মলয় রায়চৌধুরীর আধুনিক ও অধুনান্তিক কবিতা
কেন লিখি
কেন লিখি জানতে পারলে
লেখাই ছেড়ে দিতুম ।
কেউ কি জানতে পারে
সে কেন উন্মাদ ?
লোভ
হে দেবী সর্বভূতেষু আমি চাই না কিছুই
তবু দৃষ্টিদানের আগে এইটুকু অভিশাপ দিও
মাথা নামিয়ে কোনোদিন যদি নিই উত্তরীয়
বলির খাঁড়া দিয়ে ধড় থেকে মুণ্ডু আলাদা করে দিও
তাতে যেন তোমারই রক্তরোষ-চোখ আঁকা থাকে
পুরস্কার নিতে যদি কোনোদিন বাড়িয়ে দিই হাত
ছুটন্ত ট্রাকে বেঁধে আমাকে ঘসটানি খেতে দিও
তাতে যেন তোমারই রক্তরোষ-চোখ আঁকা থাকে
রক্তানুরঞ্জন
দুই দল উলঙ্গ যুবতী আমার কাটা মাথা নিয়ে খেলতে নেমেছে
রক্তের জলাশয়ে - এক-একটা দলে চারজন ড্রাইভার, একজন
ফ্লোটার ব্যাক একজন ফ্লোটার ও একজন গোলরক্ষক খেলছে
রক্তানুরঞ্জন গ্যালারিতে ঠাশা পুরুষ দর্শকদের ওসকাতে,
নারীরা এই খেলায় অংশ নিতে পারে দর্শকাসনে বসতে পারে না
যখন ছুঁড়ছে মাথা ওপরে হাওয়ায় দেখছি প্রতিটি দর্শকই আমি
বিভিন্ন বয়সের আমি বালক কিশোর ছোকরা যুবক প্রৌঢ় বুড়ো
চিৎকারে চাঙ্গা করতে চাইছে এই বা ওই পক্ষের যুবতীদলকে
আমার যাতনার কথা ভাবছে না দর্শক আর খেলুড়ে মেয়েরা
যে রক্তে খেলতে নেমেছে তাও আমার দেহ থেকে বের করা
কখনও ভাবিনি আমার শরীরে এরকম আগুনের রক্ত আছে
কেউকেউ তালুতে রক্ত নিয়ে পান করছে যাতে কাহিল না হয়
কয়েকজন সশব্দে চুমু খাচ্ছে আমার মাথাকে দুই হাতে নিয়ে
খোলা বুকে চেপে ধরছে যাতে আমি প্রণয়ের দুধ খেতে পারি
এক দলের যুবতীদের ক্রিম-দুধ নোনতা আরেক দলের মিষ্টি
দর্শকরা আমার হাজার নাম ধরে চেঁচাচ্ছে ‘দুর্যোধন সেঁটে যা,
মেঘনাদ আইসক্রিম চেটে নে, গালে চুসকি মার রে মারীচ,
শম্ভু-নিশম্ভু কায়দায় কামড়ে ধর, চন্দ্রবোড়া দাঁত বসিয়ে দে
হিরণ্যাক্ষ, না পারলে হিরণ্যকশিপুর মতন মুখে জিভ ঢোকা
কী রে, হাত থেকে সহজে বেরোসনি, কষে খোঁপা কামড়ে ধর,
হ্যাঁ, একবার নোনতা আর একবার মিষ্টি স্বাদ নিয়ে খেলে যা
দর্শকাসনে বসে আমিগুলো আমার মাথাকে সমর্থন যোগাচ্ছে
এটা আজকের ব্যাপার নয় হাজার হাজার বছর চলছে এ-খেলা
প্রেমিকার দুধ
আমি কখনো কোনো প্রেমিকার স্তনে দাঁত বসাইনি
প্রথম প্রেমিকারও নয়, যার
বুকের দুঃখি পরাগরেণু আজও গালে লেগে আছে
মায়ের তো দুধই হতো না অতিফর্সা বুকে, তাই
ছোড়দি কোলে করে নিয়ে যেতো
পাড়ার বউদের কাছে ; কাহার কুর্মি ডোম দুসাধ চামার
এমনকি দুস্হ মুসলমাননির এঁদো ভাঙাচোরা ঘরে
মায়ের স্তনে কিংবা সেইসব বউদের মাইয়েতে দাঁত
বসালে নির্ঘাৎ পাছায় চপেটা খেতুম--
তবে আজ ঘন দুধ খাই, সবুজ রক্তাভ নীল
শাড়িপরা যুবতীর মাইথেকে
টিপে টিপে দুই-বেলা দুধ বের করি
শেষ ওব্দি শাড়িও খুলে ফেলে যেটুকু দুধ বাঁচে
তাও বের করে নিই ঘুম থেকে উঠে আর ঘুমোতে যাবার আগে
দাঁতকে ঝকঝকে করে তোলে ওনাদের দুধ
সেই বয়ঃসন্ধির পর, যখন ভস্ম থেকে ছাড়া পেয়ে
টুথপেস্ট টিউবের মাই থেকে
প্রতিদিন টিপে-টিপে দুধ বের করি
অবন্তিকার শতনাম
আমি অবন্তিকার দুটো মাইয়ের নাম দিয়েছি কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়া…বাঁদিকেরটা আদর করলেই গোলাপি হয়ে যায়…ডানদিকেরটা আদর করলেই হলদেটে রঙ ধরে…বাঁদিকের বোঁটার নাম করেছি কুন্দনন্দিনী…বঙ্কিমের বিষবৃক্ষ তখন ও পড়ছিল চিৎ শুয়ে…ডানদিকের বোঁটার নাম ও নিজেই রেখেছে কর্নেল নীলাদ্রি সরকার যে লোকটা সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের ডিটেকটিভ…ডিটেকটিভ বই পড়তে ওর জুড়ি নেই…ছুঁলেই কাঁটা দিয়ে ওঠে তাই…যোগেন চৌধুরীর আঁকা ঝোলা মাই ওর পছন্দ নয়…প্রকাশ কর্মকারের আঁকা কালো কুচকুচে মাই ওর পছন্দ নয়…পেইনটিঙের নাম রাখা গেল না…যোনির কি নাম রাখবো চিন্তা করছিলুম…অবন্তিকা চেঁচিয়ে উঠলো পিকাসো পিকাসো পিকাসো…পিকাসোর যোনির কোনো আদল-আদরা নেই…কখনও বাদামি চুল কখনও কালো কখনও কিউবিক রহস্য…তাহলে ভগাঙ্কুরের…ও বলল সেটা আবার কি জিনিস…ওর হাত দিয়ে ছুঁইয়ে দিতে বলল অমঅমঅমঅম কি দেয়া যায় বলতো…পান্তুয়া চলবে…ধ্যুৎ…রস পানেই পান্তুয়া নাকি আরও কতো রকম মিষ্টি হয়…ছানার পায়েস…নারকেল নাড়ু…রসমালাই…নকশি পিঠা…রাজভোগ…লবঙ্গলতিকা…হলদিরামে ভালো লবঙ্গলতিকা পাওয়া যায়…আমি বললুম স্বাদ কিছুটা নোনতা…ও বলল দুর ছাই আমি নিজে টেস্ট করেছি নাকি যাকগে বাদ দে…হ্যাঁ…এগোই…পাছার কি দুটো নাম হবে…ডিসাইড কর…ডিসাইড কর…তুই কর আমি তো দেখতে পাচ্ছি না…না না ফের ফের…লাবিয়া নোনতা হলেও ওটার নাম দিলুম গোলাপসুন্দরী…পারফেক্ট হয়েছে…তাহলে পাছার একটাই নাম দিই…নরম নরম কোনো নাম…পাসওয়র্ড…ঠিক…এর নাম দেয়া যাক পাসওয়র্ড…ধ্যাৎ…পুরো রোমান্টিক আবহাওয়া ফর্দাফাঁই করে দিচ্ছিস……গ্যাস পাস হয় বলে পাসইয়র্ড হতে যাবে কেন…ছিঃ…তাহলে এর নাম হোক গরমের ছুটি…গরমে বেশ ভাল্লাগে পাউডার মাখিয়ে পাছায় হাত বোলাতে…ওক্কে…তারপর…ঘুমোবো কখন…বাঁ উরুর নাম দিই ককেশিয়া…ডান উরুর নাম দিই লিথুয়ানিয়া…রাশিয়ানদের উরু দারুণ হয় বিশেষ করে শীতকালে যখন ওরা চান করে না…ভোদকা খেয়ে ভরভরিয়ে প্রতিটি রোমকুপ দিয়ে গন্ধ ছাড়ে…শুয়েছিস নাকি কখনও রাশিয়ান মেয়ের সঙ্গে…না কল্পনার যুবতীদের ইচ্ছেমতন হ্যাণ্ডল করা যায়…ছাড় ছাড়…এগো…মানে নামতে থাক…তাড়াতাড়ি কর নইলে গাধার দুলাত্তি দেবো…তা্হলে পায়ের নাম রাখছি জিরাফ…বামপন্হী জিরাফ আর দক্ষিণপন্হী জিরাফ…এবার ওপরে আয়,,,মুখে…ঠোঁট…ঠোঁটের নাম দিই আফ্রিকান সাফারি…আচ্ছা…ঠোঁটের নাম আফীকান সাফারি…ব্লোজবে খণ্ড খণ্ড মাংস ছিঁড়ে খাবো…খাস…থুতনিতে সেকেন্ড চিন…পিৎজা কোক খাওয়া থামা…থুতনির নাম দিই গোলাপজাম…কেন কেন কেন…পরে বলব…এখন দুচোখের নামদিই…শতনাম হলো না তো…চোখ বোজ চোখ বোজ…তুই তো একশোসমগ্র আবার শতনামের কী দরকার…তাহলে আয়…আজ তুই ওপরে না নিচে ?
প্রেমিকা চিনবো কেমন করে ?
পিঠের যেখানে আমার হাত পৌঁছোয় না
সেখানটা চুলকে আমাকে তৃপ্তি দেবে
যদি নখ খাবার অভ্যাস থাকে
শৈশবে বাবার সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে
কুড়িয়ে আনা ঝিনুক দিয়ে চুলকে দেবে
কিন্তু যৌনতা জাগাবে না
আমিও একই কাজ করব
অবশ্য আমি নখ খাই না চুমু খাই
আদিখ্যেতা
মৃত্যু নিয়ে আমার কোনো টেঁটিয়াপনা নেই--
হাতকড়া-দড়ি নিয়ে এসে বলবে, ‘টাইম আপ, চল’
আমি রেডি, যখনই যেতে বলবে ওর সঙ্গে, আমি রেডি--
তবে হ্যাঁ, ধরে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালের বিছানায় আটকে
দেয়া চলবে না ; নাকে-মুখে নানা-কিসিমের নল গুঁজে
শুয়ে থাকতে পারব না, টাইম হয়েছে, ব্যাস, চলো
নাচতে গাইতে চলো হিপহপ সুরে লালন হাছন রাজা
যার গান ইচ্ছে চিড়ধরা গলা হেঁকে গাও, তবে হ্যাঁ,
বলো হরি হরি বোল চেল্লায় যদি কেউ-কেউ
তাদেরও নাচতে-নাচতে গাইতে-গাইতে চেল্লাতে হবে--
নয়তো ফুটে পড়ো, নিজের মড়াকে হরিবোল দিও
আমার ভেতরে নিমাই সন্যাসী চোর-পুলিশ খেলছিল
ভারি সোনার মোড়কে আমার লাশ, সে-ই আমার সখা
আমার মুখের সোনালী মুখোশ খোলা হয়, লিনেনে প্যাঁচানো
নুন-মাখানো পা থেকে তিন হাজার বছরের আটক নাচগুলো
শতশত নদী হয়ে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো জগতসংসারে
নদীগুলোকে উড়তে শিখিয়েছিলুম বাষ্প হয়ে ভাসতে
ওরা তো নাকে ছেঁদা করে ঘিলু বের করে নিয়েছিল মরে যাবার পর
ফুসফুস নাড়িভুঁড়ি পাকস্হলী বৃক্ক কিচ্ছু নেই আমি একেবারে ফাঁপা
না, ঠিক ফাঁপা নয়, করোটি থেকে পায়ের ডগা পর্যন্ত বাতাসে ভরপুর
মৃত্যুর আরামে শুয়ে আছি আর সময়ের নদী তৈরি করছি
অথচ আমি আমার মধ্যে নেই নিয়ে গেছে নদীদের ডাকাতদল
আমি খুঁজে মরছি তাদের হেই থামো হেই থামো থামো থামো
বিড়ালের রঙ
ঠিকই চিনেছি ; এই চিনা যুবতীই বাদুড়ের মাংস খেয়ে
পৃথিবীকে অতিমারীর কবরে ঢেকলেছে । দৌড়ে
জাপটে ধরি ওকে । কামড়ে ধরি ঠোঁট । কে জানে
বাদুড়ের গন্ধ কেমন কেননা মেয়েটার মুখ থেকে
যে গন্ধ পাচ্ছিলুম তা তো সোঁদা মিষ্টি সঙ্গমের ডাক--
আমার গলার মধ্যে জিভটা গলিয়ে দেয় আর সেটা
শঙ্খচূড় হয়ে নেমে যেতে থাকে তলপেট ছাড়িয়ে তলায়--
জাপটে নিয়ে আমি ওর যোনিকে শক্ত করে ধরি, আর
তখনই যোনির ভেতর থেকে বাইরে বেরিয়ে ওড়ে
চব্বিশ নদী আঠারো পাহাড় জুড়ে ঝাঁক ঝাঁক
লাল রঙের নিশাচর ডানার বাদুড়, লাল টকটকে
একটা বাদুড়কে ধরে দেখি, আরে, বাদুড় তো নয়,
এটা তো মাও জে দঙের রেড বুক ! এখন বাদুড় !
যুবতীর ফিসফিসে কথা শুনে ইশারাটা টের পাই :
‘তোমার বিড়াল কালো বা সাদা যাই হোক ,
আসল কথা হলো ইঁদুর মারতে পারে কিনা৷'
রাজনৈতিক ভাইরাস
হাঁটছে, হেঁটেই চলেছে, দিন-রাত, রাত-দিন, কোথায় ছিল এতোদিন
এইসব লোকগুলো, শিশুকোলে কাঁধে-খোকা বা খুকু, মানুষ-মানুষীরা
কোশের পর কোশ হাঁটছে বাড়ির দিকে ভারতবর্ষের গাঁ-শহর চষে
এদের জন্য কই কখনও গেটসভা মোড়সভা মিটিঙ-মিছিল-রেলি
হতে তো দেখিনি মাঠ-ময়দানে গর্জে ওঠা লাউডস্পিকার-সমাবেশে
এদের নেতা হয় না দলবাজি করেনা ছোকরা বা বুড়ো ঝাণ্ডাধারিরা
তাই এরা হাঁটছে তো হাঁটছেই খালি পেটে হয়তো বা হাজার মাইল
মাস্ক পরা দরকার মনে হয়নি ; কীই বা হবে পরে যদি না জীবন্ত ফেরে
হেঁটে-হেঁটে নিজেদের বাড়ি ? পরিযায়ী বলতে কে জানে কী বোঝায় !
খালিপেটে নিষ্কপর্দক হয়ে গেলে সপরিবারে এমন বেপরোয়া হওয়া যায় ?
করোনাভাইরাস এসে দেখালো কীরকম মানুষজন্ম কাটাতে হচ্ছে ও হয়।
কমিউনিজমে দীক্ষা
মাথার ওপরে মশার গুলতানি নিয়ে স্কুলের মাঠে আমরা আট সহপাঠী
তরুণ শুরের দাদুর দাদুরা কোমপানি বাহাদুরের শুঁড়ি ছিল
সেই মোহরের জোরে ওর বাবা-কাকারা চাকরি করেনি কখনও
মলমের চোঙ টিপে দুধ বের করে বুরুশ দিয়ে দাঁত মাজে
তরুণদের কুকুরের নাম কুকুর, ওই নামে ল্যাজ দোলায়
ওর বোতামবুকো বোনকে বলেছি ফ্রক ছেড়ে এবার শাড়ি ধর
তরুণদের বাড়িতে চকচকে সোভিয়েত দেশ পত্রিকা আসে
তরুণকে জিগ্যেস করতে বলেছিল কমিউনিস্ট হয়ে যা ফ্রি পাবি
পড়ার টেবিলের সামনে দেয়ালে রুশ মেয়েদের উরু কেটে সেঁটেছে
অ্যালজেব্রা ট্রিগনোমেট্রি ফটাফট হয়ে যায়, চকাচক, জাস্ট টুসকি
আমাদের মধ্যে ও-ই বাড়ি থেকে হাত খরচ পায়, খাওয়ায়
একটা বাক্সঠেলা গাড়ি যাচ্ছিল, তরুণ সেইদিকে দৌড়িয়ে বলল
দাঁড়া আনছি, কাঠিতে জড়ানো মালাই, কুলফি কিংবা র্যাঁদামারা
রঙিন বরফকুচি নয়, দিল তররররররর হয়ে যাবে চাটতে চাটতে
কিনে এনে ঘাসে বসে মোড়ক খুলে পুরোটা মুখে ঢুকিয়ে চাটলো
এক -এক করে আমরা সবাই অমনভাবে তরররর-হৃদয়ে চাটলুম
ঘুরে তরুণের কাছে পৌঁছোতে ও জিভ পাকিয়ে ডাঁটি চুষলো, বলল
দেখলি তো, ভদ্দরলোকের পোলা থেকে কমিউনিস্ট করলুম তোদের
বন্ধুকুঠ
‘শেষবার দেখা করতে এলাম, আশ্রমে যাবার আগে’
বন্ধুর এ-কথাগুলো শুনে আলো জ্বালতেই দেখি
বাঞ্চোতের সারা গা-মুখ-হাতে শুকনো কুষ্ঠরোগ--
খসে গেছে দুর্দান্ত কবিতা লেখবার সবকটা আঙুল
এর আগে ভুগেছিল সিফিলিস-গনোরিয়া রোগে
‘বসতে বলবি না ? চলে যাচ্ছি, খাওয়াবি তো কিছু?’
আপ্যায়নের পর যখন ও চলে গেল ফেলে দিতে হলো
ডাস্টবিনে নিয়ে গিয়ে স্টিলের গেলাস-বাটি-থালা
আর আমার প্রিয় ওর লেখা সবকটা কবিতার বই
দাম্পত্য
তখন আমরাও নোংরা এমনকী অশ্লীল কথাবার্তা
করেছি বলাবলি, হেসেছি রাস্তার মাঝে কেননা আমাদের
ভাষা কেউই তো বুঝতো না । তখন বুড়ির ঢেউ-চুল
কোমর পর্যন্ত সুগন্ধ মাখানো, মুখ গুঁজে ঘুমোতুম তাতে--
চোখ দুটো, বুকও বড়ো-বড়ো, যা দেখে বড়দি বলেছিল
আমরা এরকম কনে তোর জন্যে খুঁজেই পেতুম না
তার আগে পীরিতের কতো খেল দেখিয়েছিলিস বাবা
তুই ঠিক ঈগলের মতো তুলে আনলি সাবর্ণ চৌধুরীর বাড়ি
তখন বুড়ির জামদানি আঁচল উড়তো ময়ূরপঙ্খী হয়ে
মোজেক মেঝেয় ব্যালেরিনা হিল তুলতো সাম্বা নাচের ছন্দ।
একান্ন বছরে বুড়ির স্মৃতি থেকে হারিয়ে গিয়েছে সেসব ;
মাঝে-মাঝে বলে তোমার গোঁফও ছিল রাজকাপুরের।
বুড়ির পছন্দ মর্ত্যের হানি বাফনা আর ইন্দ্রজিৎ বোস
আমি সুচিত্রা সেন নার্গিস মধুবালাকে আজও ভালোবাসি--
বুড়ো বয়সে পৌঁছে বুড়ি বলে এটাই দাম্পত্য-জীবন
যৌবনে সংসারের খাইখরচ-ঝক্কি-ঝামেলায় টেরই পাইনি
দাম্পত্যের শেষ পর্বে শোক-দুঃখ-অপচয়ও আনন্দ আনে।
তোমার তামাটে পা
তোমার পায়ের দিকে চেয়ে থাকি, একদৃষ্টে সম্ভব নয় চেয়ে থাকা
কী বলে এই দৃশ্য ও অদৃশ্যের মাঝে দ্রুত ঝরোয়ার তামাটে গোড়ালিকে ?
পূরবীকল্যাণ, কামেশ্বরী, চারুকোষ, জনসন্মোহিনী আঙুলগুলোকে ?
পায়ের অবিস্মরণীয় স্মৃতিশক্তি আর কারোর দেখিনি কখনো
মনে হয় রেক্যুইয়েমের ইঙ্গিতবাহী তামাটে ঘনশ্যামা মন্দ্র সপ্তক
অধচ শব্দ নেই, বাতাসও নিথর, কেবল তোমার
দুটি তামাটে পায়ের স্পর্শে পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরেই চলেছে
সঙ্গী
কয়েকগাছা পাকাচুল-টাকমাথায় তোমার উষ্ণ তালু বুলিয়ে দিয়েছিলে
জীবনে প্রথম ও শেষবার ভালোবেসে নিয়েছিলে লোকটাকে
মারা গিয়ে তোমার স্বামী হয়ে-ওঠা দেহটাকে ইনসিনেটারে নিয়ে গেলে
ছেলে তো বিদেশে -- ডেকে পাঠিয়েছো, শ্রাদ্ধাদি আর
উত্তরাধিকারের আইনি কাজের জন্য ।
সঙ্গমের সময়ে চোখ বুজে থাকতে রোজ ; জানতে এ ওনার নিছক রুটিন
ঘুমোবার মাংস-ট্যাবলেট । অন্য নারীর গন্ধ পেতে ওঁর দেহে--
যাঁকে উনি সারাটা জীবন ভালোবাসলেন, তোমাকে লুকিয়ে--
উনিও জানতেন তুমি জানো । ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে তুমি নেই
নমিনিও তুমি নও, বাড়ির দলিলে তুমি নেই
ওনার অস্তিত্বে তুমি কোথাও ছিলে না ; সঙ্গী হতে দেয়নি লোকটা--
তুমি একা-একা তোমার কবিতা-খাতাকে স্বামী করে তুলেছিলে।
ভাগ্যিস কবিতায় আক্রান্ত হয়েছিলে ; নয়তো আজীবন
সঙ্গী-বর্জিত থেকে যেতে, একা, একা, একা, এক্কেবারে একা…
গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা
আমি তো বলতে গেলে দাঁত-নখের চাষ ছেড়ে সাজলুম প্লাইকাঠের নেতা
ছদ্মবেশ ধরলে দেখি আসল চেহারাখানা বেরিয়ে পড়েছে রে
স্ববিরোধিতা ছাড়া কি আর অন্য কোনো মৌলিক কাজ আছে ? বল ?
.
আমি তো বলতে গেলে জরাজীর্ণ আকাশ জুড়ে ঢিললা-চিল বুড়ো
ভান করার ভান করি আর তা জীবন নামে চালাই
সাঁতারু-খেলানো জলে নৌকোর ছইয়ে সংসার পেতেছি
.
আমি তো বলতে গেলে পাষাণ-রিদয় পাথর ভেঙে দেখি
বালি-ঝুরঝুর চাউনি মেলে কাচিমখেকো বেতো রুগির দল
জলে-ডোবা পাঙাশ মেয়ের ঠোঁটে ডানাউড়াল হাসি খুঁজছে
.
আমি তো বলতে গেলে ঘৃতাহুতির ভেজাল ধোঁয়ায় কেঁদে
সত্য বানাই মৃত্যু বানাই হুর্ধ-অধ গোলচক্কোর বানাই
সাপটা ছিল নিজের গর্তে হাত ঢুকিয়ে তাকেও তো ভুল বোঝাই
মৃত্যু - একটি আভাঁগার্দ কবিতা
মৃত্যু কি ক্রিয়া ?
মৃত্যু কি ক্রিয়াপদ ?
মৃত্যু কি বর্তমানকাল ?
মৃত্যু কি অতীতকাল ?
মৃত্যু কি বিশেষণ ?
মৃত্যু কি বিশেষ্য ?
মৃত্যুর সংজ্ঞা আছে ?
মৃত্যুর মুহূর্তই কি মৃত্যু ?
মস্তিষ্কের মৃত্যুই কি মৃত্যু ?
হৃৎপিণ্ডের মৃত্যুই কি মৃত্যু ?
উত্তর রয়েছে প্রতিটি মৃতের কাছে !
স্বর্গ
বেগম-বাঁদি-কেনাদাসীদের যোনিতে মুখ রেখে
লালাপানে চুর বাদশা জাহাঙ্গীর রোজ রাতে বলতেন:
“অগর ফিরদৌস বা রয়-ই-জমিন অস্ত ,
হামিন অস্ত-উ-হামিন অস্ত-উ-হামিন অস্ত”
মানে, স্বর্গ যদি কোথাও থাকে তাহলে তা
এইমাংসে এইরসে এইগন্ধে, আর কোথাও নয়–
আমিও সেকথা মানি বাদশা নুরুদ্দিন ।
অভিধার তল্পিবাহক
আমি যে-কিনা অভিধার তল্পিবাহক
জলের তলায় মাকড়জাল-খোঁপা খোলা তরুণীর
হাতের সঙ্গে হাতের জংলাহাটি গামছাবাঁধা বিয়ের পর
বলেছিলুম, ‘শক্ত করে ধরে রাখুন, নইলে পালাবো’
আমি যে-কিনা অভিধার তল্পিবাহক
খুচরো ঝনঝনে পকেটে হাড়প্যাংলা যৌবন নিয়ে
কাগজের শেকলবাঁধা ঠ্যাঙে সবে তখন না-লেখা ইতিহাসে ঢুকছি
লিপ্সটিক আঁকা ক্ষতের উপশম খুঁজেখুঁজে জেরবার
অথচ রক্তের ফিচেল আগুনে চলছে চড়ুইদের গর্ত ভাগাভাগির লড়াই
আমি যে-কিনা অভিধার তল্পিবাহক
যে-সব ভবঘুরে হাসিগুলো এখনও ঠোঁট খুঁজে পায়নি
তারা মৌসুমি দুঃস্বপ্নে ঝড়ের ডানায় চেপে
অজ্ঞান করার ওষুধে-ভেজা অ্যাণ্টিক শালজঙ্গলে
বাতাস থেকে প্রতিধ্বনিকে আলাদা করে বেঁধে দিলে আমার কপালে
আমি যে-কিনা অভিধার তল্পিবাহক
ভালবাসা যখন সবায়ের শ্বাস-লেনদেনের সান্ধ্য রুটিনে গিয়ে ঠেকেছে
দেখি ইঁদুরকে শিশিরের ঝোলে ভিজিয়ে তারিয়ে খাচ্ছে লক্ষ্মীপেঁচা
উৎসবের হো-হল্লায় তখন ছাগলটা ধর্মান্তরিত হয়ে গেল
লাল টকটকে অন্ধকারে কানা হয়ে গেল প্রতিটি গলি
তখন বিশ্বকর্মা ঠাকুরের লাশের খড়ে তৈরি বাবুয়ের বাসা থেকে
নানারকম অবসান ঝরে-ঝরে ঢেকে ফেলছিল আমাদের
রত্নদীপা ম্যাম-এর জ্বর
জোড়াসাঁকোয় গিয়ে রত্নদীপা ম্যাম-এর
জ্বরের খবরটা গুর্দেওকে দিতে
গুর্দেও জানতে চাইলেন :
‘মনের জ্বর না হরমোনের জ্বর’
তারপর বললেন, ‘আমি আর কী করব বাপু
আমার বাপ মনের জ্বর পুড়িয়ে হাপিশ করেছিলেন
আর আমি দাদুর হরমোনের জ্বর পুড়িয়ে হাপিশ করেছি,
রত্নদীপাকে বল, মনের জ্বর আর হরমোনের জ্বর
দুটোই যেন ওর বর সারিয়ে দিয়ে কলকাতায় পাঠায়
কলকাতা শহরটার বদনাম আছে জ্বরের ব্যাপারে
সবাই কোনো-না-কোনো জ্বরে ভোগে ।’
আমি বললুম, জী গুর্দেও । এটা কিন্তু কবিতা নয় ।
জাস্ট এ পোয়েম অ্যাবাউট লাভিং সামবডিজ ওয়াইফ’ ।
দে গোরুর গা ধুইয়ে
আররে ইসলামভাই ---
আদাব । প্রণাম । সৎশ্রী আকাল। গুড ডে ।
বোমা ও বউমা-শাসিত ভূঁয়ে পা ছড়িয়ে দিব্বি শুয়ে আছো ।
লকলকে অন্ধকারে । এ এক চমৎকম্মো । কোনো দিকে দিক নেই ।
ন্যুব্জ লোচ্চার ভিড়ে । মণীষাজর্জর ঘোঁটঘটকের আলজিভবিহীন গোরে ।
বা হয়তো বহু আলজিভ নিয়ে । খালিপিলি ।
ইসলামভাই । বোবার গুষ্টি ছাড়া আর কেউ হলপ করে না ।
চিতশোয়া আছো বেশ। ইলশেকোমর ললনারা তোমার গোর ঘিরে গান গায় ।
কী গান ? না, ‘অর্থালংকার দাও ভঁয়সামর্দিনী।’
রাধাক বুলিল ঢপকথা । ঢপের আকাল নেই এপারে-ওপারে ।
দেখা আর হল কী তবুও ? ঠ্যাঙের জ্যামিতিনাট্য ? ভেনিশীয় অন্ধ জানালা ?
আররে ইসলামভাই---
মধু হেম রবি দ্বিজু সতেদের ছেড়ে তুমি কবরে সিংহাসন পেলে!
ভালোই তো ! লুচ্চাতিলুচ্চারা আছে জমোর ওপরে । ফংগবেনে । টেলিসুন্দুরীর গ্যাঞ্জামে ।
বুভুক্ষুদের কুরে-কুরে খেলো ওরা । শিবের জটায় দ্যাখো মরাসোঁতা ধারা ।
ভেজালকান্তিদের পেপিগান । করতালি-কুড়ানিয়া উচাটন । বাতেলানন্দিত ।
জেনে রাখো : ‘অশনিসংকেত বলতে কিছু বাকি নেই।’
ষাঁড়াষাঁড়ি বৃংহণে সবায়েরকান কালা । চুল্লুচনমনে আলো । দুদেঁড়ে বিন্দাস ।
ভুতুড়ে পাঁকের গর্ত ঠ্যাঙ ধরে টানে । কিন্তু উপায় নেই । কী করি ? কী করি ?
কী করে বোঝোনি ইসলামভাই--
বীণার আগুনে তুমি নিজেকে পোড়াবে ! ঘিরে ফেলবে বাকশেয়ালেরা ।
গয়ংগচ্ছতি যুগে ? বোবা স্বরবিতানের চিকনিচিজ লাফড়া-মথিত কালে ?
বুঝলে ইসলামভাই । সবাই বিন্দাস আছে । আকখা ভারতে ।
দুর্গম গিরি কান্তার মরু দু-স্তর ভোটাভুটি । কবিতাও । বোলে তো ছক্কাস !
অবশ্য একটা ভালো । ধন্য হবার জন্য এটুকু বেঁচেছে । তা-ও মন্দ কী !
তোমার গোরের দেশ থেকে তিন তালাকের সস্তা ঝিরা এপারে আসছে দলে-দলে।
ভর্তুকির জন্য শুক্রিয়া ।
আদাব ইসলামভাই । প্রণাম । সৎশ্রী আকাল । গুড ডে ।
বাসন মাজা
রবীন্দ্রনাথ, আপনি কখনও বাসন মাজেননি সেটা জানি
কেননা আপনি তো গুরুদেব যাঁরা বল্মীকের ভেতরে থাকেন
বুদ্ধদেব বসু মহাশয়, রান্নাপটু, উনিও মেজেছেন কিনা সন্দেহ
জীবনানন্দ বউকে একই সঙ্গে ভালো ও খারাপ বাসতেন
ডায়েরিতে আইনস্টাইনি ফরমুলায় বলেননি বাসন মাজার কথা
এবং বিষ্ণু দে, অমিয় চক্রবর্তী, সুধীন দত্তেরা জানি না জানতেন কিনা
কাজের মেমরা এসে কোথায় বাসন মাজেন ! অলোকরঞ্জন থাকেন
অর্ধেক বিদেশে আর বাকি হাফ দেশে ; আলোক সরকারও
হয়তো জানতেন না বাজারে এসে গেছে বাসন মাজাকে কবিতার চেয়ে
সহজ করার জন্য ঝুরোসাবান তারের নানান জালিকা ।
মহিলা ও পুরুষ কবিদের এটাই তফাত — অনেকে জানে না ।
আমি আর দাদা শৈশব থেকে শিখেছি বাসন মাজার কারিকুরি
এখন তা কাজে দিচ্ছে ; বুড়ি তো ঝুঁকতে পারে না, আমি পারি
এই বয়সেও রোজই বাসন মাজি ফুলঝাড়ু দিই বুঝলেন আলবেয়ার ক্যামু
গারসিয়া মার্কেজ — প্লেগ নয়, করোনা ভাইরাসের দিনে বুড়ো-বুড়ি প্রেম !
পোস্টমডার্ন কবিয়ালি
সত্যি বলতে কী টুংটাং বাতাসের
ছায়া দিয়ে তৈরি গরম-গরম ফুলকো প্রাসাদে
ছলকে-ওঠা রোদ্দুরে তাকিয়ে থাকি, তবু
কেন যে দেখতে পাই না তা বিশদ লেখা ছিল
অর্শ সারাবার হ্যাণ্ডবিলের তুলতুলে ডানায়
যেগুলো হাতবদল-করা যাত্রার পোস্টকার্ডের কায়দায়
গাড়িগুলোকে পাশ কাটিয়ে-যাওয়া রাস্তায়
এমনভাবে পড়েছিল যেন এক বেহেড বরযাত্রী
যার কথা বরের বাবা বেমালুম ভুলে গেছেন
অথচ এমন তো আর নয় যে নীল জলের
সাঁতারু-মেয়েদের অতল থেকে জাপ্টে ধরার
বহুদিনের স্বপ্ন বরের মেসোর ছিল না
যাঁর তরুণ বয়সের সিটি-বাদক সুগলা
আজ পালটে গেছে উকিলের গলা-খাঁকারিতে
.
‘আঁকড়া সাজায়েচে ভালো মাকড়া রাম বাউল
দিয়ে এড়ুয়া বেঁকি নুপূর পায় ভেড়ুয়া যেন নেচে যায়
মেড়ুয়াবাদীর মতো ওটার মাথাভরা কোঁকড়া-চুল’
.
সত্যি বলতে কী কলকাতা শহরে
যে-মেয়েটি শেষ ঘুমোতে যায় তার
প্রেমে ক্ষয়ে-ক্ষয়ে বেহাল উডডামরা শরীরে
হেথা-হোথা আচারে ভেজানো টকমিষ্টি
চোখগুলো কিসের মতন ঠিক মনে পড়ছে না
আরে হ্যাঁ বরের মা একজনকে চিনতেন
যে চিনদেশের লাল টুকটুকে বই পড়ে
সেই যে হাটুরে কেরানিদের ঠ্যাঙদুলুনি দুপুরে
কোমরে গোধূলি জড়িয়ে উধাও হলো
ফিরেছিল অতিথি-মার্কা টেরিকাটা ঝড়ে
ভ্যান-রিকশায় চিৎ মাছি-ঢাকা মুচকি-ঠোঁটে
কী আর বলি মৃত্যুর মতন ইয়ার্কি আর নেই
মনে হয়েছিল একটু আগেই যখন বেচারা
বেচারত্বে জন্মাচ্ছিল তখন গাইছিল--
.
‘ময়মনসিংহের মুগ ভালো খুলনার ভালো কই।
ঢাকার ভালো পাতাক্ষীর বাঁকড়োর ভালো দই।।
কৃষ্ণনগরের ময়রা ভালো মালদার ভালো আম।
উলোর ভালো বাঁদরপুরুষ মুর্শিদাবাদের জাম।।
রংপুরের শশুর ভালো রাজশাহির জামাই।
নোয়াখালির নৌকা ভালো চট্টগ্রামের ধাই।।
দিনাজপুরের কায়েত ভালো হাওড়ার ভালো শুঁড়ি।
পাবনা জেলার বৈষ্ণব ভালো ফরিদপুরের ছুঁড়ি।।
বর্ধমানের চাষি ভালো চব্বিশ পরগণার গোপ।
গুপ্তিপাড়ার মেয়ে ভালো শ্রীঘ্র বংশলোপ ।।
হুগলির ভালো কোটাল-লেঠেল বীরভূমের ভালো বোল।
ঢাকির বাদ্যি থামলে ভালো হরি হরি বোল ।।
.
সত্যি বলতে কী ফাটা ডিমে বাবুই দম্পতির
কয়ের ডেকোরেটেড বেডরুম প্যাচপেচে
হয়ে থাকায় বরের মুটকি রাঙা-বউদি
ইষ্টনাম জপতে বসার জায়গা পেলেন না
এদিকে ওনার তর সইছিল না কেন না
বাঁ-হাতের মুঠোয় জমে গেছে দু-ডজন কন্ঠস্বর
যার এক-আধটায় মাকঢ়সার ওৎপাতা
একাকীত্ব থেকে ঠায় ভেসে আসছিল
ভাটিয়ে পুরুষের হাঙর-গান যেটা
বাসরঘরে গাইবেন বলে বরের মেজোকাকা
অবৈধ-ভ্রূণ হাতে আইবুড়ো রয়ে গেলেন
এইজন্য যে এক নৃত্যপটিয়সী বাদুড়
একখানা এমন জীবানুবাহী কথা বলেছিল
যা মানে করলে অনেকটা এরকম দাঁড়ায়--
.
‘কেমন করে বললি জগা জোড়া গোলক বৃন্দাবন
এখানে তো বামুন রাজা চাষা প্রজা চৌদিকে তার বাঁশের বন
জগা কোথা যে তোর শ্যামকুণ্ড কোথা রে তোর রাধাকুণ্ড
ওই সামনে আছে মানিককুণ্ড করগে মূলা দরশন’
.
সত্যি বলতে কী বর-শালা যতোই
ছিন্নমূল হোক না কেন তার শেকড় এমন
গজাবে যে সে নিজেই নট নড়ন-চড়ন ফুলশয্যায়
বাবরের আনা ডোরাকাটা তরমুজ খেয়ে
পোষমানা নদীর ল্যাজ আছড়ানির ধাক্কায়
ভাঁজখোলা ঘোড়াফড়িঙের সবুজ লাফ দেবে
মুখের মধ্যে সম্পাদিত কথাবার্তার কুচি
ট্রেনচাকার ফিনকিতোলা চিৎকার সেজে উড়বে
সে-রব যতই আঞ্চলিক ভাষায় হাত নাড়াক
ও তো জানে যে-গ্রহে নুন নেই সে-গ্রহে মানুষ নেই
তা যদি থাকতো তাহলে ওয়ালরাস-দেঁতো
বরের মামা কি নোংরাভাষিনীর টেলিফোনে
গায়ের তাপ বাড়াতে পয়সা ঢালতো
বরং যে-কোকিল দুপুর-রোদকে সুরে বাঁধে
বা যে ভবঘুরে কেন্নোর ঠ্যাংগুলো বাচাল
তাদের কাছ থেকে জেনে নিত কেন
মৌমাছি বসলেই ফুলেরা গন্ধ লুকোয়
আর মধু-ভাষায় কাঁদে----
.
‘শ্যাম আপনারো যেমন তৃভঙ্গ কালিয় ভূজঙ্গ কুটিলে।
কুবুজারো অঙ্গ রসেরো তরঙ্গ তাহাতে স্ত্রী অঙ্গ ডুবালে।।
শ্যাম এই ভূমণ্ডলে আধো গঙ্গাজলে রাধাকৃষ্ণ বলে নিদানে।
এখন কুঁজিকৃষ্ণ বোলে ডাকিবে সকলে ভূবনো তরাবে দুজনে ।।
শ্যাম তেজিলে শ্রীমতী তাহাতে কী ক্ষতি যুবতী সকলি সহিলো।
ভূজঙ্গ মাণিকো হরে নিলো ভেকো মরমে এ-দুখো রহিলো ।।
শ্যাম প্রদীপেরি আলো প্রকাশ পাইলো চন্দ্রমা লুকালো গগনে ।
ওহে গোখুরের জলে জগতো ব্যাপিলো সাগরো শুকালো তপনো।।
.
সত্যি বলতে কী মোষের ধন
দুইতে-দুইতে কর-রেখায় যেমন গ্রীষ্ম জমে
বাসের ছাদে বসে যাত্রীরা তেমন রাজনীতি
আলোচনা করছিল যে কেউটে খোলোস ছাড়লে
তার সঙ্গে গায়ের নকশাও তো ফেলে আসে
তাহলে কেন মিথ্যুকের পদচিহ্ণে থরহরি
মহাকরণের ভি আই পি লিফট চেপে
বর বললে কাস্তেটা শান দিও বন্ধু
জিগ্যেস করলে কমরেড তুমি নবযুগ আনবে না
পদ্যের কড়া হাতুড়িতে আজ হত্যে
হঠকারিতায় ভেঙে দাও ভীরু দ্বার
টোপর মাথায় বললে আগুন আমার ভাই
ব্যাস শোনা গেল টায়ার পাংচার কন্ঠস্বর--
.
‘আমারে ফ্রড করে কালিয়া ড্যাম তুই কোথা গেলি
আই অ্যাম ফর ইউ ভেরি সরি গোলডেন-বডি হলো কালী
হো মাই ডিয়ার ডিয়ারেস্ট মধুপুরে তুই গেলি খৃষ্ট
ও মাই ডিয়ার হাউ টু রেস্ট হিয়ার ডিয়ার বনমালী
শুনো রে শ্যাম তোরে বলি
পুওর কিরিচর মিল্ক গেরেল তাদের ব্রেস্টে মারলি শেল
ননসেন্স তোর নেইকো আক্কেল ব্রিচ অব কনট্র্যাক্ট করলি
ফিমেলগণে ফেল করালি
লম্পট শঠের ফরচুন খুলল মথুরাতে কিঙ হলো
আংকেলের প্রাণ নাশিল কুবুজার কুঁজ পেলে ডালি
নিলে দাসীরে মহিষী বলি
শ্রীনন্দর বয় ইয়ং ল্যাড কুরুকেড মাইন্ড হার্ড
কহে আর সি বার্ড এ পেলাকারড কৃষ্ণকেলি
হাফ ইংলিশ হাফ বাঙ্গালি’
.
সত্যি বলতে কী যে মেয়েটি
পাপড়ি ঝরার বয়সে এই সবে পৌঁছেচে
আঙুলের বদলে কথা দিয়ে ওর দরোজায়
টোকা দিতে বরের কুষ্ঠিঠিকুজি জুড়ে
ময়ূরের ঝর্ণাপেখম রিমঝিম হিমসিম
কেননা ফেশিয়াল-করা হাসিতে বললে
শীতঘুমের দিনগুলো ভালো ছিল গো
তা শুনে বরপার্টির সে কী আখড়াই-ধুম
ছিরিকেষ্ট ল্যাঙাশিবু ট্যারাহরি বেঁটেনারাণ
ঢ্যাঙাকাত্তিক কেলোগণশা তোতলাসতে--
কনে বেচারি পাশবালিশ জড়িয়ে যা শুনলে
তা বুড়ি থুথ্থুড়ি হলেও মনে রেখেছে--
.
‘১.চিতান ।। বালিকা ছিলাম ছিলাম ভালো ছিলাম সই---
ছিল না সুখ অভিলাষ ।
১.পরচিতান ।। পতি চিনতাম না, ও-রস জানতাম না
হৃৎপদ্ম ছিল অপ্রকাশ ।
১.ফুকা ।। এখন সেই শতদল মুদিত কমল কাল পেয়ে ফুটিল।
পদ্মের মধু পদ্মে রেখে ভৃঙ্গ উড়ে গেল ।
১.মেলতা ।। একে মদনের পঞ্চশর প্রাণনাথের বিচ্ছেদ শর
দুই শরে সারা হলো যুবতী….
মহড়া ।। আমার কুলের নাশক হলো রতিপতি
আমার প্রাণনাশক হলো প্রাণপতি
আমি অবলা বইতো নই
কী করি বলো সই
হয়েছি বিচ্ছেদে নতুন ব্রতী---
খাদ ।। উভসংকটে পড়ে সই হলো এ কী দুর্গতি ।
২.ফুকা ।। ও তার নামটি মদন…
গঠন কেমন দেখতে পাই না চোখে…
ইন্দ্রজিতের যুদ্ধ যেমন বান মারে কোথা থেকে ।
২.মেলতা ।। একে অর্ধরথী নারী তার সঙ্গে কি পারি
তাতে নাই আমার যৌবনরথের সারথি ল
অন্তরা ।। পোড়া মদন তো তাও সই বুঝে না ।
দেখে অবলা নারী তাতে যুবতী ।
আপন পতি হয়ে যদি বুঝলে না বেদনা…
২.চিতান।। জ্বালালে পতি হয়ে যদি নারীর প্রাণ
দোষ কি দিব মদনে ?
২.পরচিতান।। ঘুচে সব জ্বালা জুড়ায় অবলা
ত্যাজিলে এ পাপ জীবনে ।
৩.ফুকা ।। পোড়া যৌবন গেল
জীবন গেলে প্রাণ জুড়ায় গো সখি ।
নইলে জ্বালা জুড়াবার আর উপায় না দেখি।
৩.মেলতা।। আমার কুল রক্ষে মান রক্ষে সমভাবে দুপক্ষে
পাছে বিপক্ষে বলে আবার অসতী।।
.
সত্যি বলতে কী….
তোমার অতল চোখ
কেবল মনে আছে তোমার অতল দৃষ্টি ; তাছাড়া কিছুই দেখিনি
ক্ষিপ্রচটুল লাস্যে আরো কালো আরো গভীর করেছ চোখ দুটি
ভুরুতে পেনসিল চোখেতে কাজলের প্রয়োজন ছিল না তো
তোমার সান্ধ্যতাণ্ডবের দৃষ্টি চোখের মণিকে ঘোরাচ্ছে দুদিকে
চোখের কোণ দিয়ে আট রকমের চাউনি বিঁধে ফেলছে প্রতিক্ষণ
তোমার আলারিপ্পু যতিস্বরম শব্দম বর্ণম তিল্লানা কিচ্ছু বুঝি না
কেবল টের পাই ক্ষতবিক্ষত করছ চোখপল্লবের কৃষ্ণ আঘাতে
সংযমের আবেগবৃত্ত তুমি ভেঙে দিচ্ছ চোখের প্রলয়তাণ্ডবে
তোমার আঙুলগুলি
ভালো করে দেখিনি তোমার মুখ, আবছা মনে পড়ে,
দেহ ও পোশাকও মনে নেই, কেমন ভাসাভাসা যেন--
অথচ মনে আছে তোমার দশটি আঙুলের খেলা
আমি তো স্তম্ভিত হতবাক থ, তালুতে রক্তসূর্য আঁকা
প্রতিটি আঙুলও আলতায় অর্ধেক রাঙানো
ত্রিশূল তাম্রচূড় মুকুল সামদাম হংসাস্য ভ্রমর কাঙ্গুল
আঙুলে খেলাচ্ছ তুমি আমার হৃৎপিণ্ডে নিঃশব্দে দামামা বাজিয়ে
সিংহমুখ মৃগশীর্ষ সর্পশীর্ষ চন্দ্রকলা সূচী কপিথ্থ ময়ূর
বুঝতে পারছিলুম বসে একঠায়, তোমাকে নয়,
ওই দশটি রক্তাভ আঙুলের অপার্থিব ইশারাকে ভালোবাসি
এ নাও সর্বস্ব দিচ্ছি
এ নাও সর্বস্ব দিচ্ছি, তোমার তালিকায় টিক দিয়ে নাও, এক-এক করে
পাটিপত্র পানখিল দধিমঙ্গল তত্ত্বের বাক্স করে পাঠিয়েছিলুম মাথা কেটে
পাণিগ্রহণ ধৃতিহোম অরুন্ধতী নক্ষত্র দর্শন সম্পপদানে দিয়েছি হৃৎপিণ্ডখানা
এবার গায়ের হলুদে নাও হাতের রেখা থেকে সব নদী ও সমুদ্রের ঢেউ
সাতপাক শুভদৃষ্টিতে নাও শিরায় বয়ে চলা মোৎসার্ট সিম্ফনি
মালা বদলেতে নাও আমার ঘামের গন্ধ সাভানার পুরুষ সিংহের
অঞ্জলি ও সিঁদুরদানে দিয়ে দিচ্ছি অণ্ডকোষ-ভরা শুক্রকীটের সামগান
সর্বস্ব চাইছ বলে দিয়ে দিলুম উদ্যত লিঙ্গখানা উপড়ে ফুলশয্যায়
লিজ্জত পাঁপড়
আররে ভাইই
ভুরুর বাবলাকাঁটায় তো পাক ধরেছে, তাই শব্দের ঘাঁতঘোঁতে তেমন লড়াই-টড়াই না থাকলে শরীরের যেখানে-সেখানে ধন্দের আনন্দ সেসব আমোদ আহ্লাদ, হরি হে, খবরের কাগজে বাসি-খোঁপার বদগন্ধউলি মেয়েমানুষ যেদিন-যেদিন ছাইরঙা ভাষায় কথা বলেন, হ্যাটমাথা বাঘশিকারীরা বাঘেদের সঙ্গে-সঙ্গে লোপাট হবে গেল, চামড়ায় এঁটুলি-বহনের যোগ্যতা নিয়ে তাদের চারচৌকো আলোয় আপনি গোল হবে বসে বললেন, ‘ওং হিং’
আররে ভাইই
জন্মদিনে পাওয়া একপুকুর ঢেউমাখা রোদে বসে পরীক্ষার খাতায় ইতিহাস টিচার যখন ঘটনা শোধরাচ্ছিলেন, সিল্কের লুঙ্গি গরদের পাঞ্জাবি বিদ্যাসাগর-চটি পায়ে দে-মশায় ব্রোঞ্জের ঘোড়ায় ছিপটি হাতে হাঁক পেড়েছিলেন, হেই-মালো হেই-সামালো হেই-সামালো ভাষা হো, হরি হে, গোদরেজ তালার গর্তের ভুলভুলাইয়ায় ছারপোকাটা বললে, ‘ওং হিং’
আররে ভাইই
কবিতার মধ্যে ডুগডুগি বাজানো ভিড়ে যিনি স্টেথোসকোপ ফিরি করছিলেন, তাঁর সঙ্গে পাঙ্গা নেবার জন্যে রাস্তা তৈরি হবার আগেই আপনি অতোগুলো মাইলপাথর রেডি করে ফেললেন, হরি হে, ঝর্ণার মুখে এসে জল তার গতি ভুলে গেলে পুনঃপতনের জন্যে উঠে দাঁড়ানো ছাড়া উপায় নেই, কেননা সমবেদনায় ভুগে-ভুগে আপনি এমন ক্লান্ত যে বলে ফেললেন, ‘ওং হিং’
আররে ভাইই
সমস্যা টিকিয়ে রাখার আহ্লাদে, টেবিলের দুদিএর পরস্পরবিরোধী মনঃস্হিতি নিয়ে ফাঁকা চেয়ারগুলোয়, খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে বের করা যেসব জ্ঞানগম্যি পড়েছিল, হরি হে, যে-ভাষায় আপনি নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলেন, আমার ছেলের সঙ্গে পিনাপ পোস্টারের মেয়েটি, ঠিক যেভাবে কুমোরেরা সূর্যকে হাঁক পেড়ে ডাকে, হরি হে, খ্যাতি পাবার ধান্দায় একআধটা লাশ দু-দশ দশকে ভেসে উঠে বলে, ‘ওং হিং’
আররে ভাই
আপনি তো হাত দিয়ে অনুভূতি বানান, বাসের ভিড়ে দাঁড়ানো মড়াদের গাদাগাদি গরমে যখন না-বলা সংলাপে পায়ের পাতা ঝিমঝিম করে, আমার আমিটা আপনার আপনিকে বলছিল, এই আমার হাত ধরুন না, মাংস খেতে হলে মৃতের মাংসই খেতে হবে, হরি হে, চেখে বলুন, ‘ওং হিং’
জখম
চাদোয়ায় আগুন লাগিয়ে
তার নীচে শুয়ে আকাশের উরন্ত নীল দেখছি এখন
দু:খ কষ্টের শুনিনি মুলতুবি রেখে জেরা করে নিচ্ছি
হাতের রেখার ওপর দিয়ে গ্রামাফোনের পিন চালিয়ে জেনে নিচ্ছি
আমার ভবিষ্যত
বুকের বাদিকের আর্মেচার পুড়ে গেছে বহুকাল
এখন চোখ জ্বালা কোর্ছে মলয়ের কঙ্কাল জ্বালানোর ধোয়ায়
আশপাশ দিয়ে ঘন্টায় ৯৯ কিলোমিটার দরে উড়ে যাচ্ছে ঝড়
কব্জিতে ঘড়ির কাটা রেখে চলে যাচ্ছে
সারসার সদ্বিঠ্যাং মানুষের লাভলোকসানময় দল
১টা চামচিকে অনেক নিচু দিয়ে উড়ে আমাকে ভয় দেখাচ্ছে
ওদিকে ফাকা মাঠের মধ্যে সাজানো রয়েছে
হাট-কোরে খোলা ৮০০০০০ কাঠের দরোজা
আমার সামনে সমস্ত দৃশ্য ধেবড়ে গেছে দেখতে পাচ্ছি
কারুর সঙ্গে খাপ খাচ্ছে না আমার
আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে
১৬ ডিভিসন কাক আমার হাত পা ধড় ঘিরে চক্কোর কাটছে ২৫ বছর
হাড়ের রেলিঙ জাপ্টে দাড়িয়ে রয়েছে আমারি রক্ত মাংস
মলয়ের গায়ের চামড়া তুলে ফেলে
তার ঘাতঘোতের আত্মাভিমানী ফ্রেস্কো দেখতে পাচ্ছি
শরীরের ভিতর চোলছে আয়ুহীন অন্তর্ঘাতী কার্যকলাপ
হেমোগ্লোবিনে টহলদার আধারের উস্কানিমুলক কাজ চোলছে ফিমিনিট
এখন চুপচাপ ভেবে দেখছি আমাকে নিয়ে কি করা যায়
বংশপরস্পরায় পেয়েছি ৬০০০ বছরের পালিশ খাওয়া আপতকালীন ক্রুরতা
চামড়ার পুরনো পলেস্তরা চেছে মানুষের বোধহীনতা আমি ফেলে দিচ্ছি
ভাত খেয়ে আচাবার পর পরিষ্কার নখগুলোকে কেমন মহানুভব মনে হচ্ছে
আমার হারের ফাকফোকোরে গোত্তা মেরে উঠছে গরম গনগনে লু
আমার লাশ আগাগোড়া তল্লাশ কোরে হৃতপিন্ড না পেয়ে
মানুষেরা যে যার ঘরে ফিরে যাচ্ছে
মানুষই মানুষকে শেখাচ্ছে খুন আর সেবা করার কায়দা কানুন
শরীর থেকে পড়ে যাওয়া হাত পা তুলে লাগিয়ে নিয়ে ফিরে যেতে হয়
দুপুরের রালচে হাওয়ায় আমি দুচোখ বুঝে শুয়ে আছি
কাঁচা কয়লার গন্ধ ঘোঁট পাকিয়ে উঠছে দুঁদে অসংযমী শিরার ১৮ নং টোটায়
আমার বাবা-মা’র ক্রোমোজম
আমাকে আমার দিকহীন খপ্পরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে কিনা জানি না
ওফ্
ব্রেনের ক্রুদ্ধ শাঁসের ভাপ থেকে
রেটিনার উপর রঙিন নাইট্রো সেলুলোজ ঝরে পড়ছে
সমবেদনাজ্ঞাপক চিঠির আড়ত গড়ে উঠছে
আধভেজানো সদর দরোজার ভবিষ্যৎহীন চৌকাঠে
আখচার জং ধরে যাচ্ছে বহুব্যাবহৃত মাংসপেশীতে
মাটির সঙ্গে ১ যোগে গলে ঘাঁট হয়ে যাচ্ছে জ্ঞানী আর মূর্খের সমসত্য মড়া
গর্ভের ফ্যাচাঙে
১টা কোরে কনভার্সান চার্ট নিয়ে ওৎ পেতে রয়েছেন প্রতিটি নারী
আমার ১ই শিরার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে
গান্ধী আর আত্তিলার সমকেমিকাল রক্ত
কিছুই হল না আমার পৃথিবীরো খিছু হবে না শেষ ওব্দি
তেজারতি কর্বার করা হল না
হাওয়ায় ভাসমান গাছগাছালির বীজ
আমার অনুর্বর ঘামের উপর বসে ফ্যাঁকড়া ছড়াতে চাইছে
বুমঘাঙের আপেলবাগানে বসে ব্যর্থতার কথা ভেবেছি দুপুরে রোদ্দুরে
শয্যের শাঁসের হেঁসেলে ঢুকে-থাকা পোকার অলস আরামের খোঁজে
ছুটোছুটি করা হল না আমার
নিজের শরীরের ভেতরদিকেই আজকাল থুতু ফেলছি আমি
আয়নায় শঠ পারা থেকে খুঁটে তুলছি আমি
আমার হিংস্র চোখমুখের আত্মত্রাণকারী ছাপছোপ
সকলেই যে-যার কাজ গুছিয়ে ঘাটবাবুর সার্টিফিকেট নিতে চলে যাচ্ছে
আমারি মগজ থেকে বেরিয়ে
২০০০ শিকারী কুকুর আমাকে তাড়া কোরে ফির্ছে ২৫ বছর
স্ত্রীলোকদের পায়ে চলা রাস্তার গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে
আমি এগিয়ে যাচ্ছি তাদের আমেচার আস্তানার দিকে
অন্ধকার রাস্তার ওপর পায়ের শাদা ছাপ দেখে
আমার বুক ছাঁৎ কোরে উঠেছিল
দেওয়াল থেকে ঝুরঝুরে বালি খসে পড়ার শব্দে কাঁটা দিয়ে উঠতে চেয়েছে
আমার ম্লান চামড়া
লোমের চিমনিগুলো দিয়ে ঠেলাঠেলি মেরে বেরিয়ে যাচ্ছে
আমার সির্দাঁড়া পুড়ে যাওয়া ধোঁয়া
উইদের থুতু দিয়ে তৈরি মাটির শিরার মধ্য দিয়ে
কাঁচা মাংসের লাশ টেনে নিয়ে যাচ্ছে ডেঁয়ো পিঁপড়ের সার
গায়ে-পড়া ঢেউদের সামুদ্রিক পাড় দিয়ে
খালি-পায়ে আমি চলে যাচ্ছি শকুনদের বিমর্ষ আড্ডায়
আমি জেনেছি খাদ্যজিনিষের মধ্যেই ১ সঙ্গে লুকিয়ে থাকে
রক্ত আর পুঁজের আকালষেঁড়ে রং
আখের বিকারগ্রস্ত মেধা মাটি থেকে শুষে তোলে
তরল পরোপকারী নোংরামি
আমার নোংরামি আমার ভালোবাসা আমার রক্ত
মেঘের পাশে পাশে উড়ে যায় ফেলে-দেওয়া রক্তমাখা ন্যাকড়া
হৃৎযন্ত্রের আলতো কাঁপনে কেঁপে ওঠা
নীলা-র বাঁদিকে রুগ্ন স্তন আমার মনে পড়ছে এখন
মরবার দিন অব্দি মুখ বুজে জীবনের লাথানি সয়ে যেতে হয়
এখন আমার হৃদমেশিনের যায়গায় ঝুলছে ১টা জ্বলন্ত ম্যান্টল্
এখন আমার ধমনীদের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে
যোগবিযোগের চিহ্ন আর কাঁটা-ভাঙা কম্পাস
মাটির ভেতর সিসের মগজে ওৎ পেতে আছে
সংবাদপত্রিকাদের হ্যাঁ কিংবা না
আমি বুঝতে পার্ছিনা আমি স্বধর্মনিষ্ঠ কি না
আমার পা বুঝতে পার্ছেনা যে আমিই তাদের গতি আর দিক নিয়ন্ত্রণ কোর্ছি
অফেরৎযোগ্য নারী নিয়ে
আয়কর / শুল্ককর দিয়ে বুড়ো হয়ে যেতে হবে কি না জানি না
নিজের সই জ্বাল করে চালিয়ে দিলুম গোটা শীতকাল
চাইনি তবু জন্মালাম
জুতোর ফিতে না খুলেই
এবার আমি জোনাকিহীন অন্ধকারে লাফিয়ে পড়তে চাই
সকলেই কালকের জন্য তৈরি হয়ে নিচ্ছে
কালকের জন্যই আজ সন্ধেবেলা চোলছে জুতোর মমতায় পালিশ
ঘোরালো রাস্তা চলে যায় মানুষের পায়ের কাছ বরাবর ১ দিন না ১ দিন
দেবদারুর নতুন বাক্সে চড়ে অঙ্গ প্রত্যঙ্গের লোভে
দেশ বিদেশের সীমান্ত অব্দি চলে যায় গ্রিজমাখা ৩০৩ কার্তুজ
বৃদ্ধের ২৫১০ বছর পর গান্ধীময়দানে পড়ে থাকে
পুলিশ ও অপুলিশ মার্পিটের ১৯৬৫ মডেলের জুতোছাতা
কোকেন আর জাল টাকার আড়তে
দেদার আরামে ১ সঙ্গে শুয়ে থাকে ভারত আর চিনের নাগরিক
আমি অন্ধ ভিকিরির হাত থেকে ৫ পয়সার চাক্তি তুলে নিয়েছিলাম
আমি খইয়ের ভেতর থেকে কাড়াকাড়ি কোরে ছিনিয়ে নিয়েছি
মড়ার দয়ালু পয়সা
সাঁতার না-জেনেও নৌকোয় পার হয়ছি মরে যাবার ভয়
আমাকে ধিক্কার দেয়া যায় আমাকে উপেক্ষা করা যায় না
ঈশ্বর যন্ত্রস্থ
আমি ভুল গর্ভ থেকে নেবে ভুল নাম নিয়ে ঘুড়ে বেড়ালাম ৬৫টা বছর
ভুল ইচ্ছে থেকে পেয়েছি ভুল দ্বেষ
ভুল সুখ থেকে ভুল দুঃখ পেয়ে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল
আমি ভুল সংঘাত থেকে জড়ো কোরেছি ভুল চেতনা
আহ্ এ ভুল কোল্কাতা এ ভুল মানুষমানুষী
ভুল দম্ভ থেকে তৈরি কোরেছি ভুল হিংসে
আমি ভুল শৌচকাজ থেকে জেনেছি ভুল সরলতা
ভুল সংযম আমাকে এনে দিয়েছে ভুল বিরাগ
আমি ভুল অহংকার নিয়ে ভুল ভিড়ের কাছে চলে গেছি
আমি ভুল ভক্তি নিয়ে যে-কোনো কারুর খোঁজে জেগে বসে রইলুম সারারাত
ভুল স্বপ্ন দেখে ভুল জায়গায় স্ত্রীযন্ত্রের বদলে পেলুম অশ্বত্থের পাতা
ভুল শিক্ষা থেকে ভুল সুনাম পেয়ে কব্জির শিরা ছিঁড়ে ফেলে দিলুম
আমি ভুল নারীর পায়ের ওপরে রেখেছিলুম আমার নির্ভুল ভালোবাসা
ভুল প্রেম থেকে ভুল গন্ধের কাছে আমাকে অনেকবার চলে যেতে হল
আমি ভুল মদরুটি থেকে তৈরি কোরেছি আমার ভুল রক্তমাংস
ভুল সড়কের ওপরে দাঁড়িয়ে ভুল মত্লবের পাল্লায় ছিঁড়ে ছিঁড়ে ওড়চ্ছি
আমার ভুল ট্যানকরা চামড়া
নতুন চামড়া দেখব বলে আমি আমার ঘায়ের মামড়ি খুঁটে ফেলছি এখন
আস্তিনের তলায় আধপচা দগদগে ঘা লুকিয়ে
সকলের সঙ্গে হাত নেড়ে কথা বোলে যাচ্ছি
মুখের চামড়া নিচে আমার খুলি সব সময় হা কোরে হাসছে
আহ্
আঙ্গুলগুলো হৃদয়ের সঙ্গে সেলাই কোরে সিল কোরে রেখেছিলুম ২৫ বছর
আমি নদীর অযোগ্য জলে ডুবে গিয়েও ফিরে এসেছি কলের নিচে
মরামানুষের হতাশ জামাকাপড় পরে তারি খোঁজে ঘুরেছি রাস্তায় রাস্তায়
আমি অন্ধকারে কিছু একটা আকড়ে থাকার জন্যে চলে এলুম ২৫ বছর
অন্ধকারে নিজের সঙ্গে নিজে ধাক্কা খেয়ে আমাকে জাপ্টে র্ধোলুম
অন্ধকারে নিজেকে দেখে চমকে উঠলুম
ছাগল নাদির ঘুটেতে আগুন পোয়ালুম সারাটা চাকরিহীন মাঘমাস
মাসিক ২৮৭.৭৫ টাকা ভাড়ায়
আমাকে খাটিয়ে নিল জমিদারী নিলামের চোথাপত্তর
আমি খালি পেটে ইন্টারভ্যু দিতে গিয়ে বলে এলুম অর্থমন্ত্রীর কাকিমার নাম
ঢালু জায়গায় প্রস্রাব কোর্লে নিজেরি পায়ের দিকে স্রোত গড়িয়ে আসে
শরীরে এ.সি. আর ডি.সি. ২ রকম শিরার ব্যবহারই পুরোদস্তুর চালালুম
স্বপ্নে আমি নীল আমেরিকা থেকে ধূসর জর্ডন ওব্দি চালিয়ে ফেরাচ্ছি
আমার হাইফেন গোড়ালি
আঘাতের রক্ত খুঁজতে খুঁজতে ১৫০০ মাইল চলে যায় সহৃদয় বোরিক তুলো
এখন মলয়ের বেওয়ারিশ আশা আকাঙ্খা ফির্ছে
আমার হাড়হাভাতে কোলজের খাপখোপে
বিশ্বভাতৃত্ব শিখে এঁদো বস্তিতে ফিরে যাচ্ছে মানুষ
সফল মানুষদের লাংস থেকে আমি কার্বন রড টেনে বের কোরে আনছি
আমি গোলাপের পায়ের কাছে বসে দেখছি
কী কোরে তার কুঁড়ির ভেতর থেকে ফেটে বেরোয় ৩৪টা আলজিভ
একগাদা সবুজ কাচের টুকরো দেখছি চৈত্রের আতাগাছের ধুলোতে চামড়ায়
বিদেশি খনির সোরাগন্ধক এসে ফেটে পড়ছে ঝিকাবাড়ির মাঠময়দানে
আশেপাশের রাজ্য থেকে ৯৯০০০ পুরোনো জিভছোলা উড়ে এসে
কোল্কাতার আকাশ চষে ফলছে
গোখরোর মাথায় খুলে উঠছে জাপানি হাতপাখা আর মানুষের জীবন্ত পাঞ্জা
আমি লুকিয়ে-চুরিয়ে নিজের সমস্ত গতিবিধির ওপর লক্ষ রাখছি
গর্ভের ভেতরেই সকলে শিখে আসছে তাদের অপ্রাপ্ত জীবনের ১ম ডিগবাজি
আমার মুখ কান পায়ুকোটর দিয়ে
২৫ বছরের পুরোনো টাইমটেব্ লের ছেঁড়া পাতা বেরিয়ে আসছে
আদালতের অবমাননার দায়ে নিয়মের কাছে মাথা নোয়াচ্ছে ডারউইনের মানুষ
মরে যাবার আগে
ক্যাজুয়াল লিভ / অর্ডিনারি লিভ / সিক্ লিভ সম্পর্কে ভাবিত হচ্ছে মানুষমানুষী
খাবার সমেত হাত ঠিক উঠে আসছে মুখের কাছে
মহাজ্ঞানী রেডিও থেকে থুতুর ছাঁট আসছে এদিকে
উলটো শার্ট পরে আমি দেখাচ্ছি
সেলায়ের দাগ বগল আর কলারে বসে থাকা তেলচিটে ময়লা
চশ্মার কাচের ওপরে লেগে ছিটকে চলে যাচ্ছে ক্রুদ্ধ ভিমরুল
লোকলস্করের কান খুঁজে চলে যাচ্ছে ধ্বনিপ্রতিধ্বনি
আমি যে-বাড়িতে জন্মেছিলুম তাকে ভেঙে জন্ম নিয়ন্ত্রণের আপিস তৈরি হয়েছে
অনেক কিছু না-বুঝে না-জেনে না-শিখে মরে যেতে হবে
ওফ্
আমি জানোয়ারের কাছে শিখলুম তর্জনী অনুগত মানুষপনা
বাবার ধর্মের কাছে হাত পেতেছি পরিত্রাণের জন্যে
মায়ের ধর্মহীনতার কাছে ২৫ বছর
মাথার শিয়রে নকল ধারালো দাঁত ভিজিয়ে শোবার জন্যে এবার তৈরি হচ্ছি
এখানে কেউ নিচু কোর্টে হেরে গিয়ে সদর কোর্টে জিতে ফিরে আসে
কেউ মানুষের কাছে জিতে গিয়ে মানুষের কাছে হেরে যায়
ভারতের রাজপথ দিয়ে বুলেটপ্রুফ পেশাদার দেশপ্রেমিকরা আর একলা হাঁটে না
আণবিক চুল্লি আর রেডক্রসের কার্যখেত
আপোশে ভাগ কোরে কর্তব্যবোধে ঘেমে উঠে মানুষ
ভূমধ্যাকর্ষণের হাতে নিজেকে পুরোপুরি ছেড়ে দেবার পর ঘুম আসে
মানুষের আদর খেতে পাথরের নুড়ি চলে আসে পেতলের পূজনীয় সিংহাসনের
সমাজের সোহাগ ছেড়ে পাহাড়জঙ্গলের দিকে চলে যায়
আধান্যাংটো মানুষ ও তার নিজেস্ব দেশলাই
খুলির হোল্ডঅলে থাকে পরিচিত মুখ রাস্তাঘাট আর রঙিন অস্থায়ী মানচিত্র
আমি স্ত্রীলোক থেকে স্ত্রীলোকের কাছে ছুটে গেলুম
নিজের দুঃখকষ্ট চেপে রাখতে
নিজের দু:খ কষ্ট চেপে রাখতে
কাঁচা জল/গরম জল/বাসি জল খেয়েও ভেতরটা সাফ কোর্তে পার্লুম না
আগেকার প্রেমিকার সঙ্গে দেখা কোরে এলুম
তার প্রসবকালীন ছুটিতে
আমি বাঙলাদেশ বোলতে বুঝছি
আমার কঙ্কালের জয়েন্টে লাগানো সৎ-অসৎ নাটবল্টু
ঘরের ৪টে মারমুখী দেয়াল আমার দিকে এগিয়ে আসছে আর ফিরে যাচ্ছে
ছুরির নিচে গিনিপিগদের সঙ্গে শুয়ে রয়েছি ২৫ বছর
আমি জ্যোৎস্না বোলতে বুঝেছি আমার শীতাতপ নিয়ন্ত্রত চামড়া
গুপোলাগা গোড়ালি সমেত ঠ্যাঙ আজ পাঠিয়ে দিলুম ২১ নং তদন্ত কমিশনে
আজকের খবরের কাগজটা কার লেখা জান্তে পার্লুমনা এখনও
ডাকবাক্সের ভূগর্ভ সুড়ঙ্গ দিয়ে নেবে গেছে
গেল-অসুখে লেখা সব প্রতিবাদপত্র
২টো লাংসের মাঝখানের ফাঁকটুকুতে
হু হু কোরে ঝাপ্টা মেরে উঠতে চায় উদ্দেশ্যহীন বিষাদ
নিরুদ্দিষ্টের প্রতি ছাপানো সবকটা চিঠি আমারি জন্যে দেয়া থাকে কিনা জানিনা
নিজের পায়ে কুঠারাঘাত কোর্তে গিয়ে কুঠার ভেঙে যাচ্ছে ফিদফায়
কোল্কাতার আকাশ দিয়ে এখন সমাজকল্যাণকমিটির কাগজপত্তর উড়ে যাচ্ছে
ঘুমের মধ্যেই আমি আজ সকালের-দিকে ফুঁপিয়ে উঠেছিলুম
এখন স্বপ্ন থেকে উঠেই পেতে দিচ্ছি আর সি সি গাঁথুনি করা কাঁধ
আমি নাপিতের ক্ষুরের কাছে শিখেছি ধৈর্য
আঙ্গিক মানে তোমার হাড় আর হাড়ের আণবিক সাজসরঞ্জাম
এবার আমি নিজেই সবকিছু জাচাই কোরে দেখতে চাই
জান্তে চাই কাকে বলে বিষ কাকে বলে মলয় রায়চৌধুরী
ভরতবর্ষ কারুর বাপের একলার কিনা জান্তে চাই
স্রেফ নিজে আগাপাশতলা ভুগে দেখতে চাই কাকে বলে অধঃপতন
আমি স্বাধীন ভারতবর্ষবোলতে জেনেছিলুম অক্সিজেন
আজ প্রেসের মেশিনের সামনে মাতৃজঠরের কথা মনে পড়ে যায়
ঘুম থেকে উঠে বালিশের নীচে পেলুম স্প্রিঙখোলা ছুরি
বারবার পেছন ফিরেও দেখতে পাচ্ছি না কারা সেই থেকে ফিসফিস কোর্ছে
ছাদের আলসেতে পড়ে থাকা রহস্যময়
হাড়ের টুকরো দেখে কাল ভয় কোর্ছিল
আমার হাড়ের ব্যথা আমি সারাতে পার্লুমনা আজো
ভারতবর্ষের মাটির তলা থেকে জ্বলন্ত মাদুর তুলে এনে বিলোলুম
বন্যাপিড়িত এলাকায়
খিল আর ছিটকিনির কাছে বসে শিখে এলুম আত্মপরিত্রাণ
পুরোপুরি চার দিন গুম মেরে থেকে আমার গলা ভেঙে গেল
আমি খালি পেটে মদ খেয়ে লাফিয়ে দেখেছি কঙ্কাল আওয়াজ
আমি নদীর কাছ থেক জেনে এলুম
মাটিপাথর কামড়ে এগিয়ে যাবার খসড়া পরিকল্পনা
শীতকালেও আমার গোড়ালির ঘাম
আমার মোজায় অসামাজিক গন্ধ ঠুসে তোলে
বাহুমূলে মাটি জমে গিয়ে
আমার ২ কাঁধ ফুঁড়ে বেরোচ্ছে স্পর্শময় ইউকালিপটাস
প্রশান্ত মহাসাগরের আকরিক মাটি
একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে গিয়ে চাঁদ হয়ে গেল
আগে বা পেছন দিয়ে যাওয়া সীমান্ত
মানুষের প্রবাসী বা বিদেশী হবার চাল চেলে রেখে
মেঘের নীচে নীচে নেমে যায় ১২০০ মাইল ভ্রাম্যমান ছায়া
সমস্ত কিছুর গা থেকে
তাদের নাম গুলো আলতো কোরে বেরিয়ে আসছে এখন
মানুষের দেয়া আইনানুগ মৃত্যুদন্ড পেয়ে কেবল মানুষই মরে যাচ্ছে
ফ্যাক্ট্রি আর বিবাহ ২ টোরই রেজিস্ট্রি হয়ে চোলছে নিয়মমাফিক
কোল্কাতার মদের ব্যবসা থেকে নৈতিক মাইনে পাচ্ছে ৪৫০০০ডানহাত
১ একরে ১৩৫ জোড়া ঠেসাঠেসি আরামে খাচ্ছে
১৯৬৫ মডেলের কোল্কাতা
প্রস্রাব কোরতে বারন কোরে
কোল্কাতা তার মানইজ্জত বাচিয়ে রাখেছে
গা পড়গনার আশ্রয়প্রার্থী হয়ে ফিরে যাচ্ছে কল মিল কার্খানা
কোল্কাতার আকাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে ২৭৬০ লক্ষ টাকার মানিঅর্ডার
মানুষের ঘুম খুঁজে বের কোর্ছে রাত্তিরবেলার রোয়াক ফুটপাথ গাড়িবারান্দা
সফল মানুষেরা সন্ধ্যাবেলায় প্রাতঃকৃত্য সেরে নিচ্ছে
৬৮০০০ প্রচারপত্র সকাল থেকে খুঁজে বেড়াচ্ছে কোল্কাতার ফাঁকা দেয়াল
উৎসব আর ধর্মানুষ্ঠানের রুটিন মেনে ঘা বদল কোরে নিচ্ছে চাকুরিয়া ভিকিরি
রাদ্দুপুরে মাঝসড়কের ওপর লাল আলো রেখে জেবঅদের রং ফেরাচ্ছে উন্নয়নকামী পেন্টার
রেডিওতে কবিতা আর ভোটের ফলাফল খোলসা কোরে ব্রডকাস্ট হচ্ছে
দাঁতে দাঁত চেপে আমি অপেক্ষা কোর্ছি চলন্ত ফুটবোর্ডে
আমার নিজেরি বাড়ির খোঁজে আমি রাস্তায় রাস্তায় ২৫ বছর ঘুরে বেড়ালুম
বসতিবিরল এঁদো গলির মাটিতে ছড়ানো
অজস্র ধবধবে পাশবালিশ ডিঙিয়ে আমি হেঁটে যাচ্ছি
থামগুলোতে পিঠ ঠেসে দাঁড়াবার জন্যে জায়গা কাড়াকাড়ি কোর্ছে রাংবেরং বেশ্যারা
এখন নিমতলা কেওড়াতলার দিকে কাঁধে চড়ে চলে যাচ্ছেন ৪৯ জন আরামখেকো লাশ
আমার সেই শ্রদ্ধেয় পূর্বপুরুষদের কথা আমি ভাবছি
যিনি এক টাকায় কোল্কাতাকে বেচে দিয়েছিলেন
চিঠি লেখার পর সারা কোল্কাতায় ১টাও ডাকবাক্স খুঁজে পাচ্ছি না
সন্ধে হবার দরুন যাবতীয় নক্ষত্র এখন পৃথিবীর কাছাকাছি নেবে আসছে
আমি আমার রক্ত থেকে জাগুয়ারের চামড়ার রং টেনে তুলতে পার্ছি না
নিজের চামড়ার জন্যে
ঝরাপাতার ভেতর দিয়ে ছুটে যাওয়া সাপ আমার দিকে ১বারো চেয়ে দ্যাখেনি
মশার উড়ন্ত ব্লাডারে ঠাসা আমার ক্রুর রক্ত আঙুলে পিষে ঘেন্না কোর্ছে
আমি গঙ্গার জলে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব কোরে ফেলেছিলুম পৈতের দণ্ডিভাসানের দিন
হৃদয়ের জায়গায় ১টা বাদুড় ঝুলিয়ে ফুটপাথ দিয়ে বাড়ি ফির্ছে সফল মানুষেরা
পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আমি দেখেছিলুম আমার দূর গাঁয়ের জ্বলন্ত বাড়িঘর
পাঁজরের শিক দিয়ে কবিতার পান্ডুলিপি গলিয়ে আমি আমার কঙ্কালের ফসিল হবার অপেক্ষায় রয়েছি এখন
প্রথম প্রেমিকার পাঠানো খাম আমি সাহস কোরে খুলতে পার্ছি না
কিছুটা হাঁটার পর পেছনে ফিরে মনঃপুত কুকুরের থাবার ছাপ গুনে নিচ্ছি
দেখছি ১টা ছুটন্ত টপেনের অ্যালার্ম শেকল ধরে ঝুলছর তার সমস্ত যাত্রীরা
জুতোর ভেতরে মোজার ছেঁড়া জায়গাগুলো লুকিয়ে পা ফেলছি এখন
জুতোর মধ্যেই ঘৃণা আর পূজনীয়তা আবিষ্কার কোর্ছে নীতিমেজাজ বিদগ্ধ মানুষেরা
৫.৩৮ ডি.সে. শীতেও আমি আগুন না পুইয়ে ইজি চেয়ারে চুপচাপ শুয়ে রইলুম
নীলার রোঁয়ায় জ্বলা-নেভা ১টা ছোট্ট হাই ভোল্টেজ ঘাম আমার রক্তকে তোল্পাড় কোরে দিচ্ছে
ঘুমের মার্ফত মনে পড়ছে চেনাশোনা উরুগুলোর জাপানি খোলতাই
গাছগাছালির ওপর চিৎ হয়ে আদর খাচ্ছে কুয়াশার দুষ্কৃতিকারী চাদর
নিহত কীটের ২পাশে ঝুলে-পড়া ঠ্যাঙের কাছে ফুলের পাপড়ি শিখে নিচ্ছে স্বীকৃতি দেবার কায়দা
টেলিগ্রাফের ছেঁড়া নলির সঙ্গে ধানক্ষেতে লুটোচ্ছে আর্তসংবাদের হিসেব-করা কাকুতি
পালকসমেত ১-১/২ কিলো মাংসসুদ্ধু বাড়ি ফেরছে ১জোড়া জংলি হাঁস
আমি জান্তে পারলুম না কী কোরে মাটির ভেতরে নিস্পিস কোরে ওঠে বীজের গর্ভচর পোকা
প্রতি মিনিটে ৪০০০০ লোক দুঃখ-কষ্টে ককিয়ে উঠছে কোল্কাতার পথ-ঘাট-গেরস্হালিতে
একাধখেপ লাগাম ছিঁড়ে ছিৎরে বেরিয়ে যাচ্ছে আমার হামলাদার আক্রোশ
নালির পাঁকে হাত-পা চুবিয়ে ঝাঁঝা রোদ্দুরে ১ গেলাস জল খুঁজছি আমি
স্ত্রীলোকের ঠোঁট থেকে এঁটো অ্যালকোহল তুলে আস্তিনে পুঁছে নিয়েছিলুম
এখন এই রাত্তির বেলায় সমুদ্রের ঢেউয়ের ওপর চিৎ হয়ে আলতোভাবে শুয়ে লাজুক মাছেদের শিস শোনার ইচ্ছে হচ্ছে আমার
পিয়ানো অ্যাকর্ডিয়ানের বেলোর ফুটো দিয়ে আমার দিকে উড়ে আসছে লাল উন্মত্ত জোঁকের মিউনিসিপাল দল
সারি-সার- মড়ার শক্ত মুঠো খুলে আমি চকিত বোতাম জড়ো কোর্ছি
বিবরঘাঁটি খুঁড়ে আমার ৪দিকে সঙিন উঁচিয়ে রেখেছে শান্তিকামী মানুষেরা
দাফনকরা লাশের ৮দিকে পিল্পে গেঁথে পেছিয়ে যাচ্ছে অধ্যবসায়ী ঘাস
সাইকোথেরাপি আর বিদ্যুৎশকে বিবাহবিচ্ছেদ রুখে আজকাল সিঁদুরের খরচ বেড়ে গেছে
আমার ২৫বছরের ক্ষয়ে-যাওয়া মজবুত গোড়ালি বাঁক নিয়ে আমাকে ওন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছে
কায়েমি স্বার্থের জোট জমিয়ে তুলছি আমি আমার হিসেবি ঘিলুর হুঁশিয়ার খাপখোপে
আমার চামড়ার পাতলা চাদরের নিচে চলাফেরা কোর্ছে আমার কর্মফল
২০৬টা হাড়ের টাল সামলে মৃত্যুর দিকে চলে যাচ্ছি আমি বৈধাবৈধ এঁটোকাঁটা সমেত
আমার কুরুচিকে আমি লেলিয়ে দিচ্ছি আমারি পেছনে
দুঃখ কষ্ট পাবার জন্যে মানুষেরা লায়েক হয়ে নিচ্ছে
আমার ডান হাতের ছেঁড়া শিরার ভেতর থেকে ভেসে আসছে ২০০০ কঙ্কাল ভাঙাভাঙির সালতামামি
মৃত্যুর টেন্ডার খাম খুলে আমারি ৩২পয়েন্ট হাফটোন ছবি পাচ্ছি
নিজেরি চিঠি নিয়ে নিজের বাড়ি খুঁজে পাচ্ছে না ডাকপিওন
নিজের রকএর লাল কেলাসিত টুকরোতে আংটির বাহার কেমন খুলতে পারে আমি ভেবে দেখছি এখন
শরীরের বিভিন্ন জায়গা কাঁপিয়ে শীতকে আমার গায়ে বসতে দিচ্ছি না
ঘুমের ভেতরে আমি শিউরে উঠছি
১ই ব্যাপার থেকে তৈরি হচ্ছে সত্যি-মিথ্যে
১ই ব্যাপার থেকে তৈরি হচ্ছে জ্ঞানী আর অজ্ঞান হবার মশলাপাতি
মাছমা২স তরিতর্কারি থেকে আমি তৈরি কোর্ছি আমার রক্তমাংস
মাছমাংস তরিতর্কারি থেকে আমি তৈরি কোর্ছি আমার শুক্রকীট ও কৃমিকীট
মাছমাংস তরিতর্কারি থেকে আমি তৈরি কোর্ছি আমার মলমুত
মাছমাংস তরিতর্কারি থেকে আমি তৈরি কোর্ছি আমার চোখের জল
আমাকে মানুষেরা যাকিছু শিখিয়েছে আমি সেসব ভুলে যাবার চেষ্টা কোর্ছি
শীতকাল বলে আমি কোটের নিচে ময়লা শার্ট পরে ঘুরে বেড়াচ্ছি
পৃথিবীর প্রতিটি পার্লামেন্টের ল্যাভাটরিতে দৈনিক ৫০০ লিটার রাজনীতি সাংবাদিকদের নজর এড়াচ্ছে
মানুষই মানুষকে শেখাচ্ছে পড়াচ্ছে শৃঙ্খলার গুণ ও হিটলারের আত্মকথা
আমি মলয় রায়চৌধুরীকে একদম বুঝে উঠতে পার্ছি না
দেশ-বিদেশের ওপর দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে যুদ্ধবিরতি রেখা
গুনোগাত দিয়ে নাপিতের কাছ থেকে মানুষেরা মেজাজে আদর খাচ্ছে
সমুদ্রের ১তলার হলঘরে মশাল জ্বালিয়ে আমি সাঁৎরে খুঁজে বেড়াচ্ছি ইং ও বাং ভাষায় আমার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
এখন ভারতবর্ষময় ৯০০০লোক তাদের ছেলেপুলের বিয়ের পণ গুনছে বিবাহ আড্ডায় উবু হয়ে
অনেক উঁচুতে দাঁড়িয়ে আমি দেখছি সমুদ্রের দিকে প্রতিযোগিতামূলক সাঁতার দিয়ে ফিরে যাচ্ছে ভাঁটায় মার খাওয়া নদীর জল
টেবিলের নিচে ৩৫০০০০ আমলার ঘুষাঘুষময় স্বদেশি পা নেচে উঠছে রোজ
ডাকযোগে উচ্চশিক্ষা পেয়ে ফুলে উঠছে বাঙালি মফসসল
অন্ধকার ঘরে বসে আমি চুপচাপ সিগারেটের আগুন দেখছি
দিনকেদিন আমার কপালে দাগ পড়ে যাচ্ছে
আমার মায়ের গর্ভের ফসফরাস গায়ে লাগিয়ে বিপদসংকেতময় রাস্তা খুঁজে বের কোর্টে চাইছি
তুঁতের ফিকে নীল ধোঁয়ার মধ্যে দিয়ে চলে গেছি ফুটুসের আড্ডায়
অঞ্জলি দিতে গিয়ে আমি আমার হাত ২টো খুঁজে পাচ্ছি না
গাছের ছায়াকে ঘুরে-ঘুরে দেখতে চাইছে অধ্যাবসায়ি রোদ
আমার গায়ের সমস্ত যন্ত্রণা কপালের বিষফোড়ায় জড়ো হয়ে ঘোঁট পাকাচ্ছে
চাঁদের শোষণ ক্ষমতা আমার রক্তের ভেতরে লেলিয়ে তুলছে অমাবস্যা/পূর্ণিমার জ্বর
ওফ
আমার ভালোলাগছে না এই সব
আমি মরে যাব আমি মরে যাব আমি মরে যাব
আমার দুঃখ-কষ্ট বুঝতে না পেরে ভেতরে-ভেতরে আমার হাড়-গোড় চিড় খেয়ে যাচ্ছে
খারাপভাবে জড়োকরা গা-গতর দিয়ে তৈরি হয়েছে আমার দেহাভিমান
সমস্ত বারন অমান্য কোরে আমি আমার আত্মার কাছে যেতে চাইছি
মাটিতে ভিজে পায়ের ছাপ পড়ছে পায়ের চেটোয় উঠে আসছে ধুলোবালি
অবলা ভিতু জাহাজকে বাঁচাতে ছুটে যাচ্ছে লাইটহাউস
নারীর বেহায়া লজ্জা হাঁটকে আমি বহুবার শিতকাল-গ্রীষ্মকাল ঠাওর করেছি
স্ত্রীলোকের চেয়ে ইউরেনিয়াম আজকাল বেশি দরে বিকোয়
আণবিক ফোড়া কম্প্রেস করা হল বিজ্ঞান
শুক্রকে রজঃকীটের সঙ্গে মেলামেশা কোর্র্তে না-দেয়া বিজ্ঞান
নারীর গর্ভকে অকেজো কোরে দেয়া মানে বিজ্ঞান
কেন পৃথিবীর মাটিতে আপেল নেবে আসে আমি জানলুম না
আমি গ্রন্হের বদলে মানুষকে দিয়েলুম জুতোর খালি বাক্স
নিজের খোঁজে ফিরে এলুম মেখলিগঞ্জ থেকে ধাপড়াহাট
১জন হাফ-চেনা নারীর খোঁজে চলে গেলুম ধরমপুর থেকে পিপারিয়া
আমি ভোটের বাক্সের কাছে গিয়ে বুঝতে পারি হাত ২টো বাড়িতে ফেলে এসেছি
১ম/২য়/৩য় শ্রেণির ঠিকাদারের পাঠানো কাঠ পোঁছে যাচ্ছে শ্মশানে
লোথিয়ান দ্বীপ বা পাঙাসমারির চরের ওপরেও ছড়িয়ে থাকে বিলাতফেরত মানুষির উরুর হাড়া
আমি দেখলুম হাতঘড়িতে পরিয়ে-রাখা দরদি কান্নামোছা হাত
আমি নালির পাঁক থেকে রংওঠা বেলুন তুলে ফুলিয়েছিলুম
পাখির গু থেকে বীজ বেরিয়ে এসে দেয়ালে জন্মাচ্ছে বিশাল বট
এখন আমি প্রত্যেকটা ব্যাপারের শব্দ শুনতে পাচ্ছি
আমি আমার নিজের পাশে শুয়ে নিজেকে ভালোবাসলুম
ইউলিয়াম ব্লেকের সঙ্গে শুয়ে রইলুম আঙুরমাচানের নিচে
হুইটম্যানের চটের ওপর শুয়ে মৌচাক থেকে বাড়তি মধু ঝরে পড়ার গম্ভির শব্দ শুনলুম
নীলার লেপের নিচে শুয়ে আদ্দেক রাত্তিরে উঠে এলুম নিজের ঠান্ডা বিছানায়
জীবনানন্দের বিছানার খোঁজে রাসবেহারি অ্যাভেনিউর ফুটপাথে ছুটোছুটি কোর্লুম ঘুমন্ত অবস্হায়
খবরের কাগজ থেকে শিখেছি দেশপ্রেম
কৃতী পুরুষদের হিড়িক এড়িয়ে চলে এলুম ২৫ বছর
আধঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে নিজের গলা টিপে বন্ধ কোরে দিলুম কুকুরের গরররর চোখরাঙানি
মানুষ হওয়ার দরুনই আমাকে খাবারের দোকানে লাইন দিতে হল
আমি কেন মানুষের মারপ্যাঁচে আটকে রইলুম জান্তে চাই এবার
পুরোপুরি অক্ষরজ্ঞানশূন্য হবার জন্যে আমি কানের তুলো ঝেড়ে খুঁজে দেখছি প্রথম কাঁকর
নিজের শরীরের কেরাসিন বাঁচিয়ে রাখতে হয় চিতার বিছানা ওব্দি
সিমেন্টের মেঝের ওপর বালি ঘষার শব্দে আমার দাঁত শিউরে উঠছে
আমি কর্তৃত্বাভিমানকে লাথি মেরে চলে এলুম নিজের হৃদযন্ত্রের কাছে
নিজের হৃৎপিন্ডের ওপরে রাখলুম আমার ২৫বছরের ঘেয়ো ময়লা হাত
শরীরের ৯টা দরোজা খুলে রেখে ২৫বছর কেবল টুথব্রাশের ব্যবহার কোর্লুম
পুরোনো দেয়ালের কাছে দুহাত পেতে নিলুম নোনা ইঁটের ঝুরো ব্যর্থতা
দরোজার খিল এঁটে মাঝঘরে হাঁটু গেড়ে বসে রইলুম ইহলৌকিক গায়ের মধ্যে
স্টোভের পোকার দিয়ে খোঁচাতে হল আমার গায়ের সবকটা উদ্বিগ্ন লোমমুখ
আসল সঙ্গীত শোনার জন্যে জেলের দেয়ালের ইঁট এনে তার ওপর কান পেতে শুলুম
অসীম বলতে আমি বুঝছি আমার নিজেরি গায়ের চামড়া
আমার সামান্য ফুঁ-এ
পৃথিবীর সমস্ত গ্রন্থের অক্ষর উড়ে তালগোল পাকিয়ে যায়
প্রেমিকার বিয়ের নেমন্তন্ন খেয়ে আমার আঁচানো হল না
ভিষণ শীতেও আমি ৩-১/২ ঘন্টা বাথটাবের ঠান্ডা জলে শুয়ে গাবের গরম তুলে ফেলতে পার্লুম না
মদ খেয়ে মাতলামো সারিয়ে তুলতে গেলুম খালাসিটোলায়
আজো আমার বোঝা হল না সুখ-দুঃখের আসল তফাত
আত্মার পচন নেই বলে আমি নিজের আত্মা ফেলে দিতে চাইছি
চোখ বুজে দেখতে পাচ্ছি মায়ের গর্ভের গোলাপি রং
শরীরের চাদ্দিকময় ২৫০০০আঁতের অতিসূক্ষ্ম ঝুরি নেবে রয়েছে
রেডিওয় থিয়েটার শুনে কেঁদে ফেলছে কোল্কাতার নরমহৃদয় মানুষমানুষী
গাদাগাদি কোরে বিয়োতে-বিয়োতে গাঁ-মাঠ-পরগণার দিকে ছুটে যাচ্ছে কোল্কাতা
অস্হির রাস্তার ২পাশ দিয়ে পেছোচ্ছে স্হির গাছপালা
উচ্চারিত কথার গা থেকে কার্বনডায়ক্সাইড শুষে নিচ্ছে গাছের ভিনিগার
বোবা গাছ থেকে অক্সিজেন পাওয়া যাচ্ছে বাজার দরের চেয়ে অনেক সস্তায়
টাকাপয়সার জন্যে আমি ভবিষ্যত জমিয়ে রাখতে পার্লুম না
অনেক পুতুলেরও নীতিবোধ চাগিয়ে উঠছে আজকাল
মশারি টাঙাবার পর আমার ঈর্ষাবোধ চাগিয়ে ওঠে
ছাদের ওপর দাঁড়িয়ে পঙ্গপালের ঝাঁক দেখতে আমার ভালো লেগে যায়
পঙ্গপালের ঝাঁকের পেছনে উড়ে যায় ৮০০০০০ উদবোধনকারী মন্ত্রী ও তাদের কাঁচির দঙ্গল
প্রাচীন মায়াপুর থেকে উড়োখামে চলে আসে ভারি আর বেয়ারিং ভালোবাসা
শীতের জন্যে রঙিন কাপড়ের ট্রুজারের ভেতরে উলঙ্গ হয়ে ঢুকে আছি
গায়ের সবকটা তিল আর আঁচিল ক্রমশ এঁটুলিতে বোদলে যাচ্ছে
দুমকার গেরুয়া কাঁকরের ওপর দিয়ে খালি পায়ে দৌড়ে মাথা ঠিক কোরে নিতে চেয়েছিলুম
এখন আমি এক এক কোরে ওড়াচ্ছি আমার রক্তমাখা চোখ
গাছের গায়ের ভেতরে লুকিয়ে রয়েছে খিল দেরাজ ফাঁসিকাঠ
আমি এখন তৈরি কোর্ছি ৩য় বিশ্বযুদ্ধের খসড়া খেয়োখেয়ি
ভিড়ের ভেতরে ঢুকলে কনুই ২টো নিয়ে যেতে হয়
কোল্কাতার প্রতিটি রাস্তায় পড়ে রয়েছে ধ্বস্তাধ্বস্তির মুনাফাকারী চিহ্ণ
লাইসেন্স করানো বেড়াজাল গিয়ে পড়ছে তোপসের কমার্শিয়াল আড্ডায়
সমদ্বিবাহু ঢেউদের মাঝখান দিয়ে চলে যাচ্ছে পৃথিবীর শেষ নৌকো
শুশুক ডুবে যাবার পর ঢেউদের আঢাকা গর্ভ আবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে
মানুষদের বাড়িতে বেড়া লাগানোর দর্কার হয়ে থাকে সভ্যতার সার্টিফিকেট হিসাবে
আমি যেখানেই বোসছি ঘরের প্রত্যেকটা ছবি আমার দিকে তাকাচ্ছে
মুখের ওপর স্ত্রীলোকের মুখ চেপে ধরে ডাবের ঠান্ডা জল খাবার ইচ্ছে হচ্ছে এসময়
স্নানের পর নীলার শীতল আর নরম চামড়ার কচি আতর ভেসে আসছে
ঘুম থেকে উঠে দেখছি সারা শরীর ছড়ে গেছে
ভারি বুট পায়ে অন্ধকার গলির মধ্যে দিয়ে ছুটে যাচ্ছে আমার নৈতিক আত্মহত্যার খুনখারাপ আততায়ী
আমার শরীরে এখন চোলছে কেপমারি খুনজখম রাহাজানি ছিন্তাই
আমার হাত-পা দিয়েই আমাকে সকলে মিলে পেটাচ্ছে
দেয়ালে কপাল ঠুকে কাঁদার জন্যে জেরুজালেম ওব্দি চলে যাচ্ছে মানুষ
পরমাণুশক্তির উন্নয়ন সত্বেও হারানো ছেলেরা ভেসে উঠছে পচা ডোবায়
তমসার কাছে মৃত্যু ভিক্কে চাইতে গিয়ে লুকিয়ে ফিরে এলুম
মলয়ের বুকের বাঁদিকে ছোরা বসিয়ে খুঁজলুম তার দেহাত্মবিবেক
পৃথিবীকেও মাঝে-মাঝে কেন অচেনা লাগে জানি না
রোগির গলা ফুঁড়ে গ্লুকোজ যাচ্ছে আবার তাকে হিঁচড়ে রাস্তায় নাবিয়ে জীবনের ধকল সওয়ানো হবে বলে
আজ জানি না কেন ১জনকে মৌলালিতে মারা মানে খুন রাজশাহিতে মারা মানে দেশপ্রেম
ভালো মানে ভালো কিনা বুঝে নিতে আমি আকন্দের রোঁয়ার সঙ্গে ঘুরে বেড়ালুম
কিছুদূর ঠেলে নিয়ে যাবার পর মানুষেরা স্টার্ট নিচ্ছে
শ্বেত পাথরের ঠান্ডা মেঝেয় উদোম গায়ে শুয়ে থাকার ইচ্ছে হচ্ছে এখন
হ্যাঙারে গাবের চামড়া ঝুলিয়ে রেখে নিজের কঙ্কালের মধ্যে ঘুমোলুম ২৫ বছর
আমি আমার বাবার কাছ থেকে পেয়েছি লোভ আর ঔদাসীন্য
আমি মায়ের কাছে পেয়েছি মোক্ষম ক্রুরতা আর ক্ষমা আর আত্মস্বীকার
বা২লাদেশকে চিরে দেয়া লাইনটাকে তুলে হি২স্র তেলচুকচুকে চাবুক কোরে নিয়েছি আজ
চোখের সামরিক রক্তে
ক্রোধ জমছে ধিকিয়ে-ধিকিয়ে
ভারতবর্ষের ১০৮দিকে আমি নিস্তারহীন নজর রাখছি
খারাপ মানে খারাপ কিনা জেনে নিতে আমি ছাপাখানার মেশিনের ময়লায় লুকিয়ে রইলুম
ওফ
প্রতিহিংসা জের্বার কোরে তুলছে
নিজের সঙ্গে শলাপরামর্শ এঁটে ঠিক কোর্ছি কী কোরে প্রতিশোধ নেয়া যায়
এক-একটা চোটে ফেটে গুঁড়িয়ে যেতে চাইছে আমার কঙ্কালের সমঝদার ঘরদোর
আক্রমণের আগে আমি ২দন্ড জিরিয়ে নিচ্ছি
ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাবার পর আমি উঠে দাঁড়িয়ে ফুঁসছি আর গর্জাচ্ছি
বালামচি দিয়ে চোটজখম ঝালাই কোরে স্রেফ ন্যাটা হাতে লড়ে যাচ্ছি ২৫ বছর
সমস্ত-কিছুর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্যে আমার চোখমুখ থমথম কোর্ছে এখন ।।
গন্ধের প্রণয়
মহাভারতের গন্ধ মেখে আসে, খোঁপায় কণকচাঁপা গুঁজে
আমাকে ফুসলিয়ে পচা মাছগুলো চাপিয়ে দেবে বলে
রবীন্দ্রনাথের কৃষ্ণকলি রামপ্রসাদ-রামকৃষ্ণের শ্যামা
সত্যি মেছুনিটা কালো অথচ সমুদ্রের উত্তাল আদরে
গোড়ালি গোলাপি ; সারা দেহে লইট্যার টাটকা-নরম
বুকের খাঁজ জুড়ে জাল-পলায়নরত মাছের উড়াল
চিংড়িগুলোকে ইশারায় টিপে ও দামের বার্তা দেয়
এ-নাও সুরমাই, রাওয়স, ভারতের তেলালো স্যামন
পাপলেট, ওহ পমফ্রেট, নিলে জোড়া নিতে হবে, ভাবো
এইখানা তুমি আর তার পাশে আমি, নয়তো গেদারে
লিপস্টিক-রঙা এ-হল টিউনা মাছ দ্যাখো দ্যাখো ছুঁয়ে
মেছুনির চোখে নিরক্ষর পৌরাণিক ফাঁদে পড়ে কিনি
ইশারার উপমাগুলো ওর উত্তরাধুনিক প্রেম মনে করে
ভস্মাসুরের বংশধর
তিরিশ বছর পর দেখতে এসছি ইমলিতলার বাড়ি
সবাই যাবার পর কেবল জেঠিমা একা থাকতেন
স্টোভে হরিহে হরিহে হরিহে বলে পাম্প করতে বসে
সক্কোলের কথা ওঁর মনে পড়ছিল
যারা বাড়িটাকে গমগমে চাঙ্গা করে রেখেছিল বহুকাল
স্টোভের বিদীর্ণ আগুনে লেলিহান জেঠিমা একা
ইমলিতলার বাড়ি অন্ধকারের রঙিন দখলে চলে গেল
অন্ধকারের কতো রঙ হয় ; আলোর তেমন রঙ নেই
তিরিশ বছর পর দেখতে এসেছি ইমলিতলার ফাঁকা বাড়ি
অন্ধকারের রঙে রাঙা
পাড়ার থুথ্থুড়ে বুড়ি চিনতে পারলো দেখে
কৈশোরে দোলের দিন চটকা-মটকি খেলেছিল আমাকে জাপটিয়ে
বলল, ওহ তুই ! তোরা তো ভস্মাসুরের বংশ !
যেদিকে তাকাস জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিস ।
সত্যিই ভস্মাসুরের আমি বংশধর ; পুড়ি ও পোড়াই !
যারই দিকে চোখ মেলি দগ্ধ হয়ে ছটফট করে
তাদের স্মৃতিতে বসে অস্তিত্ব পুড়িয়ে দিই
মনে রাখবে না মানে !
পুড়বে আর মনে রাখবে ! জ্বলবে আর মনে রাখবে !
আমি তো ভস্মাসুরের বংশধর ; পুড়ি ও পোড়াই---
পুড়ুক পুড়ুক ওরা ঈর্ষায় মরুক জ্বলেপুড়ে ।
শেষতম প্রণয়িনী
এই বালিকাটি হীরের কণা দিয়ে গড়া, একে ছুঁলে
বালুকা-প্রতিমার মতো ঝরে যাবে আমারই ওপরে
হাজার বছর চাপা পড়ে থাকবো উট-চলা পথহীন পথে
শেষতম প্রণয়ের দুরারোগ্য অসুখের অজস্র ক্ষত হয়ে
বিদ্যুৎ-আগুনের বজ্র-স্ফুলিঙ্গ দিয়ে মোহনার সেতু
গড়তে পারলেও হীরের কণার প্রতিমাকে পাওয়া অসেতুসম্ভব
ছোঁবো না কখনও, বলব না ভার্জিন ইলিশখুকিদের সাথে
পদ্মার নৌকা হয়ে এসো স্বপ্নে, আলুলায়নের ডাক দাও।
হীরেকাটা ছুরি দিয়ে বুকের ওপরে রক্তে লিখেছি কাবিন --
দেনমোহর আমার অস্তিত্ব, যখন যেদিন ইচ্ছা, কলজে বা
হৃৎপিণ্ড কেটে নিয়ে যেও, তবুও স্পন্দন থামবে না
তোমাকে দূরত্বে রেখে বাঁচার ক্ষুধার, দেখেছ তো
কোরবানির পরও কতক্ষণ হৃৎপিণ্ডে অস্তিত্ব জেগে থাকে
যেন নাছোড় অশীতিপর মলয় বাতাসের রেশ রয়ে গেছে--
বালি আর বাতাসের প্রণয়সম্পর্ক বুঝতে পারে না কেউ ;
না যৌনতা নয়, যৌনতা তো রাঙঝাল-করা মাংসের
অপ্রণয় ; তাছাড়া, তুমি তো রক্তমাংসের দেবী নও
হীরের কণায় গড়া কালহীন অসেতুসম্ভব মোহনার সেতু
অদ্রীশ বিশ্বাসের আত্মহত্যা
হৃৎপিণ্ডে ওঠেনি কি দ্রিদিম দ্রিদিম দ্রিম দ্রিম
যখন আকাশের ইস্পাতে গিঁট বাঁধছিলে
দেখে নিচ্ছিলে গিঁট শক্ত হলো কিনা
পায়ের শিরাগুলো তাদের কুয়োর দড়ি দিয়ে রক্ত তো পাঠাচ্ছিল
তোমার হৃৎপিণ্ডের দিকে, ভালভ খুলে এবং বন্ধ করে
ওই দ্রিদিম দ্রিদিম দ্রিম দ্রিম শুনে তাড়া পড়ে গিয়েছিল
তোমার শরীর জুড়ে, অথচ তুমি বরফের তৈরি মাথায়
জানি না কবে কোন দিন কখন নির্ণয় নিয়ে ফেলেছিলে
আকাশের হুক থেকে ঝুলে পড়ে, ঝুলে পড়ে আত্মহত্যা করে নেবে
শেষ প্রশ্বাসের সঙ্গে শেষ বীর্য ফোঁটা ঝরেও ঝরবে না
কিছুটা হদিশ কি পাইনিকো ? পেয়ে তো ছিলুম--
বলেও ছিলুম, এ কী করছো অদ্রীশ তুমি, উত্তর দিলে না
নারীও পুরুষের মতো জড়িয়ে ধরতে পারে, ধরে, জানাই ছিল না
আমি তো জানোই, নারীদেরই জড়িয়ে ধরেছি চিরকাল
পুরুষকে জড়িয়ে ধরার কথা ভাবলেই বিরক্তি ধরে, বমি পায়
মনে হয় রাস্তাছাপ রাজনীতি শরীরে আশ্রয় নিতে এলো
এও বলেছিলে তুমি, চিরকাল মুক্তযৌনতার পক্ষে
রজনীশ-আশ্রমের যৌনতার খেলা সমর্থন করো, সম্পর্কের ব্যাগাটেলি
তোমার যৌনজীবনের কথা জানতে চাইলে তবে লজ্জা পেয়েছিলে কেন
ইউরোপে গিয়ে বিদেশিনী প্রেম করেছিলে কিনা, রোমান হলিডে,
জুলিয়েট, জাঁ দুভাল, তার কোনো উত্তর দাওনি তো
তোমাকে বুঝতে পারা ক্রমশ জটিলতর করে দিয়ে তুমি
ফেলে গেলে বুদ্ধদেব বসুর উপহার দেয়া মিমিকে ১৯৬৫ সালে
লরেন্স ফেরলিংঘেট্টি সম্পাদিত সিটি লাইটস জার্নালের দ্বিতীয় খণ্ডটি
যাতে হাংরিদের লেখা প্রকাশিত হয়েছিল, হাওয়ার্ড ম্যাককর্ডের
বিদ্যায়তনিক ভূমিকাটিসহ, ফুটপাথ থেকে কেনার সময়ে
হৃৎপিণ্ডে ওঠেনি কি দ্রিদিম দ্রিদিম দ্রিম দ্রিম
তোমার কাছেই জানলুম, জীবনানন্দের মেয়ে মঞ্জুশ্রীর চাকরি গিয়েছিল
সাউথ পয়েন্ট থেকে, মধুসূদন সান্যালের সাথে প্রেমের কারণে
বলেছিলে তুমি, যে বিদ্রোহী সে তো সমাজবিহীন, তার কেউ নেই
তার অদ্রীশ আছে, মলয়ের প্রথম সাক্ষাৎকার তুমি নিয়েছিলে
যখন কেউই পাত্তা দিতে চায়নি আমাকে, আমার প্রবন্ধগ্রন্হের
ভূমিকাও লিখে দিয়েছিলে, জানি না কখন কবে প্রৌঢ় হয়ে গেলে
সংবাদপত্রে পড়লুম, যখন আকাশের খুঁটি থেকে ঝুলছিলে, ঘরে ছিল
আলো, নাকি অন্ধকার ঘরে তুমি শ্লেষ হাসি ঠোঁটে নিয়ে
এনজয় করেছো প্রিয় একাকীত্ব ; তখনও কি নিজেকে নিজে নিঃশব্দে
বলছিলে : এই বাংলায় দুইটি জিনিস আর ফিরবে না কোনোদিন :
সুভাষচন্দ্র বসু আর সিপিএম । মার্কস বা লানিন নয়, স্তালিনও নয়
মাও বা ফিদেল কাস্ত্রো নয়, কেবল সিপিএম ক্যাডারিত হাড়গিলে লোকেদের
ঘেন্না করে গেছো, তুমি তো প্যারিস রোম ফ্লোরেন্স ভেনিস ব্রিটেনে গিয়েছিলে
তবু তারা রাস্তায় তোমাকে ফেলে রায়গঞ্জে থেঁতো করেছিল
যাদবপুরের চারতলা বাড়ি থেকে হিঁচড়ে টেনে নিয়ে গিয়ে পাগলাগারদে
ইলেকট্রিক শক দিয়েছিল, অথচ তুমি তো নিজেই বিনয় মজুমদারকে
হাসপাতালে দেখাশোনার ভার নিয়েছিলে, বিনয় মজুমদারের বউ রাধা
আর ছেলে কেলোকে সোনাগাছি গিয়ে খুঁজে-খুঁজে ছবি তুলে এনেছিলে
অর্ঘ্য দত্তবক্সির বইয়ের মলাটেতে দেখেছি তাদের, সত্যি বলতে কি
কয় দিন কয় রাত ঝুলেছো নিজের ঘরে, তারপর পিস হেভেনের শীতাতপে নয়
কাটাপুকুর মর্গে তিন দিন পড়েছিলে, বুক চিরে ব্যবচ্ছেদ হয়েছিল ?
ডাক্তারেরা পেয়েছিল কিছু ? জমাট বেঁধে যাওয়া দ্রিদিম দ্রিদিম দ্রিম দ্রিম
জানি না । শুনিনিকো । দেহেতে পোশাক ছিল ? কোন পোশাক ?
লাশকাটা ঘরে ? চোখ আর বন্ধ করোনিকো, সম্ভবই ছিল না
সবুজ প্লাস্টিকে মোড়া, ফুল নেই, রজনীগন্ধার রিদ নেই
সাজুগুজু সুন্দরীরা এসে রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়নিকো তোমার মরদেহ ঘিরে
কেওড়াতলায় উল্টো বন্দুক করে প্রতিষ্ঠানের সেলামি পাওনি তা জানি
নন্দন চত্বরে প্রতিষ্ঠানের মোসাহেবদের মতো শোয়ানো হয়নি দেহ
তোমার প্রিয় সন্দীপন ঘুরতো তো বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পিছনে পিছনে
জিগ্যেস করোনি তাঁকে সিপিএম কেন তোমাকে টার্গেট করেছিল !
আশে পাশে আরও কয়েকজনের শব ছিল, ওঠেনি কি দ্রিদিম দ্রিদিম দ্রিম দ্রিম
দাদা নকশাল বলে শ্রীরামপুরের বাড়িতে হামলা করেছিল, তোমার কথায়
সেই লোকগুলো যারা বাংলার রেনেসাঁকে ধ্বংস করে গড়িয়ার মোড়ে নেচেছিল
বটতলা ফিরিয়ে আনলে তুমি গবেষণা করে, ভিক্টোরিয় বিদেশিরা যাকে
অশ্লীল ছাপ দিয়ে আদিগঙ্গার পাঁকে ছুঁড়ে ফেলেছিল
আর কমলকুমারের রেডবুক, ১৮৬৮ সালে প্রকাশিত প্রথম বাঙালি মহিলার
লেখা উপন্যাস ‘মনোত্তমা’ খুঁজে পেয়েছিল ব্রিটিশ লাইব্রেরির তাকে অযত্নে রাখা
তখন হৃৎপিণ্ডে ওঠেনি কি দ্রিদিম দ্রিদিম দ্রিম দ্রিম
যেমন প্রথমবার প্রেসিডেন্সির প্রথম বছরে ঝালমুড়ি খেতে খেতে
প্রিন্সেপ ঘাটে, ভিক্টোরিয়ায়, ক্যানিঙের ট্রেনে, গঙ্গার খেয়া নিয়ে এপার-ওপার
মা ‘লীলাবতী’কে নিয়ে বই লিখে হয়তো ভেবেছিলে পৃথিবীতে কাজ সাঙ্গ হলো
জানবো কেমন করে বলো, এই তো সেদিন ১৯৬৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর
জন্মেছিলে তুমি, মৃত্যুর দিনটাকে আকাশের খুূঁটিকে বলে চলে গেলে
কেবল এটুকু জানি ২০১৭ সালে ১৬ই জুন কেওড়াতলার শ্মশানে প্রাঙ্গনে
ডেডবডি ক্যারিয়ার সার্ভিস গাড়িতে গোপনে শুয়ে গন্তব্যে চলে গেলে
পাখিরা কোথায় গিয়ে মারা যায় জানতে চেয়েছেন অরুন্ধতী রায়
তিমিমাছ বুড়ো হয় মারা যায়, রুই ও কাৎলা বুড়ো হয়ে মারা যায়
মারা গেলে তাদের গল্পগুলো জলের তলায় চাপা পড়ে থাকে--
কতো কাজ বাকি রয়ে গেল, সেসব প্রজেক্টের কেউই কিচ্ছু জানে না
যাকিছু বহুদিন সযত্নে সংগ্রহ করেছিলে সবই ফালতু মনে হলো
যা জরুরি মনে হলো তা ওই এক ঝটকায় দ্রিদিম দ্রিদিম দ্রিম দ্রিম
বন্ধ করে, নিঃশব্দে অট্টহাসি হেসে, আত্মনিধন করে ফেলা…
মনসান্টো কোম্পানির বীজ
লাঙলের ফলা লেগে মাটির তলা থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি
বেরিয়ে এলেন বলা ঠিক নয়, তিনি তো চিৎ হয়ে চোখ বুজে
শাড়ি-শায়া-ব্লাউজ ছাড়াই শুয়ে । হারাধন চাষি তো অবাক
সেই কবে সীতা লাঙলের ফলা লেগে জন্মেছিলেন, তারপর
অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে দুই-ফাঁক জমির ভেতরে গেলেন রামকে টাটা করে
এখন আলুর ক্ষেতে দেখা দিচ্ছেন কেন, গোলমাল ঘটে গেছে নাকি
অযোধ্যায়, দণ্ডকারণ্যে, বাল্মীকির ছিটেবেড়া-দেয়া আশ্রমে !
এটা তো পশ্চিমবাংলার গণ্ডগ্রাম, শহরে যাবার রাস্তা তৈরি হয়নি
বর্ষায় কিংবা গ্রীষ্মে আত্মীয়স্বজনেরা এমুখো হয় না, ভোটবাবু আসে
বাকসো-প্যাঁটরা নিয়ে পুলিশের সাথে, শীতের সময়ে ।
চাষা ঝুঁকে মুখ দেখে বুঝতে পারলো এই সীতা তো গ্রামেরই
ফেলু সাঁতরার মেয়ে, তিন সপ্তাহ থেকে পাওয়া যাচ্ছিলনাকো--
হারাধন ঝুঁকে চুমু খেলো ঠোঁটে ফেলু সাঁতরার মেয়ে নতুন সীতাকে
মাটি দিয়ে ঢেকে আর, বুনে দিলো মনসান্টো কোম্পানির বীজ…
ডিসটোপিয়ার দেশ
হাজার ঘোড়ার পালের সঙ্গে ‘আমি’ হাঁটতে চেষ্টা করছে, বে-লাগাম
ঘাড় দুলিয়ে, ঘুটঘুটে চটচটে সুড়ঙ্গে
লাগাম আছে জিন আছে
রয়েছে একটামাত্র ‘আমি’ ঘোড়া
গুঁতো মেরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে কালো অন্ধকার সুড়ঙ্গে
বাদবাকি ‘আমরা’ গাধা, ‘আমরা’ খচ্চর
নিজেকে ‘আমি’ বলা বারণ তবু আমি আমাকে ‘আমি’ বলছে
সিংহাসন বলেছে সবসময় নিজেকে ‘আমরা’ ভাবতে হবে
ভিতু উদ্বিগ্ন বিধ্বস্ত মানুষ-মানুষনির মতন দেখতে ‘আমি’কে
ফুটন্ত রক্তের আলকাৎরার ওপর দিয়ে, অন্ধকারই একমাত্র আলো
‘আমি’ অনেক ‘আমরা’র সঙ্গে হাঁটছে
কেউ জানে না কোথায় যাচ্ছে, ঘাড় দুলিয়ে
পাশাপাশি আর সার বেঁধে
কেউ জানে না শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে পৌঁছোবে
বেশ কয়েকজন ঘোড়া গাধা খচ্চর মাঝপথ থেকে পালিয়েছে
এই আশায় যদি ফিরে গিয়ে জেব্রা হতে পারে
‘আমরা’ কারোর কান নেই মুখের ভেতরের অক্ষর-বাক্যরা
গণ্ডোয়ানার সময়ে ফিরে যেতে চাইছে, ঘোড়ারা জানে না তারা ঘোড়ারদল
খচ্চরেরা ভাবছে তারা ঘোড়া, গাধারা ভাবছে তারা খচ্চর
চ্যাভোঁ চ্যাভোঁ করতে থাকবে, অন্য আওয়াজ কেউ শুনবেনা
শব্দেরা ‘আমরা’ খচ্চরদের পাত্তা দেয় না
বাক্যরা ‘আমরা’ গাধাদের তোল্লাই দেয় না
এরকম সময়ে লেখা-গান-ছবিতে শয়তানি করতে পারবে না ঘোড়ারা
তাই বাদবাকি ঘোড়ারা পেছন ফিরে ল্যাজ তুলে দেদ্দৌড় দিয়েছে
তারা কি মারোয়াড়ের ঘোড়া, তারা কি বাবরের ঘোড়া
তারা কি চেঙ্গিজ খানের মোঙ্গোলিয়ার লোমশ ঘোড়া
তারা কি লালন সাঁইয়ের ঘোড়া, যিনি লিখেছিলেন
“আমার মন বেবাগী ঘোড়া
বাগ ফেরাতে পারি না দিবারাতে
মুরশিদ আমার বুটের দানা
খায় না ঘোড়া কোনোমতে
বিসমিল্লায় দিলে লাগাম
একশোত্রিশ তাহার পালান
হাদিস মতে কশনি কসে
চড়লাম ঘোড়ায় সোয়ার হতে
বিসমিল্লায় কিন্তু ভাবি
নামাজ রোজা তাহার সিঁড়ি
খায় রাতে দিন পাঁচ আড়ি
ছিঁড়ল দড়া আচম্বিতে
লালন সাঁই কয় রয়ে সয়ে
কত ঘোড়া সোয়ারি যাচ্ছে বেয়ে
পার পাব কি আছি বসে
শুধু আমার কোড়া হাতে”
নাকি তারা জীবনানন্দের ঘোড়া, যিনি লিখেছিলেন
“আমরা যাইনি মরে আজও - তবুও কেবলই দৃশ্যের জন্ম হয়
মহীনের ঘোড়াগুলো ঘাস খায় কার্তিকের জ্যোৎস্নার প্রান্তরে
প্রস্তরযুগের সব ঘোড়া যেন -- এখনও ঘাসের লোভে চরে
পৃথিবীর কিমাকার ডাইনামোর ‘পরে
আস্তাবলের ঘ্রাণ ভেসে আসে একভীড় রাত্রির হাওয়ায়
বিষণ্ণ খড়ের শব্দ ঝরে পড়ে ইস্পাতের কলে
চায়ের পেয়ালা কটা বেড়ালছানার মতো - ঘুমে - ঘেয়ো
কুকুরের অস্পষ্ট কবলে
হিম হয়ে নড়ে গেল ওপাশের পাইস রেস্তঁরাতে
প্যারাফিন লন্ঠন নিভে গেল গোল আস্তাবলে
সময়ের প্রশান্তির ফুঁয়ে
এইসব নিওলিথ স্তব্ধতার জ্যোৎস্নাকে ছুঁয়ে”
নাকি ঘৌড়দৌড়ের আন্দালুশীয় ঘোড়া
ঘোড়া কেবল রেসের মাঠে জুয়া খেলায় কাজে লাগে
ফলে ডিসটোপিয়ার দেশে
বেঁচেছে কেবল কালো রঙের ‘আমি’ ঘোড়া
অথচ ‘আমি’র রক্তে শয়তানি, ‘আমি’র মজ্জায় মজ্জায় বজ্জাতি
প্রতিটি শব্দ বাক্য অমৃতমন্থনের ধোপার পুঁটলি থেকে বেরিয়েছে
দেবতাদের অসুরদের ঘোড়াগাধাখচ্চরের পুঁটলিতে তফাত নেই
সেগুলো রয়েছে রঙহীন ছবিহীনতার নাইলন-দড়িতে বাঁধা
ঘোড়াগাধাখচ্চরের জন্য রেখা টেনে দেয়া হয়েছে তা তারা ডিঙোবেনা
‘আমি’ লোকটা ডিঙোয়, তার থেকে দূরে থাকে অন্য
‘আমরা’ গাধা ‘আমরা’ খচ্চররা
খচ্চরক্যাচাল ভালোবাসে খচ্চরদলদাস
ভগভোগ করার ধান্দায় মাতে মর্ত্যচুম্বী শ্যামলিঙ্গের গাধাক্যাডার
জগতসংসার এই বাকভেড়ুয়া গাধা-খচ্চরদের ইউটোপিয়া
সিংহাসন হুকুম জারি করেছে
কোনো ঘোড়াগাধাখচ্চর একা নিজের মতো করে চিন্তা করবে না
বেফাঁস চিন্তা করলেই শাস্তি
সিংহাসনের ঘাসখোর রোগাটে লেঠেল-খচ্চররা আছে
পাঠশালায় মুখস্হ তেইশ আর চব্বিশ অনুচ্ছেদ
মগজে পুরে দেয়া হয়েছে আলকাৎরায় তৈরি অজস্র তুলতুলে জোঁক
সিংহাসন বদলালেও ‘আমি’ বলা চলবে না
কর্নওয়ালিসের চিরস্হায়ী বন্দোবস্তের লেঠেলদের সন্তানগাধা
নীলকর সাহেবদের পোষা বেজন্মা খচ্চরসন্তান মাস্তান
অন্ধকার যুগের জন্মান্ধ গাধার দল, বেজন্মা খচ্চরের পাল
তারা জানতে পারে না শান্তিভঙ্গের চ্যাভোঁ চ্যাভোঁ শব্দবাক্য কেন দোষাক্ত
অমুক ধারা তমুক উপধারা লোহার অক্ষরে লিখে গেছে ম্যাকলে
সেই অন্ধকার কানা সুড়ঙ্গ তাদের মুক্তির হাইওয়ে
গাধারা একা থাকলেই চিন্তা করবে বলে ওদের দল গড়া হয়েছে
খচ্চররা একা থাকলেই দুষ্টচিন্তা করবে
একা থাকলেই ‘আমি’ হয়ে উঠতে পারে
হয়তো পারে কিন্তু গাধা, তাই হয় না
যে খচ্চররা হয়, তারা তিলেখচ্চর
ঘোড়ারা মহাকাব্যের সময় ছিল, তারা ‘আমি’ ঘোড়া হয়ে যুদ্ধ লড়েছিল
কোনো ‘আমি’ যুবতী দেখলে ভালোবেসে ফেলতে পারে
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ চলছিল তখনও
কৌরবদের ঘোড়ানিকে ভালোবেসেছে পাণ্ডবদের ঘোড়া
দেশভাগের দাঙ্গায় পালাতে-পালাতে দেখেছে ঘোড়া-ঘোড়ানি প্রেমে মশগুল
চেঙ্গিজ খানের নির্দেশ মানেনি প্রেমিক ঘোড়া
স্তালিনের হুকুম মানেনি প্রেমিকা ঘোড়ানি
পিনোচেতকে অমান্য করেছে তারা
‘আমি’ ঘোড়াকে তাই পাঠানো হচ্ছে অন্ধকার যুগে
অন্ধকার যুগে ‘আমি’র সঙ্গে ‘আমি’র ভালোবাসা নিষিদ্ধ
একা চিন্তা করার চেষ্টা করলেই ল্যাজে সংশোধনের আগুন বরাদ্দ
সেখান থেকে রোগাটে খেঁকুরে অসুস্হ হয়ে ফিরবে দেগে-দেয়া
লেঠেল-গাধা আর ক্যাডার-খচ্চর
ছাত্র-খচ্চর আর ছাত্রী-গাধা
নয়তো আড়ঙ ধোলাইকারীদের হেফাজতে
খচ্চর আর গাধাদের চরিত্র আর শরীর বইতে বাধ্য মানুষ-মানুষনিরা
সিংহাসনের হুকুম
ক্ষমতার বিরুদ্ধে ‘আমি’রা লিখবে না, গাইবে না, ভাববে না
অদৃশ্য নোটিস ঝোলানো আছে রক্তপেছল সুড়ঙ্গের হাইওয়েতে
লেখায় আঁকায় গানে অপরাধ নিষিদ্ধ
অন্ধ-বোবা-কালা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া আর কিছু করতে পারবে না
স্কুলে মুখস্হ উনিশ কুড়ি একুশ বাইশ অনুচ্ছেদ
মানুষের হাড়-মাংস দিয়ে গড়া গাধা আর খচ্চর
পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফাটল দিয়ে পুঁজের ধারা
‘আমি’র চার পায়ে রক্তের চটচটে আলকাৎরার গোপনীয়তা
চালিয়ে যেতে হবে শয়তানির হ্রেষা হিঁ হিঁ হিঁ হিঁ
যদিও শিক্ষকরা আর নেতারা হুমকি দিয়ে চলেছে
একটু নড়নড় করেছো তো তোমার একদিন কি হুকুমের একদিন
‘আমরা’ গাধার দল মুখ বন্ধ রেখে ওনাদের মা-বাপের গাল পাড়ে
‘আমরা’ খচ্চরের পালও তাই
কেননা ‘আমরা’ গাধারা সৎ চিন্তার দরুণ অভিশপ্ত
‘আমরা’ খচ্চরেরা খচরামি করতে পারে না
মাটিতে ছায়া পড়লে ওরা কুড়িয়ে নিয়ে ‘আমির’ বিরুদ্ধে প্রয়োগ করবে
গাধার আবার ছায়ার গর্ব, অ্যাঁ, ‘আমি’ হবার বায়না
গাধাদের কবর হলো তাদের অক্ষর আর বাক্যের হারানো গোরস্তান
অক্ষর আর বাক্যের ঝাড়ুদার লিসলিসে অন্ধকার
ইচ্ছার ধ্বংসাবশেষকে স্বাধীনতা ভেবে চ্যাভোঁ চ্যাভোঁ
গাধারা নাকি সকলেই আইনের চোখে সমান
আইন নাকি গাধা-খচ্চরের পথে চলে
জঘন্য সময়ের জয়ধ্বনি করতে করতে অন্তসত্বা বপুর পুরুষেরা
ঘোষণা করেছে
চাকরি পাবার জন্য হাড়ভাঙা ছোটাছুটি বরদাস্ত করা হবে না
নাম জানতে চাইলে ‘আমি’ ঘোড়া বলে
‘আমি’ হলো সংবিধান, ‘আমি’ হলো মুক্তি, ‘আমি’ হলো ভোট-নোট
বিস্ময়ের ক্ষমতা গাধাদের লুকোনো ভয়, হাড়ে-হাড়ে জানে সবাই
গাধারা ভেবেছিল বন্দুকের নলই সত্য, গুলি খেয়ে মরার পর
বুঝেছে বিস্ফোরণ মাত্রেই সত্য, রণে বনে জঙ্গলে গলিতে রাজপধে
সিংহাসন-ক্ষমতার আকাশ-ছোঁয়া ফিসফিসানি
গাধাদের কি শৈশব ছিল না ? তারা কি বেখবর লাফালাফি করেনি ?
খচ্চরের কি বাল্যকাল ছিল না বেহিসাবি আবদার
তারা তো জানতো না বাতিল হয়ে যাবে, রক্তের আলকাৎরায় দৌড়োবে
‘আমরা’ই রাষ্ট্র হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ ‘আমরা’ই শাসক হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ
এক প্রতিধ্বনি আরেক প্রতিধ্বনিতে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসছে
সবে মিলি করি কাজ হারি-জিতি নাহি লাজের মানে পালটে গেছে
প্রতিনিধিরা যে যার নিজের প্রতিনিধি,
চম্পট দেবার রাস্তার মালিক তারাই
বিছানায় না শুলেও তারা নাক ডাকার শব্দ চাদরের তলায় রেখে গেছে
তাদের সুবিধা তারা মাথা নিয়ে জন্মায় না
কর্পোরেট প্যাকেজের সাহায্যে চ্যাভোঁর বিপণন চলছে
‘আমরা’ গাধারা কেন জটিল মগজ নিয়ে জন্মায় বিরক্তিতে চ্যাভোঁ ডাক পাড়ে
খচ্চররাও তাই, দুর্বিনীত বেয়াদব বত্তমিজ জাহিল
ফেলো ট্র্যাভেলারদের দাঁত খুলে সোনার মুকুট পরিয়ে দেয়া হয়েছে
গাধার মাথায় হীরে-ভূষিত সোনার মুকুট
খচ্চরের মাথায় চুনি-পান্না-পোখরাজ বিভূষিত প্ল্যাটিনাম টোপর
কলেজে মুখস্হ উনতিরিশ আর তিরিশ অনুচ্ছেদ
অপরাধ করতে করতে খসখসে জিভ কালো
অথচ গাধা ‘আমরা’র দল গণ্ডোয়ানার ভূমিপুত্র
প্রান্তিক ‘আমরা’-গাধা বড়ো ‘আমরা’- গাধার সঙ্গে লড়ছে
তাদের দাবি তাদের মাংস কেন মানুষ-মানুষনিরা খাবে না
শুয়োরের মতন নোংরা প্রাণীর দেহের সব টুকরো খায়
লেজ খায় পা খায় কিন্তু গাধার চামড়া ছাড়া বাদবাকি কেন বিক্রি হবে না
আফ্রিকা থেকে গাধারা লোপাট হয়ে চীনে চলে যাচ্ছে
আম-কে-আম গুঠলি-কে-দাম কমিউনিস্ট দলের পুঁজিবাদী সেবায়
এমনটাই আশা করছেন কর্তা ও কর্তাভজারা
অন্ধকার পেছলা সুড়ঙ্গ দিয়ে ‘আমরা’ গাধা হাঁটছে
খচ্চররাও তাই
অন্ধকার বৈরী না আলো বৈরী
বাইরের লোকেরা এসে ঘোড়াগাধাখচ্চরদের দুই ভাগে ভাগ করে দিয়েছে
দুই ভাগই এমন ভান করে যেন কতো তাদের ভালোবাসাবাসি
কারণ তারা মুখ দিয়ে একই রকমের ডাক পাড়ে
চ্যাভোঁ চ্যাভোঁ হিঁ হিঁ হিঁ হিঁ হ্রিঁ হ্রিঁ হ্রিঁ হ্রিঁ
চেরনোবিলে ‘আমরা’ গাধা মরেনি ফুকুশিমায় মরেনি ‘আমরা’ গাধা
খচ্চররাও তাই
মরেছে ‘আমি’ ঘোড়া যাদের সংখ্যা চেপে যাওয়াই নিয়ম
কারণ ‘আমি’ ঘোড়াদের চাঞ্চল্যকর সংকট
‘আমরা’ গাধাদের সে সমস্যা নেই
খচ্চরদেরও তাই
আওয়াজ-তোলার, অমান্য করার, প্রতিরোধ করার, সায় না দেবার অপরাধ
পুলিশের গাড়িতে বসে রাতের চোর গাঁটকাটার আস্তানা দেখেছে ‘আমি’ঘোড়া
শিক্ষকরা বলেছে কোথাও কোনো রহস্য নেই সবই বস্তু
হাঁপানি হৃদরোগ হাড়ব্যথা হার্নিয়া-কাতরানি প্রোস্টেটকষ্ট অবস্তু নয়
দেহ আর সমাজদেহ থেকে বদরক্ত বের করার সাফাইক্রিয়া
মার্বেল পাথরে ‘আমরা’ গাধার খুরের রক্ত-আলকাৎরায় অবিনশ্বর
‘আমরা’ খচ্চরদেরও তাই
তবু ‘আমরা’ গাধারা প্রশ্ন তোলেনা, তারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না
তারা জানে ঈশ্বর মোটেই সর্বশক্তিমান নয়, সিংহাসন সর্বশক্তিমান
‘আমরা’ খচ্চরদেরও তাই বিশ্বাস
‘আমরা’ গাধাদের জন্য সিংহাসনের ভাড়া করা বড়দা-ভাইরা রয়েছে
অন্ধকার সুড়ঙ্গের শেষে তাদের দেখা যায় না
‘আমরা’ খচ্চরদেরও তাই
অকেজো ‘আমরা’ গাধাদের জন্য পিঁজরাপোলে স্হানাভাব সেখানে গাদাগাদি
একদল আরেকদলকে দুলাত্তি মেরে জায়গা বানায়
‘আমরা’ খচ্চরদেরও তাই
প্রতিটি নিষেধের জন্য আইনের অনুমোদন দরকার হয় না
সিংহাসনের ঘাড় নাড়ানোই ‘আমরা’ গাধাদের শায়েস্তার জন্য যথেষ্ট
‘আমরা’ খচ্চরদেরও তাই
যে ‘আমরা’ গাধারা আগ্নেয়গিরি হয়ে জন্মেছে তাদের বলা হলো
রাস্তায় ঝাড়ু লাগাও
‘আমরা’ খচ্চরদেরও তাই
সুশীল সমাজের বুড়োদের সঙ্গে তার মিছিলে যোগ দেবার অধিকার নেই
বুড়োরা বুড়োদের মতন আচরণ করবে
কাটমানি খাবে, ছেলেকে ঘাঁতঘোঁত শেখাবে, সিন্ডিকেট গড়বে
সিংহাসন জানেনা জাল ‘আমরা’গাধারা দিব্বি আসল ডাক্তারি করছে
জাল গাধা ‘আমি’ হতে চেয়েছিল
জাল খচ্চর ‘আমি’ হতে চেয়েছিল
ভর্তির কোটি টাকা ক্যাশ ডোনেশান দিতে না পারায়
‘আমরা’ গাধা হয়ে চালাচ্ছিল
তার আগে চৌমাথায় ‘আমরা’ ক্লাবের ট্র্যাফিক ভলেণ্টিয়ারি করেছে
নেড়ে ইমামের আরেকটা পাকিস্তান দাবির হুমকিতে
অনেকে লাল ‘আমরা’ থেকে গেরুয়া ‘আমরা’ হয়ে গেলো
যাহাঁ ‘আমরা’ গাধা ‘তাহাঁ’ আমরা খচ্চর
অন্ধকার সুড়ঙ্গের শেষে নাকি পুকুর-জলা খাল-বিল হাওড়-বাওড় ছিল
‘আমরা’ গাধারা প্রশ্ন তুলেছে ভীষ্মের বিমাতা সত্যবতী কোন জাতের মেয়ে
মৎস্যজীবীর মেয়ে মানে তো শুদ্দুর
পাণ্ডব-কৌরবরা ছিল ক্ষত্রিয়
তারা ‘আমি’ গাধাদের প্রশ্রয় দেয়নি ইউটোপিয়ার আশায়
‘আমরা’ যারা তারা ভেবেছিল রামের রাজ্য মানে ইউটোপিয়া
‘আমরা গাধারাও ‘আমরা’ খচ্চররাও
‘আমি’ ঘোড়া সব ষড়যন্ত্রেরর ইশারা টের পাচ্ছিল
সেই ইউটোপিয়ায় মহাকাব্যের পরমপুরুষ ‘আমরা’ বউকে সন্দেহ করে
সরযু নদীর স্রোতহীনতার রঙ দুধ ঢেলে পালটে দিতে চায়
মহাকাব্যে ‘আমরা’ গাধারা অপাংক্তেয় নয়
সাঙ্কো পাঞ্জা খচ্চরের পিঠে বসে হেসেছে ডন কিহোতের
লড়াই দেখে, উইণ্ডমিলের সঙ্গে লড়াই
এখনকার ‘আমরা’ গাধারা নীরব দর্শক, গোষ্ঠীক্যাচালের
বোমাবাজি গুলিগোলা চালাবাড়িতে আগুন দেখলেই
পালায়, ‘আমরা’ খচ্চররাও তাই, পালায় পালায় পালায়
যদিও ‘আমরা’ গাধারা এনকাডুর ঔরসে শামহাতের গর্ভে জন্মেছিল
লেখা আছে গিলগামেশের জীবনীতে
সাতদিন সাত রাত শামহাতের সঙ্গে সেক্স করে বুনো জানোয়ার
এনকাডু হয়ে গেল ‘আমরা’ গাধাদের পূর্বপুরুষ
‘আমি’ গাধারা জন্মালো গিলগামেশের ঔরসে
সেই গিলগামেশ যে সিংহ মেরে বগলদাবায় নিয়ে বাড়ি ফিরতো
‘আমি’র পৃথিবী ‘আমি’র আকাশ ‘আমি’র জলরাশি ‘আমি’র ঝড়
‘আমি’র বনাঞ্চল ‘আমি’র সমুদ্র ‘আমি’র নক্ষত্র ‘আমি’র বিদ্যুৎ
‘আমি’র মহাগ্রন্হ ‘আমি’র কবিতা ‘আমি’র গান ‘আমি’র আঁকা ছবি
হারিয়ে গেল গাধাদের জীবন থেকে
খচ্চরদেরও তাই
গাধা আর খচ্চররা হয়ে গেল অনুগত ‘আমরা’
শেষ পর্যন্ত ‘আমি’ ঘোড়া একাই সুড়ঙ্গের বাইরে বেরোয়
‘আমরা’ গাধারা যে যখন পেরেছে দে-পিট্টান দিয়েছে
‘আমরা’ খচ্চররাও তাই
‘আমি’ ঘোড়া একা বাইরে আলোয় বেরিয়েই
শোনে দলবদ্ধ চিৎকার, কাউকে দেখতে পায়না
যেন লাউডস্পিকার নিজেই কথা বলছে আরেক লাউডস্পিকারের সঙ্গে
“আমি ঘোড়া বেরিয়েছে”
আরে ‘আমরা’ গাধারা ‘আমরা’ খচ্চররা গেল কোথায়
গাধাজনতার জন্য অপেক্ষা করছি আমরা কতোকাল
কতোযুগ হা-পিত্তেশ করে আছি মহাখচ্চরদের জন্য
এটা তো বেয়াড়া ঘোড়া
“এমন কিম্ভুত জীব তোরা দেখিসনি কখনও”
শয়ে-শয়ে কাঁসরঘণ্টা বাজাচ্ছে অদৃশ্য প্রাণীরা
স্তোত্র পড়ছে সুর করে
জ্ঞানানন্দ ময়ং দেবং নির্মল স্ফটিকাকৃতি
আধারং সর্ববিদ্যানং হয়গ্রীবং উপস্মহে
‘আমি’ বুঝতে পারছিল না অদৃশ্য কন্ঠস্বরেরা কী বলতে চাইছে
এরা কি কখনও ‘আমি’র মতন ঘোড়া দ্যাখেনি
‘আমি’ ঘোড়া সুড়ঙ্গের বাইরে বেরিয়ে দেখল, গাছেরা শুকিয়ে আর ঝিমিয়ে
একই গাছে কোনো পাতার রঙ গেরুয়া
কোনো পাতার রঙ সবুজ হলেও পাতার ওপর শাদা রঙের দ্বিতীয়ার চাঁদ
কোনো পাতা একেবারে কুচকুচে তার ওপর শাদা রঙে গুটিপোকা আঁকা
জংধরা কলকারখানা ভেঙেচুরে পড়ে আছে, বাড়িগুলোয় কেউ থাকে না
দরোজা-জানালার কপাট নেই, ঝড়বৃষ্টিতে কালো আর ভুতুড়ে
এগিয়ে গিয়ে ‘আমি’ ঘোড়া দেখলো কয়েকটা দরোজায় চটের পর্দা
দেখলেই টের পাওয়া যায় মরা আর আধমরারা দিনগুজরান করে
এই মহাপৃথিবী জুড়ে মৃত্যুর গন্ধ
রাস্তাগুলো কয়েক শতক সারানো হয়নি
জঞ্জালের পাহাড় পরিষ্কার হয়নি কয়েক শতক
এ তো একেবারে প্রাণীশূন্য জগৎ
দুর্গন্ধের ব্রহ্মাণ্ড
কিন্তু রাস্তার ধারে টাটকা ন্যাড় যেন এই মাত্র হেগে গেছে ‘আমরা’ গাধা-খচ্চর
ওই তো কয়েকজন ‘আমরা’গাধা যাচ্ছে
চামড়া ছাড়ানো চারটে খচ্চরকে চাবকাতে চাবকাতে, রক্ত বইছে
ওই তো কয়েকজন ‘আমরা’ গাধা
পিঠে ভারি আর ছেঁড়া পুঁটলি বইছে, পুঁটলি থেকে টাকা ঝরে পড়ছে
‘আমরা’ গাধাদের তাতে কোনো দুশ্চিন্তা নেই বলে মনে হলো
হাড়গিলে জনবিশেক জীব কোথা থেকে এসে ‘আমরা’ গাধাদের পায়ে পড়ল
‘আমরা’ গাধারা তাদের দুলাত্তি মেরে দুরে ছিটকে ফেলে দিলে
ভুখা জীবগুলোর গায়ে ছেঁড়া নোংরা কাপড়-চোপড়
কয়েকজন জীব মাটিতে ঝরে পড়া টাকা কুড়োতে লাগলো
কেউ-কেউ চলল ‘আমরা’ গাধাদের পেছন পেছন কাঁদতে কাঁদতে
‘আমি’ ঘোড়ার দিকে সন্দেহের চোখে ভুরু কোঁচকালো ‘আমরা’ গাধারা
উদ্ভটবৃক্ষের জঙ্গল পেরিয়ে ‘আমি ’ঘোড়া এগোলো
ঘোড়ালয়ের খোঁজে
‘আমি’ ঘোড়া বুঝতে পারছিল এই এলাকাটা খচ্চরালয় বা গাধালয়
ওই তো ল্যাংটো ‘আমরা’ গাধারা ‘আমরা’ খচ্চররা সামনের দুই পা এগিয়ে
মুখ দিয়ে ভ্রুম ভ্রুম ভ্রুম ভ্রুম আওয়াজ তুলে
মর্ত্যচুম্বী শ্যামলিঙ্গ ঝুলিয়ে
একজন ছুটন্ত তরুণীজীবের পেছনে দৌড়ে যাচ্ছে
‘আমি’ ঘোড়ার দিকে তাকিয়ে একজন ‘আমরা’ খচ্চর চেঁচিয়ে বলল
এর ভগাঙ্কুর ছেঁটে পবিত্র করতে হবে
আমরা একে মুক্তি দিতে চাই
যতোদিন না এর রাগমোচন হচ্ছে ততোদিন মুক্তি পাবে না
রাগমোচনের পর একে হত্যা করে মুক্তির স্বর্গে পাঠাতে হবে
ছুটন্ত তরুণীজীব ‘আমি’ ঘোড়ার দিকে তাকাবার সময় পেলো না
বাকি ‘আমরা’ গাধা আর ‘আমরা’ খচ্চর একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল
“মুক্তি স্বাধীনতা সাম্য জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ”
‘আমি’ ঘোড়ার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে পৃথিবী এখানে মরে গেছে
মরে পড়ে আছে কয়েক দশক
চলছে জ্বালানো পোড়ানো কামড়ানো কোপানো চাবকানো
বিষের ধোঁয়া উড়িয়ে চলে গেল গ্যাসগাড়ি ডুশেগুবকা
ভেতর থেকে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা চেঁচামেচি চিৎকার কান্না
‘আমরা’ খচ্চরের টানা গাড়িতে বসে দেখনবিচার করতে যাচ্ছে বুড়ো গাধা
যারা সমাজের মঙ্গলকরে পাপবোধে ভোগেনি তাদের বিচার হবে
বিশ্বাসে মিলায় মৃত্যু তর্কেতে কোতল
‘আমি’ ঘোড়া এগিয়ে যায়
বিচারের প্রথম ধাপ নজরে-নজরে রাখা, তারপর ঘোর সন্দেহ
তারপর হেফাজত, কারাগার দেখা গেল না, দেখা গেল কুৎসাগার
রাস্তার পাশে মাঝে-মাঝে ফাঁসিকাঠে ঝুলছে
গাধা-খচ্চর, যাদের নাকচোখ দেখে অন্তর্ঘাতী মনে হয়েছে ঝুলছে তারা
চামড়ার ফাটল দিয়ে এখনও কান্নার জল গড়াচ্ছে
বহুকাল ঝুলে শুকিয়ে গেছে তারা, মাংস খসে হাড় বেরিয়ে পড়েছে
‘আমি’ ঘোড়া আরও এগোয়
দারা শুকোর নাড়ি আর গর্ভফুলের ওপর সিংহাসনের পিরামিড
কর্পোরেট সিংহাসন
আমলাঘোঁট সিংহাসন
তত্ত্বক্যাচাল সিংহাসন
ধর্মগুরু সিংহাসন
মোল্লা সিংহাসন
পাদ্রি সিংহাসন
পাওয়া আর পাইয়ে দেবার চরস-চণ্ডু মাদকের জানলায়
কিউ দিয়েছে ‘আমরা’ খচ্চরেরা
কিউ দিয়েছে ‘আমরা গাধারা
জীবনকর হিসাবে জমা দিচ্ছে যে যার কন্ঠের বাগযন্ত্র স্বরযন্ত্র
যাতে ওরা ছলনা প্রতারণা করতে না পারে
যাতে ওরা যে যার নিজের স্বরূপ ফাঁস করতে বাধ্য হয়
তার বদলে টাকাকড়ি উত্তরীয় মেডেল পাবে
‘আমি’ ঘোড়া আরও এগোয়
একই সঙ্গে আগুন আর তুষার বৃষ্টি হচ্ছে
কাগজের দশবারোটা পাহাড় পোড়াবার আগুন-ফুলকি উঠেছে ওপরে
গোপন নথিপত্র পোড়ানোর আগুন ঝরছে
বিরোধীদের পাণ্ডুলিপি পোড়ানোর আগুন ঝরছে
আকাশ ধোঁয়ায় ধোঁয়াক্কার, কার্বন মনোক্সাইডে নীলাভ
কোথায় লুকিয়ে আছে বিরোধীরা যাদের পাণ্ডুলিপি পুড়ছে
তারা কীই বা লিখেছিল পাণ্ডুলিপিতে যে পুড়িয়ে নষ্ট করতে হবে
তার মানে কিছু লোকের সাহস আছে
বিরোধীতা করার, অমান্য করার
তারা কোথায়
যে তরুণী পালাচ্ছিল সে কি সিংহাসনের বিরোধী
‘আমি’ ঘোড়া আরও এগোয়
কোথাও সবুজ ঘাস নেই
শুকনো ঘাসও নেই
বিরাট-বিরাট কাঁকড়া হেঁটে-চলে বেড়াচ্ছে
এরকম বড়ো-বড়ো কাঁকড়া তো সমুদ্রেও হয় না
এখানে হলো কেমন করে
হলো না এলো
কোথা থেকে এলো এতো দৈত্যকাঁকড়া
একদল ‘আমরা’ খচ্চর চেঁচাতে-চেঁচাতে যাচ্ছে
কালো হাত গুঁড়িয়ে দাও ভেঙে দাও, তাদের নিজেদের হাত ইস্পাতের
ইস্পাতের হাতে ধর্মকাঁটার লুকোনো হুল
হুলের কলম দিয়ে ইতিহাস লিখবে বলছে
বর্তমানকে তো নানা ক্যারদানি করেও বদলানো গেলো না
তাই অতীতকে বদলে ফেলতে চাইছে
শুনতে পায় ‘আমি’ঘোড়া
‘আমি’ ঘোড়া এগোয় এগোয় এগোয় এগোয়
পায়ের কাছে অজস্র দৈত্যকাঁকড়া সামলে এগোতে হয়
দেখতে পায় পোড়োবাড়ির খোলা জানলায় মুখ ঢোকাবার জন্য ঠেলাঠেলি
পাতলা-ক্যাঙলা-রোগারা ছিটকে পড়ছে ধাক্কা খেয়ে
দিনে এক হাতা পান্তা প্রতি হাঁ-মুখের জন্য বরাদ্দ
উঁচু জাতের বরাদ্দ শেষ হলে নিচু জাতের পালা
আশরাফদের বরাদ্দ শেষ হলে আতরাফদের পালা
কিন্তু উঁচু জাতের গাদাগাদি শেষ হতেই তো বোধহয় তিন দিন লাগবে
মাঝপথে ফুরিয়ে গেলে সেদিনের মতো জানলা বন্ধ
জানলা বন্ধ হবার পর কয়েকজন ‘আমরা’ গাধা কাঁদতে কাঁদতে যায়
কয়েকজন ‘আমরা’ খচ্চর কাঁদতে কাঁদতে যায়
তাদের ফিসফিসে অভিযোগ শুনতে পায় ‘আমি’ ঘোড়া
“আমরা শেয়াল আর হায়না মেরে দিই, সেই মাংস রান্না করে ওরা খাওয়ায়
কারণ আমাদের রান্নার বাসন কোসন নেই
রান্নার আগুন নেই
সব আগুন ওরা নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছে
বাড়িঘর নেই বলে ঝড় বৃষ্টি রোদ থেকে বাঁচতে
আমরা শেয়ালের আর হায়নার গর্তে বসবাস করি”
‘আমি’ ঘোড়া এগোয়
উরিত্তেরি
এই অঞ্চলের সবায়ের কেড়ে-নেয়া ঘুম জ্বলিয়ে
ল্যাম্পপোস্টের মশালডুম আলো ফেললো তল্লাটে
দেখতে সুবিধা হলো ‘আমি’ ঘোড়ার
ওই তো সেই তরুণী
এই দিকেই দৌড়ে আসছে
পেছন পেছন ভ্রুম ভ্রুম ভ্রুম ভ্রুম আওয়াজ তুলে
সামনের দুই পা এগিয়ে ল্যাংটো ‘আমরা’ গাধা আর ‘আমরা’ খচ্চরেরা
শ্যামলিঙ্গ ঝুলিয়ে পিছু নিয়েছে
‘আমি’ ঘোড়াকে দেখে লাফিয়ে তার পিঠে চেপে লাগাম ধরল তরুণী
‘আমি’ ঘোড়া ছুটতে আরম্ভ করল
এই মরা পৃথিবী থেকে বাইরে বেরোবার জন্য
বেরোতেই হবে
প্রতিদিন : একটি পোস্টমডার্ন কবিতা
( জীবনানন্দের 'আটবছর আগের একদিন' কবিতার প্যাশটিস )
শোনা গেলো লাশকাটা ঘরে
নিয়ে গেছে তারে, আর তার বউ ও শিশুকে
কাল রাতে - ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন ভাঁড়ারে আর একদানা চাল নেই
বধূ-শিশু খুন করে মরতে বাধ্য হলো ।
বধূ শুয়ে ছিল পাশে - শিশুটিও ছিল
প্রেম ছিল, ছিলনাকো কিছুই খাবার - জ্যোৎস্নায় - তবু সে দেখিল
ক্ষুধার প্রেতিনী ? ঘুম তো আসে না রাতভর
কেননা ক্ষুধার্ত পেটে হয়নি ঘুম বহুকাল - লাশকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার ।
এই ঘুম চেয়েছিলো বুঝি !
বিষ-গ্যাঁজলা মাখা ঠোঁটে মড়কের ইঁদুরের মতো ঘাড় গুঁজি
আঁধার ঘুঁজির বুকে তিনজন খালি পেটে ঘুমায় এবার
কোনোদিন এই পরিবার জাগিবে না আর
খালি পেটে গাঢ় বেদনার
অবিরাম অবিরাম ক্ষুধা
তিনজনে সহিবে না আর --
এই কথা বলেছিল তারে
চাঁদ ডুবে চলে গেলে - বুভুক্ষু আঁধারে
যেন তার মেটেল দুয়ারে
মোটরসাইকেলবাহী ধর্ষকেরা এসে
তবুও তো নেতা জাগে
লুম্পেনেরা এসে ভোট মাগে
আরেকটি নির্বাচনের ইশারায় - অনুমেয় উষ্ণ হুমকি দিয়ে
টের পাই যুথচারী আঁধারের গাঢ় নিরুদ্দেশে
চারিদিকে র্যাশনের ক্ষমাহীন বিরুদ্ধতা ;
নেতা তার আরামের সঙ্ঘারামে নেশা করে বুকনি ঝাড়তে ভালোবাসে ।
শ্রম ঘাম রক্ত চুষে আড্ডায় ফিরে যায় নেতা
অবরোধ-করা মোড়ে অ্যামবুলেন্সে কান্না দেখিয়াছি ।
কাঠফাটা খরা নয় - যেন কোনো চালের ভাঁড়ার
অধিকার করে আছে ইহাদের ভাব
দলীয় গুণ্ডাদের হাতে
বধূটি প্রাণপণ লড়িয়াছে
চাঁদ ডুবে গেলে পর নিরন্ন আঁধারে তুমি বউটিকে নিয়ে
ফলিডল খেয়েছিলে, শিশুটির গলা টিপে মেরে
যে-জীবন ফড়িঙের দোয়েলের
তা তোমার শৈশব থেকে ছিল জানা ।
পেটের ক্ষুধার ডাক
করেনি কি প্রতিবাদ ? ডেঙ্গুর মশা এসে রুক্ষ চামড়ায় বসে
রক্ত না পেয়ে দেয়নি কি গালাগাল ?
জোয়ান লক্ষ্মীপেঁচা চালাঘরে বসে
বলেনি কি : 'সংসার গেছে বুঝি দারিদ্রে ভেসে ?
চমৎকার !
হাড়গিলেদের ঘরে ইঁদুরও আসে না ?'
জানায়নি পেঁচা এসে এ তুমুল ক্ষুব্ধ সমাচার ?
জীবনের এই স্বাদ - সুপক্ক ধানের ঘ্রাণ
কতোকাল পাওনিকো তুমি
মর্গে আজ হৃদয় জুড়োলো
মর্গে - শীতাতপে, তিনজন
ফলিডলে গ্যাঁজলা-ওঠা ঠোঁটে !
শোনো এ তিন মৃতের গল্প - ফিবছর ধান
কেটে নিয়ে চলে গেছে গাজোয়ারি করে
বি পি এল কার্ডের সাধ
মেটেনি বউকে পাঠিয়েও
দরবারি নাশকতা নিচে টেনে বধূ
মধু - আর মননের মধু
যাপনকে করতে পারেনি ক্ষুধাহীন
হাড়হাভাতের গ্লানি বেদনার শীতে
সইতে হয়েছে প্রতিদিন ;
তাই
লাশকাটা ঘরে
তিনজন শুয়ে আছে টেবিলের পরে ।
তবু রোজ রাতে আমি চেয়ে দেখি, আহা,
জোয়ান লক্ষ্মীপেঁচা চালাঘরে বসে
চোখ পালটায়ে কয়, 'সংসার গেছে বুঝি দারিদ্রে ভেসে ?
চমৎকার !
হাঘরের মেটে ঘরে ইঁদুরও আসে না।'
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজও চমৎকার ?
স্বাধীনতার সত্তর বছর পর !
সকলে তোমার মতো সুযোগ সন্ধানী আজ - বুড়ি চাঁদটাকে ওরা
আদিগঙ্গার পাঁকে করে দিলে পার ;
যারা আসে তারাই শূন্য করে চলে যায় টাকার ভাঁড়ার ।
জয়িতা ভট্টাচার্যের জন্য প্রেমের কবিতা
তোর আঘাতের ভেতরে যে প্রতিধ্বনিগুলো
পুরোনো কান্নায় সাজিয়ে রেখে দিয়েছিস
সেখানে কেঁপেছি আমি প্রতিটি রঙের অন্ধকারে
কথার সঙ্গে কথা ঘর্ষণের ভাষায় অরগ্যাজম
শব্দ-বাক্য-ইশারার চোরাবালি ছাড়া গতি নেই
যা পেয়েছিস জীবনানন্দ-শক্তি-বিনয়ের ঈর্ষার
দুর্বলতায় ; সৌভাগ্য যে রবীন্দ্রনাথের প্রেমে
উষ্মা ছিল না । তাই তোর ঘষাকাচ-দেহ কেবলই
হ্যামলেটদের পায়, সিগ্রেটে লবঙ্গের ধোঁয়া–
অথচ শব্দে তো আদর-ভরা, তোর ও আমার
ঈর্ষার ব্যথায় নুয়ে অসম্ভাব্যতার ট্রুব্যাডুর
তোর হ্যামলেট জানতো না ফোর-প্লের রস
প্রেমিকের সর্বনাশা আত্মপরিচয় নিয়ে আমি
বলছি সহ্য করিসনি অপ্রেমের ক্ষমতার চাপ
সন্দেহবাতিকে নষ্ট বিছানার ফুলেল অথৈ
চলে আয় ঝুনু চন্দ্রা জুন জায়গা বদল করি
আমি ঘোড়া তুই মন্ত্রী প্রেমের সাদাকালো খোপে
খেলি যন্ত্রণার নিরাময়, ট্রমা, আত্মপ্রবঞ্চনা,
তাড়নার পীড়া, সংকট-জর্জর মতিচ্ছন্ন মোহ
জানি ভাবছিস তুই ঝিনুকের ভেতরে রয়েছিস
অপ্রেমের কারাগারে মুক্ত হয়ে কারো আঙুলের
আঙটিতে বাইরে বেরিয়ে দেখবি গুপ্ত হাহাকার
তোর ওই হ্যামলেটের প্রেমক্রিয়া অবসিতকাল
ভেবেও দেখিসনি কেন ঘটমান সন্নিধি নয়
আমি চাই কাঁদ, হ্যাঁ, কাঁদ তুই, আঘাতের
ভেতরে যে প্রতিধ্বনিগুলো সাজিয়ে রেখেছিস
ঘুর্ণির ল্যাজের মতো পাক খেয়ে আছড়ে পড়ুক
এ-নাও হৃৎপিণ্ডখানা
‘নচ্ছার হৃদয়হীন বিশ্বাসঘাতক’ বলে চিৎকার করেছিলে সকলকে শুনিয়ে
প্রতিদানে আজ পাঠাচ্ছি হৃৎপিণ্ডখানা কাচের স্বচ্ছ জারে,চুবিয়ে ফরম্যালিনে,
ধুয়েপুঁছে একেবারে পরিষ্কার করা, রক্ত লেগে নেই, কেবল স্পন্দন আছে আর
জীবন্ত কাঁপন, প্রতিবার তোমার নাম নিয়ে আলোকিত হবে হৃৎপিণ্ড আমার ;
প্রতিটি স্পন্দন তোমার মুখশ্রীকে প্রতিমার জ্যোতি দেবে, হাতে নিয়ে দেখো,
বিছানার পাশে টেবিলে রেখে দেখো, বেডল্যাম্প দরকার হবে না, এমনকী
তোমার পাশে যে পুরুষ শুয়ে সেও শুনতে পাবে না আমার হৃৎপিণ্ডের ডাক
অবিরাম অবিরাম তোমাকে না-পাবার কষ্ট জারের লেবেলে লেখা আছে
যে-নাম আমার দেয়া সেই দীর্ঘশ্বাসে স্পন্দিত হবে ক্ষণে-ক্ষণে বহুবার
ওই কাটা রক্তহীন নচ্ছার বিশ্বাসঘাতক হৃৎপিণ্ডকে পারলে ভালোবেসো
“মুখ্যমন্ত্রীর শ্যালিকা”
আমরা দুই বুড়ো-বুড়ি
আছি ও-রকমই, চিন্তা করবেন না
বুদ্ধ ভটচাজ, মুখ্যমন্ত্রী, স্যার
আপনার শ্যালিকার মতো
আমার বুড়ি বউ গাউন কাচে না
কতোকাল ; আমিও কয়লাঅলার গেঞ্জি পরে
চালাচ্ছি যদ্দিন পারি । ওনার মতনই
আমাদেরও আছে শুভচিন্তক
শহরের লক্ষ লক্ষ লোকজন
তফাত এই যে পুলিশে চ্যাংদোলা করে
লুম্বিনিতে ফেলেনি নিয়ে গিয়ে--
আমরা দুজনে আছি
নিজেদেরই গড়া পাগলাগারদে
“দুঃখ”
মগজে নয়
সমস্ত শরীরে
দুঃখ আছে ছেয়ে
মাকড়ের জাল
রস শুষে-নেয়া
আধমরা কীট
হাড়-মজ্জায়
রক্তে-মাংসে
ব্যথা নয়
যন্ত্রণা নয়
বিষাদও নয়
অপরিসীম
শুধু দুঃখ
কোনো ব্যাখ্যা
জানি না কেন
নেই ।
আনন্দ
দেখতেই পাচ্ছেন, আমরা দুই অশীতিপর হাসিমুখে বসে আছি
আমরাও সেটাই দেখছি ।আপনারা দেখতে পাচ্ছেন না
আমাদের কাঁধ, হাঁটু, কোমরের ব্যথা
কাজের বউ আসছে না, যদিও মাইনে দিতে হয়েছে যাতে না ছেড়ে যায়
যদিবা বাসন মাজি, এমনকী গান গেয়ে, মেরে পিয়া গয়ে রংগুন
ওঁহাসে কিয়া হ্যায় টেলিফুন, তুমহারি ইয়াদ সতাতি হ্যায়
কিংবা কভি আর কভি পার লাগা তিরে নজর
সঁইয়া ঘায়ল কিয়া হ্যায় তুনে মেরা জিগর, কিংবা
জাদুগর সঁইয়া ছোড়ো মোরি বাঁইয়া আবি ঘরি জানে দো
বুড়ি বলে, ভাগ্নে জামায়ের হাতে হাজা হয়ে গেছে
স্যানিটাইজার আর বাসন মাজায় যাও টিভি দ্যাখো
আমি বলি শশীর সুন্দরী বউ অতো বড়ো ফ্ল্যাটের কাজ তো
একাই সামলায়, ওদের দশহাজারি কামওয়ালি চলে গেছে
অগত্যা ফুলঝাড়ু দেবার কাজটা নিয়েছি আর কী আশ্চর্য
এতো পাকাচুল মেঝেতে পড়ে থাকে তা তো বলত না ঝি
ন্যাতাটা গোড়ালি দিয়ে মেঝের ওপর ঘষি, মাটিতে বসতে পারি না যে
বুড়ি রিলাকসিল বা ব্যথার তেল মাখিয়ে দ্যায়, আমি ততোক্ষণ
গান গাই এ গুলবদন এ গুলবদন, ফুলোঁ কি মহক, কাঁটো কি চুভন
তুঝে দেখ কে কহতা হ্যায় মেরা মন, কহিঁ আজ কিসিসে পেয়ার
না হো জায়ে । দেখতে পাচ্ছেন তো আমরা দুই অশীতিপর কীরকম
মজাসসে আছি
কল্লা
গান গাইবেন না
কল্লা নামিয়ে দেবে
সোনার মাছি খুন করেছি
বাজনা বাজাবেন না
কল্লা নামিয়ে দেবে
তবুও তো পেঁচা জাগে
মূর্তি গড়বেন না
কল্লা নামিয়ে দেবে
আপনা মাংসে হরিণা বৈরী
কবিতা লিখবেন না
কল্লা নামিয়ে নেবে
আমার এক অংশে এক অবধূত আছে
ছবি আঁকবেন না
কল্লা নামিয়ে দেবে
কবিতার আদিত্যবর্ণা মুত্রাশয়ে
পুরুষ ছাড়া বাইরে বেরোবেন না
কল্লা নামিয়ে দেবে
যাহা ছিল নিয়ে গেল সােনার তরী
দাড়ি কামাবেন না
কল্লা নামিয়ে দেবে
ইচ্ছে হয় তো অঙ্গে জড়াও
মদ খাবেন না
কল্লা নামিয়ে দেবে
দুগগার মা ক’টায় আসে
সাজগোজ করবেন না
কল্লা নামিয়ে দেবে
স্বাধীনতা তুমি….
একম
একই ঘরে থাকিনি জীবনভর
একই খাটে শুইনি জীবনভর
একই চেয়ারে বসিনি জীবনভর
একই বাড়িতে থাকিনি জীবনভর
একই পাড়ায় থাকিনি জীবনভর
একই শহরে থাকিনি জীবনভর
একই দেহে থাকার কোনো মানে হয় !
কেউ একজন ঝুলছে
মেজদা বলল, “চল চল দেখে আসি, টিনের কারখানায় ঝুলে-ঝুলে
পাক খাচ্ছে কেউ”। দৌড়োলুম, ম্যাজিক দেখবো ভেবে---
ক্যানেস্তারা কেটে টিনগুলো কাঠের হাতুড়ি পিটে সোজা করে।
অতো উঁচুতে কেমন করে চড়েছিল ধুতি-শার্ট পরা রোগাটে লোকটা?
চশমা রয়েছে চোখে! ভালো করে দেখে বললুম, “মেজদা
ইনি তো আমাদের ক্লাসের অরবিন্দর বাবা ; ওরা দেশভাগে
পালিয়ে এসেছিল ফরিদপুর থেকে, সেখানে ইশকুলে পড়াতেন,
কিন্তু সার্টিফিকেট-টিকেট ফেলে জ্বলন্ত ঘর-দালান ছেড়ে
চলে এসেছেন বলে কোথাও পাননি কাজ, শেষে এই টিনের
শব্দ প্রতিদিন বলেছে ওনাকে, কী লজ্জা, কী লজ্জা, ছিছি…”
কিন্তু অতোটা ওপরে উঠলেন কেমন করে! টিনবাঁধার দড়ি খুলে
গলায় ফাঁস বেঁধে ঝুলছেন এখন, পাকও খাচ্ছেন, একবার বাঁদিকে
হি...ন..দু...স...তা...ন...আরেকবার ডানদিকে...পা...কি...স...তা...ন
হি….ন….দু…..স….তা….ন….পা….কি….স….তা….ন….
পাটনার রাস্তায় আমার মা
‘আরে, রিকশঅলাটা যে বাংলায় কথা বলছে’
মা অবাক হয়ে বলে উঠলেন,
রিকশঅলাকে জিগ্যেস করলেন
‘তুম বাংলা কহাঁসে সিখে ?’
রোগা প্যাংলা লোকটা বলল
‘মা, আমি বাঙালি, মোতিহারি ক্যাম্প থিকা পলায়া আসতেসি’।
মাকে বললুম, ‘দেশভাগে যে উদ্বাস্তুরা এসেছে তাদের মধ্যে
নম্ঃশুদ্রদের মোতিহারি ক্যাম্পে রাখা হয়েছে।’
মায়ের কান্না পেয়ে গেল । বললেন,
‘কখনও ভাবিনি বাঙালিরা রিকশা চালাবে !’
টর্চার
“এটা সত্যকথা বলার ঘর
এই ঘরে সবাই সত্য কথা বলে
সত্যকথা’র সংজ্ঞা আমাদের তৈরি
সত্য ওগরাতে হয়
না ওগরানো পর্যন্ত কোনো কথাই সত্য নয়”
কাঁদুন
গর্ভের গোলাপি অন্ধকারে ছিলেন হাসিমুখে
বেরিয়েই কাঁদতে আরম্ভ করলেন
না কাঁদলে থাবড়ে কাঁদানো হলো আপনাকে
প্রথম আলোয় আপনাকে কাঁদতে হবেই
কেননা আপনি একজন মানুষ
ঘোড়া-গণ্ডার-হাতি বেরোবার সময়
অতো উঁচু থেকে পড়ে, কিন্তু কাঁদে না
ওদের মা গা-চেটে পরিষ্কার করে দিলে
পড়েই আনন্দে লাফাতে আরম্ভ করে
আলোর গুরুত্ব বুঝেছেন আলোকিত হয়েছেন
তাই আপনি কাঁদুন আর অন্যদের কাঁদান
জেরা
ওভাবে লিখেছিস কেন ? কার নাম ? খাতা নোংরা করিস রোজ-রোজ ?
আমি তো নিজেই জানি না কার নাম শুকনো খোলায় জিরে ভাজলে ওঠে!
এসব তোমারই কাণ্ড, বাবা-মা শেখায়নি কী করে ডিগবাজি খাবে
নদীর ভেতরে ডুবে ? মাছেদের সঙ্গে কী-কী কথা হয় ? ইলিশ না কালবোস?
ধরে এনে থার্ড ডিগ্রি দিলেই পেট থেকে গলগল করে বেরোবে জাহাজ !
এ-শালা সহজে মুখ খুলবে না, এককালে সরকারি খোচর ছিল ব্যাটা
এখন সুপারি কিলার হয়ে বিদ্যুতের নলি কেটে গাঁ-গঞ্জ ভাসায়
ঠ্যাঙ বেঁধে টাঙিয়ে দে, পোঁদে হুড়কো কর, হয়তো হীরেগুলো
ঝরে পড়বে ঈগলের ডানা মেলে, বখরা পাবি দোআঁশলা বাপ
একাধিক, টেরি কেটে বানভাসি শহরে গোঁত্তা মারবে, জেরা কর জেরা
নির্ঘাৎ পাতলা হয়ে এসেছে শুক্ররসের সাঁতারুরা, হায় মৌলা কী করলা
এ রে কয় জেরা ? হাত-পা-মুখ বেঁধে ওর নদীতে ভাসাস যদি কোনো
শালা কুমির-শুশুক-হাঙর মাস্তান ন্যাপালা বের করবে না, দেখে নিস
লেখা ডান দিকে নাকি বাঁদিকপানে হেলে যায় ? জেরা করে বের কর
কবে মরতে চায় ? পূণ্য তিথি আছে একটা এই থমথমে চৈত্রের সেলে….
স্যার, শুধুমাত্র কবিতার জন্য
স্যার, শুধুমাত্র কবিতার জন্যে হাতে হাতকড়া আর কোমরেতে দড়ি
সাতটা আসামীর সঙ্গে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে-যেতে দেখলুম
কয়েকটা পাড়ার কুকুর নাচতে-নাচতে আসছে পিছু-পিছু
ওরাও জানতে পেরেছে শুধুমাত্র কবিতার জন্যে আর কেউ
এইভাবে গর্বে ফুলিয়ে বুক হাঁটেনি রাজপথে জেলে যাবে বলে
বন্ধু সেজে যারা সঙ্গ নিয়েছিল রাজদরবারে গিয়ে দিচ্ছে নাকখৎ
বুকের মধ্যে সব হুররাগুলো উড়ছে নক্ষত্র হয়ে সন্ধ্যার আকাশে
পথের দুপাশে বুঝতে পারছে লোকে সিংহাসন থেকে লাথি মেরে
প্রাগৈতিহাসিক রাজাটাকে কবিতার রাজ্য থেকে দিয়েছি তাড়িয়ে
এই উত্তরাধুনিক রাজ্য শুধুমাত্র কবিতার জন্যে এখন আমার
প্রথম প্রেম : ফয়েজ আহমদ ফয়েজ
গরমের ছুটিতে খালি-গায়ে যখন নাজিমদের বাড়িতে লুডো খেলতে যাই,
কুলসুম আপা রাস্তা পেরোবার ঢঙে বাঁদিক-ডানদিক তাকিয়ে
দুহাতে দড়াম করে দরোজা বন্ধ করে দেন, আমায় অন্ধকার
স্যাঁতসেতে ঘরে এক হ্যাঁচকায় টেনে নিয়ে।
আমি বলি, ‘ভোজপুরি বলবেন, আমি উর্দু বুঝতে পারি না।’
উনি বলেন, ‘তুই চোখ বোজ, তাহলেই বুঝতে পারবি,
এ তো খুব সহজ রে।’ আমি চোখ বুজে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি
একগাদা হাঁসমুর্গির মাঝে ।
কুলসুম আপা বলেন, ‘মুঝে দে দে রসিলে হোঁঠ, মাসুমানা পেশানি,
হঁসি আঁখেঁ কে ম্যায় একবার ফির সে ঘর্খ হো জাঁউ…’
আমি বলি, ‘ধ্যাৎ কী করছেন কী, আমার লজ্জা করে।’
উনি ওনার কালো মোটা ঠোঁটে বলতে থাকেন, ‘মেরি হস্তি কো
তেরি এক নজর আগোশ মেঁ লে লে হমেশা কে লিয়ে, ইস দাম মেঁ
মহফুজ হো জায়ুঁ জিয়া-এ-হুস্ন সে জুম্মত-এ-দুনিয়া মেঁ ফির না আউঁ…’
আমি বলি, ‘আহ ছাড়ুন না, এরকম করছেন কেন আপা ?’
উনি বলেন, ‘গুজিশতাঁ হসরতোঁ কে মেরে দিল সে ধুল জায়েঁ…’
আমি বলি, ‘না না না…’
আপা ওনার ঘুমন্ত কন্ঠস্বরে, ‘ম্যায় আনে ওয়ালে গম কি ফিকর সে
আজাদ হো জায়ুঁ মেরে মাজি ও মুস্তকবিল সরাসর মাভ হো জায়েঁৱ
মুঝে ওয়হ এক নজর, এক জাভেদানি সি নজর দে দে।’
আমি বললুম, ‘রোজ রোজ এরকম করেন কেন ?’
উনি বললেন, ‘তবে যে তুই বলছিলিস উর্দু বুঝতে পারিস না !’
প্লাস্টিকের যুবতী
জাপান থেকে কিনে এনেছিলুম প্লাস্টিকের সুন্দরী যুবতী
আমি অফিস চলে গেলে প্লাস্টিকের যুবতী
আমার বড়ো ছেলের সঙ্গে প্রেম করে
মেজোছেলেকে সঙ্গম করতে দ্যায়
আমি যেটা করি তাকে কী বলব ?
প্লাসটিকের যুবতীর সঙ্গে ওরা একখানা নির্দেশিকা দিয়েছে :
“যুবতীর মাথা উত্তরদিকে থাকলে
আপনার মাথা যেন দক্ষিণদিকে থাকে”
আমার ছোটো ছেলে দক্ষিণপন্হী, সে নির্দেশিকা মেনে চলে
বড়ো ছেলে উপুড় করে প্রেম করে
আমি যা করি তা বলবার নয়
যখন চুমু খাই তখন প্লাস্টিকের যুবতী বলে ওঠে :
পৃথিবীকে তাড়াতাড়ি প্লাস্টিকমুক্ত করো নাগর
নয়তো তোমাদের সব্বাইকে আমি ভালোবাসায় ধ্বংস করব
কিন্তু নগদ জাপানি টাকায় কিনে এনেছি তুলতুলে জাপানি ডলপুতুল
আমার পরের সাতজন্ম পর্যন্ত প্রতিটি পুরুষের বউয়ের ভূমিকায় শোবে
মরার যখন তখন প্লাস্টিকের সবকিছুই সবাইকে মারবে
সংস্কৃতির কারখানা
ধেড়ে ইঁদুররা জাহাজ ছেড়ে পালাচ্ছে
ফ্রিস্টাইল, ব্যাকস্ট্রোক, ব্রেস্ট স্ট্রোক, বাটারফ্লাই
যে যেমন পারে
.
যাউক যাউক ! ইঁদুরনাদি তো ফেলে যাচ্ছে !
‘
নেংটি ইঁদুররা জাহাজ ছেড়ে পালাচ্ছে
ফ্রিস্টাইল, ব্যাকস্ট্রোক, ব্রেস্ট স্ট্রোক এবং বাটারফ্লাই
যে যেমন পারে
.
যাউক যাউক ! ইঁদুরনাদি তো ফেলে যাচ্ছে !
ত্রিকোণ প্রেম
সামনের দুই ফ্ল্যাটে দুজন পোয়াতি বউ, দরোজা খুললেই বলছেন
বাইরে বেরোবেন না একদম । বাইরে La Corona আছে
ভয়ংকর রূপসী, জাপটে ধরবে আপনাকে আর আপনি তাকে
সঙ্গে করে নিয়ে আসবেন, বিপদে ফেলবেন আমাদেরও
এই লকডাউনেই আমাদের সন্তান জন্মাবে । যাবেন না বাইরে
আমরা আপনাদের জন্য ভাত-রুটি-তরকারি রেঁধে দেবো
যতই কষ্ট হোক । আপনার বয়স হয়েছে, তায় নানা রোগ
ও রূপসী আপনাদের মতো বুড়ো-বুড়িকে ধরবে বলে ওৎ পেতে আছে ।
..
সাড়ে সাত মাসের বপু নিয়ে ওরা রাঁধবে আমাদের জন্য ভাত-রুটি
মানে হয় ? দুজন পোয়াতি বউ বুড়োকে আটকে রাখতে চায়--
কী যে করি বুঝতে পারি না ! আধপেটা খেয়ে থাকি ?
পরিযায়ী শ্রমিকেরা না খেয়েই চালিয়ে দিচ্ছে দিনরাত রাতদিন
বউ দুটি সুন্দরী, La Corona রূপসীকে আটকাতে চায়
এই মেট্রপলিসের থাবা যে ভাবে এগোচ্ছে চারিদিকে
জানি না বউ দুটি আমার পাহারায় থাকবে কতোদিন —
প্রেম ও মোরগের পা
তোমার জিনসের তলা থেকে আলতা-পরা তরুণী গোড়ালি
সমুদ্রের নোনা-ঢেউদের আদর করছিল ; তারপর তুমি
রেস্তরাঁয় গিয়ে অদ্ভুত শব্দ করে মোরগ-ঠ্যাঙের
বড়া খাচ্ছিলে । মোরগ ঠ্যাঙের যে বড়া হয় আর
সুন্দরী তরুণী যে সেইগুলো কচরমচর শব্দ তুলে
খেতে পারে -- নতুনতর নান্দনিক বোধে অসুস্হ হলুম ।
আমার যোনি কেন যে নেই
বিরাশি বছর বয়স হয়ে গেল অথচ আমার যোনি নেই
বৃহন্নলা মানে হিজড়েরা যোনি চায়
হয় এই না হয় ওই হবার জন্য
আমার যদি যোনি থাকতো তাহলে তার চারিপাশে
পোস্ত আর গাঁজাগাছ গজিয়ে নিতুম
তারা আমায় নেশায় ঢেকে ফেলতো
আমার মধ্যে লিঙ্গ ঢুকে এলে পোস্তর আঠা মাখাতুম তাকে
গাঁজার গন্ধে হইচই ফেলে দিতুম দুধে ধোয়া শিবলিঙ্গের মতন
অনেকের লিঙ্গকে ঢুকতে দিলে কেমন লাগে জানতে পারতুম
খাজুরাহোর তরুণীদের ঢঙে পাথর থেকে বেরিয়ে
পাথরেও যে যোনি লুকিয়ে থাকে তা কেউ কি জানতো
কোণারকের পাথরের তরুণীদের আগে
পুরীর মন্দিরের তরুণীদের আগে
ছেনি-বাটালি দিয়ে কুঁদে-কুঁদে আদর করে তৈরি যোনি
আমিও খাজুরাহো কোনারক পুরী মীনাক্ষী মন্দিরে
লাবিয়া ম্যাহোরা খুলে দেশি-বিদেশি শ্রদ্ধালুদের দেখাতুম
তাদের প্রণাম নিতুম ফুলচন্দন নিতুম আর আঠা দিতুম
আপনি তো নিজেই কথা রাখেননি
কেনই বা রাখবে অন্য লোকে কথা ? যখন আপনি নিজেই
দেয়া কথা রাখতে লজ্জা পাননি ? ভুলে গেলেন নাকি ?
তাহলে মনে করিয়ে দিই । ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার পঞ্চদশ সংকলনে
লিখেছিলেন : “পুরস্কার পায় কারা ? যারা তথাকথিত
জীবনে নিরুদ্বেগ ; যাদের অর্থসম্পদ আর প্রতিভা যথাক্রমে
প্রচুর আছে আর সামান্যতম নেই । এবং যাদের হাত
সবসময়েই অপরের পদধূলি নিয়ে-নিয়ে নোংরা হয়ে থাকে ।
পুরস্কার একমাত্র নেওয়া সম্ভব ঈশ্বর অথবা শয়তানের
হাত থেকে ।”
কী দাঁড়ালো ব্যাপারটা তাহলে ? নিজেই ঈশ্বর আর শয়তানের
ডবল ভূমিকায় নেমে বিলোলেন নোংরা পদধূলি । কাদের বলুন তো ?
সেই সব কাকতাড়ুয়া লোকেদের যারা বউয়ের বিছানায়
কচিখুকিদের ফুসলিয়ে দুপুরে আমোদরস ফ্যালে !
আর আপনার মোহাসেবদল ? ল্যাংপেঙে পৌরকর্মী
উঠতে-বসতে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার বাকতাল্লা ঝেড়ে ঢুকে গেল
‘আজকাল’ পত্রিকায়, তারপর বুদ্ধ ভটচাজের ল্যাঙবোট --
পুরস্কার পাবার ধান্ধায় । অন্যজন তিন বছর প্রেমিকাকে
আশ্বাস দিয়ে দায়িত্ব পাবার ভয়ে পালালো কলকাতা, আর, হ্যাঁ,
চাকরিসহ পুরস্কারও পেলো ।
বুড়ো হয়ে বুঝতে পারি শয়তান বা ঈশ্বর বলে কিছু নেই।
সবই আপনার মতো লোকেদের তামাশা-বাজানো ডুগডুগি
যারা নিজেরা কথা রাখতে ভুলে গিয়ে অন্যদের দোষ খুঁজে পায় ।
আজল
কেমন পুরুষ তুমি ? আজল জানো না !
কী বিশাল যৌবন পড়ে আছে ! আজল জানো না ?
এরকম দীর্ঘ দেহ সৌম্যকান্তি উজ্বল শ্যামবর্ণ সুপুরুষ তুমি
অথচ জানো না প্রেমের গূঢ় উন্মোচন ! জানো না আজল !
অনেক প্রেমিকা পাবে - কুচ্ছিত কিংবা সুন্দরী
কাজলনয়না বা কুতকুতে মোঙ্গোল চোখ
পীনোন্নত ময়ূরের মতো গলা কিংবা বেঢপ থপথপে
চকচকে কৃষ্ণাঙ্গিনী অথবা চাঁদের আলোর ত্বক মেয়ে
কী করবে অমন প্রেমিকা পেলে ? ছেড়ে দেবে ?
এই তো তরুণ হয়েছ সবে ! শিখে নাও শিখে নাও--
আজল কাহাকে বলে ।।
মৃত্যু আমার শিষ্যা
শিষ্যা, হিজড়েরা যাকে বলে চেলি, তার ক্লায়েন্ট
সময় ঘনিয়ে এসেছে, যদিও আমায় ঘিরে থাকা রাধা
আর গোপিনীদের বয়স আমার চেয়ে বেশি -- রাধা ফুচকায়
টোকো-রক্ত ভরে খেতে ভালোবাসে --- মলয় কুবাতাস মেখে
মলয়াতুর জলে ডুব দিয়ে তারা আর উঠে আসেনি
আমি করোটিতে তাড়ি নিয়ে খেয়েছি -- গোপিনীদের
নাভির জড়ুলের ওপরে রেখে -- আমার নামের জড়ুল
তারা আমার মায়ের পেটের বোন, ভয় দেখায়, আমি মুখ খুলি
প্রশান্ত মহাসাগর দিয়ে চাপা দেয় আমাকে, কেননা আমার
মৃত্যু নেই, ক্ষয় নেই -- মানুষ হয়ে জন্মালে মরে যেতুম একদিন
এমনই অভিশপ্ত যে সারা দেহে সুন্দরবন - বাঘের ডাকে থমথমে
রক্তের মধ্যে বাজপাখিরা ডুবউড়াল দিয়ে দুর্নাম ছড়ায়
শিষ্যার টনক নড়েছে অনন্তকাল মলয়ঝড়ের কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে
বলাই রেগেমেগে কানাইতে ঢুকে হল্লার হলকা তোলে -- মনে আছে
তো ? মহাপ্রস্হানের হাইওয়ে জুড়ে লাশের পর লাশ খুবলে খেয়ে
বেঁচে ছিল কতো শিষ্যা তাদের বাবার অনেকগুলো সংসার বলেছেন
গোপিনীদের কাঁখে পদ্মার ইলিশের গান বিয়া করো নাই ক্যান
সাবধান হই আমার গলার ওপর পায়ের চাপ দিয়ে হুকুম দেন
সত্য বল আমার মুখে তাড়ির ফেনায় শিষ্যাদের মুর্শিদি গান
আরে শিষ্যা ভয় পাস কেন ? আমি বিরাশি বছরের গুরুদেব !
ডারউইনের বর্ণচোরা
ওয়াও, ড্যুড, লাল ঝাণ্ডা ছেড়ে ঘাসফুল
ল্যাজ শেষে খসে গেল ! একেই প্রতিভা বলা হয়
ওয়াও, ড্যুড, ঘাসফুল ছেড়ে পদ্মফুল
ল্যাজ শেষে খসে গেল ! একেই প্রতিভা বলা হয়
ওয়াও, ড্যুড, ল্যাজ খসে গেলে পর
একেই ডিগবাজি বলা হয়
ওয়াও, ড্যুড, ডারউইন জানতে পারেননি
বঙ্গদেশেও ক্যামেলিয়ন হয়
মৌজার মালিকানা ও বিপ্লব
বিনয় মজুমদার বলে গিয়েছেন, ওনার পদবি
নবাব আমলে পাওয়া । কয়েক মৌজার মালিকানা
কোনো এক পূর্বপুরুষ পেয়ে মৃধা থেকে
মজমুয়াদার হয়েছিল । তারই বাঙালিকরণ করে
তিনি হলেন বিনয় মজুমদার, কবি । একই ভাবে
চারু মজুমদারের কোনো পূর্বপুরুষ
নবাবের থেকে কয়েক মৌজার মালিকানা পেয়ে
জোতদার হবার গর্ব হাতিয়ে ছিলেন ।
তিনি হলেন চারু মজুমদার, বিপ্লবী ।
অতএব চারু মজুমদার নিজের পূর্বপুরুষের
বিরুদ্ধে বিপ্লবে নামলেন আর সেই সঙ্গে হাঁক পেড়ে
নামালেন হাজার হাজার অতিবুদ্ধিমান
ছেলে-মেয়েদের, যারা সব রাষ্ট্রের খোচরের
গুমখুনকারীদের ষড়যন্ত্রে বীভৎসভাবে মরে গেল
তাদের নাম-সাকিন মনে রাখল না কেউ।
ইতিহাসে দু’মলাট খুলে হাসিমুখে থাকলেন
চারুবাবু জ্যোতিবাবু সিদ্ধার্ধবাবুরা ।
ভালোবাসো
ভালোবাসো ভালোবাসো ভালোবাসো
আমাকে গভীরভাবে ভালোবাসো
আরও আরও বেশি ভালোবাসো
ভালোবাসো ভালোবাসো ভালোবাসো
কিন্তু স্পর্শ কোরো না কখনও কোনোদিন
স্পর্শ করলে ঘাম লালা রক্তের ক্লেদ হবে প্রেম
স্পর্শ করলেই ভালোবাসা সংসারের আবর্তে পড়ে যাবে
স্পর্শ করলেই প্রেম চাল-ডাল-তেলে ফেঁসে যাবে
স্পর্শ করলেই প্রেম হাঁটু আর কোমরের ব্যথা হয়ে যাবে
ত্বকের ঔজ্বল্য শেষ আর পুরোনো হয়ে যাবে
তোমার শ্বাস-প্রশ্বাসও দূরে-দূরে থাক
কখনও লিখো না চিঠি কিংবা ইশারা কোরো না
ভালোবাসো আমি চাই তীব্র ভালোবাসা দাও
তাই শুধু ভালোবাসো গভীরভাবে ভালোবাসো
লম্পটের জন্ম
ইমলিতলায় দোল খেলছে ডোম চামার দুসাধ কাহার কুর্মি ব্উয়েরা
নাচছে পাড়ার কলতলায়, আধখোলা বুক, ওথলাচ্ছে তামাটে আবীর
মনুস্মৃতি থেকে কোরক উঠছে জেগে তাই, ও ছুট্টে গিয়ে খাঁজে মুখ গোঁজে
মাইয়ের কোন্ও জাতধর্ম দেশ-ভাষা নেই, মনুস্মৃতি ছেঁড়া ঝরঝর আঠা--
প্রথম উদ্গীরণ আরও বেশি করে জড়িয়ে ধরতে বলে, জন্ম হয় সেই বিষে
লম্পট কিশোরের, তৃপ্তির এ-গূঢ় আবিষ্কার তাকে আহ্লাদে কুঁদবে আজীবন।
ঘুণপোকার সিংহাসন
ওগো স্তন্যপায়ী ভাষা পিপীলিকাভূক মুখচোরা
ভূচর খেচর জলচর দাম্পত্যজীবনে তুষ্ট একশিঙা
নীলগাই বারাশিঙা চোরাকিশোরীর হাতে মূল্যবান প্রাণী
স্হলে বিচরণকারী উদবিড়াল গন্ধগোকুল বিনোদিনী
শব্দগহবর খেয়ে নোকরশাহির রাজ্য এনেছ এদেশে ।
সাজানো বাগানের পরের স্টপ
নেশাগ্রস্তের মাথা ঝুঁকিয়ে জয়াধানের রুদ্ধদ্বার শিস ছেড়ে
মাঙ্গলিক সাজসজ্জায় উড়ছে প্রজাপতির ভাবুক ঝাঁক
ভালোবেসে বিয়ে করবে বলে একজোড়া খুন্তেবকের আকাশে
রাগতস্বরে আরম্ভ হয়ে গেছে অর্ধস্ফুট বৃষ্টি
আর মৃগেল গৃহবধুর সঙ্গে ভাসমান দীর্ঘদেহী কালবোসের ঘাটে
নীরবতা পালন করছে কুলাঙ্গার অধ্যুষিত মহাশ্মশান
লাগোয়া রুগ্নকরুন বাতাসে-মোড়া রাজপথে সংশয়াচ্ছন্ন ষাঁড় – ভদ্র বিনয়ী
মাধবীকঙ্কণ বাগানের পরেই এই ইকেবানা বাস স্টপ
দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে মুলো হাতে কয়েক দশকের কিউ ভেঙে প্রেম
আর মারামারিতে তফাত ধোঁয়াটে হয়ে আসছে আজকাল
খাঁটি-সত্য কঠিন-সত্য গভীরতম-সত্যের ভুলভুলাইয়ায়
আলোকপ্রাপ্তির ফুয়েল-সারচার্জ আগেই বাড়িয়েছে মিষ্টভাষী ঝিঁঝি
তখন সবে-দাড়িগোঁফ তরুণরা রোদ্দুরে দাঁড়িয়ে ঘাম শুকোচ্ছিল
ভেতরে-ভেতরে নিভছিল তুষবুকের অনির্ণেয় পূর্ণিমা
আরেকবার উহুরু
কালো কাপড়ের খোল মুখেতে পরানো, দুই হাত
পিছমোড়া করে বাঁধা , দাঁড়িয়ে রয়েছি পাটাতনে,
জল্লাদের ঘামের তিতকুটে গন্ধে ভোরের বাতাস থম –
সময় গুনছে কারা ? ডাক্তার পুলিস জজ ওয়ার্ডেন ? নাকি কেউই গোনে না !
আচমকা নেমে যাবো ঝুপ শব্দে যেখানে ঘোলাটে অন্ধকারে
পোষা হয় ঘামলোনা নোংরা ইতিহাস ;
কাঁপতে থাকবে দড়ি , প্রথমে খুবই ঘনঘন,
দুর্বল ঝাঁকুনি , তারপর স্হির , বোবা চিৎকারে
ওভাবে যেখানে কবি-খুনি নেমে গেছে বহুবার
আমি তো উঠেছি আজ সেইখান থেকে জ্যান্ত হয়ে
এ-ই একমাত্র ওঠা । এছাড়া উপায় নেই শব্দদানবের
যাদের পায়ের কাছে পড়ে থাকে বিধ্বস্ত ভূগোল
মরার জন্য যারা জন্মায় আমি সেই ধর্মবংশ
বাঁচিয়ে রাখার জন্য বারবার ঝুলি না ফাঁসিতে ।
লাল সেলাম, হায়
মুখের গহ্বরে এক জান্তব গোঙানিডাক চলাফেরা করে
জেলহাজতের ভিড়ে ত্রিকালজ্ঞ ভিড় দেখে চমকে উঠি
এরা কারা হাতকড়া পরে ঠাঠা হাসে সারাদিন
বাইরে যারা রয়ে গেল ঝুঁকিয়ে দাঁতাল-মাথা
তারাই বা কারা
জল্লাদের ছেড়ে দেয়া প্রশ্বাস বুক ভরে টানে
চাই না এসব ধন্ধ
মশারি খাটিয়ে বিছানায় সাপ নারীর বদলে
নৌকোর গলুই থেকে ছুরি হাতে জ্যোৎস্নায়
বুকের ওপরে বসবে লুঙিপরা রোমশ সারেঙ
নাসারন্ধ্র থেকে বন্দুকের ধোঁয়া
“বল শালা শকুন্তলার আঙটি কোন মাছে আছে”
জানি তবু বলতে পারি না
মুখের ভেতর আঙটি জিভের তলায় আমি লুকিয়ে রেখেছি।
আলো
আবলুশ অন্ধকারে তলপেটে লাথি খেয়ে ছিটকে পড়ি
পিছমোড়া করে বাঁধা হাতকড়া স্যাঁসেঁতে ধুলো-পড়া মেঝে
আচমকা কড়া আলো জ্বলে উঠে চোখ ধাঁধায়
তক্ষুনি নিভে গেলে মুখে বুট জুতো পড়ে দু-তিনবার
কষ বেয়ে রক্ত গড়াতে থাকে টের পাই
আবার তীব্র আলো মুহূর্তে জ্বলে উঠে নিভে যায়
গরম লোহার রড খালি পিঠে মাংস ছেঁচে তোলে
আমাকে ল্ষ করে চারিদিক থেকে আলো ঝলসে ওঠে ফের
আপনা থেকেই চোখ কুঁচকে যায় দেখতে পাই না কাউকে
একসঙ্গে সব আলো আরেকবার নিভে গেলে
পরবর্তী আক্রমণ সহ্য করার জন্যে নিজেকে তৈরি করে নিই।
আমি ভঙ্গুর হে
আমি যে নাকি গাইডের কাছে ইতিহাস-শেখা ফোস্কাপড়া পর্যটক
ছায়ায় হেলান-দেয়া বাতিস্তম্ভের আদলে গিসলুম পিতৃত্ব ফলাবার ইসকুলে
জানতুম যতই যাই হোক ল্যাজটাই কুকুরকে নাড়ায় রে
আমি যে নাকি প্ল্যাটফর্মে ভবিষ্যভিতু কনের টাকলামাথা দোজবর
বস্তাপ্রতিম বানিয়ের বংশে এনেছিলুম হাইতোলা চিকেন-চাউনি
কাদা-কাঙাল ঠ্যাঙ থেকে ঝরাচ্ছিলুম ঘেসো ঝিঁঝির সাম্ভা নাচ
আমি যে নাকি ফানুসনাভি ব্যাঙ-থপথপে শুশুকমাথা আমলা
মাটি-মাখা নতুন আলুর চোখে দেখা দুটাকা ডজন রামপ্রসাদী জবা
চাষির ঢঙে বলদ অনুসরণ করে পৌঁছেছিলুম বিধানসভার কুয়োতলায়
আমি যে নাকি পোলকাফোঁটা পুঁইফুলে দু-ভাঁজ করা হেঁইয়োরত বাতাস
ঢেউ চাবকানো ঝড়ে যখন বঁড়শি-খেলা পুঁটির পাশে ভাসছি
তখন বুঝলি লম্বালম্বি করে-কাটা কথাবাত্রার লাটিমছেঁড়া ঘুড়ি
আমি যে নাকি ভুতলবাহী আওয়াজমিস্ত্রি হলদে-ল্যাঙোট বাবুই
চোখে-চোখে শেকল-আঁকা ভিড়ের মধ্যে এঁদো বিভাগের কেঁদো
চিংড়ি-দাড়া আঙুল দিয়ে খুলছি বসে জটপাকানো মুচকি-ঠোঁটের হাসি
এ কেমন বৈরী
ভাবা যায় ? কোনো প্রতিপক্ষ নেই !
সবকটা আধমরা হয়ে আজ শুয়ে আছে জুতোর তলায় ?
কিছুই করিনি আমি
কেবল মুখেতে হাত চাপা দিয়ে চিৎকার করেছি থেকে থেকে
হাহাহা হাহাহা হাহা হাহা
পিস্তল কোমরে বাঁধা তেমনই ছিল সঙ্গোপনে
ক্ষুর বা ভোজালি বের করিনিকো
বোমাগুলো শান্তিনিকেতনি ব্যাগে চুপচাপ যেমন-কে-তেমন পড়ে আছে
আমি তো আটঘাট বেঁধে ভেবেছি বদলা নেবো নিকেশ করব একে-একে
সকলেই এত ভিতু জানতে পারিনি
একা কেউ যুঝতে পারে না বলে দল বেঁধে ঘিরে ধরেছিল
এখন ময়দান ফাঁকা
তাবৎ মাস্তান আজ গোরুর চামড়ায় তৈরি জুতোর তলায়
কিংবা পালিয়েছে পাড়া ছেড়ে কোনো জ্ঞাতির খামারে
আমি তো বিধর্মী যুবা এদের পাড়ার কেউ নই
জানালার খড়খড়ি তুলে তবু যুবতীরা আমার ভুরুর দিকে তাকিয়ে রয়েছে
ছ্যাঃ এরকম জয় চাইনি কখনো
এর চেয়ে সামনে শিখণ্ডী রেখে জেতা ছিল ভালো
ভেবেছি চেংঘিজ খান যে-লাগাম ছেড়েছে মৃত্যুর কিছু পরে
তার রাশ টেনে নিয়ে চুরমার করে দেবো এইসব জাল-জুয়াচুরি
আগুন লাগিয়ে দেবো মাটিতে মিশিয়ে দেবো ধুরন্ধর গঞ্জ-শহর
কিন্তু আজ সমগ্র এলাকা দেখি পড়ে আছে পায়ের তলায় ।
অবন্তিকার প্রেম
মাঝরাতে অবন্তিকার শরীর জুড়ে কতো যে হাত গজিয়ে ওঠে
আকাশের অগাধ দূরত্ব টেনে এনে আমাদের মুড়ে ফ্যালে
মরুভূমির নরম বালির ঝড়ে আমাদের উড়িয়ে নিয়ে চলে
ওর সারা শরীরে লিপ্সটিক মাখা নানা রঙের অজস্র ঠোঁটের
আঠায় আমার সঙ্গে রাঙঝাল দিয়ে নিজের বুকে জুড়ে নেয়
দেহের আনাচে কানাচে গোলাপি ফাটলের স্বাসালো সঙ্গীত
কেঁপে কেঁপে ওঠে আর আমি কোনো কুলকিনারা পাই না
অবন্তিকা বলেছে, “লিখে নাও, কুলকিনারাহীনতাই প্রেম” ।
ম্যাডেলিন করিয়েটের জন্য প্রেমের কবিতা
খামে-ভরা তোমার স্মৃতিটুকু ভাসানের জগঝম্প ভিড়ে
জুহুর সমুদ্রের ঢেউয়ে শেষ চুমু খেয়ে
বিসর্জন দিয়েলুম ম্যাডি, ম্যাডেলিন করিয়েট
তিরিশ বছরের বেশি অফিসের কলিগেরা
খামের ভেতরের স্মৃতি দেখে যা-যা বলেছি ওনাদের
বিশ্বাস করেছে নির্দ্বিধায়, হা-হা, হা-হা, ম্যাডেলিন-
বাঘিনীর লোম মনে করে হাতে নিয়ে গালে চেপে
মাথার ওপরে ভবিষ্যত উন্নত করবে বলে ঠেকিয়েছে
ভেবে দ্যাখো ম্যাডেলিন, কত্তোজনের সমাদর পেলো
গোলাপি তুলোট যোনি থেকে সংগ্রহ করা
সোনালি ঘুঙুরালি বালগুলো, জয় হোক জয় হোক
তোমার অক্লান্ত প্রেমের, নেশালগ্নে নিশাসঙ্গমের
সিংহের বাঘের টিকটিকি কুমিরের দৈব-আঙ্গিকে
সুফিয়ানা
এ কেমন ক্রিমতোলা বাংলায় কথা কোস তুই
যে ভেলকিবাজ রোদের ভয়ে ঝরে পড়া শিউলিফুলগুলো
পাখিদের রোমান্টিক গানকে নার্ভাস করে তোলে
যেন হাঁ-মুখে নার্সের থার্মোমিটার
দোলের দিন ডেকে-ডেকে হাঁপানি ধরে গেল কোকিলটার
আসলে তোর কেন মতামতহীন হবার আধিকার নেই
একটা হ্যাঁ-এর সঙ্গে একটা না মিশিয়ে তখনই জানা যায়
যখন প্রেমের ক্লাইম্যাক্সে মাটির সঙ্গে আমি যোগাযোগ হারাই
শাঁতার কাটবার মতন তোর গভীর টলটলে সংলাপে
যে-দিন জিরে-জিরে করে কুচোনো বিদ্যুতের সবুজ জোনাকি
ঘোড়াহীন রেসের মাঠে তোকে ঘিরে বেশরম হ্রেষা হয়ে উড়বে
ইরানি হরফে তোকে প্রেমপত্র লিখে রাখবে বটগাছের শেকড় ।
স্হানিকতা
যে-মানুষীর হনুমানের ঢঙে চার হাতে জড়িয়ে ধরার তল্পিতল্পা ছিল
তার সঙ্গেই তো ধুপকাঠি-গেঁথা পাকা-কলার কুচকুচে পিঁপড়ে পাড়ায়
অন্ধকার দিয়ে নিজের বদূরত্বটুকু বেঁধে রাখতে চাইছিলুম
ওকে পেয়েছিলুম ছোটবেলার চান-করার হল্লায় তৈরি বিয়েবাসরে
মেঘ থেকে বৃষ্টিফোঁটা খুঁটেখুঁটে ঘাম জমিয়ে তুলত মুখময়
গৌড়ের সেসব ভুলভাঙা রাজপথ তো এখন অচেনা খেতসবুজ গ্রাম
মিটকি মেরে পড়ে আছে আলোর ঝলকানিতে টোলখাওয়া বিদ্যুতে
কেননা ইতিহাসে ঢুকতে গিয়ে চৌকাঠে ঘা খেয়ে ওর মাথা ফেটে গেছে
হয়তো একদিন তিলোত্তমাদের ফেলে দেয়া তিলগুলো জড়ো করে ফেলবে
আর চিতার ওপর হাসতে-হাসতে উঠে বসবে আগুনের মুখোশপরা গৌড়
পুরোহিতহীনতার কবিত্ব
রশ্মির স্বাহা কয়েকটা উড়ছিল, নাভির চর্বিতে আগুন ধরিয়ে
পাঁজর ফাটার শব্দ, প্রচুর গাওয়া ঘি মাখানো সুন্দরী
চন্দন মাখানো কান-নাক-চোখে ছোঁয়াবার সোনা
কবি তিনবার তোমাকে পাক দিচ্ছিলেন, নুটির আগুন
পোশাক বদলের হিন্দু সময় নেই, এক লিটার সিলবন্ধ গঙ্গাজল
খড়ের পালঙ্কে কে জানে কোন কাঠ, চামড়া পোড়া গন্ধের মোহক
ভেবো না যে কাঁদছেন কবি, ধোঁয়ায় চোখ জ্বালা করছিল ওঁর
শবদেহের কিউ কাল সকাল থেকে, রজনীগন্ধারা শুকিয়ে ন্যাতানো
অ্যামবুলেন্স চালকেরা দিনে যোলোবার, রোজগারের সুযোগ এসেছে
রশ্মির স্বাহা খেলছে আপাদমস্তক, এতো দেরি কেন
নিমপাতার প্যাকেট কিনতে গিয়েছিল
পর-পর সহমরণের লাইন দিয়েছে দেখছেন
মুদ্দোফরাসের লোহার অভ্যস্ত বাড়ি খুলির ওপরে
ব্রহ্মাণ্ড ফাটার আওয়াজ, আগুন চমক দিয়ে নিজস্ব উড়াল নেয়
সাতজন আত্মীয় নেই বলে কবি নিজেই
প্লাস্টিকের কলসি ভরে জল দেন নিভন্ত আগুনে
পাথর জল গোবর সাদা-সরষে মটর ডাল প্লা্টিক প্যাকেটে
কিন্তু কবির তো বাড়ি নেই, আত্মীয়-স্বজন নেই
জ্ঞাতি-বন্ধু নেই, তিনি তো নিজেই নিজের পুরোহিত
আমরা সবাই শবের সন্তান-সন্ততি
ব্রুম ব্রুম ব্রুম ব্রুম ব্রুম ব্রুম ব্রুম ব্রুম ব্রুম ব্রুম ব্রুম ব্রুম ব্রুম ব্রুম
ঠোটের আওয়াজ করে রাস্তা থেকে দু-পকেটে তামার পয়সা কুড়োয় দাদা
আমি বাঁ-হাতে নাকে টিঁটিঁ টিঁটিটিঁটি শব্দ তুলে ডান হাতে পয়সা কুড়োই
শবের চার ছেলে খালি গায়ে হেটোধুতি গলায় গ্যাঁদার মালা পায়েতে ঘুঙুর
ঢোলোকে বোল তোলে ঢম-ঢমাঢম ঢম-ঢমাঢম ঢম-ঢমাঢম ঢপ ঢপ ঢপ
পয়সা ছিটিয়ে শবের বড়ো ছেলে চেল্লায় ছ্যা-রা-রা-রা ছ্যা-রা-রা-রা-রা
হরিবোল নয় বা রাম নাম সৎ হ্যায় নয়, শুধু ছ্যা-রা-রা-রা পয়সা ছড়ায়
মানে করলে যা দাঁড়ায় তা ‘আমরা সবাই পূর্বপুরুষের শবের সন্তান-সন্ততি’
ব্রুম ব্রুম ব্রুম ব্রুম ব্রুম ব্রুম ব্রুম ব্রুম ব্রুম ব্রুম ব্রুম ব্রুম ব্রুম ব্রুম
টিঁটি-টিটি টিঁটি-টিটি টিঁটি-টিটি টিঁটি-টিটি টিঁটি-টিটি টিঁটি-টিটিইইইইইই
কাটা হাত যাদের
অপরাধীদের গুমাখা কাটা হাত আমার গলা টিপে ধরে বলে
তুই শালা নিরপরাধ থাকবি ? আর আমরা নরকে পচব ?
জোচ্চোরদের পেঁকো কাটা হাত আমার চোখে আঙুল ঢুকিয়ে বলে
তুই ভাবছিস সৎ থাকবি ? আর আমরা মরব রাজযক্ষ্মায় ?
খোচরদের রক্তমাখা কাটা হাত আমার জিভ টেনে বের করে বলে
তুই বাঞ্চোৎ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লিখবি ? আর আমরা চাটবো পা?
অনেক অনেক পূঁজমাখা কাটা হাত আমাকে ঘিরে গালমন্দ করে
কন্ঠনালী ছিঁড়ে শব্দ-বাক্য-অভিধা-ব্যাকরণ বের করতে চায়
আমি বলি, আমার দুটো হাতই রয়েছে, কাউকে কাটতে দিইনি।
ম্যাক্সিমাম সিটিতে এক পথচারী
১
রাস্তায় গুরে বেড়াই, আমার লুচ্চা চোখ চলে যায়
ছুকরি উরুর দিকে, মিনির তলায় এতোটা জায়গা ফাঁকা
ওখানে বিজ্ঞাপনকোং দিতে তো পারেন ছাপ্পা
কোক কনডোম তেল চা সাবান গুঁড়ো মশলার
সহজেই যেদিকে ক্রেতার লোভী চাউনি ঠোকরাবে
২
জয় শ্রিরাম বলেনি বলে পেটাচ্ছে দাড়ি-সিঁদুর ভিড়
ওহ কি শ্লেষ্মা-কান্না বাঁচাবার শেষ চিৎকার
ভাবি, ইমলিতলায় লোকে দেখা হলে নিজেদের
বলতো জয় সীতারাম । পুং-টিকি পুতনা-ছোঁড়ারা
সীতাকেই রামায়ণ থেকে ছিঁড়ে বাদ দিলো !
৩
কালকে বিকেলে দেখেছিলুম ম্যানেক্যুইন ল্যাংটো শরীরে
বেগুনি ইজের আর বুকে বাঁধা হলুদ বডিস
শোকেসের শার্সি ভাঙার পর আজকে তার দেহ ঢেকে
পরানো হয়েছে চুড়িদার, তার ওপরে সবুজ ইজের
বুকে সবুজ বডিস, দু-দুটো বিমারু হুমকি এক সাথে
৪.
জিমে যাই, বিনে পয়সায় স্ট্রেস টেস্ট সেরে নেবো ভেবে
দেখি দুই পালোয়ান তেলালো ছোকরা কোথা থেকে
পাইথন সাপ এনে ওয়েট-লিফটিঙ করছে তাকে নিয়ে কাঁধে
ম্যাক্সিমাম সিটি নিয়ে খ্যাত গ্যাঞ্জামে কোথা থেকে এলো এ-ময়াল !
৫
বৃষ্টি অঝোরে পড়লেও একপো পটল-আলু কিনতে বেরোতেই হয়
হাঁটুজলে ছপছপে চলেছে কলেজের ছোকা-ছুকরিরা
রাজপথ ট্রেনপথ সবই জলে ডুবে, সামনের বন্ধ গাড়িতে
লোকদুটো নাকি মরে পড়ে আছে কাল রাত্তির থেকে
বচসা চলছে দুই পুলিশ দলের, মড়া দুটো কার এলাকার
মৃত্যু যে কী কুত্তা চিজ দু-দুটো মড়া তা বুঝেও বোঝেনি
৬
টৈন বাস কিচ্ছুতে চাপি না, শুনি প্রতিদিন ট্রেন থেকে
কয়েকটা মানুষ নিশ্চিত ঝরে মরে, আজকে মরেছে হিজড়ে
মেরিন ড্রাইভের ধনীদের অপদস্হ করে টাকা তোলবার ধান্দায়--
হিজড়ের লাশ বলে পড়ে আছে, সহজে ছোঁবে না কেউ এ-শহরে
ম্যাক্সিমাম সিটিতে শুধু মৃত্যুই খচ্চর প্রাণী সারাক্ষণ বেঁচে
ভালোবাসা মানে নিজেকেও ভালোবাসো প্রেম বিক্রির এ-শহরে
৭
কামড়াবে আঁচ করে জলাতঙ্কের ভয়ে লোহার রড দিয়ে
দশজনের বেশি লোক পিটিয়ে মারছে দেখি রাস্তার কুকুর
বিস্কুট খাওয়াতুম মাঝে-মধ্যে মুর্গির চর্বচোষ্য ঠ্যাঙ
শ্লেষ্মা-কান্না নয় মানুষের মতো, কেবল মাংস নাড়িভূঁড়ি রক্ত
ছিৎরে যাবার যন্ত্রণা এই ম্যাক্সিমাম সিটির গূঢ় আর্তনাদ
কুকুর তো জানতে পারে না মৃত্যু যে কি কুত্তা চিজ
৮
মর্নিংওয়াক করতে সাবওয়ে দিয়ে গেলে শর্টকাট হয়
দেখি পা ফেলার জায়গা নেই
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন