কুড়ি কোটি বাঙালির ভাষা বিপদে পড়েছে ভাবা হাস্যকরই শুধু নয়
নির্ভেজাল গুলগল্পও বটে । কোথায় যে বাঙালি নেই ! আমার পাঠক
ব্রাজিল পর্তুগাল জার্মানি কানাডা পেরু চিলি ব্রিটেন আমেরিকাতেও
আছে -- যখন কিনা আমি একজন হেঁজিপরঁজি কবি ও লেখক। ওই বাঙালিরা
কেন অতো দূরে বসে পড়েন আমার লেখা ? যেটুকু নেটে পাওয়া যায় ।
ভারতে কোথায় নেই বাঙালিরা, ট্যুরে ঘুরে দেখেছি ছত্তিশগড়ে ওড়িশায়
বিহারের মোতিহারি গড়চিরোলির গণ্ডগ্রামে উত্তরখণ্ডের তরাই অঞ্চলে
আন্দামান দ্বীপপূঞ্জে লড়ে যাচ্ছে বাঙালিরা -- বাঁচার লড়াই । কবিতা পড়ে না
তারা, লিটল ম্যাগাজিন কাকে বলে তাও জানে না হয়তো তারা
কিন্তু বাংলাতেই কথা বলে; সেই বাংলায় স্হানীয় শব্দেরা ঢুকে গেছে
যা বেশ স্বাভাবিক, সেসব শব্দেরা বাংলা ভাষার অভিধানে স্হান পেতো
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কলকাতা ও ঢাকায় অক্সফোর্ড কমিটির মতো
বিদ্বজ্জনের গোষ্ঠী নেই যাঁরা প্রতিটি বছর ইংরেজি ভাষার ঢঙে
শব্দ বাছাই করে নিজেদের অভিধানে আশ্রয় দিতো। তা না হয় নাই হলো
তাতে এটা ভাবা বাতুলতা যে বাঙালির ভাষা বিপদে পড়েছে ।
ঢাকার অভিধানে নতুন ও নতুনতর শব্দেরা স্হান পায়
সেগুলো আসেনা কেন কলকাতার প্রাতিষ্ঠানিক দরবারে
তা শুধু দরবারি তালুকের মোসাহেব ও মুন্সিরা জানবেন ।
না আসুক ক্ষতি নেই, মুখে-মুখে পশ্চিমবাংলার পথে-ঘাটে
আসামের বাঙালি অঞ্চলে, বাংলা ভাষা আর বাঙালির সংস্কৃতি
বিদ্দ্যুচ্চমকের সঙ্গে আলোকিত হয় । বাঙালির ভাষা নয়, কোনঠাশা
হয়ে যাচ্ছে বহির্বঙ্গের বাঙালিরা, এটুকু স্বীকার করতেই হয়,
তা তাদের এক ধরনের শ্রেণিযুদ্ধ । বহির্বাংলায় বাঙালিরা ততোটা
মৌরসিপাট্টা পায়নাকো যতোটা দেশভাগের আগে পেতো ।
কিন্তু তার সঙ্গে ভাষার বিপদকে গুলিয়ে ফেলা অনুচিত ।
ভাষা মোটেই বিপদে পড়বে না ; কুড়ি কোটি বাঙালির
ভাষা, মনে রাখা দরকার, সেই সব সাম্রাজ্যের চেয়ে বেশি সংখ্যক--
যেমন ইতালির ভাষা, একদা রোমান সাম্রাজ্য কতো দূর পর্যন্ত
বিস্তার ঘটিয়েছিল, আজকে গুটিয়ে গেছে সে সাম্রাজ্যের ভাষা ।
কিংবা গ্রিসের কথা ভাবা যায়, তারাও তো সমস্ত পৃথিবী জুড়ে
নিজেদের ভাষাকে নিয়ে গিয়েছিল, আজ তারা পুঁচকে একটা দেশ । দারিয়ুর পারস্য সাম্রাজ্যকে ইউরোপ পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল ।
বঙ্গদেশে ফারসি ভাষা এনেছিল সেসব বহিরাগত শাসকের দল--
ফারসি গুটিয়ে গিয়েছে কিন্তু বাংলা ভাষায় দখল করেছি আমরা
তাদের ভাষা থেকে প্রচুর শব্দাবলী, বাইরের শাসক এসে
আরবি শব্দাবলী দিয়ে গেছে বাংলা ভাষায় । এখন নতুন শব্দ
আরও আসুক, বহির্বঙ্গ থেকে আনুক বাঙালিরা শব্দ সেখানের ।
বাঙালি তো তুর্কিদের পাঞ্জাবি আর মারাঠাদের দেয়া ধুতি
নিজেদের করে নিয়েছে কবেই । রামমোহন, বঙ্কিমচন্দ্র, দ্বারকানাথের
চোগা-চাপকান ফেলে দিয়ে মার্কিনি বুশ-শার্ট টি-শার্ট আর ব্রিটেনের
প্যান্টালুন ধরেছে, বিয়েতে রঙিন ধুতি, শেরওয়ানি পরে বাঙালি বাড়ির
বর যাচ্ছে বিয়েতে, হিন্দি গানের সাথে বন্ধুদের নৃত্যের সাথে ।
বাঙালির টিভি-সুন্দরীরা একতা কাপুরের দেখাদেখি অজস্র গয়না
পরে অভিনয় করে, ইচ্ছেমতো বর বা বউ পালটায়, কিন্তু তারাও
বাংলা ভাষায় প্রেম করে, ঝগড়ার বাখান দেয়, রবিঠাকুরের গান গায়
হয়তো বোকার মতো সংলাপ বলে, তবু তা বাংলাতেই বলে ।
সংবাদ পাঠিকারা গম্ভীর মুখে দাঙ্গার খবর পড়ে, বাঙালিরা খুন হয়
সেসব বাঙালিরা মরবার আগে বাংলাতেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলেছিল।
বাংলা ভাষার জন্য কোনো চিন্তার প্রয়োজন নেই, এই ভাষা এখন
তো নেহাতই তরুণ দৈত্য, কতোই বা বয়স, অন্য ভাষাদের তুলনায়
এ-দৈত্য বিশাল হবে কালক্রমে, তার হুঙ্কারের জন্য
অপেক্ষা করাই ভালো, যা শুনবে সারাটা বিশ্ব একদিন.....
( উনিশে মে পত্রিকার উনিশে মে ২০১৮ সংখ্যায় প্রকাশিত )
নির্ভেজাল গুলগল্পও বটে । কোথায় যে বাঙালি নেই ! আমার পাঠক
ব্রাজিল পর্তুগাল জার্মানি কানাডা পেরু চিলি ব্রিটেন আমেরিকাতেও
আছে -- যখন কিনা আমি একজন হেঁজিপরঁজি কবি ও লেখক। ওই বাঙালিরা
কেন অতো দূরে বসে পড়েন আমার লেখা ? যেটুকু নেটে পাওয়া যায় ।
ভারতে কোথায় নেই বাঙালিরা, ট্যুরে ঘুরে দেখেছি ছত্তিশগড়ে ওড়িশায়
বিহারের মোতিহারি গড়চিরোলির গণ্ডগ্রামে উত্তরখণ্ডের তরাই অঞ্চলে
আন্দামান দ্বীপপূঞ্জে লড়ে যাচ্ছে বাঙালিরা -- বাঁচার লড়াই । কবিতা পড়ে না
তারা, লিটল ম্যাগাজিন কাকে বলে তাও জানে না হয়তো তারা
কিন্তু বাংলাতেই কথা বলে; সেই বাংলায় স্হানীয় শব্দেরা ঢুকে গেছে
যা বেশ স্বাভাবিক, সেসব শব্দেরা বাংলা ভাষার অভিধানে স্হান পেতো
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কলকাতা ও ঢাকায় অক্সফোর্ড কমিটির মতো
বিদ্বজ্জনের গোষ্ঠী নেই যাঁরা প্রতিটি বছর ইংরেজি ভাষার ঢঙে
শব্দ বাছাই করে নিজেদের অভিধানে আশ্রয় দিতো। তা না হয় নাই হলো
তাতে এটা ভাবা বাতুলতা যে বাঙালির ভাষা বিপদে পড়েছে ।
ঢাকার অভিধানে নতুন ও নতুনতর শব্দেরা স্হান পায়
সেগুলো আসেনা কেন কলকাতার প্রাতিষ্ঠানিক দরবারে
তা শুধু দরবারি তালুকের মোসাহেব ও মুন্সিরা জানবেন ।
না আসুক ক্ষতি নেই, মুখে-মুখে পশ্চিমবাংলার পথে-ঘাটে
আসামের বাঙালি অঞ্চলে, বাংলা ভাষা আর বাঙালির সংস্কৃতি
বিদ্দ্যুচ্চমকের সঙ্গে আলোকিত হয় । বাঙালির ভাষা নয়, কোনঠাশা
হয়ে যাচ্ছে বহির্বঙ্গের বাঙালিরা, এটুকু স্বীকার করতেই হয়,
তা তাদের এক ধরনের শ্রেণিযুদ্ধ । বহির্বাংলায় বাঙালিরা ততোটা
মৌরসিপাট্টা পায়নাকো যতোটা দেশভাগের আগে পেতো ।
কিন্তু তার সঙ্গে ভাষার বিপদকে গুলিয়ে ফেলা অনুচিত ।
ভাষা মোটেই বিপদে পড়বে না ; কুড়ি কোটি বাঙালির
ভাষা, মনে রাখা দরকার, সেই সব সাম্রাজ্যের চেয়ে বেশি সংখ্যক--
যেমন ইতালির ভাষা, একদা রোমান সাম্রাজ্য কতো দূর পর্যন্ত
বিস্তার ঘটিয়েছিল, আজকে গুটিয়ে গেছে সে সাম্রাজ্যের ভাষা ।
কিংবা গ্রিসের কথা ভাবা যায়, তারাও তো সমস্ত পৃথিবী জুড়ে
নিজেদের ভাষাকে নিয়ে গিয়েছিল, আজ তারা পুঁচকে একটা দেশ । দারিয়ুর পারস্য সাম্রাজ্যকে ইউরোপ পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল ।
বঙ্গদেশে ফারসি ভাষা এনেছিল সেসব বহিরাগত শাসকের দল--
ফারসি গুটিয়ে গিয়েছে কিন্তু বাংলা ভাষায় দখল করেছি আমরা
তাদের ভাষা থেকে প্রচুর শব্দাবলী, বাইরের শাসক এসে
আরবি শব্দাবলী দিয়ে গেছে বাংলা ভাষায় । এখন নতুন শব্দ
আরও আসুক, বহির্বঙ্গ থেকে আনুক বাঙালিরা শব্দ সেখানের ।
বাঙালি তো তুর্কিদের পাঞ্জাবি আর মারাঠাদের দেয়া ধুতি
নিজেদের করে নিয়েছে কবেই । রামমোহন, বঙ্কিমচন্দ্র, দ্বারকানাথের
চোগা-চাপকান ফেলে দিয়ে মার্কিনি বুশ-শার্ট টি-শার্ট আর ব্রিটেনের
প্যান্টালুন ধরেছে, বিয়েতে রঙিন ধুতি, শেরওয়ানি পরে বাঙালি বাড়ির
বর যাচ্ছে বিয়েতে, হিন্দি গানের সাথে বন্ধুদের নৃত্যের সাথে ।
বাঙালির টিভি-সুন্দরীরা একতা কাপুরের দেখাদেখি অজস্র গয়না
পরে অভিনয় করে, ইচ্ছেমতো বর বা বউ পালটায়, কিন্তু তারাও
বাংলা ভাষায় প্রেম করে, ঝগড়ার বাখান দেয়, রবিঠাকুরের গান গায়
হয়তো বোকার মতো সংলাপ বলে, তবু তা বাংলাতেই বলে ।
সংবাদ পাঠিকারা গম্ভীর মুখে দাঙ্গার খবর পড়ে, বাঙালিরা খুন হয়
সেসব বাঙালিরা মরবার আগে বাংলাতেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলেছিল।
বাংলা ভাষার জন্য কোনো চিন্তার প্রয়োজন নেই, এই ভাষা এখন
তো নেহাতই তরুণ দৈত্য, কতোই বা বয়স, অন্য ভাষাদের তুলনায়
এ-দৈত্য বিশাল হবে কালক্রমে, তার হুঙ্কারের জন্য
অপেক্ষা করাই ভালো, যা শুনবে সারাটা বিশ্ব একদিন.....
( উনিশে মে পত্রিকার উনিশে মে ২০১৮ সংখ্যায় প্রকাশিত )
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন