মলয় রায়চৌধুরী

মলয় রায়চৌধুরী

বুধবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৮

ডোমনি, ডাইনি, উওম্যানিয়া, অবন্তিকা আর যাদের সঙ্গে আমি চিতায় পুড়ব, তাদের নিয়ে লেখা



মলয়দাস বাউলের দেহতত্ব
ডোমনি, তুইই দয়াল, যখন বিদেশে যাস কেন রে আনিস কিনে সেক্সটয় ?
ভাইব্রেটর, ডিলডো, বেন-ওয়া-বল, গুহ্যের মুক্তমালা ?
ডোমনি, তুইই দয়াল,জানি কেন বিডিএসএম কবিতার বই এনেছিস,
জি-বিন্দু হিটাচির ম্যাজিকের ছড়ি ? নিপল টিপে কাঁপাবার ক্লিপ ?
ডোমনি, তুইই দয়াল, হাত=পায়ে দড়ি চোখে ঠুলি আমাকে চেয়ারে
উলঙ্গ বেঁধে রেখে দিয়েছিস, নিজের ফাঁস খুলে তলাতল রক্তের স্বাদটুকু দিলি
ডোমনি, তুইই দয়াল, শুদ্ধ প্রেমে মজল যারা কাম-রতিকে রাখলে কোথায়
চাবুক মারিস তুই, চুলের মুঠি ধরে ক্ষিরোদধারাকে চুষে বের করে নিস
ডোমনি, তুইই দয়াল, চাতক স্বভাব নাহলে অমৃতের দুধ তুই দিবিনাকো
আমার খিদে নেই, মুখের ভেতরে কৃষ্ণের বিশ্বরূপ খেয়ে মজে গেছি
ডোমনি, তুইই দয়াল, যতো ইচ্ছে আনন্দ কর, দেহ নিয়ে খেল
আমি একটুও নড়ব না, আহ উহ করব না, যতো চাই ধাতুবীজ নিস

মলয় সাঁইয়ের গান
ডোমনি, তুইই দয়াল, যাতে  জ্বালা জুড়োবার ইচ্ছে পুরো ঘুচে যায়
জ্ঞানহীন বন্ধুবর্জিত শত্রুঘেরা থাকি তার ব্যবস্হা করে দিস
ডোমনি, তুইই দয়াল, মোমাছির চাকে মোড়া তোর অঙ্গ, অনিত্যানন্দময়ী
নিয়ে চল মহাবিলাসের গর্তে, করে তোল যতোটা পারিস অদীক্ষিত
ডোমনি, তুইই দয়াল, অশুভের নাচগানে সাধক করে তোল রে আমাকে
কী-কী করলে মহাপাপ হবে তার রাস্তা বলে দে, গোত্রবর্জিত করে তোল
ডোমনি, তুইই মহান, অপ্রেমপন্হায় শ্রীগুহ্যসমাজতন্ত্র ভাঙচুর কর
মগজের আশিক মাশুকাদের স্মৃতিহীন করে মেরে ফ্যাল
ডোমনি, তুইই দয়াল, শরীরের ব্যকরণ মুছে দে রে মস্তিষ্ক থেকে
নিয়ে চল ভুল পথে দেখা যাক মর্ষমজা কীরকম দোষদুষ্ট খেলি

মলয়ক্ষ্যাপার নাচ
ডোমনি, তুইই দয়াল
আমার চেতনায় শিকড় পুঁতে দিয়েছিস
ধর্ম-বর্ণে কোনো শিকড় নেই
জাতীয়তায় কোনো শিকড় নেই
বাড়ি-পাড়া-রাজ্যে কোনো শিকড় নেই
শ্রেনিতে কোনো শিকড় নেই
আয় আজ দুজনে মিলে অমাবস্যার নাচ নাচি

মলয় আউলের নাচ
ডোমনি, তুইই দয়াল
আমাকে দেহসর্বস্ব আত্মহারা করে দিলি
শাক্ত বৈষ্ণব থেকে মুক্ত করে দিলি
পাপপূণ্য একাকার করে দিলি
স্বর্গনরক একাকার করে দিলি
ইহলোক ছাড়া আর কিছু নেই বলে দিলি
আয় আজ দুজনে মিলে অমাবস্যার নাচ নাচি

মলয় ফকিরের নাচ
ডোমনি, তুইই দয়াল
কুৎসাকে তুড়ি মেরে ওড়াতে শেখালি
শত্রুরা আমার আগে মরে যাবে বলে মন্ত্র দিলি
কলঙ্ক কিছুই করতে পারবে না বলে আমাকে ঘিরে রেখে দিলি
অশুভশক্তি কিছু করতে পারবে না বলে ছাতা মেলে দিলি
আয় আজ দুজনে মিলে অমাবস্যার নাচ নাচি

মলয় বাউলের নাচ
ডোমনি, তুইই দয়াল
তোর ঘামে স্নান সেরে নিই
তোর শ্বাসে শ্বাস ফেলে খেলি
আমি তোর খমকের ধুন
আমি তোর একতারার তার
আমি তোর মাটিছোঁয়া জটা
আয় আজ দুজনে মিলে অমাবস্যার নাচ নাচি

মলয় পচার নাচ
ডোমনি, তুইই দয়াল
তুই আমার শবের ছাই ঝড়েতে ওড়াবি
তুই আমার মুখে দিবি কারণবারি রক্ত
আমরা করব সহবাস ঋতুবীজহীন
আমি তোকে তুই আমাকে পরস্পর খাবো
গিঁট না খুলে তুই সবই দেখিয়ে দিস ওরে
আয় আজ দুজনে মিলে অমাবস্যার নাচ নাচি

মলয়সাঁইয়ের গান
ডোমনি, তুইই দয়াল, আমাকে জড়িয়ে ধর, বাকিটুকু কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল, ছাইয়ের গাদায় চল জড়াজড়ি করি, বাকিটুকু কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল, জাগিয়ে দে কুণ্ডলিনিচাকা, বাকিটুকু কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল, চুমু খা কাঁচা-মাংস খাওয়া ঠোঁটে, বাকিটুকু কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল, দেখা রে দাঁড়কাক দেহ, বাকিটুকু কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল, নোংরা নখে বুক চের, বাকিটুকি কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল, বুকে তোর দুধের বদলে রক্ত খেয়ে বাকিটুকু কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল, আয়, অমাবস্যায় নিজেদের মুড়ে বাকিটুকু কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল, চুলের জটা দিয়ে বাঁধ আমায়, বাকিটুকি কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল, আমাকে তোর দোতারা কর, বাকিটুকু কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল, দিব্যনিম করে দে আমায়, বাকিটুকু কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল,  আমাকে অনাদর কর, বাকিটুকু কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল, আমার শিকড় তুই উপড়ে দে, বাকিটুকু কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল, বরফে আগুন ধরা, বাকিটুকু কাঁদি
ডোমনি, তুইই দয়াল, জীবনভর জড়িয়ে থাকিস, সারাজীবন কাঁদি

মলয় ফকিরের গান
ডোমনি, তুইই দয়াল, রোজ ভোরবেলা দেখি
আঁস্তাকুড় থেকে বেছে নিচ্ছিস কতো পরিত্যাগ
ডোমনি, তুইই দয়াল, আদিমতমা নারীবাদী
বডিস পরতে দেখিনি কোনোদিন, তোর দু’বুকের ভাঁজে
ডোমনি, তুইই দয়াল, জ্যোতি আছে, কখনো বা আচমকা
বোঁটাও ঝিলিক দ্যায়, তাতে কিচ্ছু যায় বা আসেনাকো তোর
ডোমনি, তুইই দয়াল, বাতিল কনডোম তুলে নিয়ে বীর্য শুঁকিস
সুগন্ধে হাসিস মিটিমিটি, হাঁ করে গলায় ঢেলে নিস ফোঁটা-ফোঁটা
ডোমনি, তুইই দয়াল, বারোয়ারি বীজঠোঁটে কবে চুমু খাবো
তুই জিভ টেনে নিবি মুখে সুষুম্না লতিয়ে উঠে ঝরবে তলাতল
ডোমনি, তুইই দয়াল, রক্তমাখা স্যানিটারি ন্যাপকিন
তুলে নিয়ে চটের বস্তায় ভরে নিস, বস্তিতে গিয়ে রক্ত মাখবি গায়েতে
ডোমনি, তুইই দয়াল, ওই বাসি রক্ত চেটে নিঃস্বভাবি হতে চাই
ডোমনি, তুইই দয়াল, শিখিয়ে দিয়েছিস শ্বাসবায়ু বন্ধ করে রেখে
ইচ্ছাধীন উড়ন্ত দেহে কুম্ভক সৃষ্টির ইন্দ্রজাল
ডোমনি, তুইই দয়াল, নাভিতে কতোকাল ময়লা জমে আছে
নিয়ে চল তোর ডেরায় জিভ দিয়ে পরিষ্কার করি
ডোমনি, তুইই দয়াল, প্রতিমাসে জোয়ারে ভেসে যাস
তোর তিন নাড়িতে ত্রিবেণী সংহতি
ডোমনি, তুইই দয়াল, রস ও রতির মিশেলে জেগে ওঠ
গরলামৃত নিয়ে আমার মতন সাধকের সাথে নৃত্য কর
ডোমনি, তুইই দয়াল, ইড়াতে পূরক, পিঙ্গলায় রেচক শেখালি
নদীর একুল-ওকুলে অধর ধরে নির্মাণচক্রে ঘুমোস
ডোমনি, তুইই দয়াল, তোর লাবণামৃতে চান করে উন্মাদ হই
বিন্দু ধারণের যোগ্য কবে করে তুলবি আমাকে
ডোমনি, তুইই দয়াল, শ্মশানের কাঠকয়লায় রেঁধেছিস ভাত
করোটির থালায় ভরে খাবো দুইজনে পোড়া মাংস দিয়ে
ডোমনি, তুইই দয়াল, বলি দেয়া পাঁঠার রক্ত এনে ভরিস করোটিতে
একদিন আমারও করোটিতে চুমু দিয়ে রক্ত খেয়ে নাচবি ধামাল
ডোমনি, তুইই দয়াল, রজপ্রবৃত্তির তিন দিন তিন রাত
দেহের অমাবস্যায় তুই আমাকে পূর্ণিমা দিস
ডোমনি, তুইই দয়াল, আমার ব্যক্তিসত্তাবোধ লোপ করে কবে দিবি
আনন্দকে তিনটি দিনের লাল আলো জ্বেলে শীতোষ্ণ করবি কবে
ডোমনি, তুইই দয়াল, চেয়ে দ্যাখ আমি আস্তাঁকুড়
মানুষের ফেলে-দেয়া সবকিছু নিজের অস্তিত্বে ধরে আছি
ডোমনি, তুইই দয়াল, আমাকে আলেখ পুরুষ করে তোল
বলে দে কেমন করে স্খলন বন্ধ করে কবিত্বের শক্তি যোগাবো
ডোমনি, তুইই দয়াল, আমাকে সহজ পুরুষ করে তোল
বলে দে কেমন করে সারা দেহে প্রেমানন্দ আনবে বানভাসি
ডোমনি, তুইই দয়াল, আমাকে অশ্লীলতম নোংরা গান শেখা
ঝরাই অশ্রাব্য অমৃতধারা এই লাৎখোর বঙ্গসমাজে
ডোমনি, তুইই দয়াল, তুইই শবরী, চণ্ডালী, শৈবালযোনি
পদ্ম আর বজ্রের সংসর্গে ক্লেশশত্রুজয়ী পুরুষ করে তোল রে আমাকে
ডোমনি, তুই দয়াল, কবে তোর অতিনোংরা চরণ দুটি পাবো
বুকের  ওপরে রেখে খেলবি দজ্জালদোষে নৈরাত্মা-হরণ করা চরণ দুটি পাবো

ঔপনিবেশিক রক্তচোষার দল
শেয়ালদা স্টেশানের বেঞ্চে বসেছিলুম
ছারপোকার কামড়ে উঠে পড়তে হল
আমার ফাঁকা জায়গায় তক্ষুনি একজন বসল এসে
এই যে কলকাতার ছারপোকা
এই যে কলকাতার নানা জাতের মাছি
এরা কোথা থেকে এলো এই শহরে
কারা নিয়ে এসেছে
এখানে তো শহর ছিল না
অজ পাড়া গাঁ ছিল
সেই গ্রামে নিশ্চয়ই ছারপোকা ছিল না
ধাপার মাঠও ছিল না যে মাছির কলোনি বসবে
আসলে ছারপোকা আর মাছি এসেছে জাহাজে চেপে
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে
ঔপনিবেশিক সায়েবরা চলে গেছে ভেবে লাভ নেই
তারা ছেড়ে গেছে আরেকধরণের রক্তচোষার দল
এই রক্তচোষারা সাম্রাজ্যবাদী নয়
এরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে
সকলের রক্তই এরা একইভাবে খায়
কোনো বাদবিচার নেই

ম্যাজিশিয়ানের অবসরপ্রাপ্তি
বিদায় জানাবার সময়ে আপনি জড়িয়ে ধরে ‘হাগ’ করলেন
এখন আর হ্যাণ্ডশেক বা হাতজোড় করে নমস্কার করার রেওয়াজ নেই
আমার বাঁহাতে আপনার বডিসের হুক ঠেকলো
আপনার বিদেশি পারফাইউমের সুগন্ধ
কিন্তু আমি আপনাকে ভুলে গেলুম
তৎক্ষণাত ভুলে গেলুম
বুঝতে পারলুম ফিরে গেছি পাঁচ দশক অতীতে
বাঁহাতে বডিসের হুক ঠেকেছিল
হুবহু একই পারফিউম
আমরা যা করেছিলুম তাকে সেসময়ে লোকে বলতো
প্রেম করা, ইন্দ্রিয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা
আজ আপনাকে জড়িয়ে ধরার পর
মনে হল প্রেম করা বলে আদপে কিছুই
বোধহয় নেই
যা আছে তা কুণ্ডলিনী জাগিয়ে তোলার ম্যাজিক
আমি আর ম্যাজিক দেখাতে পারি না
আপনি হয়তো তা বুঝতে পেরেছেন

অলিফ ফলের মতন
তোর, মনে আছে এখনও, ছিল বড়ো-বড়ো চোখ
একটার থেকে আরেকটা কিছুটা দূরত্বে, জোড়া ভুরুর তলায়
কাঁচা অলিভের মতন গায়ের রঙ
আজকাল বাজারে অলিভ পাওয়া যায়, নয়তো
তোর গায়ের ত্বক কেমন তা বোঝাতে পারতুম না
তোর দেহকে ব্যাখ্যা করার জন্য
এইটুকুই যথেষ্ট , কিন্তু চোখে যে কেন দুঃখ
দেখলুম তা আজও ভুলিনি রে

খিদে
কোনো ভয়ই খিদের সামনে টিকতে পারে না
কোন ধৈর্য পারে না খিদের সামনে দাঁড়াতে
খিদে পেলে নিজের মান সন্মান কোনো ব্যাপরই নয়
কোনও কুসংস্কার খিদের সামনে একেবারে ফালতু
কোনও বিশ্বাস খিদের সামনে ভুয়ো
মরুভূমির বালির ঝড় বই আর কিছু নয়
কিন্তু সকলেই প্রশ্ন করে যে
‘আপনার খিদেটা কিসের ?’
শুনে, তাদের যাচ্ছেতাই গালাগাল দিই

সেলুনে গোঁফের ছবি
সেলুনে নাপিত জানতে চাইলো
‘কেমন গোঁফ চাই, স্যার ?’
দেখলুম, স্ট্যালিনের গোঁফ, হিটলারের গোঁফ
রাজকাপুরের গোঁফ–
বললুম, ‘ওরে নিতাই,
তুই আমার পুরো গোঁফটাই কামিয়ে দে
আজ থেকে আর গোঁফ রাখবো না ।”

আমার মহাপরিনির্বাণ
“রাস্তার সব আলো নিভিয়ে অন্ধকার করে দেয়া হয়েছিল
দরোজায় টোকা দিতে বাইরে বেরোলেই
পেছন থেকে চুলের মুঠি ধরে গলায় কাস্তে চালিয়ে দিলুম
জিভে রক্তের ছিটে এসে লাগল
সেই থেকে রক্তের প্রতি আমার ভালোবাসা
এখন করোটিতে ভরে রক্তপান করি
তখন তো আমি সতেরো বছরের যুবতী
এখন বয়স হয়েছে
এখন আমি তন্ত্রসাধিকা
অমাবস্যার রাতে চিতা থেকে আধপোড়া
মাংস এনে দেয় ডোম, খাই
আমি  ব্রহ্মাণ্ডের সঙ্গে একাত্ম
এখন আমি করোটিকে অমাবস্যায় জাগিয়ে তুলি
মেয়েরা যে কংশাল ছিল তা অনেকে জানে না
আমরা চারজন মেয়ে ছিলুম
দুজনের কাজ ছিল গলার নলি কেটে দেবার পর
লাশের মুখে আলকাতরা মাখানো
ঠেলাগাড়িতে তুলে গঙ্গায় নিয়ে গিয়ে ভাসানো–
আমার দোসর এই বাউল প্রাণেরপুতুল দাস
ও নকশাল ছিল, বিদ্যাসাগরের মূর্তির মাথা
ওইই কেটেছিল”

শুনে,  আমার চোখ নিজের  পাতা ফেলতে ভুলে গিয়েছিল
ওনার চোখ দুটো এখনও বড়ো আর কাজলটানা
শুনে,  আমার ঠোঁটদুটো হাঁ-মুখ বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিল
ওনার প্রৌঢ় গালে এখনও রক্তের পাউডার মাখানো
মাটিতে গোঁজা ত্রিশূলে টাঙানো তেলসিঁদুর মাখানো করোটি
দুটো করোটিতে তরল রক্ত রাখা
করোটিগুলো হয়তো কোনো কবির
করোটিগুলো হয়তো কোনো ভাস্করের
করোটিগুলো হয়তো কোনো ছবি-আঁকিয়ের
ছাগল বলি দিয়ে পূণ্যার্থী দিয়ে গেল তরল চটচটে রক্ত
হাড়িকাঠে ছাগলেরর মাথা ঢুকিয়ে শিঙ ধরে টেনে রেখেছিল পূণ্যার্থী
আমার গায়ে বরফমাখা ঘামের কাঁটা

বাউল প্রাণেরপুতুল দাস-এর দিকে তাকালুম
তার মুখে হাসি হাতে একতারা রঙিন তাপ্পি দেয়া পোশাক
বুক দেখা যাচ্ছে, চুল নেই
অমাবস্যার অন্ধকার কেটে-কেটে ওনার কথা
“হ্যাঁ, আমিই বিদ্যাসাগরের মূর্তির মাথা কেটেছিলুম
আমি অনেক শ্রেণীশত্রুকে গুলি করে মেরেছিলুম
অনেক জোতদারকে কুপিয়ে খুন করেছিলুম
রক্তের প্রতি আমার টান আমায় এই সাধিকার কাছে এনেছে
আমরা একই পথের যাত্রী
আমি প্রেমসুধা পান করি
ও রক্তপান করে
আমি প্রেমের গান গাই একতারা বাজাই নাচি
ও মন্ত্র পড়ে ধুনো দেয় নাচে
আমাদের গন্তব্য নেই তীর্থ নেই চাওয়া-পাওয়া নেই
আমরা দুজনে একই জায়গায় রয়েছি আর থাকবো
আমাদের মনে আর শরীরে যা ঘটার তা আমরা ঘটিয়ে ফেলেছি”

শুনতে শুনতে টের পাই
শুনতে শুনতে বুঝি
আমার মহাপরিনির্বাণ ঘটছে

কান্নাপাড়ার চৌমাথায়
সম্পাদক আর আমার মাঝে ছাপা-কথার
মিছিলের ভেতর দিয়ে হাঁটার সময়ে ফিলিপিনি যুবতীটি
আমায় কাঁদতে শিখিয়েছিল
ও যখন শান্তিনিকেতনে কাজের বউ ছিল
দেখেছিল রবীন্দ্রনাথের কান্না একটা বোতলে সিল করা আছে
যেমনটা খালাসিটোলার বোতলগুলো আলকাতরার
জ্যোতি দিয়ে বন্ধ করা থাকে
১৯৩০ সালে চোরেরা বোতল গেঁড়িয়ে খেয়েছিল
ভেবেছিল বেহেড হয়ে প্যারিসের রাস্তায় গড়াগড়ি দেবে
কিন্তু নেশা হয়নি বলে বোতলের ওপর বেজায় চটে গিয়েছিল
১৯৫০ সালে যে-কয়েক ফোঁটা বোতলে ছিল
জিভের ওপর ফেলে চারজন ছোকরা অবিনাশ কবিরাজ লেনে
আত্মহত্যার গান গেয়ে অঢেল টাকা রোজগার করেছিল
সেই টাকায় একাধজন শান্তিনিকেতনে বাড়িও হেঁকেছে
এদিকে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রঙিন হাফযুবতীরা
রক্তের পাউডার গালে মেখে
সম্পাদকদের শিখিয়ে দিয়েছিল কেমন করে
মিছিলের ভেতরে হাঁটার সময়ে কাঁদতে হয়

জোকারদের শহরে
যে রাস্তায় সুচিত্রা সেনের গন্ধ এখনও আমাকে খুঁজে বেড়ায়
আর তো কোনো দুর্গা টুনটুনিকে দেখি না
ফুলেদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করছে
অথচ চারিদিকে কোকিলের মতন সুকন্ঠ ধড়িবাজরা
অভিনন্দন ধরার জন্য জাল পেতে বসে আছে
ভ্রুর তলা থেকে তাকিয়ে দেখুন
প্রতিটি আওয়াজের ইশারা আছে এই শহরে
পুষে রেখেছে কালবৈশাখির মহাসুখের সন্ত্রাস

স্লেভ
মিশরের পিরামিডগুলো দেখতে বারবার আসি
মনে হয় হারানো কাউকে খুঁজি, কাকে,
দু-আড়াই হাজার বছর আগের কোনো স্লেভ
মমি হয়ে শুয়ে আছে, ধুলোর তবকে মোড়া
তাকে নয়, আসলে মৃত্যুকে খুঁজি, তার মতো আরো অনেকের
নয়তো জাদুঘরে কেন যেতে ইচ্ছে করে
সবই তো প্রাচীন মৃত ইতিহাসে আবছা ধুলোট
সেখানেও মমিটির দিকে চেয়ে দেখি বহুক্ষণ
মনে হয় চিনি তাকে, মৃত্যুকে কতোভাবে চিনি
কোমরে হাত রেখে মহেঞ্জোদারোর কিশোরীটি
যে যুবতীকে কান কেটে উপহার দ্যান ভ্যান গঘ
মদিগলিয়ানির নগ্ন যুবতীরা, বদল্যারের জাঁ দুভাল
উড়ন্ত সারসদল ফিরে যাচ্ছে আকাশ গোলাপি করে
কোথায় মারা যায় তারা, কোথায় মারা যায় তিমিমাছ
ডায়নোসরদের পাথুরে কঙ্কাল ছুঁয়ে দেখি
কোটি-কোটি বচ্ছর আগের মৃত্যু
কেন তারা হারিয়ে গিয়েছে জানতে পারেনি কেউ
অ্যাজটেকদের পিরামিডগুলো দেখতে আসি বারবার
দেবতাকে হৃৎপিণ্ড কেটে উপহার দিত
রক্ত খেতে ভালোবাসতো তাদের ঈশ্বরেরা
আনন্দ উৎসবে মেতে, বুক থেকে ছিঁড়ে তখনও
নাচছে হৃৎপিণ্ডখানা, মৃত্যুর আহ্লাদে বিভোর
আসলে মৃত্যুকে খুঁজে ফেরে সকলেই
শেষে পায় নিজের শরীরে, মৃত্যুর ক্রীতদাস
তার বোধ মৃত্যুই লুপ্ত করে দিয়ে চলে গেছে
সে তখন মৃত্যু সম্পর্কে বোধশক্তিহীন
মাছি উড়ছে তার শবদেহটির ঠোঁটে
ডানায় মৃত্যুর গান নিয়ে

শাকাহার
“বাঁচাও বাঁচাও”
শুনে মনে হলো কোনো কিশোরের আর্তচিৎকার
ওই বিশাল বাড়িটা থেকে শোনা যাচ্ছে
“বাঁচাও বাঁচাও”
রাতের অন্ধকারে ঢাকা প্রাসাদের মতো
প্রাচীন বাড়িটা
ভাবলুম, কী করব, কিডন্যাপারদের সামলাতে পারবো না
যা হবার হোক, ঢুকে যাই, দেখা যাবে
জীবনে তো সবকিছু পাওয়া হয়ে গেছে
এখন কিডন্যাপারের ছুরি বা গুলিতে মরলেও ক্ষতি নেই
ঢুকে গেলুম চুপচাপ হাট-করে খোলা বাড়িটাতে
“বাঁচাও বাঁচাও” যে-ঘর থেকে আসছিল
সরাসরি সেই ঘরে ঢুকে দেখি, বাচ্চা ছেলেকে
ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে খাওয়াচ্ছেন তার মা
আমায় দেখে উনি বললেন, কী, আপনিও নিশ্চই ভাবলেন
এটা ছেলেধরাদের বাড়ি ? কীই বা করব বলুন
আমার ছেলেটা মাছ-মাংস খেতে চায় না একদম
আজকে চিকেন হয়েছে, চিংড়ির মালাইকারি, মুখে দিচ্ছে না
খাওয়াতে গেলেই লোকজড়ো করবার জন্য ওই বিটকেল
চেঁচানি, “বাঁচাও বাঁচাও” ; ছেলেটি আমাকে বলল, দাদু
তুমিই বরং মাংস আর চিংড়ি খেয়ে যাও–
আমি পালংশাক ভাজা আর মোচার ঘণ্ট শুধু খাবো ভাত দিয়ে ।

ওরারা- আমরারা
শেকসপিয়ার স্যার, তুমিই তো শিখিয়ে গিয়েছো
ইহুদিরা ভালো লোক নয়, সুদখোর, উশুল করবেই
হয় টাকা দাও নয়তো মাংসখন্ড দিয়ে ঋণ পরিশোধ করো
তুমিই দেখিয়েছিলে, ইহুদির মেয়ে খ্রিস্টানের সঙ্গে পালিয়েছে
ইহুদির চাকর ব্যাটাও ইহুদিদের ঘেন্না করে, কিন্তু ওর তো উপায় নেই
ইহুদির হাত থেকে ঋণখেলাপি থেকে বাঁচালো পোরশিয়া, লোকটার বউ
বলল, ঠিক আছে ইহুদি শাইলক তুমি মাংস কেটে নাও
তাই বলে রক্ত ঝরাতে পারবে না
ইহুদিকে নিজেরই জালে ফাঁসিয়ে দিলেন মহানাট্যকার
চুক্তিতে এ কথাও ছিল ইহুদি যদি চুক্তি ভঙ্গ করে
সেক্ষেত্রে তাকে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হতে হবে
সমস্ত পৃথিবী জুড়ে ওরা কেটে নেবে আমরাদের মাংস
রক্তসুদ্দুই কেটে নেবে
আমরা কেটে নেবে ওরাদের মাংস
রক্তসুদ্দুই কেটে নেবে
কতোকাল থেকে চলছে এই, মাংস কেটে নাচবার খেলা
ফ্যারাওদের রাজত্বের দিন থেকে
শত্রু ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকা অসম্ভব বলে মনে হয়
যেমন বলিউডি তিনজন খান-হিরো ষড়যন্ত্র করে
তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বী ফাওয়াদ খানকে তাড়িয়ে শান্তি পেয়েছিল
এখন অপেক্ষা অন্য কোনো গ্রহ থেকে শত্রুদল আসে যদি
পৃথিবীতে আমরা নিজেদের মধ্যে লড়ালড়ি বন্ধ করে দিয়ে
পাঙ্গা নেবো সেই সব মূর্খ বা অতিজ্ঞানী প্রাণীদের সঙ্গে

আংটিই কেন ?
সম্পর্ক তৈরির জন্য আংটিই কেন ?
নারী-পুরুষের মাঝে আংটি কীভাবে এলো
সম্পর্ক গড়ে দিতে বিভিন্ন দেশে
বিবাহের আগে আংটি পরানোর প্রথা
মোহিত করার কালে আংটি পরাবার
যেমন শকুন্তলাকে পরিয়ে দুষ্মন্ত
শরীরের সম্পর্ক গড়েছিল !
যুবক-যুবতীদের দেখি প্রথমেই চোখ যায়
পরস্পরের অনামিকায় আংটি আছে কিনা
গুহামানবের যুগে শুরু হয়েছিল হরিণের হাড় থেকে
আংটি তৈরির খেলা, যে পুরুষ যতোজন মহিলাকে
আংটি পরিয়ে দেবে সেই তার সঙ্গে সম্পর্ক পাতাবে
অর্থাৎ এখনও মানুষ গুহামানবের ভালোবাসাবোধে
আটক রয়ে গেছে, আংটির বৃত্তের ফাঁদ পেতে !

আমার বৃক্ষেরা
আমার বৃক্ষেরা ছিল এই বাংলো-বাড়ির বিশাল বাগানে
পুঁতেছিলুম আমি ট্যুরে গিয়ে বিভিন্ন গ্রাম থেকে চারা এনে
পেয়ারার সজিনার মর্তমান কদলীর নারকেলে কুলের
নিজের হাতে কোদাল চালিয়ে খেত করেছিলুম আমি
একশো ফুট পাইপ এনে রোজই অফিস থেকে ফিরে, দিয়েছি
জলের ঝারি, স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে খুরপি নিয়ে আগাছা তুলেছে
টোমাটোর ভুট্টার ঢেঁড়সের বেগুনের ধনেপাতা মৌরিফুলের
বিলোতুম প্রতিবেশিদের, কতো আনন্দে তারা বাঁটোয়ারা করে নিতো
পুজোর জন্য ফুল নিয়ে যেতো অরিন্দমের বড়ো-পিসি
গোলাপ বেলিফুল রজনীগন্ধার ঝাড় দোপাটি কৃষ্ণকলি
আমার আর  স্ত্রী-ছেলে-মেয়ের পরিশ্রমে পাওয়া ফল ও ফুলের

চাকরি থেকে বদলি হয়ে যেতে হলো সাত বছর পরে
ফেলে চলে যেতে হলো আমার নিজের হাতে তৈরি বাগান
আজ অবসর নিয়ে দেখতে এসেছিলুম কেমন রয়েছে সে-বাগান–
সেখানে কিছুই নেই ; সে-বিশাল বাংলো জুড়ে উঠে গেছে
তেরো-তলা আবাসন, বারান্দায় শুকোচ্ছে আবাসিকদের
ঝোলানো পোশাক ; আমার বৃক্ষেরা ফুলেরা ফলের গাছ
এমনকি বারমুডা ঘাস নিশ্চিহ্ণ হয়ে গেছে শহুরে প্রসারে

কলম কেন লিক করে
যুদ্ধ চলতেই থাকে, ছোটো হোক বা বড়ো
আমরা ভাবি কবিতা লিখে যুদ্ধ থামিয়ে দেবো
কবিদের কেউই পাত্তা দেয় না
পাত্তা দেয় বিজ্ঞানীদের, যাঁরা
নতুন নতুন অস্ত্র আবিষ্কার করে চলেছেন
তা প্রয়োগ হয়ে চলেছে ছোটো যুদ্ধগুলোয়
বাড়ি ঘর শহর মনে হয় পাঁপড়ের তৈরি
যুদ্ধ কখনও ফুরোবে না, আমরা ফুরোবো
দেশে-দেশে সৈন্যদল থাকবে, আমরা হাত কামড়াবো
একদল শাসককে টেনে নামাবে এক যুদ্ধ
তাদের টেনে নামাবে আরেক যুদ্ধ
আমরা সাধারণ মানুষ সিঁটিয়ে থাকবো
বড়ো যুদ্ধ ছোটো যুদ্ধ মাঝারি যুদ্ধের ভয়ে
যাই হোক, তবুও যদি কবিতা কোনো কাজে দ্যায়
কবিদের তো এছাড়া আর কোনও গতি নেই…


পাঁপড়
রথের মেলায় গিয়ে নাতিকে পাঁপড় খাওয়ালে নাকি ?
মোবিল ভেজাল দেয়া তেলেতে ভাজা পাঁপড় তো ?
কীই বা করবে বলো, কাঁচা মালের যা দাম
তোমাদের তো সেঁকা পাঁপড় চলে না, সন্দেহ হয় যে
কাঠকয়লা এসেছে শ্মশান থেকে, সস্তায় পাওয়া যায়
যারা পাঁপড় বেলে তাদের ৫০০০ পাঁপড় বেলে রোজগার হয়
১৭৫ টাকা । একদিনে তো ৫০০০ পাঁপড় বেলা যায় না
তাও নিজেদের উঠোনে শুকিয়ে মহাজনকে ফেরত দিতে হয়
মহাজনেরও যে বিশেষ লাভ হয় তা নয় ; ৫০০০ পাঁপড়ে
তার লাভ ১০০০ টাকা । তোমার অতো চিন্তার কী দরকার
তুমি বন্ধুদের সঙ্গে চুল্লু ঠেকে পাঁপড় টাকনা দিয়ে খাও
তুমি তো মধ্যবিত্তবাবু, খিচুড়ির সঙ্গেও খেতে পারো
যারা পাঁপড়ের মতন ফিনফিনে রোগা হয়ে চলেছে
তারা যতোদিন পারে চালিয়ে যাক, তারপর তো মেশিন আসছেই
তাদের কাজ আর রোজগার খেয়ে ফেলার জন্য
তোমার কিন্তু মুচমুচে পাঁপড়টি না হলে চলবে না, বেশ, বেশ

আলু
তোমার আলুর দম খেতে ভালো লাগে নাকি আলুভাতে
পেঁয়াজকুচি সর্ষের তেল দিয়ে মেখে ?
রুইকালিয়ায় দেয়া আলু নাকি ডিমের ঝোলে ?
আলুছেঁচকি তোমার মায়ের হাতের, মনে পড়ছে
অফিসে নিয়ে যেতে টিফিনকৌটোয়, চন্দ্রমুখী ?
তুমি কুড়ি টাকা কিলো ভালো জাতের আলু কিনেছ
যে সব্জিঅলার কাছ থেকে কিনলে সে কতো করে কিনেছে জানো ?
সে কিনেছে চোদ্দটাকা করে কিলো
তাকে যে বেচেছে সে কতো টাকা কিলো কিনেছে জানো ?
সে কিনেছে সাড়ে সাত টাকা দরে
তাকে যে বেচেছে সে কতো করে কিলো কিনেছে জানো ?
সে কিনেছে চার টাকা দরে
চাষি কতো করে বেচেছে জানো ?
এগারো পয়সা কিলো দরে ।
কী, বেশ ভাল্লেগছে তো আলুর দম দিয়ে পরোটা খেতে
কিংবা সেদ্ধ চালের ভাত অড়র ডাল দিয়ে মেখে
আলুভাতের সঙ্গে ? দারুন, তাই না ?
তুমি আর কিই বা করবে ? বেচারা মধ্যবিত্ত !
যতোই গদিবদল হোক দাদা
চাষি ওই এগারো পয়সা করেই বেচে চলেছে—
কানু সান্যাল তাকে এক টুকরো জমি পাইয়ে দিয়েছেন বটে
কিন্তু আলুর দাম বাড়িয়ে যেতে পারেননি
বিপ্লব মহাজনদের ছোঁয় না
প্রেম কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড
ইদুরেরা জানে না আলফনসো আম ৫০০ টাকা ডজন
আবুঝমাড়ের জঙ্গলের আদিবাসিরা জানে না কাকে আলফনসো আম বলে
তারা জানে খাকি রঙ মানেই আতঙ্ক
কে যে কখন মরবে
কাকে যে কখন ধরে জেলে নিয়ে যাবে
সে ফিরবে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই
ফিরলেও থেঁতো হয়ে ফিরে আসবে
আমি ঘুমের মধ্যে ফোঁটা-ফোঁটা রক্ত পড়ার শব্দ শুনতে পাই
জানি না তা কার রক্ত
জানিনা তা কাদের রক্ত
আসলে আতঙ্ক ব্যপারটা হলো বোধশক্তির পরীক্ষা
মানুষই কেবল আতঙ্কিত হয় কেননা মানুষই কেবল প্রেমের কথা জানে

মৃত্যুর পাঠক
পাঁচদিন পাঁচরাত ঝুলেছিল অদ্রীশ বিশ্বাস, আমার বিদগ্ধ পাঠক,
বুঝতে কি পেরেছিল পচে যাচ্ছে ক্রমে, সময়ের সাথে,
বনিবনা করতে পারেনি মানুষের সাথে, পারেনিকো কেন ?
জীবনানন্দ তো যাহোক কিছুটা পথচর নিশাচর হয়ে
মানিয়ে ছিলেন তো নিয়ে, অক্ষরের সাথে, ইতিহাস বই থেকে খুঁটে
কে ছিল আত্তিলা, দারুচিনি গাছের জঙ্গল কোন মস্তিষ্কের কোণে–
অদ্রীশ পারলো না, বলেছিল, ওকে রায়গঞ্জের পথে সাইকেল থেকে
একদল মাস্তান টেনে বেদম মেরেছিল, ওকে চারতলা থেকে হিঁচড়ে
টেনে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে দিয়েছিল পাগলাগারদে ;
বলেছিল পশ্চিমবাংলায় দুইটি ঘটনা আর ঘটবে না কোনোদিন
নেতাজির ফিরে আসা এবং সিপিআইম-এর গদিতে ফিরে আসা–
এ সেই অদ্রীশ, সোনাগাছি গিয়ে বিনয় মজুমদারের স্ত্রী ও ছেলের
ফিল্ম তুলে এনেছিল, কতোকিছু সংগ্রহ করেছিল একাধিক বই লিখবে বলে–
গলায় ফাঁস দিয়ে ঝোলার সময়ে পৃথিবীকে ফালতু জায়গা ভেবে
গন্তব্য শেষ করে নিলো । পাঁচদিন পাঁচরাত ধরে ঝুলে পচতে থাকাকে
মৃত্যু বলা যায় ? তারপর মর্গে গিয়ে আরও সাতদিন সাতরাত
চুপচাপ শুয়ে অদ্রীশ যা চেয়েছিল তা কি পেয়েছিল, পচে গিয়ে ?
আসলে প্রথম থেকে অদ্রীশ চেয়েছিল মৃত্যুর পাঠক হতে
ওর আগে আর কেউ মৃত্যুকে বিনির্মাণ করার চেষ্টা করেনিকো–
অদ্রীশ বিশ্বাস করলো, কিন্তু জানিয়ে গেল না, বিনির্মাণের চিরকুট
লেখবার প্রয়োজন মনে করলো না, অনির্ণেয় রেখে গেল উত্তরখানা ।

প্রেম
ঝড় উঠেছে, হয়তো বৃষ্টি আসবে, বলা যায় না
গোরু মোষগুলো যেখানে দাঁড়িয়েছিল
সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে, উপভোগ করছে ঝড়কে
ঝড়ে ওদের বিশেষকিছু এসেযায় না
নারকেলগাছের পাতা চুল এলিয়ে দিয়েছে, উপভোগ করছে
গাছেরা উপভোগ করতে পারছে না, হাত-পা ভেঙে লুটিয়ে পড়ছে
ব্যাঙের ছাতা কিন্তু উপভোগ করছে, চুপচাপ দাঁড়িয়ে
গোখরো সাপটা শীতের রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনে ঘুমিয়েছিল
ঝড়ে গর্তের মুখে উঁকি মেরে চোখ বুজে উপভোগ করছে
শব্দ শুনতে পাচ্ছে পুকুরের মাছগুলোর লাফালাফি
দিনকতক আগেই খোলস ছেড়েছিল, এখন একেবারে টাটকা
মাঠে যে কংকাল পড়ে আছে তার ফিরে আসছে মাংসের স্মৃতি
পুরুষের কংকাল, পার্টির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে খুন হয়েছিল
ঝড় আসছে দেখে প্রেমিকার হাত ধরে প্রেমিক পালিয়েছে
ইশকুলবাড়ির বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছিল
তখনই ধ্বসে পড়ল ইশকুলবাড়িটা ওদের ওপরে
সিন্ডিকেটের ঠিকেদার গতমাসেই তৈরি করেছিল
তারা তো ক্ষতির বিধাতা, প্রেমের বিধাতা তো নয়
ঝড় শেষ হবার পর সরকারি অফিসাররা খোঁজখবর নেবেন
তখন ওদের পাওয়া যাবে, ঝড়ের ভয়ে মরে পড়ে আছে


পাটলিপুত্রের সম্রাট
কতো যে সাম্রাজ্য জয় করা হয়ে গেলো, আমার সুনাম-দুর্নাম
ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে, বাবার নিরানব্বুই ছেলেকে খুন করে
বসেছি সিংহাসনে, এরকম কাহিনিও ছড়িয়েছে আমার শত্রুরা
আমি নাকি চণ্ডাশোক, রেগে গেলে রেয়াত করি না কাউকে
যা বলছে বলুক ওরা যা লিখছে লিখুক, আমার জন্ম নাকি দুইবার
দুইটি আঁতুড়ে, এখন সেসব প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষে মানুষেরা
পিকনিক করে, কুরুক্ষেত্রের মতো, আঠারোদিনের যুদ্ধ, শীতকালে
বাঘের চামড়ার বালাপোষ পরে, আমি যুদ্ধ লড়েছি খালি গায়ে
পাটলিপুত্র শহরের ইমলিতলার রেইনকোট পরিনি বৃষ্টিতেও
পোশাকের মৃত্যুচেতনা থাকে, যেরকম রাবণের ছিল, এখন
পাটলিপুত্রে পথের দুধারে বসে বাচ্চারা হাগে, আমার শিলালেখ
পড়বার ভাষা এরা সব কেউই জানে না, জল জমে, বর্ষায়
জঞ্জাল উঠে আসে বাড়ির ভেতরে, অলিগলি হামাগুড়ি দিয়ে
বড়োরাস্তায় পৌঁছে দেখতে পায় ছটপুজো করতে চলেছে
ঘোমটানশীন যুবতীরা, এরা কারা, কোথা থেকে এলো,
কোথায় গেলেন সেলুকাসের দেয়া হাজার গ্রিক যুবতীরা
প্রৌঢ়দের মুখে চব্বিশ ঘণ্টা যেন লেগে আছে ঘাটের মড়ার দুঃখ
আমার রথের চিহ্ণ, অশ্বখুরের ছাপ রাস্তা থেকে মুছে গেছে
লোকে ভাবে পাথরে খোদাই করে দুর্বোধ্য মেসেজ লিখে গেছি
দেখছি চারিদিকে নিত্যযাত্রীদের নিত্য উজবুক যাত্রা
সমুদ্র ফুরিয়েছে বাচ্চাদের খেলার ঢেউয়ে, কলিঙ্গ কোথায়
লক্ষ লোক মরে গিয়েছিল, লক্ষাধিক ক্রীতদাস আনা হয়েছিল
তাদের সন্তান পকেটে পিস্তল নিয়ে পাটলিপুত্রের পথে রাজনীতি করে
অথচ একদিন হাত-পা-কোমর থেকে সব অলঙ্কার আমি ফেলে দিয়ে
সাধারণ মানুষের মতো হতে গিয়ে বুঝতে পেরেছি তা হয়ে ওঠা
খুবই কঠিন, সেই পাটলিপুত্র আর নেই, এখন আমিই এই
ভুলে যাওয়া শহরের একচ্ছত্র বৌদ্ধ-ভিখারি, বোধি-অধিকারী

আদি টেম্পটেশান
মগজের বাঁদিকে ছান্দস, যা কিছু যোনির মতো দুই ফাঁক
বহু অন্ধকার তাহাদের রকমফের লয়ে আসে, যা কিছু যোনির মতো
হাসপাতালের পাঁচিলের পারে, যা কোনো যোনিতে গোপনে ছিল বাঁধা
যে বাসি রক্তমাখা তুলো,ওই রক্তই আমি, আকর্ষণের দেহতাপ রয়েছে তথায়
দেহ তো পাঠবস্তু, যোনির মতন দুই ফাঁক, পড়িতে না জানিলে
শবকে আগুন চাটে, ওই যে আঁস্তাকুড়ে মেয়ে-ভ্রুণ
ও-ভ্রুণের নাড়ির জমাট রক্তই আমি, একটি যোনি নষ্ট হয়ে গেল
শ্মশানে শ্মশানে ছাইয়ে আমি আছি, বহুযুগ, ঘায়ের নিষিদ্ধ রঙে
মটর ছোলার অড়হরে মুগের মুসুরের দুফাঁক যোনির অঙ্কুরে, আমাকে পাবেন
প্রতিটি যোনি দিয়ে গর্ভে গিয়েছি আমি
সাইক্লোনের ঘুরন্ত ল্যাজের ঝাপটের মতো
বাজার স্তনকে নিয়ে গেছে, বাজার যোনিকে নিয়ে গেছে, বাজার প্রেমকে নিয়ে গেছে
মুচকি দুঃখ-কষ্টের কিশোরীকে তুলে নিয়ে গেছে
সব নেবে, ওরা সব তুলে নিয়ে যাবে, প্রেম ভালোবাসা স্নেহ আদরের ছোঁয়া
ব্যথা শালা বলেনাকো কোথায় কবে কোনখানে আচমকা আঘাত দেবে
মরার পরের যন্ত্রণায়, লোভে উজ্বলমুখগুলো
আসবাব বলতে হাসি, মানুষের সংজ্ঞায় কিন্তু চুল নেই
মোমবাতিদের গান আছে, শীতের অলস সূর্যাস্ত, না,
তা আমি নই, আদালতে পেশ করা ছোরার রক্তই আমি, যোনিতে বসানো ছোরা
ব্যবসায়ীদের পোষা প্রেত ও প্রেতিনীরা, দরোজার ওই দিকে থাকে
বোমা মেরে থামিয়েছে সুফি গায়কের উল্লাস, তার ছিন্নভিন্ন দেহে
গান হয়ে আছি এখনও, তপ্ত যোনির মতো
দেয়াল ঘড়িতে যে গির্জা ঘণ্টাধ্বনি  মাঝরাতে স্বপ্ন ভেঙে জাগে
স্লিপিং পিলেতে মোড়া ঘুম, চেতনার রঙিন ম্যাকাও পাখি দল বেঁধে
কোথাও না কোথাও ধ্বংস হচ্ছে কিছু-না-কিছু, তার হুঁশিয়ারি
শ্মশানের ডোমও জানতে চায়, ‘এনাকে কেউ কখনও ভালোবেসে ছিল’
মাংস থেকে পাথরে যাবার মাঝে অহল্যার হাফ-বয়েল দেহ
মাংসের দু’ফাক যোনি পাথর হয়নি তো, আকর্ষণের দেহতাপ
আমি তাই, সমুদ্রের তীরে মরে পড়ে থাকা শিশুর পৃথিবীহীনতা….
নৌকোয় নাচ
মাঝিকে জিগ্যেস করলুম, ‘তোমার নৌকোয় নাচি
আমরা দুজনে ?’ মাঝিটি বললেন, ‘নৌকো তো নাচবার জন্য নয়
এপার ওপার করবার, নৌকো দোল খাবে, সামলাতে পারব না,
তাছাড়া আকাশ দেখুন, ঝড় এলো বলে, নৌকো যদি ডুবে যায় ?’
আমার প্রেমিকা বললেন, ‘ডুবলে তো ক্ষতি নেই, যাত্রী বলতে আমরা দুজন,
তুমি তো মাঝি বটো, নৌকো সোজা করে তুলতে পারবেই
আমাদের জন্য ভয় নেই, আমরা দুজনে সাঁতার জানি না,
তাইতো এসেছি আজকে ঝড়ের নৌকোয়
নদীর মাঝামাঝি গিয়ে জড়াজড়ি করে
নাচবো মনের সুখে, নাচবো দেহের সুখে, দর্শক বাতাস ঝড় মেঘ
আর তুমি । মাঝিটি বললেন, ‘নাচুন তাহলে, আমিও জীবনে কোনো দিন
মানুষ ও মানুষীর নাচ দেখি নাই ।’


মৃত্যুচেতনা
বাংলা ভাষার মাঝে মরে পড়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করবার নেই
শীতল নিথর শব, শরীরে পোশাক নেই, বুকের ওপরে দুই হাত
শুয়ে আছি, কখন  আলোচকদের দল এসে, টানা-হ্যাঁচড়া করে
তুলে নিয়ে যাবে, তাদের বাছাই করা ভাগাড়ে ফেলবে নিয়ে গিয়ে
পচবো সেখানে, গায়ে পোকা দেখা দেবে, শকুন কাক নেড়িকুকুরেরা
ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে, আমার ভেতরে যতো বাংলা ভাষার বীজ আছে
খাবে তারা চেটেপুটে, কয়েকশো বছরে কঙ্কালের হাড়গুলো
ধাপার মাটিতে মিশে যাবে, জংলি ফুলেদের জন্যে উপাদেয় সার
বাংলা ভাষার মাঝে মরে পড়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করবার নেই

ধন্বন্তরীর জন্মদিন
আমি ধন্বন্তরী, আজকে আমার জন্মদিন
অ থেকে কখগঘ হয়ে শেষ ব্যঞ্জনবর্ণ দিয়ে জোড়া
অত্যন্ত কালো আর পিচ্ছিল যে কালসাপ
টানাটানি করে অসুর ও দেবতারা
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেন, এ তথ্য জানার জন্য
বোবা না বধিরেরা কারা অমরত্বের দাবিদার
আমি সেই গূঢ় উত্তরের হাঁড়িটি ছিনতাই করে
মানুষের জন্তুর পাখিদের কীট ও সমুদ্রজীবের
মিসম্যাচ আরম্ভের কালখণ্ড শুরু করলুম
আমি ধনতেরসের অধিপতি
সাইক্লোনের ল্যাজ থেকে ‘সমাপ্ত’ লেখা প্রতিটি ভাষায়
কতো রকমের নৈঃশব্দ্যের বিস্ফোরণধ্বনি হতে পারে
শুনতে লাগলুম, সোনার রুপোর পেতলের কাঁসার
বাসনকোসন ক্রমে বৈভবশালীর গৃহে কাচের আসবাবে
পালটে গেলো, সেগুলো চীনদেশ থেকে আনা
যে দেবতা হাত দিয়ে খেতো
তারা সব কাঁটাচামচ ছুরি দিয়ে ননভেজ অমৃতখাদ্য
খেতে ব্যস্ত, কেননা আজকে আমার জন্মদিন
অসুরিণিদের দল অ্যালোভেরা মুখে মেখে
করলার লাউয়ের আমলোকির পালংশাকের জুস খেয়ে
বিষের আইসিং দেয়া কেক কাটবেন
কী আনন্দ কী আনন্দ,
আমার মূর্তিও চীনদেশে গড়া বলে সস্তায় মেলে


মৃত্যুচেতনা
বঁটিতে মরচে পড়ে গেছে
ধার কমে এসেছে
কিছুই কাটা যাচ্ছে না
কে কাকে সিডিউস করেছে
লোহা মরচেকে
নাকি মরচে লোহাকে ?
বঁটির কাজ হলো কাটা
আনাজের মাছের রক্ত বইয়ে দেয়া
মরচে লোহাকে ফুসলিয়ে
ধার কমিয়ে দিয়েছে
যাতে আনাজের মাছের রক্তপাত
ঘটাতে না পারে
বঁটিরও মৃত্যুচেতনা আছে
মানুষ যে প্রশ্বাস নেয়
সেই বাতাসই শেষপর্যন্ত
বঁটিকে মেরে ফ্যালে
যদি কখনও কোনো ডাকাতের
গলাও কেটে গর্ববোধ করে থাকে
তবুও বছরের পর বছর ধার দিয়ে দিয়ে
বঁটিকে মরচের সিডাকশান থেকে বাঁচাতে হয়
মরচেকে লোহার সিডাকশান থেকে বাঁচাতে হয়
সিডাকশানের ভেতরেই থাকে
জড় আর প্রাণীর অবধারিত মৃত্যু
যৌনতার সিডাকশান প্রেমকে খুন করে
ভালোবাসা যৌনতাকে ফালতু করে তোলে
প্রতিটি ইন্দ্রিয়তে লুকোনো আছে
মৃত্যুচেতনা বা মরে যাবার আহ্বান
জড়ের হোক বা প্রাণীর
তার এক্সপায়ারি ডেট সঙ্গে আনে
বঁটির এক্সপায়ারি ডেট লোহা সঙ্গে আনে

খোলা সম্পর্ক
যে আসবে তাকে মুগ্ধ করার জন্য তৈরি হয়ে নিচ্ছে ও
ব্রেসিয়ার পরেনি, লনজারি পরেছে, ফিনফিনে
কালোর ওপর শাদা সিল্কের কাজ, তলায় লেস-বসানো
শুধু লাল টকটকে টপ, ট্রাউজার পরেনি,
হট প্যান্ট জিপ-দেয়া । লিপ্সটিক লাগিয়েছে । মেরুন ।
হাতে পায়ে নেল-পালিশও মেরুন । সারা দেহে ময়েশ্চারাইজার ।
শ্যাম্পু করা কাঁধ পর্যন্ত চুল । চোখে স্মাজ ফ্রি কাজল ।
দরোজায় রিং । তার মানে ও এসে গেছে ।
গিয়ে দরোজা খোলে । একে আরেকজনকে আলিঙ্গন করে ।
বন্ধুনির সঙ্গে বন্ধুনির প্রেম আজ কয়েক বছর হলো ।
বন্ধুনি আজ পাকাপাকি বন্ধুনির বাড়ি চলে এসেছে ।
সঙ্গে স্যুটকেস । সাজ একই রকম । ম্যাচিং ।
দুজনে আজ থেকে একসঙ্গে থাকবে ।
ওদের পুরুষ বন্ধুও আছে । ইচ্ছে করলে তারা এসে
যার সঙ্গে ইচ্ছে রাত কাটাতে পারে । কিংবা এরা কেউ
যেতে পারে পছন্দের পুরুষ বন্ধুর আস্তানায় ।
কবিতার মতন, যার যা পছন্দ ।

আমি লক্ষ্মীকান্ত, মহারাজা প্রতাপাদিত্যের অমাত্য
চলে যাচ্ছি অতিপ্রিয় যশোহর ছেড়ে, আর ফিরবো না কোনোদিন
কৃষ্ণবর্ণ ঘোড়া ছুটিয়ে পালাচ্ছি, বংশধরদের দিয়ে যাবো  খুরের গর্বধ্বনি
জখমের রক্তে শুনতে পাচ্ছি বৃষ্টির অঝোর, ধুমঘাট ছেড়ে চলে যাচ্ছি
প্রতাপাদিত্যের অনুচরেরা আমাকে হত্যার জন্য পেছু নিয়েছে, পর্তুগিজরাও
আমি প্রতাপাদিত্যের পালক পিতাকে খুন করার ষড়যন্ত্রে শামিল হইনি
পালক পিতাই কেবল নয়, রক্তসম্পর্কে প্রতাপাদিত্যের বাবার ভাই
তাকে খুন করল প্রতাপাদিত্য, আমার তাতে সায় ছিল না
বিক্রমাদিত্যের অপযশ পেয়েছেন মহারাজা, ছি ছি ছি ছি, চৌর্যবৃত্তি !
ওর বাবা শ্রীহরি, দাউদ খানের সোনাদানা নিয়ে কেটে পড়েছিল
নিজেই নিজেকে মহারাজা উপাধি দিয়েছিল, আমার তিরিশতম
বংশধরদের সময়কার বেহায়া রাজনীতিকদের মতন
স্বর্গে বসে শুনি আমার বংশধরদের পরিবার কুড়ি হাজার ছাড়িয়েছে
আমি প্রতাপাদিত্যের সঙ্গে ছিলুম বহু যুদ্ধে, কতো শত্রুসেনাকে
কোতল করেছি, তাদের সেনাপতির মুণ্ড চুল ধরে উপহার দিয়েছি
আফগান তুর্কি আরব দক্ষিণি মগ হার্মাদ সেনাপতির মুণ্ড
প্রতাপাদিত্যের পায়ের কাছে, যদিও আমি ব্রাহ্মণের ছিলে, আমাকে
অকুলীন ঘোষণা করা হয়েছে, কায়স্হ রাজার সঙ্গ দিয়েছি, তাই
আমার বাবা কালীঘাটের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, মা স্বপ্ন দেখেছিলেন
সরোবরে সতীর হাত পড়ে আছে, অন্ধকার রাতে আমার কালো
ঘোড়া ছুটছে বঙ্গোপসাগরের দিকে, আমি বসত গড়ব সেখানে
আমি জানতুম না যে পর্তুগিজদের হার্মাদদের মগদের মতন
জোচ্চোর সমাজ গড়ে তুলবে বাঙালিরা, তাদের ভাষা পালটে যাবে
নখ চুল বিক্রি করার বাজার গড়ে উঠবে, বাজার বাজার বাজার
বাজার মানে দোকানপাট নয় যেমন ছিল প্রতাপাদিত্যের রাজত্বে
আমার বংশধরদের সময়কার বাজার মানে নিজেকে বিক্রি
প্রতাপাদিত্য কিন্তু নিজেকে বিক্রি করেননি, লড়ে গেছেন
ষড়যন্ত্র করেছেন, দুর্গ গড়ে তুলেছেন, নৌবহর গড়ে তুলেছেন
কিন্তু প্রতাপাদিত্য প্রথম বাঙালি, তিনিই দিয়ে গেলেন বাঙালির
রক্তে আত্মধ্বংসের বীজ, তখন থেকে বাঙালিরা নিজেরা
লড়ে মরছে, শ্রীহরি যেমন নিজেকে মহারাজা ঘোষণা করেছিলেন
জেলায় জেলায় অপরাধীরা নিজেদের মহারাজা ঘোষণা করছে
গরিব চষির লক্ষ লক্ষ টাকা মেরে চিটফান্ড খুলে কেটে পড়ছে
এরা সকলে দাউদ খানের ধনসম্পত্তি নিয়ে ডুবিয়ে দিয়েছে
বাঙালিদের, যশ থেকে যে যশোহর হয়েছিল, সেই যশ আর নেই
প্রতাপাদিত্য ছিলেন হিন্দুদের মহারাজা কিন্তু এখন লোকেরা
নিজেদের হিন্দু বলতে কুন্ঠিত হয়, যদিও তাদের নুনু কাটা নয়
আমি লক্ষ্মীকান্ত, আমার নুনুও কাটা নয়, কিন্তু আমার সেনায়
অধিকাংশ নুনুকাটা আফগান তুর্কি আরব ঘোড়সওয়ার
আমার ঘোড়ার পূর্বপুরুযও এসেছিল আরব দেশ থেকে, বাবরের
সেনাবাহিনীর সঙ্গে, যদিও বাবর আরব ছিল না, বাবরের ছেলেরা
এখানের যুবতীদের বিয়ে করে থেকে গেল, ওদের দেশে এরকম
সুন্দরী কখনও দেখেনি তাতার বাহিনীর সৈন্যেরা, ওদের যুবতীদের
চোখ ছোটো নাক চেপ্টা ঠোঁট পাতলা নয়, যদিও ব্রাহ্মণ সন্তান আমি
তাতার আফগান তুর্কি ফিরিঙ্গি তরুণীদের সঙ্গে শোবার সুযোগ পেয়েছি
অ্যাণ্টনি ফিরিঙ্গির রক্তে আমার বংশের রক্ত বইছে, ওর বাবা
আমার বংশধরের রক্ষিতার ছেলে, শ্যাম রায়কে পুজো করতো লালদিঘিতে
আমি লক্ষ্মীকান্ত, মহারাজা প্রতাপাদিত্যের অমাত্য, সাবর্ণ গোত্রের যোদ্ধা
আজ পর্যন্ত কেউ তরোয়াল চালানোয় আমাকে হারাতে পারেনি
কতো মুণ্ড এক কোপে ধরাশায়ী করেছি তার গোনাগুন্তি নেই
আমার বংশধরেরা তাই করবে একদিন, প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে
ঘোড়ার পিঠে বসে চালাবে তরোবারি, যারাই সামনে আসবে  মূর্খ মুণ্ড
গলা থেকে কেটে ফেলবে ধুলায়, সেসব মুণ্ড বেঁচে থাকবে, কথা বলবে
দরবারে গিয়ে যে-যার লেজটি নাড়িয়ে রাজা বা রানির সেবাদাস হয়ে
সারটা জীবনভর ঘেউ-ঘেউ করে ক্রমে-ক্রমে জীবাশ্মের রূপ নেবে
যশোহর ছেড়ে চলে আসলেও ভুলতে পারিনি কখনও
যশোহর ছেড়ে চলে আসলেও ভুলতে পারনি কখনও
আমার বংশধরেরা যশৌ্র রোড দিয়ে যাবার সময়ে মনে করবে
তাদের পিতৃপুরুষ এই পথে একদিন কালো ঘোড়া
ছুটিয়ে একদিন জঙ্গল সাফ করে কলকাতা সুতানুটি গোবিন্দপুরের
পত্তন করেছিল, ক্লাইভের পোঁদ চাটবার জন্য কৃষ্ণচন্দ্রের মতো
নিজেকে বিক্রি করিনি, আমার বংশধররাও নিজেদের শিরায় শিরায়
আমার রক্ত নিয়ে প্রতিরোধ করে যাবে অন্যায়ের, শোষণ ও অত্যাচারের

এরকমও তো হতে পারে
এরকমও তো হতে পারে
খারাপ কালখণ্ড এলো
সূর্য আর উঠবে না কোনো দিন

এরকমও তো হতে পারে
আমরা সবাই হাত-ধরাধরি করে
নাচবো গাইবো গিটার বাজাবো

দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা ব্যথায়
কাতরাবো মরে গেলুম প্রতিদিন
এরকমও তো হতে পারে

কৈতব
আমি চটের সুতলি জড়ানো বীজ
পেরেক ছররা কাচের টুকরো আছে আমার বুকে

আমার আলোর চারিধারে আদর করে জড়িয়ে দিয়েছে
আমি আগুনের ডানা মেলতে পারি

আমি নিরপেক্ষ
শিশু বুড়ো বউ সবাইকে সমান চোখে দেখি

আমি নিজে রাজনীতি করি না
যারা করে তারা আমাকে আড়ালে ভালোবাসে

আমার চরিত্রে কোনো দোষ নেই
আমি তো বীজ মাত্র


ভাঙা কাপড়ের তাপ্পিমারা কাঁথা
মায়ের এক্স এক্স শায়া আর বাবার এক্স ওয়াই পাঞ্জাবি
ছুঁচেতে প্রতিমা-ভাঙা শাবল দিয়ে লিখে গেছেন অঞ্জুমান রোজী
ঠাকুরগাঁওয়ের কালী প্রতিমার নীল ত্বক ছিঁড়ে তাপ্পি দিয়েছেন
তখন এক্কেবারে বোবা মূর্তি তো মাটির
নারীকে শ্রদ্ধা জানাবার বদলে
না না পাকিস্তানের তিনশো ফিলমের সুন্দরী নায়িকা নয়
তিনি কেনই বা কাঁথায় শোবেন মুবিনকে ডিভোর্স দিয়ে
কাঁথার ওপরে বসে শায়রানা মেহফিল ইস অঞ্জুমনমেঁ
বহুত খুব বহুত খুব
আরবি মেহফিলের সঙ্গে ইংরেজি গোলাপের মিলন
কাঁথা কি জানা ম্যায় কওন
দমাদম মস্ত কলন্দর
কাঁথাকে ঘেন্না করুন নুরিতা নুসর খোন্দোকার কাঁথার
সেলাই ফোঁড়াই দেখে বলেছেন কাঁথার রুচি বড্ডো বাজে
ঠাকুরগাঁওয়ের শিবের বাঘছাল কৌপিন ছিঁড়ে তাপ্পি দিয়েছেন
এর ওপর হা-হা গ্রীষ্মে শোয় লোকটা নাকি হি-হি শীতে চাপা দেয়
মনোরমা বিশ্বাস বললেন কাঁথা ব্যাটা নির্ঘাত ভায়াগ্রা খায়
কুলদা রায় আসলে পদবিটা অন্য ছিল লুকিয়ে রায় হতে হলো
বেরালে কাঁথা দেখলেই তাতে সাহিত্য হাগতে চায় সিংহের হাগুম হাগুম
বললে কাঁথাটা পারভারটেড, নাসিরনগরের দুর্গার গরদ ছিঁড়ে
তাপ্পি মারলে কাঁথায় খুলনার কীর্তনীয়াকে মেরে তার গেরুয়া
ইউসুফ তাপোশ বলেছে কাঁথাটা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাঙা গণেশঠাকুরের
বোকার জন্নতে থাকে বললে নুরুজ্জমান দেলাওর ; কাঁথাটা ভাবছিল
জাহান্নমে নয় কেন, যেখানে ভার্জিলের সঙ্গে দান্তে গিয়েছিল
সেই কথা জেনে ফরিদ উজ জামান বলেছিল কাঁথাটা ইতর শ্রেণির
অমিতাভ দাশ মাচানে দাঁড়িয়ে কাঁথাটাকে অত্যন্ত দুর্গন্ধময়
এরকম কাঁথা বস্তিশ্রেণির রিকশওয়ালারা ব্যবহার করে ছিঃ ছিঃ
সাগরের লুম্পেন ঢেউ হাওয়ায় বিলি কেটে দিচ্ছিল
উনি অবাক কেন সূর্যকে সপ্তাহে একদিন ছুটি দিচ্ছে না
বাচাল বাচাল বলে গেছে সাইদুর রহমান ; কাঁথাটার ইচ্ছে
এইসব নারী ও পুরুষদের এক চিলতে অমরত্ব দেয়া যাক–
কাঁথায় মুড়ে নিয়ে নয়তো এদের কেই বা মনে রাখবে এমনকি
অবিনাশ কবিরাজও মনে রাখবে না বলবে কাঁথার কথা শোনেনি
পিকাসোর পায়রারাও তো বুড়ি হয়ে বাদুড়ের চেহারা নিয়েছে
ধরুন সমুদ্রে গিয়ে মাছের ঝাঁক রাস্তা হারিয়ে ফেলল কী হবে
মৌলবাদী চাপাতির ভয়ে গাছে-গাছে উল্টো ঝুলে থাকবে
বহুত খুব বহুত খুব


আমার কিছুই আসে-যায় না
বেঁচে থাকার কারণ ওই একটাই, কবিতা
সে কুচ্ছিত, সে কালো, সে যা-ই হোক
কেবল বেঁচে থাকাই বেঁচে থাকা নয়
ভালোবাসতে জানতে হয়
আমি কবিতাকে ভালোবাসি
যন্ত্রণা সইতে হয়, সহ্য করি,
নোংরা-নোংরা গালমন্দ খেতে হয়, খাই,
পাড়াপড়শি এড়িয়ে ওই ফুটে চলে যায়, এড়াক
নাকে রুমাল চেপে লোকে পাশ কাটায়, কাটাক
নিজের মতো করে ভুল করি, করি তো
ভদ্দরলোকেরা ঘেন্না করে, করুক
ক’জনই বা বুক ঠুকে ভুল করে
সবায়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে ভালোবাসে
যেদিকে কেউ যেতে চায় না সেদিকেই যাই, গেছি তো
কি-কি না করেছি কবিতার জন্য
আর কেউ করে দেখাতে পেরেছে আজ অব্দি, পারেনি
ভালোবাসতে জানতে হয়, সবাই ভালোবাসতে পারে না
তারা ভালোবাসতে গিয়ে খবরযন্ত্রে জড়িয়ে পড়ে
তারা ভালোবাসতে গিয়ে টাকা-বাড়ি-গাড়ির খপ্পরে পড়ে
ভালোবাসতে গিয়ে পুরস্কারের ফাঁদে তাদের পা কাটা যায়
ভালোবাসতে গিয়ে তারা রাজনৈতিক দলের কুকুর হয়
শেষ পর্যন্ত তারা জানতে পারে না ভালোবাসা কাকে বলে
তারা ভাবে বেঁচে থাকা মানেই বুঝি ভালোবাসা
আমি কবিতাকে ভালোবাসি, আমি কবিতাকেই ভালোবাসি
তাতে কার বাপের কি এলো-গেলো
তাতে আমার কিছুই আসে-যায় না

নারীর জন্য প্রেমের কবিতা
নারীর জন্মদিন কবে ? যেদিন বালিকাটির সোনালি রোমের উদ্গম–
অথবা সেইদিনখানি যেদিন কিশোরীটি করিল অসুস্হবোধ
যোনি হতে অকস্মাৎ নামিল গাঢ় রক্তঝর্ণা এবং তাহাকে
একাকীত্বের গৌরবে লয়ে গেল, তলপেটে ক্র্যাম্প, পাইল মেইডেন
খেতাবখানি, অথচ ক্রিকেট ক্রীড়ায় কী করিয়া মেইডেন সেঞ্চুরি
নিরানব্বুই রানের পরও যুবক-যুবতীরা করে ! নিরানব্বুইবার
কিশোরিটি যৌনসঙ্গমের পর মেইডেন সেঞ্চুরি করিবে কি ?
তাহার পূর্বে সে ক্লিটোরিসে নিজেকে আদর দিয়া ক্লিটোরিনি নয় ?
তর্কটি রহিয়া গেল, যদ্যপি ঋত্বিক ঘটক বলিয়াছেন ভাবো ভাবো–
ভাবিয়া পাই না, প্রথম ঋতুর দিন নাকি রোম উদ্গমের রাতে নাকি
যেদিন তাহাকে জন্মদাত্রী প্রসব করিয়াছিলেন নাকি ক্লিটোরিনি
হইলা যে রাতে, অথবা স্তনবৃন্ত হতে দুধের ফোয়ারা নামিয়া আসিল !
মাতৃদেবীদের কেন ছেলে চাই ছেলে চাই ছেলে চাই ? ভেনাসরমণীর
হাতের আয়নাখানি ক্রমে রজঃডিম্বানুর রূপ লহিয়াছে, যদ্যপি
ভেনাসের যোনি রোমহীন, তেমতই বত্তিচেলি চিত্রাকারে
ঘোষণা করিয়া গেছেন ; পাশ্চাত্য চিত্রকরগণ ভুল শিক্ষা দিয়াছেন
আমাদিগের মতো নিষ্পাপ বালকদিগকে যাহারা স্বমেহন করিবার
জন্য সুন্দরী নারীদের ছবি অন্বেষণকরতঃ চক্ষু মুদিয়া কামখেলা করে
যেমন মদিগলিয়ানি নারীর যোনি ও পশ্চাদ্দেশ উভয়ই রোমহীন
করিয়া গিয়াছেন ; তিনি কি সে-নারীকে বলিয়াছিলেন, অহো, অহো,
যাও গিয়া রোমহীন হইয়া আইসো, তোমাকে ভেনাসের অনুরূপ
করিয়া তুলিব, অথবা ফ্রানসেস্কো গোয়ার লা মাজা দেসনুদ, টিটিয়ান
অঙ্কিত ভেনাস অফ উর্বিনো, এদোয়ার্দ মানের অলিমপিয়া —
তাঁহারা নারীকে কহিতেন উইফমান, কিছুদিন পর উওম্মান, যখন
ক্যানভাসে কবিতায় নারীরা উদয় হইলা ত্রিকোণের রোমসহ, তাহাদের
উওম্যানরূপে, গজগামিনী হইতে অফিসগামিনী তাহাঁরা করিলেন–
প্রকাশ কর্মকার কয়লাখনিতে গিয়া আঁকিলেন কুচকুচে কুচযুগ নারী
যৌগেন চৌধুরী দেখাইলেন অভিকর্ষ নারীদেহে কিরূপ খেঁচোন মারে–
শোনপুর মেলায় গিয়া নাচিয়াছি ছম্মকছল্লো ঘাঘরাউলির সাথে–
লোখণ্ডওয়ালার মোড়ে আহ্বান শুনিয়াছি রাত্রির স্বল্পবাস মডেলের–
আমস্টারডামের লাল জানালায় দেখিয়াছি প্রায় নগ্ন বিদেশিনিদের–
পুরুষের পৌরুষের ন্যায় নারীরা নৌরুষ পাইল, ফেমিনিস্ট হইয়া
তাহাঁরা বক্ষবন্ধনী ফেলিয়াদিলেন, সে কি আনন্দের দিন ছিল
আমাদিগের মতো ছোটোলোকদের, গোয়ার সমুদ্রতীরে উলঙ্গ যুবতী
রোমহীন, যেন সদ্য ভূমিষ্ঠ হইয়াছেন, রৌদ্রে তাহাঁদের এসট্রোজেনের
গন্ধ — এয়োস্ত্রী, বিধবা, কনসর্ট, এসকর্ট, রক্ষিতা, মিসট্রেস, বারাঙ্গনা–
রৌদ্রের চরিত্রস্খলন হয় না তাহাতে ; খাজুরাহো মন্দিরে দেখিয়াছি
নারীদের, আটশো শতক হতে অমনভাবেই তাহাঁরা কেমনে আটক
অঙ্গপ্রত্যঙ্গে কি ব্যথা নাই, কলেজগামিনীর ন্যায় ; বন্ধুদের সাথে যৌবনে
খাজুরাহক্রীড়া করিবার চেষ্টা করিয়াছি, সে-নারীরা ডবলদক্ষিণা সত্বেও
কিছুক্ষণেই হাঁফ ছাড়ে ; চাণ্ডিলা নারীদের ন্যায় নৌরুষ নারীর বড়োই
অভাব, পথেঘাটে অলিতে-গলিতে এতো লম্পট ও ধর্ষকেরা লুক্কায়িত
এবং পুলিশি ঘুষখুরি, যে কারণে প্রেমও পুরাতন ব্যকরণ হারায়েছে–
লাভস্টোরির নায়ক-নায়িকার ন্যায় এখন কেহই একটিমাত্র লিঙ্গ লয়ে
তৃপ্ত নহে, আধুনিক ঔষধের গুণে প্রেমিক ও প্রেমিকা বদলের যুগ
আসিয়াছে ; একজন বনলতা সুপর্ণা নীরা লয়ে হাহাকারকারী পুরুষের
যুগ আর নাই ; যতো প্রকারের যোনি ততো প্রকারের ভালোবাসা
যতো প্রকারের ঠোঁট ততো প্রকারের চুম্বন ; মহাগুরু ভারতচন্দ্র
চিহ্ণিত করিয়া গিয়াছেন, অহো, অহো, স্বীয়া, মুগ্ধা, নবোঢ়া, পরকীয়া,
মধ্যা, প্রগলভা, ধীরা, অধীরা, অনূঢ়া, উঢ়া, বাগবিদগ্ধা, বিদগ্ধা,
ক্রিয়াবিদগ্ধা, গুপ্তা, কুলটা, মুদিতা, বনিতা, বক্রোক্তিগর্বিতা, মানবতী,
রূপগর্বিতা, উৎকন্ঠিতা, অভিসারিকা, কামিনী, মৃদুগামিনী, খণ্ডিতা,
তনুদামিনী, বিপ্রলব্ধা, স্বাধীনভর্তৃকা, কলহান্তরিতা, প্রোষিতভর্তৃকা–
ভারতচন্দ্র মহাশয়, কোথায় আছেন আপনি, স্বর্গে না নরকে, আমিও
তথায় যাইতে চাহি, কেমন করিয়া বুঝিলেন শঙ্খিনী, পদ্মিনী, হস্তিনী
এবং চিত্রিনী কাহার যোনিতে বেশি রোম আর কার বত্তিচেলি, সঙ্গমে
কোন নারী টক্কর দিতে পারে আর কোন নারী বড়োই ফ্রিজিড !
হায় গো ভারতচন্দ্র, গর্ভনিরোধক বটিকার কথা জানিতেন না —
একটি বটিকা খাইলে পর নারী বাহাত্তর ঘণ্টা সঙ্গম করিতে পারে–
তা তাহাঁর স্বাধীনতা, বহুবার অরগ্যাজমের অধিকারিনী তাহাঁরা–
বটিকাই চাঁদনি রাতের রূপ লহিয়াছে, যেন সন্ধ্যাকালের রবীন্দ্রসঙ্গীত–
নিঃশব্দে চিৎকার করে অন্ধকার, “নে এবার শুরু কর, গুটিপোকা ঢঙে,
স্মার্টফোনে ট্রিপল এক্স দেখে নিয়ে উথালিপাথালি কর নিজেকেই নিয়ে”—
রাজা রবি বর্মার ক্যালেণ্ডার নারীদের দেখি, কেমনে তাহাঁরা হইলেন
দেবী ; হিন্দুর পুজার ঘরে ফিবছর ক্যালেন্ডার হইতে নামিয়া আসেন
এমনই রাম ও সীতার একখানি ফ্রেমে বাঁধা ছবি দেখিয়াছিলাম ফৈজাবাদে
বাবরি মসজিদখানি ভাঙিয়া ফেলার পূর্বে ; তবে নারী বলিতেই কেন যে
রেশম পোশাকে ট্রয়ের হেলেন ও মিশরের ক্লিওপেট্রার কথা স্বপ্নে
নামিয়া আসে ; দেখি তাহাঁদের সোনালি রোমের উদ্গম রজঃসিক্ত উরু–
বহুবিবাহের পরও আঁটস্তনী, নিম্ননাভি, লালাসিক্ত রসময় ঠোঁট–
সেই হতে নারীদের অবজেকটিফাই করিতেছি, করিব না ভাবি, তবু করি–
কোলবালিশের নাম দিই মনরো মেরিলিন ; বোরখার ভিতরে নারীদের চোখ
দুটি দেখি ও মনে লয় অহো গর্তও সাত্বিক পবিত্র হয়, যাহা, বাৎস্যায়ন
কহিয়া যান নাই ; তারুণ্যে, কোলবালিশেরে কালো ওয়াড় পরাইয়াছিলাম-
চটকাইয়াছিলাম, প্রাণাধিক বাসিয়াছিলাম ভালো বালিশি-আরব রমণীরে–
ক্রুসেডে যাত্রার পূর্বে লৌহবর্মে যোনিকে মুড়িয়া চাবিখানি লইয়া যাইতেন
পুরুষেরা; বহুকাল পর ফিফটি শেডস অফ গ্রের মাধ্যমে দেখাইলেন নারীগণ
যৌন ক্রীতদাসীরূপে অত্যাচারিত হইতে ভালোবাসে ; আমি তো বোলতিবন্ধ–
সেরূপ অবাক শিবের লিঙ্গ দেখিয়া হইয়াছিলাম, বৃদ্ধবৃদ্ধা পুজিতেছে যোনির
ভিতর এক প্রবিষ্ট পুং, পাথরের বরফের মাটির লোহার বালুকার অষ্টধাতুর–
সক্কালবেলায় শুনিতেছে নস্যনাসিকায় বীরেন্দ্র ভদ্রের ইয়া দেবী ইয়া দেবী
তুমি অমুক তুমি তমুক তুমি তুসুক তাই দাও দাও দাও দাও হাত পেতে রই–
নেয়ানডারথাল যুগ হতে, নারীরা দিবার জন্য আসিয়াছে, রাঁধিবে তাহারা–
পুরুষেরা হত্যা করিবে ইন্দিরা গান্ধি বেনজির ভুট্টো অ্যানা পলিটোভস্কায়ারে–
ঋত্বিক ঘটক বলিয়া গেছেন, ভাবো ভাবো, তাই নারীদের কথা ভাবিতেছি–
জেসিকা লাল, নীরজা ভানোট, প্রিয়দর্শিনী মাট্টু, লক্ষ্মী অগ্রবাল, নীলম কাটারা,
সুনীতা কৃষ্ণণ, অরুণিমা সিনহা, পল্লবী পুরকায়স্হ, রুচিকা গিহরোত্রা,
সুজেট জর্ডন, জ্যোতি সিংহ যাহাঁরা প্রতিষ্ঠানকে বদলাতে বাধ্য করিয়াছেন–
অথবা বেগম হজরত মহল, ঝাঁসির লক্ষ্মী বাঈ, ম্যাডাম ভিখাজি কামা,
অ্যানি বেসান্ত, সাবিত্রীবাঈ ফুলে, যাহাঁদের কথা ভাবিবার কথা ভাবিনাকো–
প্রতিদিন বিজ্ঞাপনে দেখি সুন্দরীর দল  টঙ্কার লোভে হাফুলঙ্গ একটি অবজেক্ট ;
আইটেম নৃত্যে দেখি বুকের খাঁজের মাঝে রঙিন আলোর ঝাঁক ; পুরুষের তরে
যুবতীরা স্বয়ং করিতেছে, অরগ্যাজম ঘটিতেছে ক্যামেরার ; দেশীয় সংস্কৃতি
শিখায়ে দিয়াছে বিবাহ করিতে হইলে একখানি বিউটিফুল মুখশ্রির ট্রফিবউ
যাহার ত্বকের রঙ জাপানি মেয়ের, পাতলা কোমর, ভরাট দুইটি বুক এবং
নিতম্বখানি তানপুরার ন্যায় ; তাহার দেহের উপরে তাহারই  অধিকার–
সম্পত্তির অধিকার কেন সে পাইবে না, শিক্ষায় সমান সুযোগ কেন পাহিবে না
চাকরি ও মজুরি কেন পাহিবে না পুরুষের সমান-সমান ; কেন সে যুদ্ধে
শত্রুর বিরুদ্ধে লড়িতে যাইবে না, ধর্ষকের লিঙ্গচ্ছেদ করিবে না, বলো, বলো–
ভোগবাদী বঙ্গীয় সমাজে, শাশ্বতী গার্গী মৈত্রেয়ী অপালা অদিতির ন্যায় নারীদের
জন্ম কি সম্ভব, যাহাঁরা ইন্দ্রের ব্রহ্মবাদিনী উপদেষ্টারূপ বহুখ্যাত ?
অথবা অনসূয়া, যাহাঁর প্রেমের রোষে সূর্যোদয় বহুদিন বন্ধ রহিয়াছিল !
নারীর রহস্য আমি বুঝি নাই, দীপিকা-প্রিয়াঙ্কা-আলিয়া  যেমত বুঝি নাই–
ঋত্বিক কথিত উপদেশে, ভাবিয়া পাই না, নারীর সত্যকার জন্মদিন কবে…

সান্টাক্রুজের মেছুনির সঙ্গে প্রেমের কবিতা
চল্লিশ বছর পর আজ সান্টাক্রুজে গিয়েছিলুম মাছের বাজারে
সেই মেছুনি যুবতীর খোঁজে যে প্রতি শনিবার
খোঁপায় চাঁপাফুলের মালা জড়িয়ে আসতো–
আমি ওকে বলেছিলুম একদিন ফিসফিস করে
বড্ডো বদ গন্ধ বেরোয় তোর কাছে আসলে
শাশুড়ির সামনেই আমার সঙ্গে ফ্লার্ট করতো, আমিও করতুম
বলেছিলুম, পচা মাছ চাপিয়ে দিসনি যেন
যুবতী মেছুনি আমাকে তাজা মাছ চিনতে শিখিয়েছিল
সমুদ্রের মাছ, তাদের নাম, কেমন করে রাঁধতে হয়
সান্টাক্রুজ বাজারে গিয়ে আজ মন খারাপ হয়ে গেল
এই মন খারাপই প্রেম, মেছুনির সঙ্গে লুকিয়ে রাখা প্রেম–
বরকে ছেড়ে আরেকজনের সঙ্গে কোলহাপুরে চলে গেছে সে

হাঁপানিরোগ, প্রিয়তমাসু
এতো মনে রাখো তুমি, কখন হঠাৎ মাঝরাতে এসে টোকা দাও
ঠোঁটের ওপরে ঠোঁট চেপে শ্বাস বন্ধ করে দাও, জেগে উঠি
সঙ্গে আনো হাওয়ায় উড়ন্ত রাতের রঙিন পরাগ
হাইওয়ে দিয়ে ছুটে যে সমস্ত ভারি-ভারি ট্রাক যাচ্ছে
কুরুক্ষেত্রে দুঃশাসনের রক্তপায়ী ভীমের অগ্নিচোখ জ্বেলে
তাদের উন্মাদ ডিজেলের গুঁড়ো ট্যালকম পাউডারের মতো
সারা গায়ে মেখে আসো, অগাধ ঘুম থেকে টেনে তোলো
তোমার নিঃশ্বাসের সাথে আমার প্রশ্বাস মিলিয়ে ছন্দহীন
বাজাও আয়ুসঙ্গীতের ফুলকি ক্ষণে ক্ষণে
তোমাকে ছেড়ে আমি কৃত্রিম প্রিয়াকে হাতে তুলে নিই
তার শ্বাস আমাকে শান্ত করে, তারপর নিশ্চিন্তে ঘুমোই–
জোর করে প্রেম করা যায়নাকো, কতোবার বলেছি তোমায়
সনির্বন্ধ অনুরোধ করেছি সকাল-বিকেল-মাঝরাতে
আমাকে ছেড়ে তুমি চলে যাও, ভালো আমি তোমাকে বাসি না

খোট্টা প্রেমিক
আমি হলুমগে নামধন্য লাৎখোর খোট্টা প্রেমিক
ভালোবাসা দিতে অক্ষম, শালা, নিতেও অক্ষম, প্রথম চেষ্টাতেই
দুলাথ্থি খেয়ে, শালা, ছিটকে পড়েছি অন্য তরুণীর বুকে–
এই সেই অক্ষমতা যার বিকারানন্দে গ্যাঁজা ফুঁকে নাচি
লিট্টি-চোখা-ঠররা সাঁটিয়ে যমজ মাংসের ভাঁজে, শালা
মগজে এঁটেল কষ্ট, জানলায় মহানগরের নকল সকাল
স্বর ও ব্যঞ্জণবর্ণের বাইরে বেরিয়ে, শালা, কবিতার মৌলভাষ্য
বুঝে গেছি লাৎখুরি প্রেমে ; কাকেরা এ-শহরের ডিস্কজকির দল
ইঁদুরের মাংস থেকে বিরহযন্ত্রণা খুঁটে-খুঁটে খায়, সে ইঁদুর, শালা,
খাড়া হোক কিংবা ন্যাতানো, এভাবেও বলা যায়, ধরুন যেমন
নদীর রক্তচাপ বাড়াচ্ছে ইলিশের ছেড়ে যাওয়া ডিমের ওপরে
পুং-ইলিশের বীর্য-ফেনা, শালা, ইলিশও লাৎখুরি করে প্রেমে
দূর থেকে যেটুকু ঝরিয়ে ফেলে কেটে পড়া যায়, তারপর বাজারে চিৎপাত
ক্রোধহীন কবিদের মতো, শালা, যাদের আদিনিবাসের রাস্তা মরে গেছে
স্বমেহন করে-করে, কাউকে শ্রদ্ধা করে না, শুধু বাকতাল্লা অভিনয়
শালা, খুঁজে মরছে ভিকিরি কাতারে বসে দরোজা-দরোজা্য
ককিয়ে কান্নার স্মৃতি, শালাদের বাপ-চোদ্দোপুরুষ কে বা কাহারা
নিজেরা জানে না, গুদোন্মাদ চ্যাংড়াদের কালোয়াতগিরি
ইনিয়ে বিনিয়ে ভেঁজে যাচ্ছে গুচ্ছের কাচরা-কিচাইনে

কচ্ছপ খোট্টার সেক্স
আরেকটা শরীর হলে ভালো হতো, দুজন কচ্ছপই জানতো তা
তবে জানতো না কোনটা মাস্টারপিস, ভ্যান গগের কুর্সিখানা
নাকি যে শ্বেতাঙ্গিনী বুকের ভাঁজের আলো মেলে দেখছে ভ্যান গগ
ভিড়ের ভেতরে আমিও বোদ্ধা সেজে এবং লিঙ্গ ঠেকিয়ে ভ্যান গগ
দেখার ভান করি ; ভ্যান গগের পেইনটিঙের চেয়ে ঠেকাবার আনন্দ বেশি
কচ্ছপিনী বোঝে, তাই ঠেকাতে বাধা দিচ্ছে না ; জানে, কচ্ছপ উল্টে গেলে
প্রেমিকাও তাকে ফের সোজা করে প্রেম পলিটিক্স করতে পারবে না–
কিন্তু যা ঋজু হবার তা তো ইশারা পেলেই দড় হতে কিপ্টেমি করে না
অগত্যা পকেটে হাত ঢোকাই, খোট্টা কচ্ছপ সামলাই,
কৃষ্ণের কালো মাংস রাধার ধবল,
শ্বেতাঙ্গিনী পিছন ফিরে হাসিটি খেলিয়ে ঠোঁটে ভ্যান গগের জন্য চুমু খায়
জানে এ-ব্যাটা লাৎখোর এশিয়ান পকেটে আলোর কণা নেই…
যাই হোক, সেই সে ভাঁজের আলো এখনও হাঁপানির টান হয়ে আছে
খোট্টা বুলির টান, বউড়াহা বতাহা কহিঁকা, মর্দ হো কি ছক্কা দোহার

বিজলিচুল্লিতে খোট্টা
সকলেই এই বিজলিচুল্লিতে আসে, ফটাফট কাজ হয়, মরার প্রমাণপত্র
শ্রমিক মৌমাছির সেক্স করা ঠিক যেমন শতযোনি মৌচাকের মোম
মুখের ভেতরে ক্লান্তির গন্ধ নিয়ে জিহ্বাচুম্বনে পাওয়া বর্ষার পাটকরা মেঘ
সাউথ সিটি মলের পিকচারেস্ক ব্যাঙখুকির কিসপ্রুফ রঙ্গীন ঠোঁট
মৌমাছি কামড়েছিল কখনও ফুলটু হয়ে আছে, যেন কার্নিশের
শোকাতুর পায়রারা সিলভার থালায় ঠাণ্ডা বিরিয়ানি খেয়ে
দড়িতে শোকানো শায়াদের পা-হীন নাচে টপ্পাগুল, নিশ্চিত জানে
অন্যের ভাবনাচিন্তা কতো মানুষের জীবন নষ্ট করে চলে গেছে
বিজলিচুল্লিতে এই জায়গাটা শহরের সবচেয়ে জীবন্ত, আসছে-যাচ্ছে
ক্রন্দনকর্তারা, ফিরছে ন্যাড়া হয়ে, নাপিতের ফিস বাঁধা, সরকারি রেট
পুরুতের জাত অনুযায়ী রেট, শান্ত অন্ধকারে আঙুলের বিড়ি একা
শীতেই বসন্তকাল ঢুকে পড়ে, আমচুর-মধু দিয়ে ঝুমা চাটুজ্জের আলুদ্দম
প্রথম ঈশ্বর নাকি ইহুদি ছিলেন, একাত্তরের রিফিউজি বাঙালিরা
নিজেদের দেশে ফিরে গেছে হিন্দুর দেবী-দেবতার মূর্তি ভাঙার জন্য
পলাতক নমঃশুদ্ররা এখন খালপাড়ে শুয়ে ফেলে আসা ভূখণ্ডের গল্প শোনায়
গঙ্গার নোংরা জলে ডুব দিয়ে খুন-হওয়া পূর্বপুরুষের তর্পণ করে
আমরা তো খোট্টা প্রেমিক, আমাদের জন্য এই বিজলিচুল্লি
প্রতিদিনের রাতকে একটা নাম দিয়ে চিহ্ণিত করে, জীবন্ত জায়গাটা ।

আমার প্রিয়তমা ডাইনি
অদ্য পাইয়াছি তাকে কামরাঙার ডালে গালে রুজ ঠোঁটে লিপ্সটিক
ঝুলিতে ছিল আরও বহু বাদামি বাদুড়ের সাথে, মস্তক নিম্নে ও
উন্মুক্ত ঠ্যাংদুটি বৃক্ষের দোদুল্যমান ডালে । বলিলাম তারে,
হে প্রেয়সী শোনাও তোমার সেই দোতারার গানখানি, যাহা তুমি
কচ্ছপের পিঠ হতে তুলে নিয়েছিলে, অহো, সে কি ল্যাণ্ডমাইন যেন
ছত্তিশগড়ের সিপাহিরা উপজাতি ধর্ষণের পর তাঁবুর হল্লায় মাতিয়াছে–
যেমতো ফুলেরা লজ্জাহীন দিবাদ্বিপ্রহরে সেক্স করে এবং মন্দিরে যায়
সিপাহিরা উপজাতিদের কানের ভিতরে টর্চ ফেলে তদন্ত সারিয়া ফ্যালে
কানের গহ্বরে রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগানের অবশেষ রহিয়া গিয়াছে কিনা–
সিপাহিরা খইনি ঠোকে এবং পারাপারি বন্দুকের নল বুকের উপরে
রাখিয়া হুমকি দ্যায় ধর্ষণ করিতে দাও নতুবা তোমার স্বামীসন্তানের
প্রাণনাশ করিতে হইবেক । আমার প্রিয়তমা ডাইনিটি রাজি হয়–
অকস্মাৎ কোমরের গেঁজ হতে ছুরিটি বাহির করিয়া সিপাহির
লিঙ্গখানি মূল হতে উৎপাটন করে, এবং চিৎকার করে, ইন্ডিয়া জিন্দাবাদ–
অন্য সিপাহিরা দেদ্দৌড় দ্যায়, উত্তেজিত নারীর ন্যায় রাগি গর্ত নাই…

আমার শল্যচিকিৎসক ঠাকুরমাতা
ঠাকুমারে দেখিয়াছি নকশাল যুবকগণের দেহ হতে বুলেট বাহির করিতে
তাঁহার হৃৎস্পন্দন সেসময়ে ৭০ অথবা ৮০ ছিল, যদ্যপি ফুলে-ফুলে
নৃত্যরতা দুর্গা টুনটুনিগণের হৃদয়ের স্পন্দন ছিল মিনিটে ১০০০ বার–
ঠাকুমারে জিজ্ঞাসিলে বলিতেন, হস্তির হৃৎস্পন্দন কতোবার হয়
তাহা কি জানিস ? মিনিটে মাত্র ২৫  । ডুবিতে সবাই পরে
ঠাকুমা কহিতেন, সাঁতরায় কয়জনা ? সমুদ্রে যতোগুলি ভাসমান
লাশ দেখিয়াছিলিস, অনেকেই সাঁতার জানিত, তবুও তাহারা ডুবিয়াছে–
কনভয় বেল্ট হতে অন্যের সুটকেস নিজস্ব হিসাবে তুলিয়াছিলিস
উহা কোনো ভুল নহে, যেমতো ফোড়ার ভিতরে যে যন্ত্রণা থাকে
তাহাকে বাহির করিয়া আনি, তেমতো নকশাল যুবক যুবতীগণের
দেহের বুলেট । উহারা সহ্য করিয়াছে । সহিবার ন্যায় আনন্দ নাই ।
কেন সহ্য করিয়াছে, কেন প্রাণ বাজি রাখিয়াছে, তাহাই জিজ্ঞাসা–
প্রতিটি ব্যাপারে প্রথমবার অসুবিধা থাকে, কষ্টের জুজুভয় থাকে
যেমতো নিত্যযাত্রীর পায়ে দূরপাল্লার ট্রেনও লোকালের রূপ লয়
আমরা সীতা ও দ্রৌপদীর কন্ঠে বাংলা প্রেমালাপ ও বার্তা শুনিতে
ভালোবাসি ; ঠাকুরমাতাও একসাথে দুইজন শাশুড়িকে ফোড়ার
ভিতরে যন্ত্রণার ন্যায় সহ্য করিবার পর বিদায়ের কান্না কাঁদিলেন ।

উওম্যনিয়া
আহা, অদ্য একটি তরতাজা সিঙাড়া খাইলাম
ভিতরে গুলাবিরাঙা চিনাবাদাম , কেবলই একটি–
ফুলকপি ছিল, ইহা যে ছেৎরানো ফুলকপির ঋতু–
জানি না কেন যে সিঙাড়া প্রস্তুতকারক মহারাজ
একদিকে আকর্ষক একটি ছিদ্র রাখিয়াছিলেন
অঙ্গুলি দিয়া সিঙাড়ার ভিতরে চিনাবাদামখানি
অনুভব করি, জিহ্বাগ্র প্রবেশকরতঃ স্বাদ লই
দধিমধু লবণাক্ত, বিজ্ঞানীরা কহিয়াছেন
লবণাক্ত হইবার কারণ রজরসে ইউরিয়া থাকে–
জীবনানন্দ সভাগৃহে কবিতা শুনিবার তরে
আসিয়াছিলাম ; কোনো এক মিহিকন্ঠী-কবি
কবিতা পড়িতেছিলেন ; আমি তাঁকে ধন্যবাদ
মনে-মনে দিই, অহো, বড়োই সুস্বাদু আপনার
তপ্ত সিঙাড়াখানি, সোমালিয়া নিষিদ্ধ করিয়াছে ;
আহা, এই প্রথম নারীবাদী সিঙাড়ার আস্বাদ লই

কালো বিধবা
কালো বিধবার ডাক ফিরাতে পারি না
সঙ্গম করার কালে মনোরম মৃত্যু চাহিয়াছি
যেমত পুংমাকড়ের হয় ; স্ত্রিংমাকড়ানি
থুতুর ঝুলন্ত রেশমে বাঁধি আহ্বান করিবে
আষ্টেপৃষ্টে সবুজ পাতার উপরে ল’য়া গিয়া
মোর পালপাসখানি যোনিদ্বারে লইবে টানিয়া
দশবাহুর আলিঙ্গনে শুষিবে লক্ষ শুক্রাণু
দিবাদ্বিপ্রহরে নিশিডাকে আক্রান্ত থরহরি
ব্যকরণ বিন্যাস গণিত শিখাবে দশ নখে
আমি ক্লান্ত হলে পর ক্রমশ খাইতে থাকিবে
সঙ্গম চলাকালে চাখিবে সুস্বাদু ঝুরিভাজা
উইপোকাসম লিঙ্গখানি কুরিবে প্রথমে
প্রেমিকার উদরে প্রবেশ করিয়া কী আনন্দ
বুঝাইব কেমনে, সমগ্র দেহ যে গান গায়–
আহ্লাদের কর্কটরোগ তোমরা বুঝিবে না

রাষ্ট্রবিরোধিতা
জ্ঞান ফিরিবার পর দেখিলাম, চতুস্পার্শে ছয়ইঞ্চি ক্ষুদ্র যুবতীরা–
দেড়শো বৎসর পর ফিরিয়া আসিল জ্ঞান, ততোদিনে
অতিউন্নত বাকচর্চা প্রয়োগ করতঃ ছয় ইঞ্চির হইয়া গিয়াছে মানুষেরা
সুতা দিয়া আমাকে চতুর্দিক হইতে বাঁধিয়া ফেলিয়াছে
শুইয়া আছি ঘাসের উপরে, কথাবার্তা শুনিয়া বুঝিয়াছি ইহা বঙ্গদেশ
উলঙ্গ উহারা, কেহ বুকের উপরে কেহ পেটে কেহ উরুতে হাঁটিতেছে
উহাদের কথোপকথন হইতে বুঝিলাম এখন এ-রাজ্যের নাম লিলিপুট
কখনও বাকবিপ্লব ঘটিয়াছিল, তাই, মানুষেরা ক্ষুদ্র ও উদার হইয়া গিয়াছে
বেঘোরে যা কহিয়াছিলাম তাহা উহাদের মতে অশ্লীল ও রাষ্ট্রবিরোধী
জানিতে চাহিলাম তাহাদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোন কর্ম করিয়াছি আমি
আমার কুঁচকির ভাঁজে জনৈকা যুবতী হয়তো খুঁজিতেছিল স্বর্ণভাণ্ডার
জঙ্গলের বাহিরে আসিয়া যুবতীটি চিৎকার করিয়া সবারে কহিলা
“এই দৈত্যের চাড্ডির ভিতরে ছাগু দেখা যায়, ইহা রাষ্ট্রবিরোধী”


ম্যাডেলিন করিয়েট-এর জন্য প্রেমের কবিতা
খামে-ভরা তোমার স্মৃতিটুকু ভাসানের জগঝম্প ভিড়ে
জুহুর সমুদ্রের ঢেউয়ে শেষ চুমু খেয়ে
বিসর্জন দিয়েলুম ম্যাডি, ম্যাডেলিন করিয়েট
তিরিশ বছরের বেশি অফিসের কলিগেরা
খামের ভেতরের স্মৃতি দেখে যা-যা বলেছি ওনাদের
বিশ্বাস করেছে নির্দ্বিধায়, হা-হা, হা-হা, ম্যাডেলিন–
বাঘিনীর লোম মনে করে হাতে নিয়ে গালে চেপে
মাথার ওপরে ভবিষ্যত উন্নত করবে বলে ঠেকিয়েছে
ভেবে দ্যাখো ম্যাডেলিন, কত্তোজনের সমাদর পেলো
গোলাপি তুলোট যোনি থেকে সংগ্রহ করা
সোনালি ঘুঙুরালি বালগুলো, জয় হোক জয় হোক
তোমার অক্লান্ত প্রেমের, নেশালগ্নে নিশাসঙ্গমের
সিংহের বাঘের টিকটিকি কুমিরের দৈব-আঙ্গিকে

নারীর বুকের মাঝে ঘুমের ওষুধ
ম্যাডেলিন বলেছিল
প্রেমিকের শরীরের
সবকিছু মুখস্হ হয়ে গেলে
অন্য প্রেমিকের প্রয়োজন হয়
তারপর বুড়ো হলে জীবনের সব মিথ্যা
সত্য হয়ে উঁকি মারে বলিরেখা জুড়ে
প্রতিটি যুগের নিজস্ব মিথ্যা হয়
সমস্ত জীবনভর যতো ছায়া মাটিতে ফেলেছ
তাদের একত্র করে শেষ প্রেমিকার বুকে মাথা গুঁজো
শেষতম নারী
দু’বুকের মাঝখানে ইনসমনিয়া সারাবার
ব্যবস্হা করবেই
সেখানে ঘুমের জন্মান্ধ উত্তমপুরুষ
কবিতার অদৃশ্য খাতা খুলে
কয়েক শতক বসে আছে

যতোদিন আছি ততোদিন ভালোবেসে যাবো
আরও কতো কথা বলেছিল ম্যাডি, ম্যাডেলিন
এই যেমন, “সঙ্গম ও শিশুর জন্ম দেয়া ছাড়া
যোনির কোনো ধর্ম নেই ; প্রেমিক ও সন্তানের
মুখে গোঁজা ছাড়া মাইয়ের কোনো ধর্ম নেই
ইন ফ্যাক্ট, দুইটি দেহের মাঝখানে ধর্মের ভূমিকা থাকে না–
দুইটি দেহের মাঝে অনর্থক ভিসা-পাসপোর্ট শুরু করে
মন্দির মসজিদ চার্চ সিনাগগ দুর্বোধ্য ভাষা্য লেখা
ধর্মগ্রন্হ এনে পুরুষেরা প্রেমকে ধ্বংস করেছে
ধর্মকে প্রেমের মাঝে  সীমারক্ষক করে
নারীকে চুবিয়েছে হীনম্মন্যতার রসায়নে
গুহাবাসীদের জান্তব সমাজে ফেরার পথ আমাদের নেই
তাই যতোদিন বেনারসে আছি ভালোবাসাবাসি করে যাই”

আলোক-অলোক-দীপংকর গোষ্ঠী আমাকে পছন্দ করিতেন না

বহু কিছু বুঝি নাই, বহু লেখাজোখা, আঁকজোক, নক্ষত্ররাজি
আমার গ্রন্হ যাহাঁরা কোনোদিন হস্তে লন নাই, তাঁহারাও
আমাকে পছন্দ কখনও করেন নাই, এমনও দেখিয়াছি–
আমিও চাহি নাই তাঁহাদের পছন্দের তালিকায় আমার
কুনামখানি ঘাপটি মারিয়া থাকে, তাঁহাদের রোগগ্রস্ত করে–
জিজ্ঞাসা করিবার মতো কেহ নাই ; কে-ই বা বলিয়া দিবে
সাতাশ নক্ষত্র হতে কী কারণে একটি নক্ষত্রের নাম বাছিলেন
সেইটি চব্বিশতম, নক্ষত্রগণের ক্রীড়া কভূ বুঝি নাই
কাননদেবীকে বুঝি নাই, সুচিত্রা সেনকে বুঝি নাই
অহো, সে কি নক্ষত্রের আলো তাঁহাদের, বায়োস্কোপের
গবাক্ষগুলিতে তাঁহাদের  আলো দেখিবার জন্য জনসমুদায়
কাড়াকাড়ি মারামারি করিতেছে, ক্রমে বৃদ্ধ তাঁহাদের পক্ককেশে
শেষ আলো কোথায় হারায়ে গেছে তাঁহারা কেহ কভূ
জানিতে পারেন নাই ; অহো, কেমনে একটি রকেট চাঁদে যায়
ফিরিয়া চলিয়া আসে পুনরায় ! কেহ-কেহ রকেট বিজ্ঞানাশ্রিত কবিতায়
চুপিসাড়ে কোয়ান্টাম বাস্তবের ফাঁদখানি পাতিয়ে অপেক্ষা করেন
যেমন বিষ্ণু দে, তাহাঁর পংক্তিগুলি রকেটগণিতে কেন যে আক্রান্ত
বুঝি নাই ; আমি যোগেন চৌধুরী বুঝিয়াছি, গাইতোণ্ডে বুঝি নাই–
কুড়ি কোটি টঙ্কায় তাঁহার তৈলচিত্র বৈভবশালীগণ ক্রয়ের গৌরবে
নিজ নিজ নাম টঙ্কাক্ষরে লিপিবদ্ধ করিবার ক্রীড়ায় মাতেন
অহো, অহো, আমি অলোকরঞ্জন বুঝিয়াছি, আলোক সরকার বুঝি নাই–
তিন দিনে এক পংক্তি লিখিবার পর, আরেক পংক্তি আঠাহীন
নিম্নের সিঁড়ির ধাপে স্হান লয় ; প্রথম পংক্তির ন্যায় সেটিও কবিতা–
বুঝি নাই প্রতিটি পংক্তি যদি কবিতার রূপ লয়
তাহারা কি বিচ্ছিন্ন সমাপতনের অষ্টমগর্ভের সন্তান ?
অমিয় চক্রবর্তীর কুহকবিহীন নিরাসক্ত হাহাকারহীন স্বপ্নহীন ঢঙে
অনুসরণের পথে দেখি আলোক সরকার ; ছোটোলোকপাড়ার যুবা আমি
সদ্য দাড়ি গজাইবার আনন্দে হাত বুলাই, অচিন্ত্যনীয় চিন্তা করি,
“উতল নির্জন” হইলো কেমনে ! “নির্জন” তো জীবনানন্দীয়
যাঁহার কবিতার বিপুল ঝঞ্ঝা কৃষ্ণচশমায় করিয়াছিলেন রুদ্ধ ?
“আমার তো জানা নেই সহসা এ রঙ্গের প্রণয়”– বুঝি নাই আমি —
“আমাকে তা দেওয়া কেন যা আমার নয়” — বুঝি নাই আমি —
ইংরাজগণ লইয়া আসিয়াছিল তাই, ফরাসি কবিতা বাংলায়
মধ্যবিত্ত বাঙালির আধুনিকতাবাদী ধুম্রজালে আলোক সরকার
পংক্তি ধরিবার জন্য অন্যদিগের হতে কী করিয়া দূরত্ব গড়িয়া তোলা যায়
তাহা প্রতিটি পংক্তির জন্য নিবেশ করিয়াছেন চিত্রের অনৈক্যের খাতে
বয়সের সাথে-সাথে  পংক্তিসমূহ পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতার জুয়া খেলিয়াছে
আধুনিকতাবাদী মহাআধুনিক কবি মহাশয় গবাক্ষটি মালার্মের ছিল–
অথবা সপ্তদশ শতকের ঝঁ লা ফনতাঁ, উনিশ শতকে আলফঁসে দ্য লামার্তিন
কেন কেহ আপনাকে ডাডাবাদী রাইজোম্যাটিক বলিবে না,
পংক্তির পরের পংক্তির মাঝে আঠা নাই ? রজঃ বা বীর্যের আঠা ?
কখনো বা ঠাটা গদ্যে স্বগতসংলাপ কবির নামের ওজনে উঠে যায় !
অতিসংহতির কূপে ইহাও কি “নিরাশাকরোজ্জ্বল চেতনার” ঢেউ নহে ?
আলোক-অলোক-দীপংকরের কন্ঠ শুনিয়াছি, বালিগঞ্জের ধনীগৃহে
শুনিয়াছি ঢেউগুলি স্ব-স্ব দেহে সাবান মাখিবার পর ফেনাক্রীড়া করে–
বাক্যগুলি অবজেকটিভ প্রতিস্ব লয়ে যাত্রা করে এবং সাবজেকটিভিটি
কাঁধের উপরে লয় “আলোকিত সমন্বয়”; ইহা কি প্রকৃতই সমন্বয় ছিল ?
তাহাদের বঙ্গীয় চাহনিতে কলিকাতা নাই কেন ? বাস্তব কলিকাতা !
ঘরের বাহিরে চাহিয়া দেখেন নাই আপনি ও আপনারা–
নিজ গৃহকোণকেই ঐতিহ্যপীড়িত “বিশুদ্ধ অরণ্য” রূপে মস্তিষ্কের কোষে
বোদল্যারি “শাণিত বিষাদ” নিপুণ-বিন্যাসী বিলাসিতা পায়, অথচ শহর নাই
দেহের ভিতরে “দুই পাশে সবুজ ঘাসের স্বাভাবিক” ! রিয়্যালি ? স্বাভাবিক ?
“কোনো পদচিহ্ণ নাই” ; আমরা যাহারা ছোটোলোক, দেখিতেছি
অজস্র মানুষ, হাজার লক্ষ পদচিহ্ণ প্রতিদিন প্রতিটি মুহূর্তে  কোথায় হারায়ে যায়
এই সব মানুষের কোনোরূপ “আশ্রয়ের বহির্গৃহ” নাই ; আপনার আছে–
আপনাদিগের, অলোক-আলোক-দীপংকর মহাশয়দের…..

মরে গেলি, অরুণেশ ?
মরে গেলি ? সত্যিই মরে গেলি নাকি অরুণেশ ?
রূপসী বাংলার খোঁজে আসঙ্গ-উন্মুখ শীতে বেপাড়া-ওপাড়া ঘেঁটে
শেষমেশ ঝিলের সবুজ ঝাঁঝরিতে ডুব দিলি ? যবাক্ষারযানে কালো
বিষগানে আধভেজা উলুপীর সাপ-রক্ত মিঠেল শীৎকারে
হৃদযন্ত্রে দামামা বাজতেই বুক খামচে জলে নেমে গেলি —
বাড়ি তো পিছনে ছিল ; সেদিকে গেলি না কেন ? ডাঙার গেঁজেল হায়নারা
যৌবনে ভালোবাসা পেয়েছিল তোর, তখন অতৃপ্ত ছিলি ! কী খাচ্ছিল,
কে খাচ্ছিল, নৌকোর পালে আঁকা তোর রাগি নমস্কার ? দেখেছিলি
মোমে-জোড়া ডানা গলে ইকারাস সমুদ্রের আঁশটে ঘুর্ণিতে নেমে গেছে,
নিরিবিলি ওফেলিয়া পিরানহা মাছেদের বন্দনা-মেশানো ঝাঁকে
ড্রাগন উৎসবের ডিঙি থেকে ঝাঁপ দিলেন সৌম্য কুউয়ান
ফেনার ওপরে লেখা কিটসের নশ্বর অক্ষরমাংস ঠোকরায় চিল
হয়তো কাঁকড়ারা বুজকুড়ি কেটে-কেটে লিপো’র কবিতা পোড়ে
শোনাচ্ছে নাটালি উডের লাশে ভাসমান কাক-গৃহিনীকে
হার্ট ক্রেনও আছে নাকি তোর পাশে শুয়ে ? কিংবা ঠোঁটে
চুমু কি দিচ্ছেন ওঁর নগ্ন আলিঙ্গনে টেনে ভার্জিনিয়া উলফ ?
বউ ফেলে ষোড়শী মেরিকে নিয়ে পিসি বিসি শেলি–
দেখলি ডন হুয়ান নয় ; তিন দশকে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন খুড়ো
জলে-পচা রাসপুতিন  ছিঁড়ে খেলো তোর প্রিয় রূপসী বাংলাকে
স্বপ্নের নীল নদে, টাইবার নদীতে, রাইনে, লিমমাতে, তিস্তায়,
আমস্টারডামের খাল যার দুই ধারে রোজ বেশ্যা প্রেমিকারা
রক্তাক্ত আলোয় বসে উলঙ্গ গোলাপি খুলে সন্ধ্যা ফেঁদেছেন
পরমহংসের শোক শিখেছিলি র‌্যাঁবোর আবসাঁথ পান করে
অথচ ঠাণ্ডা রক্তে জড়িয়ে ধরল জল ভালোবেসে তোকে
উকুন ও ছারপোকার কামড়ের মাঝে তৃপ্ত ঘুম ছেড়ে তুই
নেমে গেলি অমৃতমন্হনের ডাকে — কোন দিকে যাবি তুই
বুঝতে না পেরে, অসুর ও দেবতার মাঝে পিষে গেলি, আজীবন
পিষে গেলি…পিষে গেলি…পিষে গেলি…পিষে গেলি…পিষে…

আমার মায়ের মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ি
আমার বয়স আমার মায়ের থেকে বেশি
মা মারা গিয়েছিলেন চৌষট্টি বছর বয়সে
আমার বয়স এখন সাতাত্তর
ডাক্তাররা মায়ের রোগ ধরতে পারেনি
ভুল হাসপাতালে ভর্তি করেছিলুম মাকে
মা যখন হাসপাতালে মারা গেলেন তখন আমি
মায়ের বিছানার পাশে ছিলুম না
নাক থেকে আক্সিজেন মাস্ক সরিয়ে মা বলেছিলেন
আমাকে এক কাপ চা খাওয়াবি ?
আমি চা আনতে চারতলা থেকে নেমে ক্যান্টিনে গিয়ে দেখলুম
কেউ নেই, কেই বা থাকবে এতো রাতে
রাস্তায় বেরিয়ে দেখলুম সব দোকানপাট বন্ধ
স্ত্রীকে ফোন করে বললুম, মায়ের জন্য চা বানিয়ে
ফ্লাস্কে করে নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে এসো
চা বানিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে কোনো রিক্সা পায়নি
আমার স্ত্রী ; ও কাঁদতে-কাঁদতে হাসপাতাল পর্যন্ত
হেঁটে এসে দেখতে পেলো
আমি মায়ের বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছি
ডাক্তারকে ডাকা হলো
উনি বললেন, এই রাতদুপুরে রোগিকে
কে বলেছিল চা খাওয়াতে
মায়ের চা খাওয়া হলো না
ফ্লাস্ক থেকে চা ঢেলে ফেলে দিলুম ওয়াশবেসিনে
আমার জন্মদিন এলেই কাঁদি
কেন মায়ের পাশ থেকে উঠে চলে গিয়েছিলুম
এতো রাতে যে চা পাওয়া যাবে না
তা কেন মাথায় আসেনি
আজ আমার জন্মদিন. কাঁদবার দিন
মায়ের মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ি

চলুন নরকে নিয়ে যাই
যা ইচ্ছা লিখুন আপনারা, গালমন্দ, খিল্লি, খিস্তোনি
আমি শুধু চাই ব্যাস, লেখা হোক, কিছু লেখা হোক
লিখে যান, আশ মেটান, কিছুটা কুখ্যাতির অংশ
বিলিয়ে তো যাই, নিন, নিন, হাত পাতুন, নতুবা মস্তক
কলমে বা কমপিউটারে
ঝেড়ে দিন সুযোগ পেলেই
আমি জানতে চাইব না, কে আপনার বাবা ছিল
কে ছিল পাথরে বীর্য থেকে জন্মানো দুর্বাসার কাগুজে বিদ্বান
পঞ্চাশ বছরের বেশি লিখে তো যাচ্ছেন
এখন আপনারা, তার আগে আপনার বাবারা মেসোরা
এভাবে চলুক, যতো বছর আপনারা চালিয়ে যাবেন
আরও পঞ্চাশ, আরও একশো, আরও কয়েকশো বছর
কবিতা যখন আপনার বংশে আর কেউ পড়বে না
তবুও আপনাদের বংশধরেরা আমাকে বাঁচিয়ে রাখবেন
খিস্তিয়ে, গালমন্দ করে, খিল্লি উড়িয়ে
ব্যাস, আমি চাই চলতে থাকুক, চলতে থাকুক, চলুক চলুক
জোকারপুঙ্গবদের রঙ্গতামাশা

কাতুকুতু
প্রেমিকার হাসি খেতে আমার চিরটাকাল ভালোলাগে
কোমরে দুদিক থেকে আচমকা
প্যাঁক করে তর্জনী টিপে দিতেই
যেই হাসতে আরম্ভ করে
তখনই ঠোঁটে ঠোঁট চেপে
আমি ওর হাসি খেতে থাকি
ওর কোমরে আমার আঙুলের খোঁচা বজায় থাকে
আমারও হাসি খাওয়া বজায় থাকে
ওর কাতুকুতু আর চুমু একই সঙ্গে খেতে ভালোলাগে
তবুও ও বলে ওঠে লম্পট কোথাকার
তার মানে করতে পারি আমি
আমি আরও হাসাই
হাসাতেই থাকি
যতোক্ষণ না হাসতে হাসতে ওর চোখ দিয়ে জল বেরোয়

যে ~ পো্স্টমডার্ন ~ নাতিদীর্ঘ ~ সনেট ~ যে
যে ~ হ্যাঁ, ভাবুন, ভাবুন, বলা হয়েছে ভাবতে, ভাবুন ~ যে
যে ~ আমি বটানিকালের  বটগাছ যার গুঁড়ি খুঁজছেন ~ যে
যে ~ আমি বেসনে ফ্রাই বকফুলের বড়া বাসরঘরে খেয়েছিলেন ~ যে
যে ~ এ তো এখন বুড়ো কুমির, কামড়ে মাংস ছিঁড়ে খাবে এমন নয় ~ যে
যে ~ আমি  কিউরিও-দোকানের দোয়াত, কলমে নিব চেরা ~ যে
যে ~ পিঁপড়ের মৃত্যুতে শোকসভায় কবিতাপাঠ হয় না ~ যে
যে ~ জজসাহেব তো মৃত্যুদণ্ড দিয়েই খালাস ~ যে
যে ~ ফাঁসুড়ে হিসেবে আমার নামডাকে কান দিলেন না ~ যে
যে ~ কাফকা ফ্রায়েড চিকেন আসলে কেএফসি ~ যে
যে ~ নদীর মৃত্যুতে পুরসভায় শোকসভা হয় না ~ যে
যে ~ খেয়েছে সে দুঃখের আরশোলার পেটে জন্মাবার ফলে ~ যে
যে ~ পাঁজর গোনার বয়সে পৌঁছোতে ~ হাঁপায় ~ যে
যে ~ কৌতূহল ~ আর কীই বা জাগাবে ~ যে
যে ~ প্রথমে সামনের পা তারপর পেছনের পা তুলে ধনুকের মতন ~ যে
যে ~ ঘোড়ার মৃত্যুতে সহিসের বাড়িতে শোকসভা ~ যে
যে ~ লাফ দিতে ~ পারবে না সেই কুচকুচে ঘোড়ার ঢঙে ~ যে
যে ~ নিজের ~ পাদপ্রদীপ নিয়ে উড়তে থাকে ~ যে
যে ~  খুরে-খুরে গড় শুনে টের পায় না গাধা গোরু মোষ ঘোড়া ~ যে
যে ~ জীবনে জেব্রার পিঠে চেপে ~ হায়েনার কান্না এড়িয়েছিল ~ যে
যে ~ বাতি আর আগুন নেভানোর সঙ্কটধ্বনির মানে না-বুঝে ~ যে
যে ~ সুমিষ্ট আর সুগন্ধ ভোজনের সবুজ ঘাস খেয়ে ভাবছিল ~ যে
যে ~ ভেবে ভেবে ~ ভবিদের ভোলানো গেল না ~ যে
যে ~ বীর সিংহের কোমরবন্ধে ঝোলানো খাপে ~ যে
যে ~ বাতাসের মৃত্যুতে উড়োজাহাজের শোকসভা ~ যে
যে ~ টেস্টটিউব খোকাখুকুদের জগতসংসারের নোংরামি থেকে ~ যে
যে ~ বাঁচাতে চেয়েছিল ~ উপায় নেই বলে ~ যে
যে ~ মহৎ মানুষ কেবল নিজের কাজের জন্যই জন্মায় ~ যে
যে ~ নিরো কিংবা নিরোনীর হুমকিতে কুঁকড়ে যেতে বাধ্য ~ যে
যে ~ শিল্পী মাত্রেই ~ উন্নতমানের ঝাড়ুদার ~ যে
যে ~ শব্দের পেটে কপচানি ঢুকিয়ে ভয় দেখাতে পারে ~ যে
যে ~ পিতৃতন্ত্র আর মাতৃতন্ত্র লোপাট হয়ে হিজড়েতন্ত্রের বোদ্ধা ~ যে
যে ~ বইয়ের পাতায় দরোজাগুলোয় উই ধরায় ~ যে
যে ~ বনলতা সেনের চেয়ে জাঁ দুভালের পালতোলা টান ~ যে
যে ~ আবসাঁথ না পেলে আর কোনোদিন মদ ছোঁবো না ভাবতেই ~ যে
যে ~ কিসের লোভে কার্ডধারীরা মুখ বুজে সবকিছু মেনে নিতো ~ যে
যে ~ নদীর মিল্কশেক জল চটচটে হয়ে যেতে থাকে ~ যে
যে ~ দেশ মরলে রাজনীতিকদের আনন্দসভা ~ যে
যে ~ বৃষ্টিতে ~ যে ~ টেলিফোন বুথের প্রাগৈতিহাসিক স্মৃতি ~ যে
যে ~ কাগজের কাপে ব্যথার জীবানু ~ চুমুক দিই ~ যে
যে ~ রবিশংকরে শ্রীশ্রী যোগ করে দেখি বীণা বিয়োগ ~ টাকা ~ যে
যে ~ টুথপেস্টগুলোয় ভ্যানগঘের রঙে দাঁত মাজার ~ যে
যে ~ সব্যসাচী নাম হলেও অর্জুন নয় ~ সাক্ষাৎ বকাসুর ~ যে
যে ~ রক্তমাংসের ধুমকেতু ভোটে জিতলে বাজি পোড়ে ~ যে
যে ~ এই বছর প্রতিটি মাসই বৈশাখ ~ পাঁজি ~  দেখতে ~ যে
যে ~ ফুলশয্যার অ্যামেচার প্রেমিক ~  হটেনটট ভেনাস ~ যে
যে ~ পেছন থেকে চোখ টিপে-ধরা রাষ্ট্রের হাত ~ যে
যে ~ কাক মরলে কাকেদের শোকসভায় বিরক্তি ~ যে
যে ~ প্রেমিকার অপেক্ষায় ছুরিতে শান দিয়ে রান্নাঘরে ~ যে
যে ~ ভিতুদের পুরস্কৃত করার প্রকল্পে ~ কাকাতুয়া ~ যে
যে ~ মুখ থুবড়ে পড়ার মেটাফর ~ হামিংবার্ড ~ টুনটুনি নয় ~ যে
যে ~ মানুষের মৃত্যুতে কেউ শোকসভা কেউ মজাসভা ~ যে
যে ~ যে ~ যে ~ যে ~ যেমন চলছে তেমন চলুক ~ যে ~ যে

ঠহর ঠহরকে ঠহর ঠহরকে
ইমলিতলার ধোঁয়ায় সকালের নিমকিন রোদের মিট্টিচুক্কড় তাড়ি
জলে চুবিয়া মারা চাহাপাখির ঝাল ডানার উড়াল দিয়ে মেখে
ঠহর ঠহরকে ঠহর ঠহরকে ঠহর ঠহরকে ঠহর ঠহরকে
এই পাড়ায়  শালা যত্তো ছোটোলোক গু ডিঙিয়ে সাবধানে
টমটমের চারিদিকে খুঁটি বসিয়ে পর্দা ভেতরে চিতচোর চকাচক
খচ্চরের পায়ে ঘুঙুর আর ওই যে পিনাফোর মেয়েগুলো
চাঁদিয়াল পেটকাটি মোমবাতি ময়ূরপঙ্খী ভেড়িয়াল
চাপদাড়িদের কার্বন মাখিয়ে আজকে ঠররা শুয়োরের মাংস
মৌসিজির ভিগি-বিল্লি পয়সাছোড়ো গর্মিতোড়ো
ঠহর ঠহরকে ঠহর ঠহরকে ঠহর ঠহরকে ঠহর ঠহরকে
ঝিঙের ঝাউবন-সবুজ বডির ঢেউগুলো আমি ছোটোবেলায় খেতুম না
সেলাম জানাচ্ছে কপিলের তেলচিটে নানা, জংধরা কালো, ঢেঁকুরে হড়িহঔম
হড়ি দড়শন মনোয়া লাগে ড়েএএএএএএ
ঢোলকপিটুনি চলছে এবার পার্টির লফঙ্গা সাপ্লাই নিয়ে কাজিয়া
কাকেদের জাতিপ্রথার শিকার বিজলি আর কেবল তারে বসে
পলতাশাকের ভেতরে ঘুমন্ত বুড়ির পিচুটি খেতুম না
বড়কি ভৌজাইয়ের চালার ধোঁয়ায় গঞ্জেড়ি হাকিমের সবুজ শিকনির ছিট
কুমড়োর গায়ে নাজিমের বাবার সবুজডোরা লুঙ্গি খেতুম না
কাশার সময়ে ইসকি মাকা চোরি করো ডাকা ডালো পাটিক মারো
চারাপোনা কাচকি মৌরলা বেলে বাচা আমার দিকে তাকায় খেতুম না
জিভের যৌতুকে  রান্না নিয়ে এলো সানাইঅলার বদলে ডলবি ডিজিটাল
ঠহর ঠহরকে ঠহর ঠহরকে ঠহর ঠহরকে ঠহর ঠহরকে
খোঁপা ঝাড়লেই রাজমা লোবিয়া সবুজঅড়র পুদিনার পরৌঁঠা
নিম্বুচিকেন রশুনপেশা কড়ায়ের ডাল হরিয়ানভি পোলাও
গোশ্ত টিক্কা বেবিকর্ণের সঙ্গে তন্দুরি মাশরুম কোলিওয়াডা ঝিংগাফ্রাই
কঢ়াইমুর্গ পায়া-শোরবা শবনম-কারি তাওয়া-ঝিংগা পেশওয়ারি-বটের
ডাইনিং টেবল ছিল না ফ্রিজ ছিল না মেঝেয়ে পিঁড়ি পেতলের বগিথালা
পাড়ার মরদরা শুয়োরের পেটে ভ্রুণ পেয়ে কি আনন্দ কাঠের আগুনে
হোলিকাদহন না ন্যাড়াপোড়া পুড়েছে শুয়োর আর তার ভ্রুণ
খেতে মন্দ নয় কচি অক্টোপাস বেসনে চুবিয়ে ছাঁকা তেলে
জাহাজে ভরে ঘুম নিয়ে গিয়ে খনিজ তেলের পুরু সর সমুদ্রের ওপর
ছোটোবেলায় দুধের সর দু’আঙুলে তুলে খেতুম ওহ ব্লটিংপুরু
ইমলিতলায় ওরা জানে কার নম্বর লেগেছে টেঁটিয়াল মেহরারু
রঙের টিন হাতে হাগতে গিয়েছিল মিথ্যে কথা বকরিয়া পাঁড়ের ছাগলি
রোদ্দুর কেন রক্তে চোবানো কেউ উত্তর দিক হে পরমপূজ্য মৌসিজি
মেঘে কেন পুঁজ মাখানো কেউ উত্তর দিক হে পরমপূজ্য মৌসিজি
সব নর্দমায় সব নর্দমায় সব কেচ্ছা নর্দমায় হে পরমপূজ্য চাচিজি
ঠহর ঠহরকে ঠহর ঠহরকে ঠহর ঠহরকে চিল্লম ডারলিং
ঘোড়ার খুরের টগরবগর টগরবগর ভাআআআগোওওওও
ঠোঁটে এক টিপ চাঁদের গুঁড়ো চেপে নাকি হাগতে গিয়েছিল
গ্র্যানিটের ফাঁক বেয়ে ডেঁয়ো পিঁপড়ের কাতার নর্দমায় ফেলা ভ্রুণে
ঢিল্লা শরীরে টলতে টলতে ফিরেছে মৌসিজির ভাতিজি
হৃদয়-ফ্রিদয় কুমিরের ল্যাজের আছাড় এঁটেল মাটি
ইংরেজরা তো গেছে সেই কবে ওদের কবরের পাথরের ওপরে
খদ্দের ধরতে পারলে ঠহর ঠহরকে ঠহর ঠহরকে ঠহর ঠহরকে
পাথরগুলো তুলে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ছন্দে লেখা এপিটাফসুদ্দু
তলায় কফিনের জায়গা একশো বছরে ফাঁকা
তাতে অন্ধকারের মৌসিজির ভাতিজি লাল গামছা নাড়ায়
বেচারা সাম্রাজ্যবাদী বউ-বর এক সঙ্গে দুটো মার্বেল পাথর
বাহাদুর শাহ জাফরের ভুত এসে গালিবের গজল শোনে
ভাতিজির সুরেলা গলায় তো কুয়াশার মিউজিক টনটনাটন
ঠহর ঠহরকে ঠহর ঠহরকে ঠহর ঠহরকে ঠহর ঠহরকে…

বাংলা মদের গোপন জীবন
খেয়েছেন, এবার বুঝতে পারছেন, কতো ক্ষতিকর
সময় ব্যাপারটা, এর সংজ্ঞা হলো ‘নেই’
সময় নেমে যাচ্ছে গলার ভেতর দিয়ে, স্রেফ
অভিকর্ষের খেলা, না থাকতো যদি, তাহলে বাংলা মদ
নামতে পারতো না, বাংলা মদ হলো শ্রীঘ্রপতন
কবিতার ছোটো ছেলে, ঢিল ছুঁড়ে যতোই মারুন
উনি শব্দ বাক্য ব্যকরণ অক্ষরের ড্রাগ লর্ড
হ্যাঙোভারে উন্মাদের অ্যানথেম মগজে গাইছেন
পানুসুন্দরী, স্লোমোশান আণবিক মাশরুম
খালাসিটোলার সেই হিসি-গরম বোতল থেকে
ঢোল-তাশার পার্টি, সময় চলিয়া যায়
এবং গোঁফ-দাড়ি গজায় যা গালে ফোটে
তখন শিশুর পোঁদে চুমু খাবার মতন স্বর্গ হয় না !
ব্রেকফাস্টে সালামি আর বিফস্টিক
শালারা কান্না চোলাই করে বিক্রি করে–
হে কালীয়দমনের নীল ঠ্যাঙ ধান্যেশ্বর
আপনার দেহখানা কোথায় রেখে এলেন
শরীরহীন পায়ের শব্দহীন পায়চারি
এর সংজ্ঞা হলো ‘নেই’
কেননা কখন সূর্য ওঠে তা জানা নেই
সূর্য তো মাথার ওপরে ওঠে
যখন ছায়ায় পা রেখে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়
কাকেরা কি কাকভোরে ওঠে ?
তাহলে বুঝতে পারছেন সময় ব্যাপারটা কতো ক্ষতিকর ?
বুঝতে বাধ্য করে যে আপনার রয়েছে
মদ্যপের প্রতিভা, পৃথিবীর কিনার ওব্দি গড়িয়ে যাবার–
আচ্ছা জোকার তো
বেশ্যা বলে কি রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইবে না ?
যতো তরল তোতলামি আপনার
মাইনে-করা
সন্ধ্যা কি আপনার চাকরানি যে
বললেই নক্ষত্র ছড়িয়ে দেবে ?
বাংলা মদের জীবন খুবই গোপন, বুঝলেন
বলতে পারেন উর্বশীর যোনির মতন
কখনও দেখার সুযোগ হবে না অথচ
ধান্যেশ্বর হয়ে সেখানে চুমু খেতে পারবেন ।

কারে বোধি কয়
অবন্তিকার পিতৃকুলে কেহ নাই, শৈশবে মরিয়া গেছে মাতা
সংসারত্যাগী পিতা ফেরে নাই
কোথায় গিয়াছে না জানিয়া, কী করিয়া বলেন ফেরে নাই
যাইবে তবে তো ফিরিবে, নৌকায়, ট্রাকে, ট্রেনে, পদব্রজে
পাশে কি যশোধরা নাম্নী স্ত্রী ও সন্তান ছিল
নাকি কাটিয়া পড়িয়াছে কপিলাবস্তুর রাজপুত্রের পিছু
বোধিলাভ ঘটিয়া থাকিবে, হয়তো তিনি জানিতেন
বোধিলাভে আধুনিক জীবনে কোনো লাভ নাই
কিন্তু এও মহা বিড়ম্বনা
বোধিলাভ হইয়াছে কি না, এবং হইয়া থাকিলে
ঢক্কানিনাদসহ জনেজনে প্রচার করার প্রয়োজন
আমরা কি জানি ফুটপাথে দড়িদঙ্কা পড়ে থাকা ভিখারিনী
বোধিপ্রাপ্তির পর পথপার্শে শুইয়া রহিয়াছে
মিউনিসিপালিটির ডোম বুঝিবে কেমনে ? ভিখারিনী
মহাপরিনির্বাণের পর পঞ্চভুতে বিলীন হইতে চাহে নাই !
কিংবা মর্গে রাখা বেওয়ারিশ লাশ যার দেহ বিক্রয়ের জন্য
ডোম ও ডাক্তার দরাদরি করিতেছে
ডাক্তারি শিক্ষার জন্য কঙ্কাল দুষ্প্রাপ্য আজ
হয়তো কোনো ডাক্তারি কলেজে পিতা অবন্তিকার
দণ্ডায়মান কাঠের বেদিতে শ্বেতশুভ্র কঙ্কালরুপে
অবন্তিকা শুনিয়া কহিল, ছ্যাঃ, এখন সেদিন আর নাই
বোধিপ্রাপ্তির মতো মানুষ পয়দা হয় না আর
এখন কেবল সঙ বহুরুপি দলদাস চশমখোরের সমাবেশ
ফর ঠিকেদার অফ ঠিকেদার বাই ঠিকেদার মহাবোধি
বিপ্লবের ভানসহ গদি দখল করে, কোতল উৎসবে মাতে
কেহ বলে পলাইয়া গিয়াছে বাপ, নকশাল দলে
কেহ বলে মৃত, নকশাল দলে মাথায় গামছা বাঁধা
ধরা পড়িয়াছে, কাঁধে সাতচল্লিশ রাইফেল
অগুস্তো পিনোশের সেনা চিলিতে লোপাট করিয়াছে
জেসি ইভান্সের ন্যায় গুড ব্যাড আগলি ফিল্মের
গুড লোকটির মতো স্বর্ণমুদ্রাসহ হারায়ে গিয়াছে
অথবা স্পার্টাকাসের দলে যোগ দিয়াছিল পিতাবাবু
আরজেনটিনার নোংরা যুদ্ধ লড়তে গিয়েছিল নাকি
মেশিনগানের আবিষ্কর্তার মতো নাম পালটায়ে
হিরাম ম্যাক্সিম নামে ফিরিয়াছে, কিন্তু গৃহে ফেরে নাই
আওয়ামি লিগের দলে বিএনপি দলে যোগ দিয়াছিল হয়তো বা
কখন কে উঠে চলে গেছে জানতে পারেনি কেউ
১৮৫৭ সালে নানা সাহেবের সঙ্গে ছিলেন কি তিনি
কাকরূপ পাইয়াছে, কিংবা হায়েনার দলবদ্ধ র‌্যালিতে
মাটিতে নোলা সকসকসহ টাটকা রক্তের গন্ধ খোঁজে
হয়তোবা স্ফিংকসের ঢঙে নাসিকাবিহীন দেহে
কোনো মরুপ্রান্তরে পর্যটকের জন্য যুগযু্গ বালুকাশীতল
মালয়েশিয়ার প্লেনে জলের ভিতরে গিয়া লীলা করিতেছে
রঙিন মৎস্যের ঝাঁকে হাঙরের বাঁকে, পেংগুইন দলে !
এভারেস্টগামী দলে তাঁকে দেখা গিয়েছিল, ডেনিম-পতাকা
পাপারাৎজিগন তাঁকে লিপ্সটিকঠুঁটো হাফনগ্ন ফিল্ল্মিনারীর
কোলে আঙুর খাইতে দেখিয়াছে, কালো আর সবুজাভ
কতো কতো কোলাহল সহ্য করিয়াছে অবন্তিকা
নিরুদ্দেশ পিতার উদ্দেশে
পাড়াপ্রতিবেশীদের মুখগুলি চিরতরে বন্ধ করিবার জন্য
অবন্তিকা গয়ায় শ্রাদ্ধশান্তি করিয়াছে
কহিয়াছে যাইতে দিন, অমন বাপের জন্য শ্রাদ্ধই যথেষ্ট
আমি বলি, যাহা হউক, উনি পিতা, জন্ম দিয়াছেন
আই মিন জন্ম দিতে ওনারও ভূমিকা ছিল
আমি ওর মাতুলালয়েতে যাই, মাউন্ট রোডে, বিশাল বাগানঘেরা
কুকুরের ঘেউ-ঘেউ মুখরিত, বারান্দায় যে বৃদ্ধ ইংরেজি
সংবাদপত্রে নাসিকা ঠেকাইয়া খবরের দুর্গন্ধ আহরণ করিতেছিলেন
তাঁহাকে আত্মপরিচয় দিই; তিনি, হাস্যমুখে আমার পিতা ও
পিতামহ কোথাকার, ঘটি না বাঙাল,
জানিবার পর, কহিলেন, ইলিশ খাই নাই কতোকাল,
জল পান করিবে কি ? স্টেনলেস স্টিলের গেলাসে আপত্তি নাই তো ?
আজকাল পিতলের যুগ নাই, আমাদের কালে ছিল, পুরাতন হইয়া গেলে
চারশো টাকায় কিলো, ব্যবহৃত স্টেনলেস  কেহই কেনে না
ব্যবহার করো আর ত্যাগ করে চলে যাও
কি যে ছিরি আজকালকার প্রেমে, একজন থেকে আরেকে
ছেড়ে যদি চলে গেলি, বোধিপ্রাপ্ত হলি ? বোধিপ্রাপ্ত হলি যদি
চেলা সংগ্রহ করে মঠ খুলে নিজের মূর্তি বসালি ?
বৃদ্ধকে আমি বলি, বিবাহ প্রস্তাব লইয়া আসিয়াছি
সে বিষয়ে আলাপ করিতে চাই, উনি জিজ্ঞাসেন, মাঠেতে বসিয়া
চিনাবাদাম খাইয়াছ ? সিনেমা দেখিয়াছ দুইজনে ? রেস্তরাঁয়
হাসাহাসি করিয়াছ ? কফিহাউসে লইয়া গিয়াছিলে ?
অবন্তিকার মামা দুই হাতে চেনে বাঁধা দুইটি কুকুর সহ
ঠোঁটে চুরুটের ধোঁয়া, প্রবেশ করিয়া বলিলেন,
ও তুমিই বিবাহপ্রার্থী ! শুনিয়াছি, ভালোই রোজগারপাতি ;
অভিভাককে বলি, রোয়াব প্রদর্শন করিব বলিয়া
ইংরেজিতে বলি, আপনার ভাগ্নিকে আমি বিবাহ করিব
অবন্তিকার মায়ের মধ্যম ভাই জিজ্ঞাসা করেন
ভাগ্নি ? কোন ভাগ্নির কথা বলিতেছ ?
যাহাকে আমরা দিব অথবা যাহাকে চয়ন করিয়াছ তুমি নিজে !
মনে মনে দুই-চমক ভাবি, অন্যগণকে দেখিয়া লইব নাকি
কে বেশি সুন্দরী ? মাতুল জানিতে চান, প্রেম করিতে্ছ ?
না না না না, প্রেমে পড়িবার আগে বিবাহ সারিয়া লইতে চাই
অযথা সময় নষ্ট করিতে চাহি না
হাহা-হিহি, চিনাবাদাম, চিংড়ি কাটলেট, ময়দানে পা ব্যথা,
ভিক্টোরিয়ায় গিয়ে ছাতার আড়ালে চুমু খাওয়া
ওসব চাই না আমি, জাস্ট বিয়ে করে ফেলতে চাই
দুজনে দুরকম চিন্তার আগে । মাতুল কহেন, রাইফেল কখনও
চালাইয়া পরখ করিয়াছ, এই দ্যাখো, আমার রাইফেল-স্টক
বুলেট, প্রোজেকটাইল, যা চাই চালিয়ে দেখতে পারো
কই দেখি, ওই উড়ন্ত পায়রাগুলির মাঝে একটাকে মারো দেখি ।
রাইফেল লইয়া আমি দুই চোখ বন্ধ করিয়া
ট্রিগার টিপিলাম । কী ফল হইল জানি না, উনি বলিলেন
গুড, ওয়েল ডান, মা-বাবাকে টেলিফোন করে দাও
আগামী সপ্তাহে বরযাত্রীসহ চলে এসো ।
বিবাহসভায় দেখিলাম, জনৈক ভিখারি, বুঝিলাম
বোধিপ্রাপ্ত ইনি, বলিলেন, আমি অবন্তিকার বাবা
তোমাকে আশীর্বাদ করিতে আসিয়াছি
বিগত কয়েকদিন তোমার উপরে নজর রাখিয়া
বুঝিয়াছি উপযুক্ত পাত্র তুমি
সত্যকার যেদিন মরিব সেদিন খবর পাইবে
সেইদিন আরেকবার শ্রাদ্ধ করিও, হ্যাঁ, আরেকবার
অগুস্তো পিনোশের দেশ হইতে অথবা পলপটের মাটি ফুঁড়ে
সমুদ্রের তলদেশ থেকে, স্পার্টাকাসের দল থেকে
নানা সাহেবের দল থেকে, ফিরিয়া আসিব…..

অবন্তিকার কমপ্লেকসিটি
শ, যে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, অবন্তিকার  প্রেমিক নং ১, ইংলিশ
মিডিয়াম স্কুলে পড়বার সময়ে ওর সঙ্গে ইংরেজিতে
প্রেম করতো ।
শ-এর বাবা জ ( দুই ) ফরাসিদেশ থেকে হটেনটট ভেনাসের যোনি
কিনে এনেছিলেন ( কথিত আছে )।
জ ( এক ) যিনি অবন্তিকার মেশোমশায়, তা জানতে পারেন, শ-এর
বাড়ি যেতে বারণ করে দ্যান।
অলোকনন্দা গোস্বামী দোলের দিন রঙ খেলতে চায়নি বলে শিফন
শাড়ি পরেছিল।
অবন্তিকার খুব ঈর্ষা হল, শিফন শাড়ি দিয়ে অলোকনন্দার মাইয়ের
খাঁজ দেখা যাচ্ছিল ।
জ ( দুই ) নামকরা পেইনটার, উনি কেবল যুবতীদের খাঁজ আঁকেন,
কলকাতার কালবৈশাখিতে অনেকের খাঁজে জল চুয়েছিল
অবন্তিকার মনে হতো প্রেম কেবল মাতৃভাষায় সম্ভব, একদিন
অ্যানাইস নিনকে লেখা হেনরি মিলারের চিঠি পড়ে বুঝতে
পারলো যে শ বই থেকে টুকলিফাই করেছিল ।
ক্লাসটিচার সিসটার ব ( এক ) আয়ারল্যাণ্ডে ফিরে গেলেন, তাঁর
বদলি টিচার কেরালার, সিসটার আইয়াক্কম ।
জ ( দুই ) কেরালার টিচারকে বাইবেল উপহার দিলেন, যাতে কালচে
খাঁজ আঁকতে পারেন ।
অবন্তিকা ২নং প্রেমিক খ ( তিন ) এর দিকে ঝুঁকলো, কেননা
সে স্কুলে বাংলায় প্রথম হতো আর অবন্তিকার মেসোর
ওপন হার্ট সার্জারির খরচ দিয়েছে।
প্রতিদান হিসেবে অবন্তিকা খ ( তিন ) কে ব্লাউজে হাত ঢুকিয়ে
টিপতে অনুমতি দিয়েছিল ( আহা কী আনন্দ )।
মিস্টার শৈলেন বোস মারা গেছেন । মিস্টার অজিত গাঙ্গুলিও।
অবন্তিকা ওনাদের নাম শোনেনি ।
দ ( দুই ) এর দপতরে শ চাকরি করতে গেল ; খ ( তিন )
ইটালির একজন ছাত্রীর সঙ্গে চলে গেল বিদেশে ।
প্রেম সম্পর্কে অনির্বাণের কোনো ধারণা গড়ে ওঠার আগেই র-নামের
স্কুল থেকে সে দ-নামের কলেজে ভর্তি হবার পর অবন্তিকা
যাকে সবাই অবু বলে ডাকতো, পরিচয়ের প্রথম দিনেই বললে
আমি ডেটিং-ফেটিং করি না।
অনির্বাণ, যে জ ( দুই ) এর জারজ ছেলে, উত্তরে বলেছিল, আমিও
ফাকিং-সাকিং করি না । বেচারা ন্যাড়া বোষ্টম হয়ে গেল।
“মেয়েদের মাসিক প্রকাশ করা উচিত নয়”, সাইনবোর্ডে লেখা, তলায়
পেইনটিঙ, জিনস-পরা যুবতীর মাসিক হবার রক্ত লেগে।
পত্রিকার নাম ‘আরেত্তেরি ইস কি মা কা আঁখ’ ।
পড়ার পর অবন্তিকা নিজের পাছায় হাত দিয়ে চেক করে নিল। নেই।
যুবতী সাইনবোর্ড থেকে নেমে জিগ্যেস করল, পাতা ফুঁকবে?
মইনুদ্দিন খানের কাঁধে হাত রেখে জ ( এক ) নির্বাচনে কজন মারা
গেছে তা আলোচনা করতে-করতে গেল।
কালবৈশাখির মেঘ একটু একটু করে জমা হচ্ছে, ছাতা আনেননি
কেরালার টিচার, ওনার খাঁজ অতিপবিত্র, দেখানো যাবে না
বৃষ্টির জল তা মানতে বাধ্য নয় ।
শ একদিন জানতে পারলো তার বাবা জ ( দুই ) যাকে হটেনটট
ভেনাসের যোনি বলে সকলকে ঈর্ষায় পুড়িয়েছেন তা আসলে
ফরম্যালিনে চোবানো বড়ো বাদুড়
খবরের কাগজে সংবাদটা পড়ে ম, যার সঙ্গে স্নাতকোত্তর পড়ার সময়ে
অবন্তিকার পরিচয় হবে, নিজেকে বলেছিল কি লজ্জা কি লজ্জা
মরা বাদুড় দেখেও লিঙ্গোথ্থান হয় ।
অনির্বাণ বোষ্টম হয়ে এক সুন্দরী বোষ্টমীকে ফাঁসিয়েছে, কী কুক্ষণে যে
লটারির টিকিট কিনেছিল দশ লক্ষ টাকা পেয়ে চুল গজালো।
অবন্তিকা একদিন ম-কে কাফে কফি ডে-তে বললে যে ওর একটা মাই
কেউ এখনও টেপেনি ।
ম বলেছিল, চিন্তা করিসনি, আমি টিপে দেবো । ম এমনই চরিত্রহীন যে
তার আগেই শ-এর খুড়তুতো বোনের মাই টেপার অফারের
সদ্ব্যাবহার করে ফেলল।
খবরের কাগজের উত্তর সম্পাদকীয়তে হটেনটট ভেনাসের আসল যোনি
আর জ ( দুই )-এর বাদুড় যোনির তুলনা প্রকাশিত হলো।
পেইনটিঙের সমালোচকরা আবিষ্কার করলেন জ ( দুই ) এর খাঁজের
তেলরঙগুলো আসলে বাদুড়দের ছবি ।
ম একদিন অবন্তিকাকে প্রস্তাব দিল যে পূর্ণিমার রাতে সেন্ট্রাল পার্কের
ঘাসে ফুলশয্যা করা যাক ।
ম-এর মা ট ( দশ ) পার্কে সঙ্গমরত দুজন মানুষকে ভাবলেন ভুত আর
ভুতনির অষ্টাঙ্গদশা, দেখেই দুহাত তুলে দৌড়োলেন ।
ম-এর বড়ো ভাই প ( এক ) মাকে দৌড়ে আসতে দেখে সাপ মারার
লাঠি নিয়ে পার্কে ছোটোভাইকে দেখে চটে গেলেন।
ম-এর মা ট ( দশ ) বড়ো ভাই প ( এক ) কে স্তোক দিলেন যে তোকে
তিনচারটে মেয়ের সঙ্গে একই দিনে বিয়ে দেবো।
ট ( দশ ) এর ছোটোবোন ট ( নয় ) যে জ ( এক )-এর ডিভোর্সি বউ
তা কেবল অবন্তিকা আর ম জানতো।
ট ( নয় ) ম-কে বললেন, ঘাসে লীলেখেলা করিস কেন রে, হাঁটু ছড়ে
যাবে, আমার বাড়ির ব্যবহার-না-করা বিছানা তো ছিলই।
ট ( নয় ) এর ব্যবহার-না-করা বিছানায় লিলেখেলা করার সময়ে ম-কে
অবন্তিকা বললে, তুমি আমার প্রেমিক নং ১৮ ।
ম অবাক হলো যে এর আগে সতেরোজন প্রেমিক কি বিছানার চাদরে
রক্ত মাখাতে পারেনি !
অবন্তিকা ম-কে জানালো যে জ ( এক ) যিনি ওর মেসোমশায় তিনি
এই শহরের ভার্জিনিটি রিপেয়ার বিশেষজ্ঞ ।
শ, যে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, জ ( এক )-এর ভার্জিনিটি রিপেয়ারের
হিসেব রাখে, তার কাছ থেকে ম জানতে পারলো যে এই শহরের
প্রতিটি ভার্জিনের ভার্জিনিটি রিপেয়ার করা ।
জ (এক ) আর জ ( দুই ) দুজনেই তাঁদের স্হাবর-অস্হাবর সম্পত্তি ম
আর অবন্তিকাকে লিখে দিয়ে গেছেন ।
ম আর অবন্তিকা ছেলে মেয়ে বউ জামাই নাতি নাতনি নিয়ে এখন সুখে
থাকার চেষ্টা করে অথচ পারে না ।

মর্ষসমকাম
অন্যকে পিটিয়ে তাকে বশে আনবার জন্য পাতা তত্বফাঁদ
একে আমি বলি মর্ষসমকাম
বিধবা মায়ের মুখে ছেলের রক্তমাখা ভাত গুঁজে দেয়া
একে আমি বলি মর্ষসমকাম
মাটির তলায় চাষিদের বাড়ি থেকে তুলে জ্যান্ত পুঁতে দেয়া
একে আমি বলি মর্ষসমকাম
গাড়িতে বাছুর নিয়ে যাচ্ছে বলে নামিয়ে পেটানো বেদম
একে আমি বলি মর্ষসমকাম
সেতুর ওপরে গায়ে পেট্রল ঢেলে সন্ন্যাসী দলকে পোড়ানো
একে আমি বলি মর্ষসমকাম
গরিবের সঞ্চয়ের টাকা মেরে ফুলে-ফেঁপে কাগজ চালানো
একে আমি বলি মর্ষসমকাম
গোঁজামিলে তৈরি উড়ালপুলের নিচে মানুষ থ্যাঁতলানো
একে আমি বলি মর্ষসমকাম
একঘরে করে দিয়ে বিরোধী পরিবারদের গাঁ থেকে তাড়ানো
একে আমি বলি মর্ষসমকাম
বানতলায় জিপ থেকে নামিয়ে ধর্ষণখুন যোনিতে টর্চ গোঁজা
একে আমি বলি মর্ষসমকাম
যে বাড়ি তুলছে তাকে হুমকি দিয়ে প্রোটেকশান টাকা তোলা
একে আমি বলি মর্ষসমকাম
চাষির পাকা খেতে নিজের দলের ঝাণ্ডা পুঁতে দখল করে নেয়া
একে আমি বলি মর্ষসমকাম
অবরোধে অ্যামবুলেন্সের যাওয়া স্লোগান মেরে থমকে দেয়া
একে আমি বলি মর্ষসমকাম
চটের ফাটকা বাজারে ঢুকে জুটমিল বন্ধ করবার জুয়া
একে আমি বলি মর্ষসমকাম
সমাবেশে ভিড় বাড়াবার জন্য অভূক্ত মানুষদের জড়ো করা
একে আমি বলি মর্ষসমকাম
মাঠেতে  হাগেনি যারা তারা  নিজেদের প্রলেতারিয়েত বললে
একে আমি বলি মর্ষসমকাম
স্ত্রীর সামনে স্বামীকে হত্যা করে আঁজলা ভরে রক্তপান করা
একে আমি বলি মর্ষসমকাম
পাথরে হাত রেখে বিরোধীর পাঞ্জা কেটে নাচা আর কোদা
একে আমি বলি মর্ষসমকাম
শ্যাওড়াফুলিতে নাজমা খাতুনকে উলঙ্গ ঘোরানো পথে-পথে
একে আমি বলি মর্ষসমকাম
যা হচ্ছে হোক, এভরিথিং গোজ, সবকিছু চলবে  ভাবনা
একে আমি বলি মর্ষসমকাম
নদীতে বর্জ্য ফেলে স্রোত বন্ধ করে জমিকে বাড়িয়ে নেয়া
একে আমি বলি মর্ষসমকাম
হাসপাতালের কাছে ঈশ্বর-দেবীদেবতার নামে লাউডস্পিকার
একে আমি বলি মর্ষসমকাম
বিজ্ঞাপন-সুন্দরী দেখাবার জন্য বিষ দিয়ে গাছ মেরে ফেলা
একে আমি বলি মর্ষসমকাম
দেশভক্তি প্রকাশের জন্য দলিতদের পিটিয়ে হত্যা করা
একে আমি বলি মর্ষসমকাম
আমি এসব কথা বললেও কারোর কিচ্ছু এসে-যায় না
একে আমি বলি মর্ষসমকাম
কসমোপলিসের আত্মহত্যা

মুম্বাই সেন্ট্রাল স্টেশানে ছাড়তে এসেছিলুম অবন্তিকাকে
ও যাবে ভয়েন্দরে মাছ কিনতে কাৎলা বা রুই
ভালো টাটকা মিষ্টিজলের মাছ ভয়েন্দরে পাওয়া যায়
আমি মাছ তেমন চিনিনা বলে ও-ই যাচ্ছে
ওর মুড়িঘণ্ট খেতে ভাল্লাগে
আমার একেবারে পছন্দ নয় মাছের মুড়ো
মিষ্টিজলের হোক সমুদ্রের হোক
অবন্তিকা এক যুবকের দিকে ইশারা করে বলল
মেয়েদের কমপার্টমেন্টে ওঠার জায়গায় ও কি করছে ?
পকেটমার নির্ঘাৎ !
বললুম, দেখছিস তো লোকটা ফোন করছে
হয়তো পরের ট্রেনে যাবে
লোকাল ট্রেন এসে পড়ল প্রায়
মেয়েদের ঠেলাঠেলি শুরু হল
লোকটা মোবাইলে ব্যস্ত
পায়ের কাছে মোবাইল ফেলে দিয়ে প্ল্যাটফর্ম থেকে ঝাঁপালো
রেললাইনের ওপর পেতে দিলো নিজেকে
কেটে দু’টুকরো জবজবে শার্ট চোখ আকাশে
দেখে বমি পেলো অবন্তিকার
এই ট্রেন আর যাবে না নিত্যযাত্রীরা জানে
প্ল্যাটফর্মের কারোর পরোয়া নেই সবাই দৌড়োলো
অন্য প্ল্যাটফর্মের দিকে পরের লোকাল ট্রেন দাঁড়িয়ে
তাদের পায়ের চাপে লোকটার মোবাইল চুরমার
ভয়েস রেকর্ড-করা আত্মহত্যার ই-চিরকুট মুছে গেলো
আজ আর মাছ কেনা হবে না
মুড়িঘণ্ট আর আত্মহত্যার জন্য কসমোপলিসের খেয়াল নেই

খেলার চাল
সবই মগজের মধ্যে
জিতে যাওয়া
হেরে যাওয়া
ছারপোকার চুলকানি
এগজিমা
কিংবা ডিজেল ধোঁয়ায়
হাঁপানির আস্ত শহর
জানি না কি হয় জিতে গিয়ে
যা হয় মগজে হয়
জানি না কি হয় হেরে গিয়ে
যা হয় মগজে হয়

কবিতার জাতক
ঈগলপাখি হয়ে জন্মেছি, রাক্ষস গণ, সিংহ রাশি
বুড়ো হয়ে গেছি, কেউ-কেউ মরে গেছে
আকাশের বয়স হয় না বলে ওড়ার বয়স হয় না
যতোদিন আকাশ ততোদিন উড়াল
দুচারটে পালক খসে গিয়ে থাকবে
কিন্তু আমাদের যৌথ প্রেমের যৌথ প্রেমিকারা
আমাদের সঙ্গেই উড়তো, এক-এক করে
দীপ্তি-বেবি-মীরা বাংলায় টলমলে
বাসুদেবের জাদুবাস্তব চিঠিতে অমর
টস করে নির্ণয় নিতুম আমরা, আজকে কে
প্রথমে কে যাবে
তারপর আমাদের মাঝখানে সাহিত্য
জোড়ার বদলে দেয়াল তুলল
সাহিত্যের সহিতত্ব ব্যাপারটা চরসের ধোঁয়া
যতো ফোঁকা যায় ততো ঝাপসা হয়
দীপ্তি এখন বুড়ি, বেবি অন্য বাড়িতে
মীরার শরীর ঝরে গেছে
কিন্তু জোড়ার আঠা ছিল বটে তিনজনের
আমাদের সবাইকে একই বিছানায় জুড়ে দিতো
আমি ঈগল থেকে অন্য পাখি হতে পারলুম না
দোষটা আকাশের, রাক্ষস গণ পালটাতে পারলুম না
সিংহ রাশি পালটাতে পারলুম না
কবিতার জাতক
জাদুবাস্তবের অবিশ্বাস্য ফিনফিনে হাওয়ায় আজও

প্রেমিকা যখন ব্যুরোক্র্যাট হয়ে গেল
ফোটোয় যে কোটটা দেখছেন
দাদুর, সেই হাতির মাথা কেটে
গণেশের সঙ্গে বদলাবদলি হলো
তার পিঠে বসে মুখের ভেতরে
শুকনো কুয়াশার স্বাদ নিয়ে
জমিজমা আমার কিছুই ছিল না
ভাড়া নিয়ে ফুল-ফল ফলিয়েছি
আমিই আমার গল্প হয়ে গেলুম
জীবনভরের আলিঙ্গনে আটক
বুকে হৃৎছন্দের বিজলিমেশিন
রক্তনালিতে দামিধাতুর নল
বাবার তোলা ফোটো বলে
তেমন পোজ দিতে পারনি
যেমন ইলিশ কাঁটায় কাঁটা
তবু স্যমানের চেয়ে ভাল্লাগে
খুচরো গোনার বাজনার সঙ্গে
ছন্দের কতো মিল বুকের মেশিনে
সেই ছন্দ ধরে রেখেছে প্রেমিকা
ব্যুরোক্র্যাটের রক্তে ধাতুর নল

রাঙামাসিমার গোপন ডায়রির শেষ পাতা
“ও চেয়েছিল গায়িকা, ঠোঁট দিয়ে, জিভ দিয়ে, গায়িকারা যা করতে পারে
দাঁত কেমনভাবে ব্যবহার করতে হবে, শ্বাসটানা, তখন ফুঁ-প্রেম শুনিনি
স্বরলিপিতেই শ্বাস যাবে-আসবে, খানিক ফিসফিসুনি টাকরা-আলজিভে
পুরাণের হিরোদের মতন পাইকারি ভালোবাসা, লোকটা জ্ঞানকুঁজো
কতো বছর যে মায়ের মগজে ঘুমিয়েছিলুম, পাঁচবারের বার জন্মালুম
পালতোলা বাড়ির তিনতলায়, পেটে থাকতে গান প্র্যাকটিস করেছি
ঘরজুড়ে বিকেলের দিকে ছায়াদের অডিশান ছুরি-কাটা আলোয়
চাটা-ফাটলের হাঁ-মুখে রক্ত গরম হতে থাকে, দুঃখের কথা বলতে
পাকস্হলীতে গানের শীতঘুমের ঋতুতে কুমিরদের মেটিং মৌসম
ট্রেনভর্তি মানুষ নামছে বুক চিরে-চিরে ঘেমো মেয়েদের গাদাগাদি
ওদের বংশে পারিবারিক জিভের গপ্পো খুব শুনতুম, ও, এই ব্যাপার
যেন নাক ডাকার সময়ে মুখের ভেতরে ফেলা পাঁচ টাকার কয়েন
সিজারিয়ান করে ঝকঝকে অ্যালুমিনিয়াম পাহাড় প্রসব করল
কথা কইবে যেন অন্ধের ছড়ি ফুটপাথের সঙ্গে আলাপ করছে
বাড়িতে অভিধান বলতে ভাসুরপোর দ্বিতীয় পক্ষের বউ আর
আগের পক্ষের মেয়ে হাতের রেখায় যতোটুকু ব্যকরণ রয়েছে
সিনেমাহলে ফেলে-যাওয়া গাদাগাদি ছোঁড়া-ছুঁড়িদের বদঘাম
বোতাম-সভ্যতা চলছে তখনও জিপসংস্কৃতি বাজারে নামেনি
অমাবস্যার রাতে কাৎলামাছের আঁশে গড়া হাওয়া খাচ্ছিলুম
ও বললে, শরীর একখানা উপমহাদেশ আমার মনে পড়েছে
শীতকালেও গায়ে এমন গ্রীষ্ম ছুঁড়ে মারতো মলম লাগাতুম
এদিকে মাঝরাতই শ্বাসে-শ্বাসে বিছানার অন্ধকার গাঢ় করেছে
ভাগ্যিস শুতে আসার আগে পাকা পেয়ারাখানা খেয়েছিলুম
কি মিষ্টি কি মিষ্টি এই নাহলে ভরাসংসার শশুরবাড়ি…”

অবন্তিকার বিশেখুড়োর অ্যালবাম দ্যাখা
বিশেখুড়ো কোতরঙে চলে যাবার সময়ে ট্রাঙ্ক দুটো নিয়ে যাননি,
চুপচাপ পালিয়েছিলেন, কাকিমাকে নিয়ে
বিশেখুড়োর ছেলেপুলে হয়নি । যাবার সময়ে আকবরের
আমলের রুপোর টাকাগুলো নিয়ে গিয়েছিলেন।
কোতরঙে গিয়ে কাকিমা ৮০ বছরে বিশেখুড়ো ৯০ বছরে
মারা যান । ফোটোর অ্যালবাম নিয়ে যাননি কেন !
অবন্তিকা সকালে এসেছিল, বললে, বিশেখুড়োর ট্রাঙ্কের তালা
ভেঙে দেখা যাক যদি কিছু মোহর থাকে ।
উরিব্বাপ, মহামূল্যবান শাদাকালো অ্যালবামখানা ফেলে গেছেন।
অবন্তিকা পাতা ওল্টায় আর আমার মুখের দিকে তাকায়;
আমি ওর মুখের দিকে তাকাই, গাল গোলাপি হয়ে উঠছে, কান
লাল হয়ে উঠছে।
পাতা ওল্টায়, মুখ থমথমে, আমার মুখভঙ্গী লক্ষ্য করে।
ফোটোগুলো দেখি আর বুকের ভেতরে দামামা  ।
অবন্তিকা ফোটো দ্যাখে, পাতা ওল্টায় আর এক এক করে বলতে
থাকে : গোয়া, মানে, বত্তিচেলি, টিটিয়ান, ডিউরের,
রুবেন্স, রেমব্রাঁ, মদিগলিয়ানি…। বিখ্যাত নিউড আর্ট ।
ছোটো কাকির নানা আঙ্গিকে নিউড ফোটো তুলেছেন
বিশেখুড়ো ; শাড়ির আড়ালে দেখিনি তো অসাধারণ ফিগার
মাংসের প্রতিভা, প্যাথস, আবেগের জটিলতা, যৌনতা ।
অবন্তিকা বলল, তোর ছোটোকাকি এতো সুন্দরী ছিলেন যে
বিশেখুড়ো লুকিয়ে  ওনার নিউড ফোটো তুলতেন।
সম্পূর্ণ নগ্ন ছোটোকাকি, নিজের ছোটোকাকিকে দেখছি, পুরো
পোশকহীন, ওনার ধ্রুপদি যৌবনে ।
অবন্তিকার হাত চেপে বললুম, তুই আমার ছোটোকাকির
সেক্স-অ্যাপিলকে হিংসে করছিস !
অবন্তিকা হঠাৎ আমার ওপর ঝাঁপিয়ে বলে উঠল, কী রে
নিজের কাকির সেক্স অ্যাপিলেও রেসপন্ড করছিস,
লম্পট বিহারি খোট্টা কোথাকার ! নিজেকে সামলা ।

এটা ঘটনা
তারপর বল, কেমন আছিস, কতোকাল পর দেখা
সেরকমই আছিস মেঘ অর্কিড ফানুস দিয়ে গড়া
কিছুটা তন্বীত্ব রয়ে গেছে কোমরের ঝড়ে
–হ্যাঁ, তা পঞ্চাশ বছর তো হবেই
তুইও তো বদলাসনি বিশেষ, সেই একই সূর্যোদয়
সমুদ্রের ফেনার নিঃশ্বাস ডলফিনদের সাথে
এখনও খেলছিস নাকি হাঙরের দলে
তোকে তো তখনও বুঝিনি এখন আরো অবাস্তব
পঞ্চাশ বছর হল মরে গেছি ? কেমন স্ট্রেঞ্জ লাগছে, না !
মরে যাওয়া বেঁচে থাকা কই ফারাক তো নেই
এখনও আমার কঙ্কাল খাদে পড়ে আছে
অতো নীচে নামতে চায়নি কোনো উদ্ধারকারী
আসলে উদ্ধারযোগ্য ছিলুম না কখনও
–না তুই তো পরে মরেছিলি, বোধহয় দুর্ঘটনায়, ঠিক মনে নেই
শব তো দেখিনি, শুধুই কেঁদেছি এই পঞ্চাশ বছর
জানি শোক করে কোনো লাভ নেই, হয়ওনি
তবু নিজের জন্যে তো কাঁদতে ইচ্ছে করে
যাঃ দুর্ঘটনা হবে কেন, আমি তো পাহাড় থেকে
তোর জন্য তোর জন্য তোর জন্য
–হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে, তোর কানে তখনও গানটা বাজছিল
আমারই গাওয়া গান, অথচ জানিস, ভুলে গেছি
তোর মনে আছে ?
আসলে ওই বয়সে গান তো মাথার ভেতরে বাজতো
কান দিয়ে শোন খাদের কঙ্কালের কানে তোর গান
–আমার গান তোর এতো ভালো লাগতো ?
বলিসনি তখন কেন, ওফ, যদি বলতিস
এখনও লাগে রে এখনও তোর গান
আশেপাশে সব স্তব্ধ হয়ে যায়
–তাই ? সেসময়ে তো বলিসনি কোনোদিন
অত্যন্ত লোফার ছিলিস লুচ্চা লম্পট
বলিনি কারণ তোর চেয়ে তোর গানকে ভালোবাসতুম
–চা খাবি ?
না, মরে গেছি বলে তো আর অভ্যাস ছেড়ে যায়নি
–ওঃ এখনও সেই সিঙ্গল মল্ট খেয়ে মাতাল হোস
হ্যাঁ রে, দেহ ছাড়া কিছুই ছাড়িনি
–নিজে কেন মরতে গেলি, তোর সুন্দরী প্রেমিকা তো ছিলই
হ্যাঁ, আমি ওকে দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলুম জায়গাটা
যেখানে তুই আমাকে ঠেলে খাদে ফেলে মেরেছিলিস
শুনেই ও আমায় বলল তুমিও তাহলে ওর কাছেই যাও
–আসতে এতো দেরি করলি কেন ?
তুষারের জন্য আমার শব চাপা পড়ে গিয়েছিল
–চল বাইরে কাফেতে গিয়ে দু’কাপ ক্যাপুচিনো খাই

এ-৪ মাপের কাগজে
এ-৪ মাপের কাগজের একেবারে মাঝখানে ইন্সপেক্টর অ. ব্যা.
লিখে রেখেছিলেন, “আমার মৃত্যুর জন্য কেহ…….”
ডাকসাইটে ইন্সপেক্টর বলে বেশিদিন একই পুলিশ স্টেশনে
টিকতেন না
অ. ব্যা. ছিলেন যাকে ভালো বাংলায় বলে অকৃতদার, মানে
যিশুখৃষ্ট টাইপ নয়, চলতি বাংলায় যাকে বলে লুচ্চা
এ-৪ কাগজের পেছনে খুদেখুদে অক্ষরে দেড়-হাজার নাম লেখা ছিল
মেয়েদের নাম, কিন্তু অনুসন্ধানকারী কমিশনার শ. চ্যা.
হদিশ পাচ্ছিলেন না নামগুলোর মালকিনি কারা
অ্যাসিসস্ট্যান্ট ইন্সপেকটরের মতে এই মেয়েগুলোই অ. ব্যা-কে
খুন করেছে, কিন্তু কেন লেখা, “আমার মৃত্যুর জন্য কেহ…”
যতোগুলো থানায় ইন্সপেক্টর অ. ব্যা-এর পোস্টিঙ হয়েছে
কন্সটেবলরা জানতো উনি প্রতিদিন সকালে গায়ত্রীমন্তর
গুজগুজ করে পড়েন
অথচ ইন্সপেক্টর অ. ব্যা-এর বাড়িতে পুজোর ঘর পাওয়া যায়নি
গঙ্গাজল পাওয়া যায়নি, পাঁজিও না
কিন্তু একটা ঘরে রঙিন ফোলানো গ্যাস-ভরা কনডোম পাওয়া
গেছে, সেই ঘরে তারা নিজের ইচ্ছেয় উড়ছিল
বেলুন ফোলাবার সিলিণ্ডারও পাওয়া গেছে, ঘরের ভেতরে ঢুকে
কমিশনার সায়ের লাফিয়ে লাফিয়ে যতোই অন্তত একটা
কনডোমকে নাগালে আনার চেষ্টা করেন, সেগুলো পালিয়ে
সিলিঙে গিয়ে ফিকফিকিয়ে হাসে
মেঝেয় খুঁজে পান একটা গ্যাস-ফুরোনো কনডোম তাতে কালি ওঠে না
এরকম রঙ দিয়ে একজন মেয়ের নাম লেখা
মেয়েটি কে মেয়েটি কে মেয়েটি কে মেয়েটি কে মেয়েটি কে মেয়েটি
যে কে তা একজন কন্সটেবল বলতে পারল
“হুজুর ও তো বেপাড়ার, এ-৪ কাগজে যতো নাম আছে সবই তার মানে
বেপাড়ার”
এ-৪ তালিকা নিয়ে অ. ব্যা-এর পোস্টিঙের শহরে বেপাড়ায় ঢুঁ মেরে
কমিশনার শ. চ্যা. বিশেষকিছু জানতে পারলেন না
তিনি তো আর খদ্দের হয়ে জাননি, পুলিশ হয়ে গিয়েছিলেন, তাঁকে দেখে
মেয়েরা নিজের অন্য নাম বলেছে, কেননা রোজ সন্ধ্যায় ওদের
নামবদল হয়
শেষকালে অ.ব্যা. সম্পর্কে গুজবই কাজে দিল । অ. ব্যা, গায়ত্রীমন্তর
পড়ার সময়ে রগের ওপরে পিস্তলের নল ঠেকিয়ে পড়তেন
তিনি মনে করতেন যে যদি বেপাড়ায় যাওয়া পাপই হয় তাহলে
৯ এমএম গুলি তাঁর মগজ ফুঁড়ে বেরিয়ে যাবে
তবু তেমন সুরাহা হল না কেননা পিস্তলের ট্রিগারে কারোর
আঙুলের ছাপ পাওয়া গেল না । শ. চ্যা. ফাইলে লিখলেন
“কেস ক্লোজড; কনডোমগুলো ভালো কোম্পানির । ৩৫৯৭টা
কনডোম । অফিসারের ভবিষ্যৎ উজ্জল ছিল । মরণোত্তর
সম্বর্ধনা দেয়া হউক ।”

গী এবং আ-এর প্রেম
আ কেন আত্মহত্যা করেছিল তা ওর স্ত্রী গী-এর উথালিপাথালি চিৎকার থেকে
ছেঁকে জানতে পারছিলুম
আমার বয়স তখন যদিও এগারো তবু গী-এর কান্না আর গোঙাকির ফাঁক দিয়ে
টের পাচ্ছিলুম আমি গী-এর ড্যাবড্যাবে চোখ, পাছা পর্যন্ত চুল
পাতলা কোমর, ভারি পাছায় দোল খাচ্ছি
গী বলছিল, ছি ছি ছি ছি প্যাসেঞ্জার ট্রেন ছাড়া কোনো সুপারফাস্ট ট্রেন
পাওনি গো ! তুমি সবেতেই ফেল করে গেলে গোওওওওওও
গী-এর কান্না আমার বেজায় ভালো লাগছিল, মনে মনে বলছিলুম, আরো কাঁদ
কাঁদতেই থাক, তোকে দেখে নিই, তোর ডাঙায় মাছের কাৎরানি,
আঁচলখসা বুকের ধবধবে মাখন, আগে তো দেখিনি, আহা
আ কোনো চিরকুট লিখে যায়নি, বেশ করেছে, গী এখন বুঝুক ঠ্যালা, পুলিশ
গীকে দুঘন্টা জেরা করে যা জানতে পারেনি, আমি তা জানলুম
গী বোধহয় ভাবছিল, এটাতো ছোঁড়া, বিশেষ কিছুই বোঝে না, এর সামনে
কষ্টের যন্ত্রণার দুঃখের পরাজয়বোধের স্টক খালি করি
আমি বোকার ভান করে তাকিয়ে থাকি, গী-এর বুকের খাঁজের দিকে,
বড়ো-বড়ো চোখের দিকে, ধুমসো পাছার দিকে
এই তো সেদিন বিয়ে হল আর ট্রেনের লাইনে গিয়ে শুয়ে পড়ল আ, কেন
তা বলতে লাগল আ, লোকটা কী, ফুলশয্যায় পারল না,
কয়েক রাত চেষ্টা করেও পারল না, কেমনতর পুরুষ
জাহাজঘাটার বদলে খেয়াঘাটে নৌকো ভেড়ায় !
গী অতিসুন্দরী বলে আ কোনো যৌতুক নেয়নি, চাউনিতেই ঘায়েল
হয়ে গিয়েছিল, বিছানায় বিফল হয়ে গেল, কেন !
গী ভার্জিন থেকে গেল । এর পর যদি গী কাউকে বিয়ে করে সে কি
জানতে চাইবে গী ভার্জিন কি না ।
আমি সুযোগ পেয়ে গী-কে সান্ত্বনা দিই, জড়িয়ে ধরে বলি, কেঁদো না গো
সব ঠিক হয়ে যাবে, তোমার তো কোনো দোষ নেই
এতো সুন্দরী তুমি, অনেক ভালো বর পেয়ে যাবে, যে তোমায় খুবখুব
ভালোবাসবে । গী আমার কথা শুনে আমাকে কষে জড়িয়ে ধরে।
আমি গী-এর গাল থেকে লোনা জল ঠোঁটে মেখে নিই, মুখের ভেতরে গিয়ে
গী-এর চোখের জল মিষ্টি হয়ে যেতে থাকে । থ্যাংকিউ গী ।


কেউ কবিতা পড়ে না
এ-টেবিলের মাতাল যেভাবে ওই টেবিলের মাতালের সঙ্গে কথা বলে
তাদের ডেলিকেসি পাঁঠার জিভ, ভেড়ার মগজ, গোরুর সসেজ
৩৭৬৫৩ বাঙালি কবি কবিতা লেখে কিন্তু  কদাচিৎ অন্যের লেখা
কবিতা পড়ে, মাতালের দলাদলি আর কবিদের দলাদলি আলাদা,
পাবলিক তো একেবারেই কবিতা পছন্দ করে না, মঞ্চে দাঁড়িয়ে কোনো
মাতাল খোঁয়ারি শোনালে আধোঘুমে ‘আরেত্তেরি ইস কি মা কা
আঁখ’ বললেও, কবিও সেই কথাই বলছে তা টের পায় না, মানে খুঁজে
পায় না, মাতালরা আর রবীন্দ্রনাথ-নজরুলও পড়ে না, মদ
কবিতার চেয়ে বেশি টানে, কবিরা এ-টেবিল থেকে সে-টেবিল
ঘুরে, বাড়ি যাবার পথে জানতে পারে যে তারা জন্মের সময়ে
দুই কানে দুটো জিভ নিয়ে জন্মেছিল, জনসাধারণও কানের ভিতরে
জিভ নিয়ে জন্মেছিল বলে নিজের দুঃখ-কষ্ট নিজেকে শোনায়।
কেউই আর কবিতা পড়ে না । কেউই আর কবিতা পড়ে না ।

অন্যের যন্ত্রণার আনন্দ
টিভিতে অন্যের যন্ত্রণা দেখতে পেলে
অন্যের থেঁতলে-যাওয়া মাথা দেখতে পেলে
অন্যের কাটা হাত দেখতে পেলে
ছেঁড়া পাঁজরের বইতে-থাকা রক্ত দেখতে পেলে
অন্যের দুঃখ-কষ্ট-মাখা মুখ দেখতে পেলে
দর্শক-শ্রোতার যেমন আনন্দ হয়
তার চেয়ে বেশি আনন্দ হয় ধারাভাষ্যকারের ।

কৌরব-পাণ্ডব ম্যাচ
কুরুক্ষেত্রের গ্যালারির টিকিট পেয়েছিলুম শ্রীকৃষ্ণর গার্লফ্রেণ্ড রাধাকে
ধরাধরি করে। সামনের দিকের সিট পাইনি ।
সূর্য উঠতেই দুদলের রেফারিরা সিটি বাজিয়ে যুদ্ধ শুরু করতে বলল।
ইনডিয়ান ঘোড়ায় টানা রথে চড়ে তীর ছুঁড়ছিল সব্বাই।
দূর থেকে কে যে দূর্যধন আর কে  ধৃতরাষ্ট্র কিছুই টের পাচ্ছিলুম না।
একটা মোটকা লোক গদা চালাচ্ছে দেখে তাকে ভীম মনে হল।
বারীন চেঁচাতে লাগল মার মার পোঁদে মার ওটাই দ্রৌপদীর
শিফনের শাড়ি খুলেছিল।
একটা রথে মেয়েলি টাইপের একজনকে দেখে সুবর্ণ বলে উঠল ওই
লোকটা হোমো, চালু মাল ।
আমি বললুম, কোনো মানে হয় না, এতো টাকা দিয়ে টিকিট কেটে
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ দেখা । তার চেয়ে বেদব্যাস যখন গপ্পো
লিখে ফেলবে তখন পড়ে নেবো।
তরুণ বলল, শালা সংস্কৃততে তো সবাই আমরা ফেকলু । যতোদিন
যুদ্ধটা চলবে জমে যাবে । দ্রৌপদীর শাড়িটা শেষ ওব্দি কী
হল জানিস ? কোথায় আছে ওটা ? পেলে আর যুদ্ধ দেখবো না

ম আর অ-এর স্টকটেকিং
ম, যার কাল্পনিক যুবতীদের ভালো লাগে একদিন এক বাস্তবিক যুবতী
অ-কে দেখতে পেয়ে মত বদলে ফেললো।
অ, ম-কে ওর ব্লাউজে হাত ঢোকাতে দিয়েছিল, বলেছিল কাল্পনিক যুবতী
নিয়ে কী করবি, যা কল্পনা করছিস তা ব্লাউজের ভেতরে আছে।
ক ( তিন ) যে ম-এর উচ্চমাধ্যমিক সহপাঠী, জানতে চাইলো কেমন
হয় রে কচি মাইগুলো ? ক ( এক ), ক ( দুই ) ম-এর বন্ধু নয়।
আসলে অ হল ক ( এক ) এর বোন, জানতে পারলে চূড়ান্ত মারামারি
হবেই । অ-এর বাবা শ বাংলার টিচার । বাংলায় ম একেবারে
গাড্ডুস ।
অ-এর মাইতে হাত দেবার পুরস্কার হিসেবে, বাংলায় ১০০তে ১০০ পেয়ে
ম সেদিন অ-কে ধন্যবাদ দিতে অ বলেছিল, তোর বাবা খ-বাবু
তোর সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন আমাদের বাড়ি।
ম-এর আনন্দ তো হলই, কিন্তু লুকিয়ে ব্লাউজে হাত ঢোকাবার মজা শেষ
হয়ে যাবে বলে কিছুটা মনখারাপ হলো ।
অ বলল, ঘাবড়াচ্ছিস কেন, এখন তো পাকা দেখা আশীর্বাদ সবই বাকি,
ততোদিন তুই যতো ইচ্ছে হাত ঢোকাতে পারবি, শর্ত এই…।
ম আঁৎকে উঠে বলল, না না আমরা যৌতুক নিই না, কোনো শর্ত নেই।
অ ম-কে জড়িয়ে ধরে বলল, দুর বোকা, ততোদিন তুইও
আমাকে হাত ঢোকাতে দিবি
অ তক্ষুনি হাত ঢোকালো আর ভিজে যেতেই বলল, ছি ছি, সবুর করতে
পারিস না ? স্টক খালি হয়ে যায় যদি !
অ বলল, এই স্টক ৮০ বছর পর্যন্ত থাকবে ।
ডিম
দুটো ডিম কিনতে গিয়েছিলুম কুলসুম আপাদের বাড়ি
উনি মুর্গির ঘরে ঢুকলেন, পেছনে আমিও
একটা দিশি মুর্গি কয়েকটা ডিমের ওপর বসেছিল
তাকে হুশ-হুশ করে তাড়িয়ে দুটো ডিম তুলে নিলেন
তা থেকে বাছাই করে মুচকি হেসে দিলেন আমার হাতে
গরম টাটকা ডিম, জিগ্যেস করলেন, ডিম পছন্দ হয়েছে ?
দু’পকেটে দুটো ডিম রেখে ঘাড় নাড়লুম
কুলসুম আপা নিচু হয়ে ঠোঁটে চুমু খেয়ে
বললেন, পয়সা পরে এনে দিস মনে করে
ঠোঁটের থুতু পুঁছে আবার ঘাড় নাড়লুম
টাটকা ডিম পেয়ে নাচতে-নাচতে বাড়ি ফিরছিলুম
পকেটের ডিম দুটোও যেন নাচতে লাগলো
লেংটুতে খোঁচা ফুটছিল
ডিমের আবার খোঁচা হয় নাকি !
দু’পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে বার করে আনলুম
ডিমের খোসাসুদ্দু দুটো জ্যান্ত মুর্গির ছানা
এগুলো বাড়ি নিয়ে গেলে জেঠিমা বকবেন
কুলসুম আপাদের বাড়ি নিয়ে গেলে নির্ঘাৎ
বকুনি খাবেন কুলসুম আপা
চুপি-চুপি কুলসুম আপাদের বাড়ি গিয়ে মুর্গির ঘরে
ছেড়ে দিলুম  ছানাদুটো
বাড়ি ফিরে বললুম, ডিম পাড়েনি এখনও মুর্গিগুলো
বলেছে বিকেলে আসিস
বিকেলে তো যাবোই, কুলসুম আপার থুতুমাখা চুমু খেতে

আরেত্তেরি, ইস কি মাঁ কা আঁখ
“আরেত্তেরি, ইস কি মাঁ কা আঁখ”, আমি এর মানে জানতুম না–
অনেককে বলতে শুনি, প্রায়ই, হিন্দিও ভালো জানি আমি
তাহলে বুঝতে হবে, মানে হয় না এরকম কথা বলে লোকেরা আনন্দ পায়
যেমন সেদিন এক তরুণীর সঙ্গে বাজারে দেখা
সে বললে, “কাকু, কলকাতায় কবে এলেন ?”
কন্ঠস্বরে শাকাহারি ঘুর্ণি
এই কথার মানে আমি জানি কিন্তু তরুণীটিকে চিনতে পারলুম না
মেয়েটি পরিচয় দেবার পরও মনে করতে পারলুম না
বোধহয় এরকম অবস্হার মাকড়জাল কাটানোর জন্যই
ওই উক্তি : “আরেত্তেরি, ইস কি মাঁ কা আঁখ”
ওফ, তরুণীটির সে কি ঘেমোত্বকের স্ফূলিঙ্গ
ওই স্ফূলিঙ্গ আমি চিনি, সে কথায় পরে আসছি
এমন নয় যে আমার চামড়ায় রুই মাছের আঁশ আছে বলে
আমাদের বংশলতায় সব রকমের ফল ধরে : বুনো হোক বা বাগানি
সবাই তো জানে যে মরে যাবার পর সাঁতার কাটা কতো সহজ
বড়দিকে জিগ্যেস করেছিলুম কেননা বড়দি আমাদের বাড়ির
সিস্টার্স রিপাবলিকের আনন্দমাখানো লেকচারার
বড়দি বললে, “আরেত্তেরি, ইস কি মাঁ কা আঁখ” হলো একখানা ঘুষিবাক্য
ক্রিয়াপদের ফুটো গলে পুচুৎ করে বেরিয়ে যেতে পারে
দেখিসনি আজকাল ব্যাটারির দরুণ ঘড়িরা সহজে ক্লান্ত হয় না
তেমনিই রক্ত হলো মহাচালাক, শুকোবেই শুকোবে, যতোই কাঁদো
শান্তিনিকেতনে আঁকিয়েরা আদিবাসি তরুণীদের স্কেচ আঁকতো কেন
বল দিকিনি, এতো তো পড়াশুনার বড়াই করিস
বললুম, “আরেত্তেরি, ইস কি মাঁ কা আঁখ”
এখনকার মতন নগ্নিকা ভাড়া পাওয়া যেতো না সেসময়ে
ওনারা নগ্নিকার খোঁজে গাঁ-গেরামে বেরিয়ে চোখে তুলে নিতেন
তারপর চোখের আলোয় চোখের ভেতরে দেখতে পেতেন
আর বাড়ি ফিরে তাদের স্কেচ আঁকতেন পয়সা খরচ হতো না
রবীন্দ্রনাথ কিন্তু প্যারিসে গিয়ে একজন নগ্নিকার জলরঙ এঁকেছিলেন
সেই নগ্নিকার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল ল্যটিন কোয়ার্টারে
নাম জিগ্যেস করতে ঘেমোত্বকের স্ফূলিঙ্গ উড়িয়ে
ফরাসি ভাষায় বললে, “আরেত্তেরি, ইস কি মাঁ কা আঁখ”
কে না ওকে দাঁড় করিয়ে শুইয়ে বসিয়ে পা ছড়িয়ে বুক চিতিয়ে
ছবি এঁকেছেন : আহা আহা আহা আহা আহা–
সবচেয়ে আকর্ষক গুস্তাভ কোরবেতের কেবল দু’পায়ের ঝোপখাঁজ
তাছাড়া পিকাসো, ফ্রান্সিসকো গোয়া, টিটিয়ান, গুস্তাভ ক্লিম্ট
মিকেলাঞ্জেলো, রুবেন, এদুয়ার্দ মনে, এগোন শেলে
দিয়েগো ভেলাসকোয়েজ এত্তোজন বিরাট বিরাট শিল্পী
রবীন্দ্রনাথের আঁকা জলরঙটা আমায় দিয়ে গালে চুমু খেয়ে
ফরাসি ভাষায় নগ্নিকা যা বললে তা ওই ঘেমোত্বকের
ওড়ানো স্ফূলিঙ্গ : “আরেত্তেরি, ইসকি মাঁ কা আঁখ” ।
ডিসকোর্স
অবন্তিকার সঙ্গে কথা বলা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে
আজকাল ও কথা বলার সময়ে মুখ দিয়ে বলে না
আমি দেখেছি ওর ঠোঁট নড়ে না
মুখ বন্ধ করে রাখে
কিছুদিন আগে টের পেলুম ও মাই দিয়ে কথা বলে
মাই লিখছি কেননা স্তন শব্দটাকে ঘেন্না করে অবন্তিকা
বলে যে স্তন শুনলেই মনে হয় শান্তিনিকেতনের
আঁকিয়েদের তুলিতে আঁকা কোনো আদিবাসী বউয়ের ঝোলা বুক
ওনারা তো প্যারিসে গিয়ে নিউড আঁকার সুযোগ পাননি
বা পেলেও সাহস যোগাতে পারেননি
শ্বেতাঙ্গিনী উলঙ্গ তরুণীকে সামনে দাঁড় করিয়ে শুইয়ে বসিয়ে আঁকা
ফ্রানসিসকো গোয়ার আঁকা নারী
গুস্তাভ ক্লিমেন্টের আঁকা স্বমেহনী যুবতী
মিকেলাঞ্জেলোর আঁকা অপ্সরা
গুস্তাভ করবের আঁকা শুধু মেয়েলি কুঁচকির কালো ঝোপ
এদুয়ার্দ মনের আঁকা লতিয়ে পড়ে থাকা তরুণী
এরকমটা আঁকা আহা আহা আহা আহা
চাড্ডিখানি কথা নয় কখন যে কী হয়ে যাবে তার ঠিক নেই
তার চেয়ে এই ভালো গাঁ-গেরামের বাড়ির বউদের ঝোলাবুক
বললুম তোর তো ঝোলাবুক নয় তাহলে লজ্জা কিসের
নামে কিই বা এসে যায় স্তন বলিস বা মাই একই ব্যাপার
তখন টের পেলুম যে একই ব্যাপার নয়
অবন্তিকার মাইরা কথা বলে
প্রেমের কথা বলতে হলে ও বাঁ-দিকের মাই ব্যবহার করে
আঁচল সরিয়ে মাইটা গান শোনায়
প্যার হুয়া ইকরার হুয়া প্যার সে কিঁউ ঘবরাতা হ্যায় দিল
তুমি যে আমার তুমি যে আমার
সংসারের কথা বলতে হলে ডান দিকের মাই কথা বলে
অড়র ডালের দাম বেড়ে যাচ্ছে
আর ইলিশ খাওয়া যাবে না ২০০০ টাকা কিলো
পিৎজা অর্ডার করলে একটার সঙ্গে আরেকটা ফ্রি দ্যায় না
পটলে ঢ্যাঁড়সে সবুজ রঙ করা থাকে
পাবদা মাছও গোলাপি জলে চুবিয়ে বিক্রি করে
আমি ওর ডান দিকের মাইটাকে বেশি ভালোবাসি
ওটা অনেকক্ষণ ধরে আমার সঙ্গে কথা বলে
ভালোবাসা মানেই তো তাই অনেকক্ষণ ধরে
নিউড যুবতীর সঙ্গে কথা বলা শুয়ে বসে দাঁড়িয়ে
কথা বলাবলি বলাবলি বলাবলি করতে থাকা
যতোক্ষণ না দুজনেরই একই সঙ্গে ক্লান্তির ক্লাইম্যাক্স হয়


কুকুরের খাবার
অবন্তিকার বাড়ি গিয়েছিলুম কাল বিকেলবেলায়
তখন কালবৈশাখী আসার তাল করছে
তাই ভাবলুম ঝড়টা কাটিয়ে তারপর হোটেলে ফিরবো
অবন্তিকার সঙ্গেও দ্যাখা হবে অনেককাল পর
গিয়ে দেখি কুকুর পুষেছে
জিগ্যেস করলুম এটা কোন জাতের কুকুর রে
বুল টেরিয়ার গ্রেট ডেন ডশ্যাণ্ড না বুল ডগ
আমি মানুষ আর কুকুর চিনতে বড্ডো ভুল করি
অবন্তিকা বলল এটা দেশি কুকুর
না খেতে পেয়ে দড়িদঙ্কা হয়ে ফুটপাথে নেতিয়ে পড়েছিল
বাড়ি এনে সেবা করে দাঁড় করিয়েছি
আসলে প্রতিশোধ নিচ্ছি বিদেশি কুকুরদের খাবারের বিরুদ্ধে
একে রোজ পেডিগ্রি কুকুরদের যে সমস্ত খাবার বাজারে বিক্রি হয়
সেগুলো কিনে-কিনে খাওয়াই
বললুম, “সত্যি তোকে আজও চিনতে পারলুম না রে ।”

সোমক দাসের জন্য একটা ছোটো কবিতা
সোমক দাস একটা ছোটো কবিতা চেয়েছেন ওনার পত্রিকার জন্য
লিখতে বসে জানলা দিয়ে দেখতে পাচ্ছি সামনের বিলডিঙে
আলফোনসো আমগুলো পেকে গেছে অথচ কেউ পাড়ছে না
সকালে টিয়াপাখিরা সবুজ আমের ওপরে ব্যালেন্স করে যখন খায়
বুঝতে পারি আমগুলো পেকে গেছে অনেক আগে
বাজারে আলফোনসো আম এখন পাঁচশো টাকা ডজন
বাজার মানে ওদের আবাসনের পেছন দিকে নানারকম বিদেশি ফল বিক্রি হয়
চিনের টক ন্যাসপাতি সাউথ আফ্রিকার শক্ত ন্যাসপাতি নিউজিলভাণ্ডের কিউ্য়ি
আমেরিকার আপেল ইজরায়েলের কমলালেবু তুর্কির পাকাডুমুর
অথচ নিজেদের গাছের আলফোনসো পাড়ছে না কেউ
গাছে বোধহয় তিন ডজন আম হয়ে আছে মানে পনেরোশো টাকা
আবাসনের ফ্ল্যাটের সংখ্যা যদি তিনশো হয়
তাহলে পেড়ে নিয়ে ভাগাভাগি করে নিতে পারতো
সকলেই সমান সংখ্যায় গাছপাকা আলফোনসো খেতে পারতো
আসলে আমগুলো হয়ে আছে মগডালে
আর হয়তো বেশির ভাগ সদস্যের ডায়াবেটিস
সকলেই তো বুড়োবুড়ি ছেলেমেয়েরা বিদেশে
যখন বয়স কম ছিল তখন অনেক আদর করে সবাই মিলে পুঁতেছিল
রত্নাগিরি কিংবা দেওগড় থেকে এনে আলফোনসো আমের চারা
আবাসনের সদস্যদের দেখি বেদানা আপেল সবেদা চেরি কিনতে
আম কিনতে দেখি না
আবেগকে টাকায় বদলাবার আলাদা উপায় আছে ওদের
সবাই গুজরাটি জৈন পরিবারের সদস্য
হিরের কারবারি শেয়ার বাজারের ব্রোকার কারখানার মালিক
ওরা কি জানতো না একদিন বুড়িয়ে যেতে হবে
তখন গাছে ঝোলা অবস্হায় আলফোনসো আম দেখতে ভালো লাগবে
সকালে টিয়াপাখিদের আম খাওয়া দেখতে ভালো লাগবে
যেমন আমার ভালো লাগে
মনে-মনে চাই আমগুলো গাছেই থাকুক
আমাদের আবাসনে দুটো জংলিফুলের বিশার গাছ
একটাকে মেরে ফেলা হয়েছে গাছমারার ঠিকেদার ডেকে
গাড়ি রাখার জায়গা নেই বলে গাছ মেরে ফেলতে হয়েছে
আলফোনসো গাছ থাকলে টিয়াপাখিদের দেখতুম
তবে সেটাও গাছমারার ঠিকেদারকে সোপর্দ করা হতো
চাইলেই বাজারে আলফোনসো পাওয়া যায়
ক্রফোর্ড মার্কেটে টিয়াপাখি কিনতে পাওয়া যায়
গাড়ি পার্ক করার জায়গা কোথাও পাওয়া যায় না
তিরিশতলা-চল্লিশতলা বাড়িগুলোর কমপাউণ্ডে গাছের বালাই নেই
ওদের গাড়ি রাখার জন্য দু-তিন-চার-পাঁচতলায় পার্কিঙের জায়গা
গাড়িও নামে লিফটে চেপে
সবুজ টিয়াপাখির দল কোথা থেকে মুম্বাই কসমোপলিসে আসে জানি না
টিয়াপাখিগুলো কেমন করে টের পেয়েছে যে আম পেকেছে
চলো সবাই দল বেঁধে চলো
সোমক দাসের বাড়িতে এখন বোধহয় ল্যাঙড়া আম খাওয়া হয়
হিমসাগর খাওয়া হয়
উত্তম দাশের বাগানে আম হতো
উত্তম দাশ আলফোনসো আমের গাছ পোঁতেনি
উত্তম চুপচাপ মারা গেল
ডায়াবেটিস ছিল কি উত্তমের
থাকার সম্ভাবনা বেশি কেননা ও বড্ডো মিষ্টি কবিতা লিখতো
একের পর এক মিষ্টি কবিতার বই লিখে গেছে
কেদার ভাদুড়ির খোঁজে গেছে সম্ভবত
টিয়াপাখি আসতো না উত্তমের বাড়ির আম খেতে
সোমক দাসের জানলা দিয়ে টিয়াপাখিদের আলফোনসো খাওয়া দেখা হয় না
উনি কবে শেষ স্বাধীন টিয়াপাখিদের ঝাঁক দেখেছেন জানি না
উনি কবে শেষ স্বাধীন বাঙালির দল দেখেছেন জানি না
উনি কবে শেষ স্বাধীন কবিলেখকদের দেখেছেন জানি না









আমার জন্মদিন নেই আমাদের ইমলিতলার বাড়িতে কারোর জন্মদিন পালন করা হতো না
জেঠা বাবা জেঠিমা মা কারোর জন্মদিন ছিল না
আমার তাই কোনো জন্মদিন নেই
বাড়ির কারোরই জন্মদিন ছিল না
মায়েরা কাকে কবে প্রসব করেছেন তার তিথির হিসেব ছিল
যে জন্মাচ্ছে তার তো কোনো অবদান নেই জন্মানোয়
যে পেটে ধরে রাখল এতো মাস
যে কষ্ট সহ্য করলো এতো সকাল দুপুর সন্ধ্যা
তারই তো অবদান
ঠাকুমা কবে জেঠা আর বাবাকে প্রসব করেছিলেন
তার তিথি ঠাকুমা জানেন
প্রসবদিন পালনের তো কোনো রেওয়াজ নেই
তাই মা আমাকে কোন তিথিতে প্রসব করেছিলেন জানি
মায়ের কষ্টের গল্প জানি
হাসপাতালে ভর্তির গল্প জানি
কিন্তু আমার জন্মদিন জানি না

আমি বিষাদে ভুগি না
আমাদের ইমলিতলার বাড়িতে
কেউই বিষাদে ভুগতো না
মেজদা, যাকে বড়োজেঠা এক বেশ্যার কাছ থেকে
দেড়শো টাকায় কিনেছিলেন
তা জানতে পারার পরও কোনোদিন বিষাদে ভোগেনি
জেঠিমার সঙ্গে মেজদা তুইতোকারি করলেও
জেঠিমা বিষাদে ভোগেননি
বিষাদ কাকে বলে বাড়ির কেউই জানতুম না

আসলে আমাদের তো মধ্যবিত্ত পরিবার
বলতে যা বোঝায় তা ছিল না
গুয়ের নর্দমা থেকে লাট্টু কুড়িয়ে খেলেছি
কই নোংরা মনে হয়নি তো
বকুনি খেয়ে আবার পরের দিন একই কাজ করেছি
যৌবনেও বারণ শুনিনি
বারন-করা  কাজ বার-বার করেছি
কিন্তু বিষাদে ভুগিনি
সত্যি বলতে কি একাকীত্বে ভুগি বটে বুড়ো বয়সে
নিঃসঙ্গতায় ভুগে সিঙ্গল মল্ট খাই
কিন্তু কখনও বিষাদে আক্রান্ত হই না

ঠাকুমার সঙ্গে ঝমঝম খেলা
উত্তরপাড়ার বাড়িতে বুড়ি ঠাকুমা
ঘুরে বেড়াতেন খালি গায়ে কোমরে একটা গামছা
ওই ভাবেই গঙ্গায় চান করতে যেতেন
কতো বয়সে লজ্জাবোধ চলে যায়
ঠাকুমার বয়স তখন পঁচাশি ছুঁইছুঁই
ঠাকুমা পঁচানব্বুই বছর বয়সে মারা যান
ছোটোবেলায় উত্তরপাড়ায় গেলে
ঠাকুমার বুকের ওপরে বসে মাইয়ের বোঁটা দুটো
একটার সঙ্গে আরেকটা জুড়ে ছেড়ে দিতুম আর বলতুম
ঝমমমমমমমমমমমমমম
ঠাকুমা বলতেন যখন বে’থা করবি তখন নিজের
বউয়ের মাই নিয়ে ঝমঝম খেলিস
বুঝলি তোর দাদুর অনেক গর্ব ছিল আমার মাই নিয়ে
ঠাকুমা তো নেই নয়তো বলতুম
আমারও বুড়ি বউয়ের জন্য গর্ব আছে ঠাকুমা










সঙ্গীত
আমি এমনই এক সঙ্গীতকার
যার গানের গলা নেই
জীবনে কখনও কোনো গান গাইনি
কোনো বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে পরিচয় হয়নি
অথচ যখন বৃষ্টিতে ভিজি
কিংবা কোনো যুবতীর সঙ্গে শুই
তখন সঙ্গীত হয়ে উঠি
এই কারণেই আমি যৌবনে সোনাগাছি যেতুম
ভালোবাসতে আমার আজও ভালো লাগে
কিন্তু সেই সোনাগাছি আর নেই
সবই অবাঙালি যুবতীরা দখল করে নিয়েছে
সঙ্গীত উধাও হয়ে গেছে
অথচ পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছিল সঙ্গীতের জন্যে
এখন সঙ্গীত আমাকে অদৃশ্য করে তোলে
বুঝতে পারি অদৃশ্য হয়ে চলেছি
শিরা বেয়ে বয়ে চলেছে আঘাতের আহ্লাদ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন