আমার মতন আরো কোটি-কোটি
ভাষাসন্তানেরা বেঁচে থাকবে আপনার অমরত্বে, পৃথিবীর যেখানে থাকুক
তারা, তাদের প্রতিটি উচ্চারণে আপনার নায়কোচিত আত্মবলিদান
সেইসব যুবকের হাতে যারা নিজেরই মায়ের ভাষা বর্জনীয় ভেবে
রূপকথা-বর্ণিত রাক্ষসপুত্রের ভূমিকায় দানবের দেয়া স্বর্ণের বিনিময়ে
ভাবলো আপনাকে ও আপনার বাড়ির লোকেদের গুলিবিদ্ধ করলেই
মৌন হয়ে যাবে জয়ধ্বনি । হয়নি যে তা তো তারা এবং তাদের
দোসরেরা জীবৎকালেই জেনে গেছে । বাংলাভাষা তো ঘাসের মতন
কখনও শুকায় না ; জঙ্গলে আগুন লেগে অলিভ-পোশাক-পরা গাছ
ছাই হয়, কিন্তু সে-আগুন নিভে গেলে ঘাসেরা আবার আসে ফিরে–
যেমনই সে ঘাসেরা হোক, ছোটো-বড়ো-গরিব-বৈভবশালী, দ্রুত
ছোটে তারা জয়ধ্বনি দিতে-দিতে পৃথিবীর ভিজে বা শুকনো মাটিতে–
জানে ওই সবুজ ঘাসেরা আপনার পায়ের ধূলিকণা তাদের অমরত্ব
দিয়ে গেছে । যতোদিন পৃথিবীতে রয়েছে বাংলাভাষী আপনি আছেন
রক্তে সেই সব মানুষের পূর্বপুরুষ হয়ে, আদিবন্ধু বঙ্গভাষী হয়ে
শাশুড়িদের কবিতা
তুবলি তো ? ওর বরটা বোধায় পারত না, ছবছরে
ডিভোর্স দিয়ে এক সায়েবকে বিয়ে করেছে, এখন পোয়াতি বলে
ওর মা-বাপ আমেরিকা গেছে, হাঁদু বিয়ে করেনি, এক নিগ্রো মুটকির
সঙ্গে, ওই যাকে বলে লিভ টুগেদার, মুন্নি আছে প্যারিসে, মাইদেখানো
আর পোঁদ দেখানো পোশাকের ফোটো পাঠায়, কেলোটা এতো মদ খায়
যে ভুঁড়ি ফুলে কুমড়ো, বউটা তো থাইল্যাণ্ডের, টেমপোরারি, ওদের
দেশে অমন হয়, নিউটাউনে তিনঘরা ফ্ল্যাট পড়ে আছে, মা-বাপ
গিয়ে পোস্কার করিয়ে আসে, কাঁচকির তিনটে বিয়েই টিকলো না, শুনছি
আবার বিয়ে করেছে একজন নেড়েকে, ধম্মো বদলায়নি যদিও, আর
পিনু কমিউনিস্ট হয়ে অন্ধ্র না উড়িষায় কাঁধে বন্দুক নিয়ে পুলিশ মেরে
বেড়ায়, পেঁচো আগে বামপন্হী করতো এখন তৃণমূলের ন্যাওটা বলে
ভালোই রোজগারপাতি করছে, সকলেই ভালো আছে গা, এই আমরাই
পড়ে আছে এখেনে, একবার গিসলুম নিউইয়র্কে থাকতে ছেলে-বউয়ের
সঙ্গে থাকতে, দম বন্ধ হবার যোগাড়, ওদের মাছ খাওয়া যায় না আর
গোরু-শুয়োরের মাংস আমাদের বাগবাজারের পাঁঠার মতন নয়
চীনা মেয়ে
বাদুড়খাকি চীনা মেয়ের ঠোঁটেতে তুই চুমু খাবি ?
ওই মেয়ে তো কুকুর বেড়াল ঢোঁড়া সাপের মাংসখাকি !
প্যাঙ্গোলিনের আঁশের গুঁড়োয় চাগিয়ে তোলে অরগ্যাজম !
জেনেশুনে তার ঠোঁটে তুই চুমু খাবি ?
খাবো খাবো খাবো । বুকের হলুদ-লালচে বোঁটায় টুসকি দেবো ।
ওর দাদু যে মাও-জে দঙের লম্বা লাফে শামিল ছিল ।
মাওয়ের মতন ওর দাদুরও গোটাকতক রাখেল ছিল ।
বাবা তো ওর সাম্যবাদী দলের নেতা, অঢেল পুঁজি ।
খাবো খাবো খাবো । স্বাদু ঠোঁটে কামড় দিয়ে চিপকে যাবো ।
অরগ্যাজমের জোয়ার-রসে যা-হবার-তা-হোকগে বলে চুসকি দেবো ।
মানুষের ভাষা
যোনি থেকে অর্ধেক বেরিয়ে রক্তমাখা দেহে
চিৎকার করছে নিজস্বভাষায় । বেরোতে চায় না
ফিরে যেতে চায় ; জন্মাবার সময়কে মানবে না
বাচ্চাটার মা ওকে দুহাতে ধরে বের করতে চাইলেও
পারছে না ; দাঁড়িয়ে জন্ম দিচ্ছে ; পা বেয়ে রক্ত টুপটাপ
ভিড় জমে গেছে ; সকলেই বাচ্চাটার ভাষা বুঝতে চায়
প্রত্যাখ্যানের ভাষা, জরায়ুতে ফেরত যাবার ভাষা
সবাই ওই ভাষা শিখে নিয়ে পুনরায় ফিরে যেতে চায়
আনন্দ
দেখতেই পাচ্ছেন, আমরা দুই অশীতিপর হাসিমুখে বসে আছি
আমরাও সেটাই দেখছি ।আপনারা দেখতে পাচ্ছেন না
আমাদের কাঁধ, হাঁটু, কোমরের ব্যথা
কাজের বউ আসছে না, যদিও মাইনে দিতে হয়েছে যাতে না ছেড়ে যায়
যদিবা বাসন মাজি, এমনকী গান গেয়ে, মেরে পিয়া গয়ে রংগুন
ওঁহাসে কিয়া হ্যায় টেলিফুন, তুমহারি ইয়াদ সতাতি হ্যায়
কিংবা কভি আর কভি পার লাগা তিরে নজর
সঁইয়া ঘায়ল কিয়া হ্যায় তুনে মেরা জিগর, কিংবা
জাদুগর সঁইয়া ছোড়ো মোরি বাঁইয়া আবি ঘরি জানে দো
বুড়ি বলে, ভাগ্নে জামায়ের হাতে হাজা হয়ে গেছে
স্যানিটাইজার আর বাসন মাজায় যাও টিভি দ্যাখো
আমি বলি শশীর সুন্দরী বউ অতো বড়ো ফ্ল্যাটের কাজ তো
একাই সামলায়, ওদের দশহাজারি কামওয়ালি চলে গেছে
অগত্যা ফুলঝাড়ু দেবার কাজটা নিয়েছি আর কী আশ্চর্য
এতো পাকাচুল মেঝেতে পড়ে থাকে তা তো বলত না ঝি
ন্যাতাটা গোড়ালি দিয়ে মেঝের ওপর ঘষি, মাটিতে বসতে পারি না যে
বুড়ি রিলাকসিল বা ব্যথার তেল মাখিয়ে দ্যায়, আমি ততোক্ষণ
গান গাই এ গুলবদন এ গুলবদন, ফুলোঁ কি মহক, কাঁটো কি চুভন
তুঝে দেখ কে কহতা হ্যায় মেরা মন, কহিঁ আজ কিসিসে পেয়ার
না হো জায়ে । দেখতে পাচ্ছেন তো আমরা দুই অশীতিপর কীরকম
মজাসসে আছি
ম্লেচ্ছকুমারীকে
এ নাও অস্তিত্ব দিচ্ছি দাবি অনুযায়ী
হিব্রু শাস্ত্র মতে চামড়া ছাড়িয়ে টাইগ্রিসের জলে ধুয়ে নেয়া
উলটো টাঙানো আমি ঝুলছি স্টেনলেস হুকে
করোটি ফাটিয়ে মন নিয়ে নাও
হৃদযন্ত্র থেকে ভালভ উপড়ে হৃদয়ও নাও
জিভ ছিঁড়ে নিয়ে নাও প্রেমের কথাগুলো যা বলেছি এতোকাল
লিঙ্গ কেটে নিয়ে নাও প্রেমের কোটি-কোটি কীট
এ আমার শব নয় ; এ হলো পার্থিব প্রস্তাব
বিষাদ
ঠিক কীভাবে যে বিষাদ প্রকাশ করব ভেবে পাচ্ছি না
বিষাদে ভুগছি, বুঝতে পারছি না অন্ত্যমিল দেবো নাকি
মাত্রা গুনে-গুনে লিখতে লিখতে বিষাদকে আনবো ডেকে
পয়ার হলে ভালো হতো বিনয়ের অতিপ্রিয় মিষ্টি পয়ার
তা কি বিষাদে চলবে ? অক্ষরবৃত্ত নাকি মাত্রাবৃত্ত, কোনটা
বিষাদে খাপ খায় ? তার চেয়ে বিষাদকে পুষে রাখি, কেউ
কবিতা চাইলে, রবীন্দ্রনাথের আলখাল্লা পরিয়ে দিয়ে দেবো !
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন